NYC Sightseeing Pass
ঢাকা, সোমবার, এপ্রিল ২৮, ২০২৫ | ১৫ বৈশাখ ১৪৩২
Logo
logo

রক্তদান আমার জীবনে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ একটি ব্যাপার


শিশির, বেইজিং: প্রকাশিত:  ২৮ এপ্রিল, ২০২৫, ১২:১৮ এএম

রক্তদান আমার জীবনে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ একটি ব্যাপার

 

আন্তর্জাতিক:আট চল্লিশ বছর বয়সী চাং রং হু পেশায় একজন পাচক। হাই স্কুল থেকে স্নাতক হবার পর তিনি নির্মাণ কাজ করেছেন, ট্রেনে কাজ করেছেন এবং ছোট ব্যবসাও করেছেন।

তিনি নিজেকে সাধারণ একজন মানুষ মনে করেন। তবে, সাধারণ এ মানুষটি গত ২১ বছরে মোট ২৫২০০ মিলি লিটার রক্তদান করেছেন। তা  পাঁচজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের শরীরের সকল রক্তের পরিমাণের সমান।

২০০১ সালের ডিসেম্বর মাসে চাং রং হু প্রথমবার রক্ত দেন। তখন তার স্ত্রী তাদের হোম-টাউন সি ছুয়ান প্রদেশের সু নিং শহরে সন্তান প্রসবের জন্য হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। তার স্ত্রীর একই ওয়ার্ডের একজন নারীর রক্তের প্লেটেলেট কমে গেলে বাচ্চা জন্ম দেয়ার সময় রক্ত জমাট বাধার আশঙ্কা দেখা দেয়। ডাক্তার ওই নারীর পরিবার ও বন্ধুদের রক্তদান স্টেশনে কিছু রক্ত দানের পরামর্শ দিয়েছেন। ওই সময় এ নারীর মা ছাড়া তার কাছে আর কেউ ছিল না। ফলে নতুন জীবনকে স্বাগত জানানোর আনন্দ হঠাৎ করেই ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পরিণত হয়। এ দৃশ্য দেখে চাং রং হু তাকে সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নেন।  তিনি বলেছেন, আমার এবং ওই নারীর  রক্তের টাইপ একই; তাই আমি তাকে রক্তদানের সিদ্ধান্ত নিই। 

তিনি তার স্ত্রীর সঙ্গেও এ ব্যাপারে আলোচনা করেননি। কারণ তার স্ত্রী যমজ সন্তান নিয়ে গর্ভবতী ছিলেন। স্ত্রীকে দুশ্চিন্তায় ফেলতে চাননি। রক্তদান শরীরের ওপর কোন প্রভাব ফেলবে কি না- তাও তিনি তখন জানতেন না। 

তার স্ত্রীর কথা ভেবেছেন, তবে তিনি রক্তদানের সিদ্ধান্তে অটল থাকেন। সে বার চাং রং হু ৪০০ মিলি লিটার রক্ত দান করেছেন এবং অবশেষে ওই নারী নিরাপদে বাচ্চা জন্ম দিয়েছেন এবং তাঁর স্ত্রীও সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।

তখন থেকে চাং রং হু নিয়মিত রক্তদান করেন। সিছুয়ান, সিনচিয়াং, কুয়াং তুং যেখানে তিনি কাজ বা ভ্রমণ করতে যান- সেখানেই তিনি রক্তদান করেন।

প্রতি ছয় মাসে একবার রক্তদান করতে পারে একজন মানুষ। তবে, প্রতি ১৪ দিনে একবার প্লেটেলেট দান করতে পারে। ধাপে ধাপে চাং রং হু একজন নিয়মিত রক্তদাতায় পরিণত হন এবং জরুরি হলে এবং তার শারীরিক অবস্থা ভাল থাকলে তিনি যে কোন সময় অপরের প্রয়োজনে রক্ত দান করেন।

২০০৮ সালে সিছুয়ান প্রদেশের উয়েন ছুয়ানে ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়ে। তখন তিনি চেং তুতে রক্তদান করেন। ২০২০ সালে উহানে রক্তের অভাবের খবর শুনে তিনি সেখানেও রক্ত দান করেছেন।

নিজের রক্তের মান উন্নত করতে তিনি স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করেন। চাং রো হু’র মতে, রক্তের মান নিশ্চিত করা নিয়মিত একজন রক্তদাতার জন্য মৌলিক ব্যাপার। তাই তিনি ঝাল খাবার খাওয়া, মদ পান করা এবং গভীর রাতে খাওয়ার অভ্যাস পরিত্যাগ করেছেন। প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৬টায় জেগে উঠেন এবং রাত ১১টার আগে ঘুমাতে যান। কাজ শেষ করে ৬ কিলোমিটার দৌড়ান এবং রক্তদানের আগের তিনদিন হালকা স্বাদের ও স্বাস্থ্যকর খাবার খান।

২০১৩ সালে তিনি পুষ্টি বিজ্ঞানের ক্লাস নিতে শুরু করেন এবং জাতীয় সিনিয়র পাবলিক নিউট্রিশনিস্ট যোগ্যতা সার্টিফিকেট অর্জন করেন। তিনি বলেছেন, পুষ্টিজ্ঞানের পদ্ধতিগত অধ্যয়ন নিজের খাদ্যের কাঠামোকে যুক্তিসঙ্গতভাবে সামঞ্জস্য করতে পারে।পুষ্টিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে সহকর্মীদের জন্য আরও পুষ্টিকর খাবার রান্না করা যেতে পারে। আমি মনে করি, এটি খুবই অর্থবহ।

চাং রং হু অন্যদেরকেও রক্তদানের  পরামর্শ দেন। প্রত্যেক মানুষের রক্তদানের পর ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেয়া যায়। তবে, অধিকাংশ মানুষের রক্তদান কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে না। তার প্রভাবে তার স্ত্রী, শিশু ও সহকর্মীরাও রক্তদান করেন।

২০০৮ সালে তিনি নতুন কোম্পানিতে যোগ দেয়ার পর চাং রং হু কোম্পানির স্বেচ্ছাসেবক দলে যোগ দিয়েছেন। কাজের বাইরের সময়ে তিনি নানা স্বেচ্ছাসেবী কাজে অংশগ্রহণ করেন। রক্তদান ছাড়াও তিনি প্রবীণ, প্রতিবন্ধী ও দরিদ্র মানুষদেরকে সাহায্য করেন, এবং মহামারি প্রতিরোধে কাজ করেন। এ পর্যন্ত তিনি মোট ৩০০টির বেশি স্বেচ্ছাসেবী অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন।
 এক একদিনের রক্তদানের সনদপত্র চাং রং হুর সম্পদ এবং তার ভক্তির প্রমাণ।  তার সাধারণ ডরমিটরির একমাত্র সজ্জা। ২০২২ সালে  চাং রং হু ‘কুয়াং তু প্রদেশের ভালো মানুষ’হিসেবে নির্বাচিত হন। তিনি বলেছেন, প্রতিবার যখন রক্তদান করি, তখন আমি ভাবি আমার উষ্ণ রক্ত একটি আলোর রশ্মি হয়ে উঠে, যা অন্যকে আলোকিত করে এবং আমার মনও উষ্ণ হয়। আমি সাধারণ একজন মানুষ, আর রক্তদান আমার জীবনে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ একটি ব্যাপার সূত্র:শিশির,সিএমজি।