নিউইয়র্ক (ইউএনএ): পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন বলেছেন,
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ডিজিটাল বাংলাদেশের পর এবার
‘স্মার্ট বাংলাদেশ’-এ পরিণত হতে চলেছে। আর সুষ্ঠু নির্বাচন
আয়োজনের ব্যাপারে বাংলাদেশ খুবই স্মার্ট। এ ব্যাপারে যেকোন
দেশকে কারিগরি সহায়তা দিতেও প্রস্তুত বাংলাদেশ। তিনি বলেন, যুদ্ধ
বিধ্বস্ত অনেক দেশ আছে যারা জানে না কিভাবে স্বাধীন, নিরপেক্ষ
নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হয়, কিভাবে ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা ও
স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স তৈরি করতে হয়। বাংলাদেশের এ ব্যাপারে বিশেষ অভিজ্ঞতা
রয়েছে। তাই বিশ্বেও যেকোন দেশ চাইলে বাংলাদেশের কাছ থেকে
সাহায্য নিতে পারে। তিনি আরো বলেন, এমন দেশও আছে যে দেশের
তরুণ সমাজের বড় অংশ ভোটে অংশ নেয় না, কোথাও কোথাও ভোট
প্রদানের হার মোট ভোটারের চেয়ে অনেক কম সে দেশও আমাদের
গণতন্ত্রের সবক দেয়- ‘ইটস শেইম ফর আস’।
যুক্তরাষ্ট্রে সফররত পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন গত শুক্রবার
জাতিসংঘ মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরেস এর সাথে বৈঠক করেন। এ
বৈঠকের আদ্যপান্ত জানাতে ঐদিন সন্ধ্যায় নিউয়র্কে বাংলাদেশ
কনস্যুলেট অফিসে বাংলাদেশী সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে
তিনি উপরোক্ত কথা বলেন। এসময় যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত
মোহাম্মদ ইমরান ও নিউয়র্কের কনস্যুলেট জেনারেল ড. মো. মনিরুল
ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। এর আগে মন্ত্রী কনস্যুলেটে পৌছলে
কনস্যুলেটের কর্তকর্তারা তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, তিনি জাতিসংঘ মহাসচিবকে
জানিয়েছেন যে, সুষ্ঠ, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের
পদ্ধতি ও কলাকৌশল নিয়ে জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোকে সাহায্য দিতে
প্রস্তুত বাংলাদেশ। তিনি বলেন, বাংলাদেশ স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স এবং ছবিযুক্ত
ভোটার তালিকা করেছে, যা বিশ্বের অনেক দেশের জন্য অনুকরণীয়।
সেজন্য গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে বাংলাদেশের বিশেষ
পারদর্শীতা রয়েছে। তাই সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের এ অভিজ্ঞতার
আলোকে যেকোন দেশকে টেকনিক্যাল সাপোর্ট দিতে বাংলাদেশও
প্রস্তুত।
ড. মোমেন বলেন, বাংলাদেশে মিডিয়া অতিরিক্ত স্বাধীনতা চর্চা করে।
তাই অনেক সময় আমাদের নির্বাচন নিয়ে অনেক অপপ্রচার হয়। এসব
বিবেচনায় না নেয়ার জন্য তিনি জাতিসংঘ মহাসচিবকে অনুরোধ
করেছেন বলে জানান।
এদিকে, বাংলাদেশের নির্বাচন এর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে যখন দেশে-
বিদেশে ব্যপক গুঞ্জন তখন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এ বক্তব্য যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত
সুশীল সমাজে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন পরে কনস্যুলেট মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশের
উন্নয়নে প্রবাসীদের ভূমিকা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায়
কমিউনিটির নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় করেন। এসময় তিনি
কমিউনিটি নেতৃবৃন্দের বক্তব্য শুনেন এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন প্রশ্নের
উত্তর দেন। সভায় প্রবাসীরা ভোটার হওয়া, জাতীয় সংসদে প্রবাসীদের
আসন সংরক্ষণ, দ্বৈত নাগরিকত্ব, এনআইডি, নিউইয়র্ক-ঢাকা রুটে
বিমান চালু, ঢাকায় বিমানবন্দর ও জমিজমা বেচাকেনায় হয়রানী
প্রভৃতি প্রসঙ্গ ও সমস্যার সমাধানের দাবী জানালে মন্ত্রী বলেন, এসব
সমস্যার ব্যাপাারে সরকার কার্যকরী পদক্ষেপ নিচ্ছে এবং সমাধানে
