মিনহাজের ছবি ও কথা

চন্দ্রাহুত

চন্দ্রাহুত বলে কোনো শব্দ বাংলা অভিধানে নেই, আমি এইমাত্র এই শব্দটির জন্ম দিলাম। শব্দটি ভবিষ্যতে কেউ কখনও ব্যবহার করবে কি না, জানিনা। করুক বা না করুক, তাতে আমার কিছু যায়ও না, আসেও না। আমি এটি ব্যবহার করবো, কারণ এটি ব্যবহার না করে কোনো উপায় নেই। আমি যে ভাবনা প্রকাশ করতে চাইছি, সেটি বুঝানর জন্য এর চাইতে জুৎসই কোনো শব্দ বাংলায় নেই। উচ্চারণে কাছাকাছি, এমন একটি শব্দ আছে বটে, কিন্তু অর্থের দিক দিয়ে সেটা অনেক দূরবর্তী। সেটার কথা আমি সব শেষ লিখবো।চন্দ্রাহুত বলতে আমি যে ভাবটি প্রকাশ করতে চেয়েছি, সেটা হলো চাঁদের আমন্ত্রণে যাওয়া। হ্যাঁ, যে চন্দ্রাহুত হওয়ার কথা আমি বলতে উদ্যত হয়েছি, সেটা ঘটেছে গত একত্রিশ জুলাই, সোমবার। নিউ ইয়র্কের বাঙালি সমাজের সহস্রাধিক মানুষ চাঁদের আমন্ত্রণে, অর্থাৎ চন্দ্রাহুত হয়ে, চন্দ্রাহুতি উপেক্ষা করতে না পেরে চলে গেয়েছিলেন সাগর পাড়ে, চাঁদের ধারে। হ্যাঁ, আক্ষরিক অর্থেই চাঁদের ধারেই ছিলো। সেদিন চাঁদ সত্যি যেন হাতের কাছে এসে ধরা দিয়েছিল (নিচের ছবিতেও চাঁদ দেখুন)। সেখানে উপস্থিত সবাই নাচ-গান-আহার-বিহার করে মিলিতভাবে উদযাপন করেছিলেন জ্যোছনা উৎসব। সত্যি কথা বলতে কি, এমন উৎসবের কথা আগে শুনিনি, দেখিনি। শহর থেকে বাসে, ট্রেনে, প্রাইভেট গাড়িতে করে বাচ্চাকাচ্চাসহ এক দঙ্গল মানুষ এভাবে সাগর পাড়ে গিয়ে কবিতায় গানে আড্ডায় মশগুল হবে, সেটা আমি মোটেও ভাবিনি।অপর যে শব্দটির কথা আমি বলেছিলাম, সেটা হলো চন্দ্রাহত। এই চন্দ্রাহতের ধারণাটি সম্ভবত ল্যাটিন বা ইংরেজি (লুন্যাটিক্স, লুনাটিকা, মুনস্ট্রাক) থেকে এসেছে। এর সাথে প্রাচীন ভারতীয় জ্যোতিষ শাস্ত্রের চাঁদের কোনো তিথির সাথেও সম্পর্ক রয়েছে হয়তো। যেখান থেকেই শব্দটি এসে থাকুক, সব ক্ষেত্রেই চন্দ্রাহত এর অর্থ একটাই, সেটা হলো উন্মাদগ্রস্থ, পাগল।

(পাদটিকা: উৎসব করে যারা জ্যোছনা দেখতে যায়, তাদের ক্ষেত্রে 'চন্দ্রাহত' শব্দটাও হয়তো ব্যবহার করা যায়, কারণ চন্দ্রাহত বা উন্মাদগ্রস্থ অথবা পাগল না হলে কেউ কী এভাবে দল বেঁধে চাঁদের আমন্ত্রণে সাড়া দিতে যায়?)