বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক দীর্ঘদিনের এবং বহুমুখী। এই সম্পর্ক কূটনীতি, বাণিজ্য, অবকাঠামো উন্নয়ন, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়ের ক্ষেত্রে গভীরতা অর্জন করেছে। ১. কূটনৈতিক সম্পর্ক বাংলাদেশ ১৯৭৫ সালে চীনকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয় এবং এরপর থেকে উভয় দেশের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রয়েছে। চীন বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান উন্নয়ন সহযোগী এবং কৌশলগত অংশীদার।
২. বাণিজ্য ও বিনিয়োগ চীন বাংলাদেশের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার। বাণিজ্য ঘাটতি: বাংলাদেশ চীন থেকে বিপুল পরিমাণ পণ্য আমদানি করে, তবে চীনে বাংলাদেশের রপ্তানি তুলনামূলকভাবে কম। শুল্কমুক্ত সুবিধা: চীন ২০২০ সালে বাংলাদেশকে ৯৭% পণ্যে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দিয়েছে, যা রপ্তানি বৃদ্ধিতে সহায়ক। চীনা বিনিয়োগ: চীনের কোম্পানিগুলো বাংলাদেশের অবকাঠামো, জ্বালানি ও প্রযুক্তিখাতে বিনিয়োগ করছে। ৩. অবকাঠামো ও উন্নয়ন সহযোগিতা চীন বাংলাদেশে পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী টানেল, বিভিন্ন মহাসড়ক ও রেলপথ নির্মাণসহ বড় বড় প্রকল্পে অর্থায়ন ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়েছে।
“বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ” (BRI)-এর আওতায় চীন বাংলাদেশে নানা অবকাঠামো প্রকল্প পরিচালনা করছে। ৪. প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বাংলাদেশের সামরিক খাতে চীন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর জন্য চীন থেকে বিভিন্ন সমরাস্ত্র কেনা হয়। দুই দেশের মধ্যে নিয়মিত সামরিক প্রশিক্ষণ ও কৌশলগত সহযোগিতা হয়। ৫. সাংস্কৃতিক ও শিক্ষা বিনিময় অনেক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী চীনে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছে, বিশেষত চিকিৎসা ও প্রকৌশল বিষয়ে। চীনা ভাষা শেখানোর জন্য কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশে কাজ করছে।
৬. ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব বাংলাদেশ ও চীনের সম্পর্ক ভারত, যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য আঞ্চলিক শক্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ চীন ও ভারতের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার নীতিতে চলে, যাতে কৌশলগত সুবিধা নেওয়া যায়। উপসংহার বাংলাদেশ ও চীনের সম্পর্ক সময়ের সাথে আরও শক্তিশালী হচ্ছে। তবে বাণিজ্য ভারসাম্য রক্ষা, ঋণের ওপর নির্ভরশীলতা কমানো এবং স্থানীয় শিল্প রক্ষা ।