NYC Sightseeing Pass
ঢাকা, মঙ্গলবার, এপ্রিল ২৯, ২০২৫ | ১৬ বৈশাখ ১৪৩২
Logo
logo

চীন বৈধ ও আন্তর্জাতিক ব্যবসায়িক পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে


আন্তর্জাতিক ডেস্ক প্রকাশিত:  ২৯ এপ্রিল, ২০২৫, ০৭:২১ এএম

চীন বৈধ ও আন্তর্জাতিক ব্যবসায়িক পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে

 

 




সিমেন্স চীনের ছেংতুতে শিল্প অটোমেশন স্মার্ট উৎপাদন ভিত্তি তৈরি করতে নতুন করে ১ শত ১০ কোটি ইউয়ান বিনিয়োগ করেছে।

১ হাজার কোটি ইউয়ান বিনিয়োগ করে বিএমডাবলিউ ষষ্ঠ প্রজন্মের পাওয়ার ব্যাটারি প্রকল্প শেনইয়াং-এ শুরু করেছে।

মার্কিন টিকা উৎপাদনকারী কম্পানি মোডের্না একটি বিনিয়োগ স্মারক স্বাক্ষর করেছে, প্রস্তুতি নিচ্ছে চীনে এমআরএনএ ওষুধের গবেষণা, উৎপাদন ও বিক্রয়ের চলতি বছরের শুরু থেকেই চীনে এভাবে বিদেশী বিনিয়োগ বাড়ছে। 

১৭ জুলাই চীন সরকার প্রকাশ করে ২০২৩ সালের প্রথমার্ধের জাতীয় অর্থনৈতিক উপাত্ত। প্রাথমিক হিসাব অনুসারে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে চীনের জিডিপি ছিল ৫৯,৩০৩৪০ কোটি ইউয়ান, যা স্থির মূল্যে হিসাব করলে গত বছরের তুলনায় ৫.৫% বেশি। এই বৃদ্ধির হার বিশ্বের প্রধান উন্নত অর্থনীতির তুলনায় বেশি। 

বিদেশী পুঁজি আকর্ষণের অনেক কারণ আছে।  এর প্রধান হচ্ছে চীনের বিশাল বাজার। ভোক্তাবাজারের দৃষ্টিকোণ থেকে, বছরের প্রথমার্ধে, চীনে ভোগ্যপণ্যের মোট খুচরা বিক্রয় ছিল ২২,৭৫৮৮০ কোটি ইউয়ান, যা গত বছরের তুলনায় ৮.২% বেশি। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ভোগের অবদান ৭০% ছাড়িয়ে গেছে, যা গত বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। 

জার্মান অটোমেকার মার্সিডিজ-বেঞ্জ গ্রুপের প্রকাশিত বছরের প্রথমার্ধের বিক্রয় তথ্য অনুসারে, চীনা বাজার তার বৃহত্তম একক বাজার হিসাবে নিজের অবস্থান ধরে রেখেছে। বছরের প্রথমার্ধে, চীনে গাড়ি বিক্রয়ের সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ৭৪ হাজার ৬০০টি, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭% বেশি।

দেখা যাচ্ছে, বিদেশী বিনিয়োগকারীরা প্রকৃত অর্থে লাভবান হচ্ছে। চীনের জাতীয় বিদেশী মুদ্রা বিনিময় ব্যবস্থাপনা ব্যুরোর তথ্য অনুসারে, গত পাঁচ বছরে, চীনে বিদেশী বিনিয়োগের রিটার্ন হার ৯.১%, ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রে যা প্রায় ৩ শতাংশের মতো। আর উদীয়মান অন্যান্য অর্থনীতির ক্ষেত্রে যে হার ৪% থেকে ৮%। 

চলতি বছরের শুরু থেকে, চীন সক্রিয়ভাবে একটি উচ্চ-মানের বাজারব্যবস্থা গড়ে তোলার কাজ সামনে এগিয়ে নিয়েছে, একটি একীভূত জাতীয় বাজার নির্মাণকাজকে ত্বরান্বিত করেছে, স্থিতিশীলভাবে গঠনমূলক উন্মুক্ততা প্রসারিত করেছে, এবং একটি বাজার-ভিত্তিক, বৈধ ও আন্তর্জাতিক ব্যবসায়িক পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এই প্রেক্ষাপটে, মাইক্রোসফ্ট, অ্যাপল, টেসলা, ফাইজার, স্টারবাকস, রিও টিন্টো এবং সৌদির আরামকোর মতো আন্তর্জাতিক কম্পানির নির্বাহীরা একের পর এক চীন সফরে এসেছেন। এসব কম্পানির কাছে "বিনিয়োগ ও লাভের অনুপাত" প্রধান বিবেচ্য বিষয়। 

