জ্যাকসন
হাইটসের
সেই
আড্ডার
স্টাইলই
বদলে
যায়
আকবর হায়দার কিরন
সেই দিনগুলোতে, প্রায় তিরিশ বছরের আগের কথা,
জ্যাকসন হাইটসে তখনো প্রবাসীদের ঢল ছিলোনা,
এখন যেখানে আপনা সবজী মন্ডি তার পাশে ছিলো আলাদিন, ক্রীড়াবিদ হারুনুর রশিদ ভাইয়ের রেঁস্তোরা
কিছুদিন পর সাঈদ রহমান মান্নান ভাইয়ের গ্রোসারী
এরপর একে একে এলো আলাদিন, হাটবাজার, খামার বাড়ী, খাবার বাড়ী , অবকাশ এবং গ্রাফিক্স ওয়ার্ল্ড।
এলো শাহীন রহমানের ডিসকো রেকর্ডিং , অনন্যার সৈয়দ শহীদ
লিটন ভাইয়ের আড়ং, মৃনাল হকের শহীদ মিনার নিয়ে সবজী মন্ডির দেয়ালে বিশেষ মুরাল।
সংযোজন হলো প্রিয় ড. মনসুর খান ভাই ও নাঈমা আপার খান কোচিং
আমার সাংবাদিকতার অন্যতম ঘনিষ্ঠজন কাজী মন্টু ভাই ও মইন উদ্দিন নাসের ভাইয়ের নিজস্ব অফিস।
ঘটনাক্রমে এই একই স্ট্রিটের বার্চউড হাউসে বসবাস ছিলো
আমার ও ভাগনে এজাজের-- জীবন যাপন বহু বছর!
এতোদিন, এতো বছর পর বদলে গেল যেন অনেক কিছু!
দেখা হলে মান্নান ভাইয়ের সালাম ও কুশল বিনিময়, নিহার ভাই সহ তাঁর জীবনের শেষ সাক্ষাত্কার।
মান্নান ভাই অকালেই স্মৃতি হয়ে গেলেন।
ডিসকো রেকর্ডিং এর শাহীন ভাইয়ের দোকানে ইফতার এবং আড্ডার ইতি হয়ে গেছে তাঁর প্রয়াণের পর।
তারপর স্মৃতি হয়ে গেলেন মনসুর ভাই , কামাল আহমেদ ভাই, আড়ং-এর আমার বেয়াই লিটন ভাই,
আজাদ বাকির ভাই, সবার চেনাজানা যৌবন আলী!
এখন আর সেই দিনগুলোর মত একই রকম সময় কাটেনা।
এখন নবান্ন, মামা, ইটজি , ইত্যাদি কিংবা আবদুল্লায় কাটে কিছু কিছু সময়।
ঢাকা গার্ডেনে জিয়া ভাই বেঁচে থাকলে হয়তো আড্ডা হতো।
অপুদার 'কথা' রেস্তোরায় মুড়ি ভর্তা খেতে যাই নিহার ভাই, মাইন ভাই , শাম্মু ভাই কিংবা
আনোয়ার ভাই সহ -- রাতের বেলায় সেখানে প্রায়ই দেখা হয়ে যায় আমার শৈশবের বন্ধু এবং বিখ্যাত বেবী নাজনীনের সাথে।
জ্যাকসন হাইটসের আমার সবচেয়ে প্রিয় জায়গা হলো
প্রিয় সাকিল মিয়ার গ্রাফিক্স ওয়ার্ল্ড। সেখানেই যেন আমাদের ঘনিষ্ঠজনদের মিলনমেলা।
রোজার সময় সাকিল ভাই সবকিছু ফেলে একমাত্র কাজ যেন ইফতার বানানো।
বছরের পর বছর তাঁর ইফতারের জায়গা যেন কাঙ্খিত স্থান।
কাজের শেষে বাড়ী ফেরার সময় কিংবা ছুটির দিনে যেন যেতেই হবে সাকিল মিয়ার ওখানে,
বসে হাটবাজারের চা খেতে হবে নেশার মতো,
পড়ন্ত বিকেল কিংবা সন্ধ্যায় কয়েক কাপ চা নিয়ে ঢুকবেন গোপাল সান্যাল দাদা কিংবা আনোয়ার ভাই।
আবার একই জায়গায় প্রায়ই দুপুরের খাবার খেতে হয় সাকিল ভাই ও হাসান ভাই তাঁদের সাথে।
আমরা অনেকেই যেন আল্লাহর ওয়াস্তে সামিল হয়ে যাই।
কোন কোন দিন সাকিল ভাই সাথে নিয়ে পছন্দের খাবার কিনবার সুযোগ পেয়ে যাই আমিও।
ইদানিং আমাদের প্রিয়জন হয়ে গেছেন মাইন উদ্দিন ভাই,
আলমগীর খান আলম ভাইয়ের মত বিশিষ্টজনও পছন্দ করেন তাঁকে।
সাকিল ভাইয়ের অফিসের ভেতরের রুমের চেয়ারটি ছিলো আমার বিশেষ প্রিয় আসন।
জ্যাকসন হাইটসে এলে সেই চেয়ারটাতে বসা আমার স্টাইল
কিংবা জীবনের একটি অংশ।
নিহার ভাই যখনই এখানে নাজিল হন তখন যেন দৃশ্য পাল্টে যায়, হয়ে যায় হৈচৈ প্রানবন্ত!
অনেক রাতে এলে সাকিল মিয়ার দোতারা কিংবা হারমোনিয়াম বাজিয়ে মাতিয়ে তোলেন শাম্মু ভাই।
শাহ মাহবুব ভাইয়া ছাড়া এখানে কল্পনা করা যায়না।
শিল্পী রাগিব আহসান ভাই গভীর রাতে শৈল্পিক গরুর গোস্ত,
মেহমানদের মধ্যে বব , বিপ্লব ছাড়া অকল্পনীয়!
আমাদের এনায়েত করিম বাবুল ভাইয়ের মেঘনা শপিং সেন্টারের অফিসে অনেক রাত কাটতো,
সেখানে মোশাররফ হোসেন ভাইয়ের সাহিত্য একাডেমীর আসর আর সেখানে আর হয়না, এখন শুধুই স্মৃতি
এইতো আমাদের জ্যাকসন হাইটসে জীবন যাপন!
নভেম্বর ৮, ২০২২
উডসাইড, নিউইয়র্ক।