NYC Sightseeing Pass
ঢাকা, সোমবার, এপ্রিল ২৮, ২০২৫ | ১৪ বৈশাখ ১৪৩২
ব্রেকিং নিউজ
জব্বারের বলীখেলায় আবারও চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লার ‘বাঘা’ শরীফ Bangladesh reaffirms commitment to fully Implement the CHT Peace Accord Kashmir Violence Conflict can be Solved Diplomatically or Needs a Retaliation Plan Against Pakistan ব্রেন স্ট্রোক পরবর্তী সময়ে সেরে ওঠার যুগান্তকারী ওষুধ আবিষ্কার নিউইয়র্কে প্রবাসীদের সাথে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের মত  বিনিময় নিজেকে রাজা-বাদশাহ ভাবছেন ট্রাম্প! ‘দাগি’ দেখতে কয়েদির বেশে সিনেমা হলে শতাধিক নিশো ভক্ত Attorney General James Wins Case Against Google for Monopolies in Digital Advertising নিউইয়র্কে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ সংবাদ সম্মেলন নানা অভিযোগ উত্থাপন : বাংলাদেশ রেমিট্যান্স মেলা  বয়কটের আহবান নিউইয়র্কের এস্টোরিয়ায় পুলিশের গুলিতে মানসিকভাবে অসুস্থ  এক ব্যক্তির মৃত্যু
Logo
logo

সৈয়দ আসাদুজ্জামান বাচ্চু ভাই পরলোকে


খবর   প্রকাশিত:  ২৭ এপ্রিল, ২০২৫, ০২:৩৫ পিএম

সৈয়দ আসাদুজ্জামান বাচ্চু ভাই পরলোকে

আকবর হায়দার কিরন

এক সময় মতিঝিলের আদমজি কোর্টে ছিলো আমেরিকান দুতাবাস। তখন বেশ উপরের তলায় যেতে অনেক সিকিউরিটির ফর্মালিটি ছিলো। সৈয়দ আসাদুজ্জামান বাচ্চু ভাই তখন ছিলেন ঢাকার মার্কিন তথ্য সার্ভিসের প্রধান সম্পাদক। খন্দকার আব্দুল মান্নান ভাই ছিলেন ডিস্ট্রিবিউশন প্রধান এবং পলিটিক্যাল এডভাইজর ছিলেন কে এস খাদেম। এঁদের সাথে আমার খুব ঘনিষ্ঠতার কারনে আমার যেন অবাধ যাতায়াত ছিলো এই দুর্গম ভবনে ।

আমার ভয়েস অব আমেরিকা ফ্যান ক্লাব করা, রেডিও ক্লাব করা , আমেরিকান বাইসেন্টেনিয়াল হল, জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জ, অফিসার্স ক্লাব, ইকবাল বাহার চৌধুরী ভাই , গিয়াস কামাল ভাই, মোবারক হোসেন খান ভাই , আব্দুল হাই খান ভাইদের কাছে সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় যাওয়ার পেছনে সবচেয়ে কান্ডারি থাকতেন এই প্রিয় বাচ্চু ভাই।

আদমজি কোর্ট থেকে বেরিয়ে উল্টোদিকের নতুন বহুতল ভবনে আমেরিকান দুতাবাস গেলে বাচ্চু ভাইয়ের অফিসটা যেন চমৎকার জায়গা হলো । তাঁর ওখানে যাওয়া মানে খাওয়া দাওয়া , সময় কাটানো, ফটোকপি , টাইপ করানো , ফ্যান ক্লাবের নিউজ রেডি করে তাদের লোক দিয়ে সব পত্রিকায় পাঠানো ইত্যাদি । বাচ্চু ভাই এতো বড় সিনিয়র সাংবাদিক ছিলেন বলে মনে হতো একজন মিডিয়া মুঘলের সাথে স্নেহধন্যে থাকি সারাক্ষণ। তিনি এবিএম মুসা ভাই , আনোয়ার হোসেন মন্জু ভাইকেও তুমি করে বলতেন।খুলনার মুনীর আহমেদ ভাই তখনো লেখাপড়া শেষে শুধু রেডিও ক্লাব ও ডিএক্সিং করে সময় কাটাতেন। বাচ্চু ভাই তাঁকে খুব স্নেহ করতেন। তাঁর বাসায় মুনীর ভাই অনেক সময় কাটাতেন। খুলনায় যখন ইকবাল আহমেদ ভাই সহ অন্যদের নিয়ে বাচ্চু ভাই গেলে মুনীর ভাই ছিলেন অন্যতম হোস্ট । বাচ্চু ভাইয়ের নানান পত্রিকায় প্রকাশিত বিভিন্ন লেখাগুলোকে তিনি গোছগাছও করে দিতেন। ঐ সময়টায় বিটিভিতে 'আশেপাশের মানুষ’ শীর্ষক একটা বিশেষ অনুষ্ঠান করতেন, সাথে থাকতো মুনীর ভাইয়ের সহযোগিতা।

