বিভিন্ন প্রতিকূলতা এবং আঁকাবাকা পথে গণচীনের সমাজতান্ত্রিক বিনির্মাণের কাজ অব্যাহতভাবে এগিয়ে চলছে। অনুশীলনের মধ্যদিয়ে সফলতাকে ধারণ করে ব্যর্থতাকে পরিহার করে প্রতিদিন প্রতিমুহূর্তে সমাজতান্ত্রিক সমাজ পুষ্ঠ হচ্ছে ৪র্থ জেনারেশনের নেতা কমরেড শি জিনপিং পার্টির নেতৃত্বে অধিষ্ঠীত হবার পর থেকে গণচীনের আন্তর্জাতিক ভাবমুর্ত্তি এবং অভ্যন্তরীণ ঐক্য অব্যাহত বিকাশ লাভ করছে। ২০১২ সালে ক্ষমতা করেন। কমরেড শি জিনপিং নেতৃত্ব গণ চীন ২০২০ সালের দারিদ্র মুক্ত হয়েছে এবং দুর্নীতি দমনের ক্ষেত্রে দুর্নীতি পরায়ণ উচ্চ পর্যায়ের বাঘ এবং নিম্ন পর্যায়ের মাছি মধ্যে কোন পার্থক্য রেখা টানেন নি, সকল প্রকার দুর্নীতি গ্রস্তদের বিরুদ্ধে উনার অব্যাহত সংগ্রাম তার ভাবমূর্তিকে বৃদ্ধি করেছে।
কমরেড শি জিনপিং দায়িত্ব নেবার প্রথম থেকেই পার্টির আদর্শকে কঠোরভাবে অনুশীলন, সদস্যদের প্রশিক্ষণের নতুন ও কঠোর নিয়ম বাস্তবায়ন করা হয়, যার মধ্যে দিয়ে দলীয় সসদ্যদের অবনমন এবং শৃঙ্খলায়ন নিয়ে আসা যায়। এই প্রক্রিয়ার ভিতর দিয়ে সমাজ ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের সর্বত্র পার্টির নেতৃত্বকে প্রতিষ্টিত করা হয়। কমরেড শি জিনপিং এর মূল লক্ষ্য চীনা কমিউনিস্ট পার্টিকে আধুনিক জ্ঞান সম্পন্ন বুদ্ধিদীপ্ত চিন্তার উপর ভিত্তি করে অগ্রসর চিন্তাশীল একটি শক্তিশালী ক্ষমতাসীন দল হিসেবে গড়ে তোলা এবং সর্বাত্মক ভাবে এ লক্ষ্যে নিজেকে আত্মনিয়োগ করেন। এ ব্যাপারে তিনি অনেক সাফল্য অর্জন করেছেন। ১৯তম কংগ্রেসে উত্থাপিত রাজনৈতিক রিপোর্ট বলেছে, চীনা সমাজতন্ত্রের বর্তমান অবস্থান এক ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষন। চীনা সমাজতন্ত্রের অগ্রগতি এই নতুন যুগে মধ্য মঞ্চের কাছাকাছি চলে যাবে এবং মানবজাতির জন্য হবে এই যুগ আরো কল্যাণকর। কমরেড শি জিন পিং তার প্রতিবেদনে বলেন, “চীনা কমিউনিস্ট পার্টি ও সরকার মহান আধুনিক সমাজতান্ত্রিক দেশ গড়ে তুলার লক্ষ্যে ২০২০ সালের মধ্যে সব ক্ষেত্রে মাঝারি শ্রেণীর সমৃদ্ধ সমাজ হিসেবে আর্বিভূত হবে। ২০২০ সাল থেকে ২০৩৫ সালের মধ্যে সমাজতন্ত্রের আধুনিকায়ন সম্পন্ন করা হবে এবং ২০৩৫ সাল থেকে একুশ শতকের মাঝামাঝি নাগাদ চীন একটি আধুনিক ও সমৃদ্ধ মডেল স্যোসালিস্ট কান্ট্রি হয়ে উঠবে। সেই আধুনিক সমাজতান্ত্রিক চীন হবে সমৃদ্ধ শক্তিশালী, গণতান্ত্রিক, সাংস্কৃতিকভাবে অগ্রসর, সম্প্রীতিপূর্ণ ও সুন্দর।”
