জুলাই বিপ্লবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১৬ বছরের নেতৃত্বের যবনিকাপাত হয়েছে। বাংলাদেশের জন্মের আগে থেকে রাজনীতিতে একটি বড় শক্তি হিসেবে তার দল এখন টুকরো টুকরো জোড়া লাগানোর লড়াই করছে। ক্ষমা চাওয়ার মানসিকতা নেই দলের এমন হোমরাচোমরা, মধ্যম পর্যায়ের নেতা এবং কর্মীদের মধ্যে তীব্র বিভক্তি প্রকাশ পাচ্ছে। এসব নেতাকর্মী বিশ্বাস করেন,  কোথায় ভুল হয়েছে তা পেছন ফিরে দেখা দরকার আওয়ামী লীগের। তারা আরও মনে করেন- এটাই একমাত্র পথ। ৭৫ বছর বয়সী এই রাজনৈতিক দলটি তাদের সমস্যার সমাধান করে ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে পারে। এ বিষয়ে অনেক নেতাকর্মী কথা বলেছেন।

অনলাইন আল জাজিরায় প্রকাশিত ‘আফটার দ্য ব্লাডশেড: ক্যান বাংলাদেশ’জ আওয়ামী লীগ রিসারেক্ট ইটসেল্ফ?’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, যখন ২০২৪ সালের ১৬ই জুলাই ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে রংপুরে নিহত হন আবু সাঈদ, তখনো আওয়ামী লীগের অনেক নেতা ঠাণ্ডা মেজাজে আরাম করছিলেন। তাদের কাউকে কাউকে তার অফিসে কোনো স্থানীয় কবি কবিতা পাঠ করে শোনাচ্ছিলেন। আবৃত্তি শেষে তিনি বলে ওঠেন- ‘ওয়ান্ডারফুল’। এর কিছু সময় পরে আবু সাঈদ হত্যার তথ্য কোনো এক সহযোগী একজন নেতাকে জানান। কিন্তু তিনি তা উড়িয়ে দেন। বলেন- ওহ, কিছুই হবে না। নেতা (হাসিনা) সব কিছু ঠিক করে ফেলবেন। এর মধ্যদিয়েই প্রকাশ পেয়ে যায় ওই সময় আওয়ামী লীগের উপরিমহলের মনোভাব। অর্থাৎ মাঠপর্যায়ে কি হচ্ছে, তা তারা মোটেও আমলে নেননি। এর তিন সপ্তাহেরও কম সময় পরে কর্তৃত্ববাদ ও নৃশংসতা চালানোর অভিযোগে শেখ হাসিনার সরকারকে উৎখাত করে ছাত্রদের নেতৃত্বে গণ-অভ্যুত্থান। আইনপ্রয়োগকারীদের হামলায় বিক্ষোভকারী এবং পথচারীদের কমপক্ষে ৮৩৪ জন প্রাণ হারান। এই বিক্ষোভ শুরু হয় ১লা জুলাই। ৫ই আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে যাওয়ার মধ্যদিয়ে তার ইতি ঘটে। তবে হামলায় আহত হন কমপক্ষে ২০ হাজার মানুষ। তার মধ্যে আছেন শিশু ও নারী। দলটির এই পরিণতির জন্য দায় এড়িয়ে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের অনেক নেতা।

অজ্ঞাত স্থান থেকে ১৬ই জানুয়ারি আল জাজিরাকে ফোনে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম বলেন, আমরা আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের শিকার। এটা শিগগিরই প্রমাণ হবে। তবে তিনি কাকে বা কোন দেশকে দায়ী করছেন সুনির্দিষ্টভাবে তা বলেননি। তার এমন মন্তব্যের পর বিশ্লেষকরা বলছেন, তাদের দলের নেতৃত্বের যে ব্যর্থতা এবং জনগণের অভিযোগগুলো সমাধানে তাদের যে অক্ষমতা- তা ফুটে ওঠে এমন প্রত্যাখ্যানের মধ্যদিয়ে। পক্ষান্তরে তাদের এমন মন্তব্যে দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। এসব নেতাকর্মীর অনেকেই হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থার ভয়ে হয়তো আত্মগোপনে আছেন না হয় আতঙ্কিত। তারা একটি সুসংগঠিত দল থেকে ‘টপ-ডাউন’ কাঠামোতে রূপান্তরের কারণে সমালোচনা করছেন।

তারা বলছেন, এ কারণে দল জনগণের সেন্টিমেন্ট হারিয়েছে। ৫ই আগস্ট যখন জনতার বিশাল ঢেউ শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবনের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল, তখন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বোন শেখ রেহানার সঙ্গে গণভবন থেকে একটি সামরিক হেলিকপ্টারে উড়াল দেন। খুলনায় আওয়ামী লীগের ছাত্র বিষয়ক শাখা বাংলাদেশ ছাত্রলীগের স্থানীয় সিনিয়র একজন নেতা বলেন- ‘যখন টেলিভিশনে নাটকীয় ওই পলায়নের দৃশ্য সম্প্রচার হচ্ছিল, তখনো কিছু নেতাকর্মীকে নিয়ে আমি খুলনার রাজপথে অবস্থান করছিলাম। আমি আমাদের একজন সিনিয়র নেতা, স্থানীয় এমপিকে ফোন করার চেষ্টা করলাম। কিন্তু তার ফোন ছিল বন্ধ।’ তিনি বলেন- ‘ঠিক ওই মুহূর্তে আমার মনে হলো আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে’