NYC Sightseeing Pass
ঢাকা, মঙ্গলবার, এপ্রিল ২৯, ২০২৫ | ১৫ বৈশাখ ১৪৩২
Logo
logo

‘আমার ছেলে অপরাধ করলে বিচার করতো, গুলি করে মারলো কেনো’


খবর   প্রকাশিত:  ২৮ এপ্রিল, ২০২৫, ১০:৫৬ পিএম

‘আমার ছেলে অপরাধ করলে বিচার করতো, গুলি করে মারলো কেনো’

  ‘সংঘাতের খবর পেয়ে সড়কে গিয়ে দেখি বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের কাছে ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। বাজারের দোকানের পেছন দিয়ে ছেলের কাছে যেতে যেতে চোখের আড়াল হয়ে যায়। একটু পরেই দেখি গাড়ি দিয়ে গুলিবিদ্ধ বিপ্লবকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ছেলে অপরাধ করলে তার বিচার করতো। কিন্ত গুলি করে মেরে ফেললো কেনো? আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার চাই।’   কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে ময়মনসিংহের গৌরীপুরে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত বিপ্লব হাসানের (১৯) মা বিলকিস বেগম এভাবেই আকুতি করছিলেন।   গত ২০ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে গৌরীপুরের কলতাপাড়া বাজারে পুলিশের সাথে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে বিপ্লব গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। ওইদিনই হাসপাতাল থেকে বিপ্লবের লাশ বাড়িতে এনে দাফন করা হয়।  বিপ্লব হাসান ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার ডৌহাখলা ইউনিয়নের চূড়ালি গ্রামের বাবুল মিয়ার ছেলে। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে বিপ্লব সবার বড়। সে স্থানীয় মোজাফফর আলী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এ বছর এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। দুই বোনের মধ্যে একজন অষ্টম ও আরেকজন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে।  

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, বিপ্লবের বাবা বাবুল মিয়া একটি ওয়ার্কশপ চালাতেন। কয়েক বছর আগে তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এতে সংসার ও সন্তানদের পড়াশোনার খরচ চালাতে পারছিলেন না তিনি। পরিবারের হাল ধরতে পড়াশোনার পাশাপাশি স্থানীয় কৃষাণী মিলে চাকরি নেয় বিপ্লব।  গত ২০ জুলাই কৃষাণী মিলে দুপুরের শিফটে বিপ্লবের ডিউটি ছিল। ওইদিন সকালে নাশতা করার জন্য মায়ের কাছ থেকে ৫০ টাকা নিয়ে বাড়ির সামনে কলতাপাড়া বাজারে যায় সে। কিছুক্ষণ পর কোটা আন্দোলনকে ঘিরে কলতাপাড়া বাজারে পুলিশের সাথে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় বিপ্লব হাসান।  বাড়িতে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, বিপ্লবের বাড়িতে সুনশান নিরবতা। বাড়ির সামনেই ছেলের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছেন তার বাবা-মা।  স্বজনরা জানান, বিপ্লবদের সম্বল বলতে দুই শতাংশ জমি ঘর-ভিটেটাই। অভাবের সংসারে ছেলের চাকরির সুবাদে তাদের কষ্ট কিছুটা কমেছিল। এখন তো তাদের সব শেষ হয়ে গেল।

 বিপ্লবের মা বিলকিস বেগম বলেন, আমার ছেলে সকালে নাশতার জন্য আমার কাছ থেকে ৫০ টাকা নিয়ে বাজারে যায়। এরপর লাশ হয়ে বাড়ি ফেরে সে। পড়াশোনার পাশাপাশি মিলে চাকরি করতো। এখন পরিবারের হাল কে ধরবে?  বিপ্লবের বাবা বলেন, ঘটনার দিন সিলেট ছিলাম। আগের রাতে বিপ্লব ফোন করে বলে- বাবা দেশের পরিস্থতি ভালো না, তুমি নিরাপদে থেকো। আমাকে নিরাপদে থাকার কথা বলে বিপ্লব পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নিলো। বিপ্লবের মাথা, ঘাড় ও পেটে গুলির ছিদ্র ছিল। মামলা করবো না, মামলা করলেই কি আর ছেলে ফিরে আসবে?  বিপ্লবের দাদী রোকেয়া বেগম বলেন, বড় আদরের নাতি ছিল বিপ্লব। সে ছিল আমাদের বংশের বাতি। কিন্ত গুলি করে সেই বাতি নিভিয়ে দিলো।