সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের হাসপাতালে ভর্তির হার বেড়েছে এবং সে দেশে মহামারী আরেকবার শীর্ষে পৌঁছেছে। গত তিন বছরের রুটিন অনুযায়ী, যখনই এমন পরিস্থিতি ঘটে, তখনই যুক্তরাষ্ট্র চীন নিয়ে কথা বলে।
২০২২ সালের ৭ ডিসেম্বর থেকে ২০২৩ সালের ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে চীন তার মহামারী প্রতিরোধ নীতিমালা এবং সর্বশেষ নতুন ১০টি ব্যবস্থা প্রকাশ করেছে। একে চীনের মুখে কালিমালেপন এবং চীনের ওপর আক্রমণ চালানোর সুযোগ হিসেবে বেছে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
এ সময় চীন নিয়ে মার্কিন গণমাধ্যমের প্রচারে ‘ভাইরাসের রূপান্তর’ ছাড়া, ‘মুদ্রাস্ফীতি’ ও ‘সরবরাহ চেইনসহ অর্থনীতি সংক্রান্ত শব্দগুলো প্রাধান্য পেয়েছে। ২০২২ সালের জুন মাসে যখন চীন মহামারী প্রতিরোধ নীতি পরিবর্তন করেনি, তখনও মার্কিন গণমাধ্যমের মূল শব্দগুলো প্রায় একই ছিল।
এ থেকে দেখা যায়, প্রকৃত পক্ষে চীনের মহামারী নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধের নীতি যাই হোক না কেন, যুক্তরাষ্ট্র এই মহামারীকে ব্যবহার করে চীনকে অপমান করতে চায়।
অর্থনীতিকে ঘিরে স্নাইপারের গুলি ছুড়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের মহামারীকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের একটি অপকৌশল। আগে যুক্তরাষ্ট্র ভাইরাস সনাক্তকরণ নিয়ে অপরাজনীতি করে চীনের মুখে যে কালিমালেপনের চেষ্টা করেছে-তা ব্যর্থ হয়েছে। এখন যুক্তরাষ্ট্র চীনের অর্থনীতিতে কালিমালেপনের মাধ্যমে চীনকে ‘বিচ্ছিন্ন’ করার কথা ভাবছে।
সর্বোপরি, চীন যাই করুক না কেন, আমেরিকান রাজনীতিবিদদের কাছে তা একেবারেই ভুল। তবে, বাস্তবতা হলো গত বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত বৈশ্বিক রপ্তানিতে চীনের অবদানের হার ছিল সর্বোচ্চ। বিগত তিন বছরে চীন শিল্প চেইন স্থিতিশীল করেছে এবং সরবরাহ নিশ্চিত করেছে, যাতে শক্তিশালী বৈশ্বিক অর্থনীতির পুনরুদ্ধারে সমর্থন করা যায়। আর যুক্তরাষ্ট্রের দিকে তাকালে দেখা যায়, সে দেশ একতরফা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে বৈশ্বিক সরবরাহ এবং শিল্পচেইনে বিশাল আঘাত হেনেছে।
সম্প্রতি ভাইরাসের নতুন প্রজাতি এক্সবিবি ১.৫ যুক্তরাষ্ট্রে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে, যুক্তরাষ্ট্র মহামারী প্রতিরোধনা করে একে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। প্রথমে চীনা পর্যটকদের ওপর প্রবেশ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে এবং মিত্রদেশগুলোকে একই পথ অনুসরণ করার কথা বলেছে। তবে, সে ইচ্ছাপূরণ হয়নি। কারণ ইউরোপের রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র মনে করে, বর্তমানে চীনে প্রচলিত প্রজাতির ইউরোপের বর্তমান মহামারীকে প্রভাবিত করার সম্ভাবনা নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের অতিরঞ্জিত করা চীনের অর্থনৈতিক সমস্যার ভিত্তি নেই।
সম্প্রতি চীনে ১৬০টিরও বেশি-বিদেশি পুঁজিবিনিয়োগকারী উদ্যোগ এবং বিদেশি বাণিজ্যিক সমিতির ওপর চালানো এক জরিপে দেখা যায়, মোট ৯৯.৪ শতাংশ উত্তরদাতা ২০২৩ সালে চীনের অর্থনীতির উন্নয়নের ভবিষ্যত নিয়ে আস্থাশীল। আর ৯৮.৭ শতাংশ বিদেশি উদ্যোগ চীনে তাদের পুঁজি বজায় রাখবে বা সম্প্রসারণ করবে বলে জানিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কাছে মহামারী কেবল গণস্বাস্থ্যের ব্যাপার নয়, বরং একটি হাতিয়ার, যা দিয়ে নানা স্বার্থ হাসিল করা যায়। আর এটাই হলো মহামারী থেকে বিশ্বের মুক্তি পাওয়ার পথে সবচেয়ে বড় বাধা। সূত্র: লিলি, সিএমজি।