NYC Sightseeing Pass
ঢাকা, বুধবার, এপ্রিল ৩০, ২০২৫ | ১৬ বৈশাখ ১৪৩২
Logo
logo
পরিবার নিয়ে ইতালি যাওয়া হলো না মোবারকের, সবাই মারা গেলেন বেইলি রোডে

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ড


খবর   প্রকাশিত:  ২৯ এপ্রিল, ২০২৫, ০৮:৫১ পিএম

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ড

ঢাকার বেইলি রোডের ‘কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্ট’ ভবনে অগ্নিকাণ্ডের খবর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে প্রচার করা হয়েছে।   বিবিসি, রয়টার্স, দ্য গার্ডিয়ান, নিউইয়র্ক টাইমস্‌, ভয়েস অব আমেরিকা, দ্য ন্যাশনাল, টাইমস অব ইন্ডিয়া, বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডসহ প্রায় সব আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেই এই খবর উঠে এসেছে।   বৃহস্পতিবার রাত ৯টা ৫০ মিনিটের দিকে রাজধানীর বেইলি রোডে একটি বহুতল ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। সাততলা ওই ভবনে কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্ট, খানাস, ফুকো, অ্যাম্ব্রোশিয়াসহ একাধিক রেস্টুরেন্ট রয়েছে ও দোতলায় কাপড়ের দোকান 'ক্লজেট ক্লাউড' ও 'ইলিয়েন' রয়েছে।  ঘটনার পরপর আগুন লাগার সংবাদ পায় ফায়ার সার্ভিস। ফায়ার সার্ভিসের অন্তত ১৩টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নেভানোর কাজ করে। প্রায় দুই ঘণ্টা পর রাত ১২টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।  এতে অন্তত ৪৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। ৭৫ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয় ও ৪৫ জনকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। এছাড়া, গুরুতর আহত হয়েছেন অন্তত ২২ জন। এ ঘটনায় নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