বর্তমানে "চীন বিশ্বব্যাপী শিল্পচেইন ও সরবরাহচেইন পরিচালনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক শক্তি” এবং এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সমাজের মধ্যে ঐকমত্য রয়েছে। চলতি বছরের প্রথমার্ধে, চীনের পণ্যবাণিজ্যের মোট আমদানি ও রপ্তানির মূল্য ছিল ২০.১ ট্রিলিয়ন ইউয়ান, যা গত বছরের তুলনায় ২.১% বেশি। আন্তর্জাতিক চাহিদার মন্দাভাবের মধ্যে এ অর্জন সহজ ছিল না। 

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ২০২৩ সাও পাওলো কনজিউমার ইলেকট্রনিক্স শোতে, "মেড ইন চায়না" ল্যাটিন আমেরিকান বাজারে জনপ্রিয়তা পায় এবং শিল্পের বিকাশের ধারাকে নেতৃত্ব দেয়। ব্রাজিলের একজন ক্রেতা বলেছেন, চীনা কম্পানিগুলোর কাছে এখন খুব নির্ভরযোগ্য প্রযুক্তি ও পণ্য রয়েছে এবং তারা তাদের বাড়িতে চীনে তৈরি সুইপিং রোবটও ব্যবহার করছেন। 

চীন বিদেশী বিনিয়োগকারীদের অনেক সুযোগ-সুবিধা দিয়ে আসছে। সম্প্রতি, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ‘বিনিয়োগ সুবিধাকরণ চুক্তির’ পাঠ্য নিয়ে আলোচনা শেষ হয়েছে। এতে "বিনিয়োগ সুবিধা" ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয়। আলোচনা চলাকালে চীনা পক্ষ ধারাবাহিকভাবে ১৫টি আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পেশ করে এবং বিভিন্ন সমস্যার বাস্তবধর্মী সমাধান পেশ করে। তাদের কার্যক্রম আলোচনার সার্বিক সাফল্য অর্জনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর অনুমান অনুসারে, যদি এই চুক্তি কার্যকর হয়, তাহলে এটি বিশ্বে ১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুবিধা নিয়ে আসবে। 

বর্তমানে বৈশ্বিক অর্থনীতি উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ভূ-রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব, জ্বালানি ও খাদ্য সংকটের মতো একাধিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে এবং "স্থিতিশীলতা" একটি দুর্লভ সম্পদে পরিণত হয়েছে। এ অবস্থায় চীন স্থিতিশীলতার নিশ্চয়তা দিচ্ছে। চীনের অর্থনৈতিক সক্ষমতার সামগ্রিক পুনরুদ্ধার পুরো বছরের জন্য অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের প্রত্যাশিত লক্ষ্য অর্জনের ভিত্তি স্থাপন করেছে বলা চলে। 

কিছু বিদেশী সংবাদমাধ্যম উল্লেখ করেছে যে, ওয়াল স্ট্রিট চলতি বছরের বাকি সময় "একটি বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তি হিসাবে তার ভূমিকা বজায় রাখতে" চীনের ওপর নির্ভর করছে। বর্তমানে, চীনের সরকারি মনোভাব খুবই স্পষ্ট: প্রবৃদ্ধি স্থিতিশীল করতে হবে, কর্মসংস্থান স্থিতিশীল রাখতে হবে, এবং ঝুঁকি কমাতে হবে। যদিও বাহ্যিক পরিবেশ দিন দিন জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে এবং অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক উন্নয়নের চাপও রয়েছে, কিন্তু চীনের দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মৌলিক বিষয়গুলো পরিবর্তিত হয়নি। চীনের অর্থনীতির শক্তিশালী স্থিতিস্থাপকতা, দুর্দান্ত সম্ভাবনা এবং গতিশীলতার বৈশিষ্ট্যগুলোও পরিবর্তন হয়নি। এটাই হলো "চীনে বিনিয়োগ হচ্ছে ভবিষ্যতের জন্য বিনিয়োগ" এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সমাজ মোটামুটি একমত।  সূত্র:ইয়াং-আলিম-ছাই, চায়না মিডিয়া গ্রুপ।