আমরা যখন ভয়েস অব আমেরিকা ফ্যান ক্লাব ফেডারেশন প্রতিষ্ঠা করি তখন সম্পাদক ছিলো আমার বন্ধু ওয়ালিয়া মরিয়ম লাকী। ওদের তাজমহল রোডের বাসায় বাচ্চু ভাই , গিয়াস কামাল ভাই , আমার মোহন দাদা, বন্ধু কবি কামাল চৌধুরী, বাতেন, আইভি, ডায়মন্ড, মোহসিন ( প্রয়াত প্রতিরক্ষা সচিব), রেহানা পারভীন, শওকত, মুকুল ভাই সহ আরও অনেকে ওখানে আড্ডা দিতাম , বেড়াতাম । ইউসিসের ফটোগ্রাফার ছিলেন পুরান ঢাকার সৈয়দ আব্দুল কাদের। তিনি আমাদের কতো ঐতিহাসিক ছবি তুলেছেন।

আমরা যখন হোটেল পুর্বানীর জলশাঘরে প্রথম ভিওএ ফ্যান ক্লাবের সেই অবিস্মরনীয় সমাবেশের পেছনে বাচ্চু ভাই ছিলেন অন্যতম প্রেরণাদাতা।

ওয়াশিংটন থেকে ভিওএ’র কেউ যখন আসতেন তখন বাচ্চু ভাই এবং আমার ব্যস্ততা যেন বেড়ে যেতো। ইশতিয়াক আহমেদ ভাই ও ফারহাত ভাবীকে নিয়ে আমাদের ফ্যান ক্লাবের বিশেষ ডিনার পার্টি আয়োজন হয়েছিলো গিয়াস কামাল ভাইজানের পুরানা পল্টনের বাড়িতে। ইকবাল আহমেদ ভাই আবার যখন ঢাকায় এলেন তখন তাঁর বিয়েতে সবাই মিলে যোগ দেয়া, টাঙ্গাইলের ফ্যান ক্লাবের মোহাম্মদ আলী বোখারী প্রিন্স ভাইদের বিশেষ অনুষ্ঠানে গিয়েছি কামাল ভাই, লাকী, বাবলী সহ এক বড় দল নিয়ে বাচ্চু ভাইয়ের সাথে। সেই আকুর টাকুর জায়গায় বসে টাঙ্গাইলের খ্যাতনামা চমচম খেয়েছিলাম, মনে হয় এখনো মুখে লেগে আছে।

