NYC Sightseeing Pass
ঢাকা, সোমবার, এপ্রিল ২৮, ২০২৫ | ১৪ বৈশাখ ১৪৩২
ব্রেকিং নিউজ
জব্বারের বলীখেলায় আবারও চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লার ‘বাঘা’ শরীফ Bangladesh reaffirms commitment to fully Implement the CHT Peace Accord Kashmir Violence Conflict can be Solved Diplomatically or Needs a Retaliation Plan Against Pakistan ব্রেন স্ট্রোক পরবর্তী সময়ে সেরে ওঠার যুগান্তকারী ওষুধ আবিষ্কার নিউইয়র্কে প্রবাসীদের সাথে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের মত  বিনিময় নিজেকে রাজা-বাদশাহ ভাবছেন ট্রাম্প! ‘দাগি’ দেখতে কয়েদির বেশে সিনেমা হলে শতাধিক নিশো ভক্ত Attorney General James Wins Case Against Google for Monopolies in Digital Advertising নিউইয়র্কে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ সংবাদ সম্মেলন নানা অভিযোগ উত্থাপন : বাংলাদেশ রেমিট্যান্স মেলা  বয়কটের আহবান নিউইয়র্কের এস্টোরিয়ায় পুলিশের গুলিতে মানসিকভাবে অসুস্থ  এক ব্যক্তির মৃত্যু
Logo
logo

স্মৃতি- বিস্মৃতি : থার্ড ডিভিশনে ম্যাট্রিক -- হাসান মীর


খবর   প্রকাশিত:  ২৭ এপ্রিল, ২০২৫, ০৩:৪০ পিএম

স্মৃতি- বিস্মৃতি :  থার্ড ডিভিশনে ম্যাট্রিক -- হাসান মীর

 

স্মৃতি- বিস্মৃতি :

থার্ড ডিভিশনে ম্যাট্রিক ।

কুষ্টিয়া মুসলিম হাইস্কুল থেকে আমি ম্যাট্রিক পরীক্ষা দিই ১৯৫৭ সালে। খুব ভালো ছাত্র ছিলাম না, পড়াশুনাও ভালো করিনি ফলে পরীক্ষার ফল সম্বন্ধে সন্দিহান ছিলাম। আব্বা বলেছিলেন ফেল করলে গ্রামের বাড়িতে হাল চাষ করতে হবে। আমি বেশ ভয়েই ছিলাম। শেষ পর্যন্ত ফল প্রকাশের দিন ঘনিয়ে এলো, পত্রিকায় ছাপা হলো আগামি কাল ম্যাট্রিক পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হবে। সেই রাতেই আব্বার ব্যাগ থেকে আড়াইশো টাকা ' চুরি ' করে ট্রেনে উঠলাম। প্রথমে গেলাম খুলনা কিন্তু সেখানে কয়েকজন পরিচিত মানুষের দেখা পেয়ে বিপদের আশঙ্কা হলো। রাতে স্টিমারে চেপে বরিশাল হয়ে পরদিন চাঁদপুর পোঁছলাম। রেলস্টেশনে গিয়ে শুনি রেজাল্ট বেরিয়েছে, অনেকের হাতেই সেদিনের দৈনিক পত্রিকা। তখন একটি মাত্র বোর্ড, ইস্ট পাকিস্তান সেকেন্ডারি এডুকেশন বোর্ড , আমি আজাদ পত্রিকায় দেখলাম থার্ড ডিভিশনে পাশ করেছি। কিন্তু এর চেয়ে তো ফেল করা ভালো ছিল ! যাক, যা কপালে ছিল হয়েছে। আমি চট্টগ্রামের একটা টিকেট কেটে ট্রেনে উঠলাম। বাড়ি থেকে একটা সার্ট আর পায়জামা খবরের কাগজে জড়িয়ে নিয়ে বের হয়েছিলাম। খুলনায় একটা রেক্সিনের হ্যান্ডব্যাগ আর গামছা কিনি। এই সম্বল হাতে নিয়ে চট্টগ্রামে ট্রেন থেকে নেমে হাঁটা শুরু করলাম। কাছেই রিয়াজুদ্দিন বাজার। বাজারে ঢুকে একটা হোটেল চোখে পড়লো - নাম বছিরিয়া হোটেল। সিট ভাড়া দৈনিক পাঁচ টাকা, এক রুমে দুটি বেড। আমি গোসল সেরে নিচের একটি দোকান থেকে দুপুরের খাবার খেয়ে শহর দেখতে বেরুলাম। প্রথমেই জুবিলি (? ) রোডের একটি স্টুডিও থেকে ষাট টাকা দিয়ে একটা ক্যামেরা কিনলাম, করোনেট ফ্লাস মাস্টার। ওয়ান- টুয়েন্টি রোল ফিল্মে বারোটি ছবি ওঠে। এর আগে কুষ্টিয়ার মীর ফটো স্টুডিও থেকে ( এই মীর আমার কোনো আত্মীয় নয় ) তিরিশ টাকায় একটা পুরোনো গেভাবক্স ক্যামেরা কিনেছিলাম। ওতে সিক্স- টুয়েন্টি ফিল্মে আটটি ছবি উঠতো, এটা তার চেয়ে ভালো । এখন যারা ডিজিটাল ক্যামেরায় ছবি তোলেন তাদের কাছে অবাক লাগতে পারে।

ক্যামেরা কাঁধে ঝুলিয়ে কোথায় যাবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। কিছুই তো চিনি না। শেষ পর্যন্ত বায়েজিদ বোস্তামীর ' মাজার ' দেখতে রওনা হলাম। পুকুরের বড় বড় কাছিম দেখতেই ভীড় বেশি। পাশেই কাছিমদের খাওয়ানোর জন্য ফালতু মাংস বিক্রির কয়েকটি দোকান অনেক পীরের মাজারের পাশে যেমন ফুলের দোকান থাকে । দর্শনার্থীদের কয়েকজনের কথা কানে এলো, তারা টিলার উপর মাজার দেখতে যাবে কিনা তাই নিয়ে বিতর্ক। একজন বলছে - বায়েজিদ বোস্তামী কোনোদিন চট্টগ্রামেই আসেননি, এখানে তার মাজার আসবে কোথা থেকে ? অন্যজন বললো, এতদূর এলাম যখন তখন চল দেখেই আসি। আমিও তাদের পিছু নিয়ে টিলার উপর ' মাজার ' দেখতে গেলাম। এত বছর পর সব মনে নেই তবে আগরবাতির ধূঁয়ায় আচ্ছন্ন ঘরে কবর আকৃতিরই কিছু একটাকে ঘিরে কয়েকজন ভক্তকে জিকির বা দোয়া- দরুদ পড়তে দেখেছিলাম বলে মনে পড়ে।

বায়েজিদ বোস্তামীর দরগা থেকে উল্টো পথে চট্টগ্রাম পোর্ট দেখতে পতেঙ্গা গেলাম। রাস্তা থেকেই জেটিতে বড় বড় জাহাজ নজরে এলো। আমি বাস থেকে নেমে একটা গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকলাম। গেটে একজন খাকি জামা পরা দারোয়ান শ্রেণির কর্মচারি বিড়ি ফুঁকছিল, সে আমাকে কিছু বললো না। সামনেই বৃটিশ পতাকাবাহী একটা জাহাজ নাম হিস্পারিয়া। আমি ক্যামেরা বাগিয়ে ছবি তোলার অ্যাঙ্গেল খুঁজছিলাম এরমধ্যে একজন এসে হাত চেপে ধরলো - এই তুম ফটো খিচতা হ্যায় ? ( তুমি ফটো তুলছো ? ) আমি হ্যাঁ বলতেই সে আমাকে কাছেই একটা ঘরে টেনে নিয়ে গেল। তারপর নানা প্রশ্ন - কোথায় থাকো, কী করো, এখানে এলে কীভাবে। বললাম আমিতো গেট দিয়েই ঢুকেছি, চৌকিদার আমাকে কিছু বলেনি। ডাকো চৌকিদারকে। শেষ পর্যন্ত আমার বয়স আর আনাড়িপনা বুঝতে পেরে এতক্ষণ যে পুলিশে দেয়ার কথা ভাবা হচ্ছিল তা বাদ দিয়ে কর্তাব্যক্তিটি ক্যামেরার ফিল্ম খুলে নিয়ে আমাকে রেহাই দিলেন। মাঝখানে সকাল থেকে যে ছবিগুলো তুলাছিলাম সব বরবাদ হয়ে গেল। ( নিচে মন্তব্যের ঘরে Hesperia জাহাজের ছবি ও বিবরণ দেখুন, তথ্য দিয়েছেন যুক্তরাজ্যে কর্মরত মেরিন সার্ভেয়ার Mamun Rahman ) .

হোটেলে ফিরে এসে হিসাব করতে বসলাম। পয়সাকড়ি ফুরাতে বসেছে। এখন বাড়ি না ফিরলে ট্রেনের ভাড়াও অবশিষ্ট থাকবে না। পরদিন সকালে ঢাকার উদ্দেশ্যে ট্রেনে চাপলাম। সেখান থেকে নারায়ণগঞ্জ হয়ে স্টিমারে গোয়ালন্দ এবং আবার ট্রেনে পোড়াদহ । আব্বার মারের হাত ছিল, দোষ পেলে রেহাই দিতেন না। টাকা চুরি করে বাড়ি থেকে পলায়ন এবং থার্ড ডিভিশনে পাশ করা - সব মিলিয়ে কপালে কী আছে আল্লাহ জানেন। আমি সেই আল্লাহর নাম ভরসা করেই বাড়ি ফিরে এলাম। যখন বাসায় ( রেলওয়ের কোয়ার্টার ) পা দিলাম, আমার পকেটে তখন মাত্র এক আনা ( এখনকার ছয় পয়সা ) অবশিষ্ট ছিল ! তার আগে গোয়ালন্দ ঘাটে ট্রেনে ওঠার সময় দু আনার চিনাবাদাম কিনেছিলাম।

পাদটীকাঃ ছ' দিনের অজ্ঞাতবাস থেকে আমাকে বাড়ি ফিরতে দেখে মা কাঁদতে বসলেন ( মায়েরা যেমন হয়) । খবর পেয়ে কিছুক্ষণ বাদে আব্বা এসে দেখলেন আমি সদ্য রান্না করা ইলিশ মাছের তরকারি দিয়ে ভাত খেতে বসেছি। তাঁর মনে কী ছিল জানি না কিন্তু সেই মুহূর্তে বেঁচে গেলাম। তিনি " হারামজাদা, এসেই নির্লজ্জের মতো খেতে বসেছে " বলে দরজা থেকেই ফিরে গেলেন। আর হ্যাঁ, আব্বার হাতেপায়ে ধরে ( তাঁর বিবেচনায় থার্ড ডিভিশনে পাশ করে কেউ কলেজে পড়ে না, তারচেয়ে টাইপ শিখে কেরানি হওয়া ভালো) কুষ্টিয়া কলেজে ভর্তিও হয়েছিলাম কিন্তু বেশিদূর এগুতে পারিনি।।

( নিচের ছবিতে আগের দিনের প্যাডেল স্টিমার, সংগৃহীত ) । পুরনো লেখা।