প্রথম আলো উত্তর আমেরিকার মাসিক আয়োজন 'উত্তরের নকশা'র সম্পাদক মনিজা রহমানকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়েছে। ১৪ জানুয়ারি শনিবার 'উত্তরের নকশা'র ৫ম বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে তাঁকে সম্মাননা স্মারক তুলে দিয়েছেন টাউনশিপ অফ ফ্রাঙ্কলিন, কাউন্টি অফ সমারসেট, নিউ জার্সি স্টেটের কাউন্সিলওম্যান শেপা উদ্দিন। জ্যাকসন হাইটসের জুইশ সেন্টারে কানায় কানায় ভর্তি মিলনায়তনে শেফাউদ্দীন সমারসেট কাউন্টির মেয়র ও টাউনশিপ কাউন্সিলের সম্মাননা স্মারক তুলে দিলেন উত্তরের নকশার সম্পাদক মনিজা রহমানকে।

কাউন্সিল উইম্যান শেফাউদ্দীন আমেরিকার মূলধারার রাজনীতিতে এক সফল ও আলোকিত মানুষ। এই দেশে জন্ম ও বেড়ে উঠলেও তিনি ভোলেননি তাঁর শিকড়কে, যে কারণে বাংলা শিল্প ও সংস্কৃতিকে তিনি সব সময় পৃষ্ঠপোষকতা দেন।

উত্তরের নকশা সম্পাদক মনিজা রহমান সম্মাননা প্রাপ্তির প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘এই অর্জন অত্যন্ত আনন্দের। এই অর্জন শুধু আমার নয়, এই পাতার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার। প্রথম আলো উত্তর আমেরিকা পত্রিকা সব সময় নারীর জাগরন ও নারীর ক্ষমতায়নের কথা বলে, তারই এক অনন্য দৃষ্টান্ত আমাদের সম্মানিত কাউন্সিল উইম্যান শেফাউদ্দীন। ওনার হাত থেকে সম্মাননা স্মারক নিতে পারা আমার জন্য বিশাল এক প্রাপ্তি।

২০১৮ সালের জানুয়ারি মাস থেকে যাত্রা শুরু হয় প্রথম আলো উত্তর আমেরিকার লাইফ স্টাইল ও ফ্যাশন পাতা – উত্তরের নকশার। শুরু থেকে এই পাতাটি নিউইয়র্কের বাঙালি কমিউনিটিতে সাড়া ফেলে। ক্রমে এই পাতাটির সুনাম ছড়িয়ে পড়ে আমেরিকার অন্যান্য স্টেট ও প্রতিবেশী কানাডাতে। বাংলাদেশে বসবাসরত পাঠকরা অনলাইনে পড়ার মাধ্যমে উত্তরের নকশা থেকে উত্তর আমেরিকার মানুষের জীবনযাত্রা সম্পর্কে জানতে পারেন।

২০১৯ সালের জানুয়ারিতে উত্তরের নকশার প্রথম বর্ষপূর্তি ছিল সৌহার্দ্যপূর্ণ ও আন্তরিক।  ২০২০ সালে ‘সাজে ও সঙ্গীতে ষাটের দশক’ দারুণ সাড়া ফেলে দেয় চারদিকে। ওই অনুষ্ঠানে ষাটের দশকের নায়িকা সুচিত্রা সেন, কবরী, শবনম, সুচন্দা, মালা সিনহা সেজে এসে প্রতিযোগিরা চমকে দেয় সবাইকে। এই অনুষ্ঠান ছিল নিউইয়র্কের বাঙালি কমিউনিটির জন্য এক মাইল ফলক। ২০২৩ সালে এসেও উত্তরের নকশা তাদের বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে এক মাইল ফলক স্থাপন করল। প্রথম বারের মতো বাঙালি পোষাকে ফ্যাশন শো ও যুগল পারফরমেন্সের আয়োজন ছিল নিউইয়র্কে। এক্ষেত্রে তারাও পথপ্রদর্শক হয়ে রইল।