প্রবাসীদেরও সহযোগিতা প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন।
সভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন বলেন, বিগত ৫০ বছর ধরে
যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক বিরাজ করছে। আগামী ৫০
বছরে এই সম্পর্ক আরো কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাবে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন,
দু’দেশের সম্পর্ক আরো জোরদার করতে উভয় সরকার ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ
করছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, বাংলাদেশের আগামী জাতীয়
নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হবে। তিনি আরো
বলেন, প্রবাসীদের রেমিটেন্সের ফলে দেশের অর্থর্নীতি স্থিতিশীল তবে
সবার সহযোগিতায় এই অবস্থা আরো সুদৃঢ় করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনার নেতত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, মহামারী করোনার সময় ভ্যাকসিন দিয়ে
যুক্তরাষ্ট্র যে অবদান রেখেছে তার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। এজন্য প্রবাসীদেরও
অবদান রয়েছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বিপুল
সংখ্যক পেশাজীবী বাংলাদেশী-আমেরিকান সেদিন উদ্যোগ নিয়ে
বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। তাদের প্রতিও আমরা কৃতজ্ঞ। মন্ত্রী
শেখ হাসিনার সরকার ও দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের রুখতে এবং
বঙ্গবন্ধুর খুনীকে দেশে ফেরৎ পাঠাতে সোচ্চার হওয়ার
জন্য প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রতি আহবান জানান।
সভাটি সঞ্চালনা করেন কনসাল জেনারেল ড. মনিরুল ইসলাম। এতে
স্বাগত বক্তব্য রাখেন রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান। সভায় সাপ্তাহিক বাংলা
পত্রিকা’র সম্পাদক ও টাইম টিভি’র সিইও আবু তাহের, যুক্তরাষ্ট্র
আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান, যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় পার্টির
(একাংশ) সভাপতি হাজী আব্দুর রহমান, মূলধারার রাজনীতিক মোর্শেদ
আলম, বিশিষ্ট রাজনীতিক ডা. মাসুদুল হাসান, বাংলাদেশ
সোসাইটির সিনিয়র সহ সভাপতি মহিউদ্দিন দেওয়ান ও ইঞ্জিনিয়ার
আবু বকর হানিপ, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল মনসুর খান ও ইসমাইল খান
আনসারী এবং সাংবাদিক আমান উদ-দৌলা সহ অন্যান্যের মধ্যে আব্দুর
রহীম বাদশা, রেজাউল করীম চৌধুরী, মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী, রানা
ফেরদৌস চৌধুরী, আব্দুল হাসিব মামুন, কাজী কয়েস, অধ্যাপিকা
শাহনাজ মমতাজ, মিসবাহ আহমেদ, ফরিদ আলম, কৃষিবীদ
আশরাফুজ্জামান, সাখাওয়াত আলী, মোর্শেদা জামান, সাখাওয়াত
হোসেন বিশ্বাস, মইনুল ইসলাম প্রমুখ আলোচনায় অংশ নেন।
সভায় কোন কোন বক্তা তাদের বক্তব্যে দেশে প্রবাসীদের জমিজমা ক্রয়-
বিক্রয়ে খোদ আওয়ামী লীগ দলীয় এক শ্রেনীর সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে
চরমভাবে হয়রানীর শিকার হচ্ছেন বলে মন্ত্রীর কাছে অভিযোগ করেন। এতে
মন্ত্রী ড. মোমেন খানিকটা বিব্রত হলেও এসব অন্যায়-অনিয়ম দূর করতে
জমিজমা ডিজিটাল রেকর্ডেও আওতায় আনা হচ্ছে বলে ভুক্তভোগীদের
আশ্বস্ত করেন।
সভায় বিশিষ্ট ব্যক্তির মধ্যে বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রব
মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমীন সিদ্দিকী, সোনালী এক্সচেঞ্জ
ইনক-এর প্রেসিডেন্ড ও সিইও মি. দেবশ্রী মিত্র, যুক্তরাষ্ট্র জাতীয়
পার্টির (একাংশ) সাধারণ সম্পাদক আবু তালেব চৌধুরী চান্দু,
জ্যামাইকা-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডস সোসাইটির সভাপতি ফখরুল ইসলাম
দেলোয়ার, সাবেক সভাপতি বেলাল আহমেদ চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত
ছিলেন।