বেশ কয়েক মাস ধরে অসুস্থ ছিলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত নৃত্যশিল্পী জিনাত বরকতউল্লাহ। অসুস্থতায় একাধিকবার তাঁকে হাসপাতালে ভর্তিও করানো হয়। মা জিনাত বরকতউল্লাহকে নিয়ে অভিনয়শিল্পী ও নৃত্যশিল্পী মেয়ে বিজরী বরকতউল্লাহ হাসপাতালে ব্যস্ত সময় পার করেন। বাসা-হাসপাতাল আর বাসা—এভাবেই চলছিল।   জিনাত বরকতউল্লাহর সঙ্গে মেয়ে বিজরী বরকতউল্লাহ সঙ্গে মেয়ে আজ বুধবার বিকেলে ধানমন্ডির বাসায় ছিলেন। দুপুরের খাবারের সময় তিনি নিস্তেজ হয়ে পড়েন। এরপর দ্রুত তাঁকে বাসা থেকে গ্রিন রোডের একটি হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭২ বছর।জিনাত বরকতউল্লাহর মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন তাঁরই মেয়ে বিজরী বরকতউল্লাহ।   বিজরী জানালেন, ‘মা করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর ফুসফুসের জটিলতায় ভুগতে থাকেন। এরপর তাঁর কিডনির জটিলতাও ছিল। এর মধ্যে স্ট্রোকও করেছেন। এদিকে আব্বার মৃত্যুর পর আম্মা অনেক ডিপ্রেশনে পড়েন। আব্বার না থাকাটাই আম্মাকে বেশি কাবু করে ফেলেছিল।’   বিজরী জানালেন, তাঁর মা জিনাত বরকতউল্লাহর জন্ম ১৯৫২ সালের ৩ অক্টোবর কুমিল্লায়। তাঁর নানা তখন কুমিল্লার জেলা প্রশাসক ছিলেন। আম্মার বাবার বাড়ি ঢাকার ধানমন্ডিতে। তবে তাঁর পূর্বপুরুষেরা চাঁদপুরের হলেও জিনাত বরকতউল্লার দাদা ধানমন্ডির সিদ্দিক বাজারে বাড়ি করেন।   স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ধারায় নৃত্যচর্চার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন জিনাত বরকতউল্লাহ। ভরতনাট্যম, কত্থক, মণিপুরি—উপমহাদেশের শাস্ত্রীয় নৃত্যের তিন ধারায় তালিম নিলেও লোকনৃত্যেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন তিনি।  জিনাত বরকতউল্লাহ ও তাঁর স্বামী মোহাম্মদ বরকতউল্লাহ  যোগ দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পারফর্মিং আর্টস একাডেমিতে। পরে তিনি শিল্পকলা একাডেমির সংগীত ও নৃত্যকলা বিভাগের অন্তর্ভুক্ত প্রোডাকশন বিভাগের পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। সেখানে তিনি ২৭ বছর কর্মরত ছিলেন।  ১৯৮০ সালে জিনাত বরকতউল্লাহ বিটিভির নাটক ‘মারিয়া আমার মারিয়া’ দিয়ে অভিনয়জীবন শুরু করেন। এরপর ‘ঘরে বাইরে’, ‘অস্থায়ী নিবাস’, ‘বড় বাড়ি’, ‘কথা বলা ময়না’সহ বেশ কয়েকটি টিভি নাটকে অভিনয় করেন তিনি। জিনাত বরকতউল্লাহ নৃত্যশিল্পে অবদানের জন্য ২০২২ সালে একুশে পদক পেয়েছেন।