উত্তরের নকশার সম্পাদক মনিজা রহমানের প্রথম পরিচয় তিনি বাংলাদেশের প্রথম নারী ক্রীড়া সাংবাদিক। ১৯৯৭ সালে ছাত্রজীবনেই তিনি সাপ্তাহিক ক্রীড়ালোক থেকে ক্রীড়া বিষয়ক লেখালেখির সূচনা করেন। ১৯৯৯ সালে পেশাদার সাংবাদিক হিসেবে যাত্রা শুরু করেন দৈনিক মানবজমিনে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগ থেকে অনার্সসহ মাস্টার্স করা এক ছাত্রীর জন্য নারীদের জন্য অপ্রচলিত এক পেশা বেছে নেয়ায় অনেকেই বিস্মিত হয়েছিলেন। ২০০০ সালে মনিজা রহমান যোগ দেন সেই সময়ে বাংলাদেশের শীর্ষ দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকায়। শুরুটা সহজ ছিল না। রোদে পুড়ে-বৃষ্টিতে ভিজে তিনি চষে বেড়িয়েছেন খেলার মাঠ, অনুশীলন গ্রাউন্ড, প্রেসবক্স, গ্যালারি।

১২ বছর দৈনিক জনকণ্ঠে চাকরী করার পরে মনিজা রহমান প্রিন্ট মিডিয়া থেকে যোগ দেন ইলেকট্রনিক্স মিডিয়াতে। ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের স্পোর্টস এডিটর পদে দায়িত্ব পান তিনি। প্রথম নারী ক্রীড়া সাংবাদিকের মতো বাংলাদেশের প্রথম নারী ক্রীড়া সম্পাদকও তিনি। ক্রীড়া সাংবাদিক হিসেবে মনিজা রহমান বিশ্বকাপ ক্রিকেট, বাংলাদেশের অভিষেক টেস্ট, এশিয়ান গেমস, সাফ গেমস, সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ, এশিয়া কাপ হকি কভার করেন। তিনি চীন, জাপান, ওমান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, শ্রীলঙ্কা, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, ভারত সফর করেন।

২০০৪ সালে এশিয়ান অলিম্পিক কমিটি আয়োজিত লিডারশিপ ট্রেনিং নেন মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে। ২০০৫ সালে প্রেস ইন্সটিটিউট অব জাপানের এক ফেলোশিপে দেশটির ১২টি শহর সফর করেন। ২০১২ সালে ইন্টারন্যাশনাল অলিম্পিক কমিটির এক প্রোগামে অংশ দেন ওমানের রাজধানী মাসকটে।

২০১৪ সালের মার্চে বাংলাদেশ থেকে চলে আসেন নিউইয়র্কে। এখানে আসার পরে যুক্ত হন প্রথম আলো উত্তর আমেরিকার সঙ্গে। সেই সঙ্গে কলাম লেখেন অন্যান্য সব শীর্ষ পত্রিকায়। সাংবাদিকতার পাশাপাশি কবিতা, প্রবন্ধ, ছোট গল্প ও অনুবাদ করেন তিনি। ২০২৩ সালের ঢাকা বইমেলায় বাংলাদেশের শীর্ষ প্রকাশনা সংস্থা অন্যপ্রকাশ থেকে আসছে মনিজা রহমানের প্রথম উপন্যাস- ‘পরম সুন্দরী’।

মনিজা রহমানের বাবা প্রয়াত আবদুল মহিত ছিলেন পুরনো ঢাকার একজন নিবেদিতপ্রাণ ক্রীড়া সংগঠক। দাদার বাড়ি বরিশালে হলেও মনিজা বেড়ে ওঠেন গেন্ডারিয়ায়। দেশান্তরী জীবনের সূচনায় শুরুতে জ্যাকসন হাইটসে, বর্তমানে এস্টোরিয়ায় বসবাস করছেন সাংবাদিক স্বামী মনির হায়দার ও দুই সন্তান মনন-সৃজনকে নিয়ে। লেখালেখির পাশাপাশি মনিজা কাজ করছেন নিউইয়র্ক সিটির পাবলিক স্কুলে একজন শিক্ষক হিসেবে।