পরিবার নিয়ে ইতালি যাওয়া হলো না মোবারকের, সবাই মারা গেলেন বেইলি রোডে

ইতালি প্রবাসী সৈয়দ মোবারক হোসেন কাউছারের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিলো পরিবারের সকলকে নিয়ে ইতালিতে সেটেলড হওয়ার। অবশেষে সেই স্বপ্ন পূরণও হতে চলেছিলো। গত ২৯ শে ফেব্রুয়ারি দুই মেয়ে ফাতেমা তুজ জোহরা কাশফিয়া ও আমেনা আক্তার নূর, আট বছর বয়সী ছেলে সৈয়দ আব্দুল্লাহ ও তার স্ত্রী স্বপ্না আক্তারের জন্য ভিসা পেয়েছিলেন। আগামী ১৮ই মার্চ পুরো পরিবার নিয়ে তাদের ইতালির উদ্দেশে রওনা দেয়ার কথা ছিলো। সেই আনন্দ উদযাপন করতেই বৃহস্পতিবার রাতে বেইলি রোডের কাচ্চি ভাই রেস্তোরাঁয় খেতে গিয়েছিলেন পরিবারটি। কিন্তু রাতের অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে মারা গেছে এই পরিবারের পাঁচজনই। মোবারক হোসেনের পরিবারের নির্মম মৃত্যুর সংবাদে শোকে কাতর হয়ে পড়েছে গোটা ইউনিয়ন। আজ সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা থেকে তাদের লাশ নিজ গ্রাম শাহবাজপুরের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়ার কথা রয়েছে বলে জানিয়েছেন তার স্বজনরা।   পরিবার ও স্থানীয় সূত্র জানায়, শাহবাজপুর খন্দকার পাড়ার প্রয়াত সৈয়দ আবুল কাশেমের ছেলে সৈয়দ মোবারক হোসেন। এলাকায় তিনি সবার কাছে কাউছার নামেই পরিচিত ছিলেন। কাউছার ইতালিতে ব্যবসা করতেন।  বিজ্ঞাপন    Learn more তার পরিবার ঢাকার মধুবাগে বসবাস করতেন। কাউছারের স্বপ্ন ছিলো পরিবারের সকলকে নিয়ে ইতালিতে বসবাস করবেন। সেই স্বপ্ন পূরণও হতে যাচ্ছিল। কিন্তু বাস্তবে রূপ নেয়ার আগেই সব তছনছ হয়ে গেলো। পরিবারের অন্য সদস্যদের ইতালি নিয়ে যেতে প্রায় ২ সপ্তাহ আগে কাউছার দেশে এসেছিলেন। গত ২৯ ফেব্রুয়ারি পরিবারের ৫ সদস্যেরই ইতালির ভিসা হয়েছে। দীর্ঘ সময় প্রতিক্ষার পর কাউছারের স্বপ্ন পূরণ হওয়ায় খুবই আনন্দিত হয়েছিলেন তিনি। আনন্দে কাউছার পরিবারের সকলকে নিয়ে রাতে ওই হোটেলে গিয়েছিলেন ডিনার করতে। এই ডিনারই যে কাল হবে, সেটা জানা ছিলো না কাউছারের। খাবার শুরু করার পরই ওই হোটেলে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে সবকিছু লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। লোকজনের চারিদিকে ছুটোছুটি, আর্তচিৎকার, আহাজারি আর বাঁচার আকুতিতে ভারী হয়ে ওঠে বেইলি রোডের পরিবেশ। অগিকাণ্ডের লেলিহান শিখা দেখে হোটেলে আটকে পড়াদের অনেকেরই পালস বন্ধ হয়ে যায়। শেষ রক্ষা হয়নি ইতালি প্রবাসী কাউছার ও তার পরিবারের পাঁচ সদস্যের। একে একে আগুনে পুড়ে মৃত্যুবরণ করেছেন সৈয়দ মোবারক হোসেন কাউছার, তার স্ত্রী স্বপ্না বেগম, দুই মেয়ে সৈয়দা নূর, সৈয়দা কাশফিয়া ও একমাত্র ছেলে সৈয়দ আব্দুল্লাহ। কাউছারের স্বজন মো. ফয়সাল বলেন, ইতালিতে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল পরিবারটি। ভিসাও হয়েছিল।

পরিবারের সকলকে খেতে যাওয়াটাই কাল হলো তাদের। ইতালি যাওয়ার স্বপ্ন অপূরণীয় রয়ে গেলো। ওই পরিবারে আর কেউ বেঁচে রইল না।  গোটা পরিবারের এমন আকস্মিক নির্মম মৃত্যুর সংবাদে শোকে কাতর হয়ে পড়েছে স্বজন পাড়া প্রতিবেশী গ্রাম তথা গোটা শাহবাজপুর ইউনিয়ন। চারিদিকে চলছে আহাজারি। বৃহস্পতিবার ভোর থেকেই কাউছারদের খালি বাড়িতে ছুটে আসছেন শতশত নারী পুরুষ। সকলের চোখেই অশ্রু।  শাহবাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান খায়রুল হুদা চৌধুরী বাদল বলেন, খুবই ভালো মানুষ ছিলেন কাউছার। এমন একটি পরিবারের সকল সদস্যের আকস্মিক নির্মম মৃত্যু কোনভাবেই মেনে নিতে পারছি না আমরা। শোকে কাতর হয়ে পড়েছে গোটা ইউনিয়ন। শোকাহত হয়ে পড়েছে আমাদের ইউনিয়ন পরিষদ।  প্রয়াত কাউছারের মামাত ভাই মো. আতিকুর রহমান বাদল জানান, সকাল সাড়ে ৯টার পর ৫ লাশ নিয়ে ঢাকা থেকে শাহবাজপুরের উদ্দেশ্যে  রওনা দিয়েছেন। গ্রামের বাড়ি সরাইলের শাহবাজপুরেই তাদের দাফন করা হবে।