পাঁচপুকুরিয়া, মনোহরগঞ্জ: কুমিল্লার মনোহরগঞ্জের শ্যামল সবুজ গ্রাম পাঁচপুকুরিয়ার বার্ষিক  বনভোজন ও ক্রিড়া প্রতিযোগীতা ২০২৩ গত ২৪ ফেব্রæয়ারি শুক্রবার গ্রামের সাহেব বাড়ির  উঠোনে অনুষ্ঠিত হয়। পাঁচপুকুরিয়া ইয়াং সোসাইটির উদ্যেগ ও আয়োজনে প্রথমবারের  মত অনুষ্ঠিত হয় এই বার্ষিক বনভোজন ও ক্রিড়া প্রতিযোগীতা ২০২৩। লিমন, শীহাব,  সাইফুল, আরমান, সাগর, শুভ, শিবলী, আলাউদ্দীন সহ বন্ধুদের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই  বার্ষিক বনভোজন ও ক্রিড়া প্রতিযোগীতায় গ্রামের ছোট-বড়, নারী-পুরুষ সবাই অংশগ্রহন  করে দিনটিকে স্মরণীয় করে তোলে।  
প্রথমবারের মত এই আয়োজনকে স্মরণীয় করে রাখবার জন্য অনুষ্ঠানের আগেরদিনই  গ্রামের তরুণ সমাজ মাঠে নেমে পড়ে। বনভোজনস্থলে নানা রঙের ফ্ল্যাগ, গাছেগাছে  চুনকাম করে রাস্তায় বিভিন্নলেখা, সেলফি জোন তৈরি সহ নানা কাজে রাত অতিবাহিত করে। এর পাশাপাশি গ্রামের আরেক স্বনামধণ্য শেফ/পাচক মোহাম্মদ ইকাবালের  আয়োজনে রাতভর চলে রান্নার আয়োজন। সন্ধ্যা হতেই ওসাকা হ্যালোজেন ফ্লাডলাইটের  আলোয় আলোকিত অনুষ্ঠাস্থলকে ঘিরে বনভোজনে অংশগ্রহনকারীদের পদচারনায় মুখরীত  হয়ে ওঠে। ঢাকা সহ দূর দূরান্তথেকে পাঁচপুকুরিয়া গ্রামের মানুষ গ্রামে ছুটে আসে প্রানের  টানে নাড়ীর টানে। তাছাড়া প্রথমবারের মত এই আয়োজনে সবার মাঝেই ছিল টানটান  উত্তেজনা, উৎসাহ আর নানা আগ্রহ।  
সকাল হতেই শুরু হয় বনভোজনে অংশগ্রহনকারীদের মধ্য নাস্তা বিতরন। ইকবালের রান্না  করা তেহরীর নাস্তা পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠানমালা। নাস্তা পরিবেশন শেষে  সকাল ১০ঘটিকা থেকেই শুরু হয় ছেলে-মেয়ে, নারী-পুরুষের নানা খেলা। খেলাগুলোর  মধ্যে উল্লেখযোগ্য চোখ বেঁধে হাড়ি ভাঁঙ্গা, চেয়ার খেলা, ও ছোটদের বিস্কুট খেলা।  সবচেয়ে আকর্ষণীয় খেলা ছিল পুকুরের পানি থেকে হাঁসধরা। একটি একটি করে পুকুরের  পানিতে দুটো হাঁস ছেড়ে দেয়া হয়। যে হাঁসটিকে ধরতে পারবে পুরস্কার হিসাবে সে হাঁসটি পাবে। এই খেলায় গ্রামের প্রায় সকল তরুণকেই গ্রামের দক্ষিনপ্রান্তে অবস্থিত দিনার  পুকুরে ঝাঁপিয়ে পড়তে দেখা যায়। কিন্তু হাঁস কি সহজেই ধরা দেয়। কিন্তু তারপরেও গ্রামের অসংখ্য তরুণের ভীড়ে শেষ পর্যন্ত হাঁস দুটোকে হার মানতেই হয়। ধরা পড়ে  গ্রামের দুই তরুণের হাতে এবং এই দুই তরুণ বিজয়ী হয়ে হাঁস দুটো বাড়ি নিয়ে যায়। 
দুপুর সাড়ে বারোটায় জুম্মার নামাজের বিরতি শুরু হয়। সবাই মিলে পাক-পবিত্র হয়ে  গ্রামের মসজিদে গিয়ে জুম্মার নামাজ আদায় করে। নামাজ শেষে সবাই ফিরে আসে  অনুষ্ঠানস্থলে। শুরু হয় দুপুরের খাবার পরিবেশনা। ভাত, মোরগের মাংস, সব্জি, ডাল,  সালাদ এবং পরে ফিরনি পরিবেশন করা হয়।  
বিকাল সাড়ে তিনটায় শুরু হয় পুরস্কার বিতরনি অনুষ্ঠান। শীহাবের স ালনায় পুরস্কার  বিতরনি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখে গ্রামেরই সন্তান শিবলী, আলাউদ্দীন, ও অনুষ্ঠানের মূল  আয়োজক মাহমুদুল হাসান লিমন। এ সময় মূলমে  অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন  গ্রামের কৃতিসন্তান শিক্ষাবীদ সর্বপরিচিত ফারুক বিএসসি, দেলোয়ারা পান্না, জোবেদা  লুনা, ও গ্রামের সন্তান লেখক সাংবাদিক শিব্বীর আহেমদ। এ সময় অতিথিরা খেলায়  
বিজয়ীদের হাতে আকর্ষনীয় পুরস্কার তুলে দেন। এছাড়াও প্রদান করা হয় বারোটি  র‌্যাফেল ড্র পুরস্কার।  
অনুষ্ঠানে জিপিএ ৫ পাওয়া গ্রামের মেয়ে পিনু, গ্রামের মেধাবী সন্তান সাগর ও কোরআনে  হাফেজ রাসেলকে ফুলেরমালা দিয়ে বরণ করে স্বীকৃতিস্বরূপ পুরস্কার তুলে দেয়া হয়।  সবশেষে বনভোজনের সমাপনী বক্তব্য রাখেন লেখক সাংবাদিক শিব্বীর আহমেদ।  বক্তব্যে তিনি পাঁচপুকুরিয়া গ্রামের নাম সারাবিশে^ ছড়িয়ে দেয়ার জন্য আদর্শ মানুষ হিসাবে নিজেদের তৈরি করার জন্য গ্রামের তরুণ প্রজন্মের প্রতি আহবান  জানান। এছাড়াও এ  বছরের ন্যায় প্রতিবছর একুশে ফেব্রæয়ারি পর প্রথম শুক্রবার পাঁচপুকুরিয়া গ্রামের বার্ষিক  বনভোজন ও ক্রিড়া প্রতিযোগিতার আয়োজনের  আহবান জানিয়ে বনভোজনের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।