চীনা সমাজতন্ত্র নতুন যুগে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে দ্বন্দ্ব নতুন মাত্রায় বিকাশ লাভ করেছে। সেই দ্বন্দ্ব হল ভারসাম্যহীন ও অপর্যাপ্ত উন্নয়নের সহিত জনগণের চাহিদার দ্বন্দ্ব। চীনা সমাজের দ্বন্দ্ব বৈরীমূলক দ্বন্দ্ব না থাকলেও ভারসাম্যহীন ও অপর্যাপ্ত উন্নয়নের সহিত জনগণের চাহিদার দ্বন্দ্ব বিরাজ মান অর্থাত্ শ্রেণীদ্বন্দ্বের স্থলে উন্নয়ন ও জনগণের দ্বন্দ্ব বিরাজ লাভ করেছে।
ভারসাম্যহীন ও অপর্যাপ্ত উন্নয়ন বলতে কমরেড শি জিনপিং বুঝিয়েছেন উন্নয়নের জন্য পরিবেশ যেমন পানি ও বাতাস বিষাক্ত করে প্রাকৃতিক পরিবেশ বিনষ্ট করে যে উন্নয়ন সাধিত হয়েছে সে উন্নয়ন অপর্যাপ্ত ও ভারসাম্যহীন। তার মতে মানুষ ভালো জীবনযাপন করতে চান কিন্তু যে মানুষের দৈনিক ভোগের পরিমাণ ১ মার্কিন ডলারের ও কম তার কাছে ভাল জীবনযাপনের স্বপ্ন হাজার যোজন দূরে অবস্থান করে। যারা অক্সফোর্ড কিংবা কেমব্রিজ পড়ালেখা করতে চান কিংবা ছুটি কাটাতে ক্যালিফোর্নিয়া অথবা সিডনীতে বাড়ি কিনেন তাদের মত করে ভোগ বিলাস করতে পারবেন না। বর্তমানে ধনী চীনারা আমেরিকা, কানাডা বা অস্ট্রেলিয়ার পাসপোর্ট পাবার ব্যাপারে খুবই আগ্রহী। কমরেড শি বলেছেন, এ ধরনের ভারসাম্যহীন এবং অর্পযাপ্ত উন্নয়নের সহিত জনগণের দ্বন্দ্বই এখন চীনের প্রধান দ্বন্দ্ব।
উন্নয়নের মাত্রাগত তারতম্য যাই থাকুক মানুষ চায় ভালো জীবনযাপানের গ্রারান্টি। বর্তমান চীনা জনগণ চান আরও বৈষয়িক স্বচ্ছন্দ। চীনের প্রাথমিক ধাপের সমাজতন্ত্রের দ্বন্দ্বের কথা বলতে গিয়ে কমরেড শি উল্লেখ করেন যে, জনগণের ভালো জীবনযাপনের ক্রমবর্ধমান চাহিদাই চীনা জনগণের প্রধান দ্বন্দ্ব। জনগণের চাহিদা কী সেটা বুঝা দরকার।
কমরেড শি জিনপিং এর ভাষায়, “এখন জনগণের চাহিদা হচ্ছে পরিবেশ বান্ধব প্রযুক্তি ও কল কারখানা, নিরাপত্তা, গণতন্ত্র, আইনের শাসন, পক্ষপাত বিহীন বিচার ব্যবস্থা, ন্যায় বিচার ও উন্নত পরিবেশ।” শি জিনপিং চীনা জনগণের চাহিদাগুলো সনাক্ত করে সেগুলো বাস্তবায়নের ব্যাপারে দুই ধাপ সময় নিয়েছেন ২০২০-২০৩৫ এবং ২০৩৫-২০৫০ অর্থাত্ ৩০ বছর এ সময়ের চীন সমাজতন্ত্রের প্রবণতা সাধনে বদ্ধ পরিকর। জিন পিং এর দক্ষতা, ব্যক্তিত্ব, ক্ষমতা ও আত্মপ্রত্যয়ের দিকে তাকালে মনে হয়, তাঁর নেতৃত্বে চীনা কমিউনিস্ট পার্টি লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হবেন।