বাচ্চু ভাইয়ের সাথে একবার রোকেয়া হায়দার আপাকে নিয়ে গিয়েছিলাম নরসিংদির এক হাইস্কুলের এক বিরাট ফ্যান ক্লাবের সমাবেশে । সাথে ছিলেন মোবারক হোসেন খান ভাই, গিয়াস কামাল ভাই , হাই খান ভাই সহ অনেকে। তবে ইকবাল বাহার ভাইকে নিয়ে চান্দনা হাইস্কুলের হালিম সরকারের ফ্যান ক্লাবে গিয়ে সবচেয়ে জনাকীর্ন দেখে বাচ্চু ভাই বিস্মিত হন। আমাদের ফ্যান ক্লাব করা মানেই বাচ্চু ভাই ছিলেন অবিচ্ছেদ্য অংশ। কাফি খান, খন্দকার রফিকুল হক, ইশতিয়াক আহমেদ, ইকবাল আহমেদ, সৈয়দ জিয়াউর রহমান, দিলারা হাসেম, মাসুমা খাতুন , রোকেয়া হায়দার, সরকার কবীর উদ্দিন , ভিওএর স্ট্যানলী স্রেগার সহ অনেকে ঢাকায় এসেছেন বাচ্চু ভাই ছাড়া তাঁদের যেন একসাথে দেখলামনা ।আমি যখন প্রথম যুক্তরাষ্ট্রে আসি তখন অত্যন্ত মর্যাদাময় ভিজিটর্স প্রোগ্রামে আমন্ত্রন পেরেছিলাম বাচ্চু ভাইয়ের বিশেষ সহযোগিতায় । আমি ও কবিতা সহ কোন কোন শহরে যাবো, কোন প্রোগ্রামে যোগ দেবো, কোন হোটেলে থাকবো ইত্যাদি তাঁর উপদেশ ও পরামর্শ ছিলো। এখানে ছোট্ট করে আমার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে বাচ্চু ভাইয়ের সেই বিশেষ কানেকশন । আমি যখন ডেইলী নিউজ পত্রিকায় কাজ করতাম এবং বাংলাদেশ বেতারে অনেকগুলো অনুষ্ঠান করতাম। ৮৬ সালে বইমেলায় একসাথে সময় কাটিয়ে বিদায় নেয়ার সময় বললেন, চলো আমার সাথে।

যেখানে পৌঁছলাম দেখি আমার মোহন দাদার খুব কাছেই, কয়েক বিল্ডিং-এর পর। তাঁর ঘনিষ্ঠ আত্মীয় নিউ নেশানের সম্পাদক ছোটভাই এর, বাবলীদের বাসায়। সেই বাড়ীর উপরের তলায় থাকতো বাচ্চু ভাইয়ের চেনা একটি মেয়ে। তিনি বললেন , তুমিতো রেডিওতে অনেক কিছু করো , এই মেয়েটার জন্য কিছু করো। তাঁর কথায় আমি সেই মেয়েটিকে নিয়ে কোন অডিশন ছাড়াই মোবারক ভাইয়ের বদান্যতায় অনুষ্ঠানে যোগ দেয়া। এরপর এক বছর সময় কাটানো, পারিবারিকভাবে বিয়ে শাদী কিন্ত বাচ্চু ভাই কেন জানি খুব একটা পছন্দ করেননি ব্যাপারটা ।রেহানা পারভীন এবং আমার মাঝে ভাবীবাচ্চু ভাই বিয়ের ব্যাপারে সিদ্ধান্তের সময় নিতে গিয়ে জীবনের অনেকটা সময় কেটে গিয়ে সম্মত হয়েছিলেন । তাঁর বিয়েতে আমরা সবাই প্রাণমন দিয়ে যোগ দিয়েছিলাম। গুন্নু ভাবী ও তাঁর ছোটভাই নাজমুল আমাকে অনেক পছন্দ করতেন। তাঁদের শান্তিনগরের বিশাল বাড়ীটায় গেলে মনে হতো জমিদার বাড়ী। কতো অনুষ্ঠানে গেলে ভাবী স্নেহ করে তাঁর পাশে আমায় বসাতেন, খুব কাছে থাকতো রেহানা, আইভি ও লাকি । ভাবীদের বিখ্যাত প্রকাশনা ছিলো পুরান ঢাকার অনিন্দ্য প্রকাশনী। সেখানে আমি একবার ইসলামিক ইউনিভার্সিটির বিশেষ ম্যাগাজিন প্রকাশ করেছিলাম আধুনিক অফসেটে।

বাচ্চু ভাইয়ের এক সময় ইচ্ছে ছিলো রিটায়ার করার পর যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী হবেন । তাঁর ছোটভাই , ভাগনী মনু এখানে থাকেন। আমি নিউ ইয়র্কার হয়ে যাওয়ার পর তিনি তাঁর সেই আগ্রহ ক্ষীন হয়ে যায়। অথচ অনেক সহকর্মী এখানে এসে জীবন যাপন করেছেন এবং অনেকে স্মৃতির জগতে চলে গেছেন , বিশেষ করে জনাব কে এস খাদেম। তাঁকে নিয়ে চিরবিদায়ের সেই অত্যন্ত কষ্টের খবরটা প্রথম জানলাম চুয়াডাংগার আবদুল্লাহ ভাইয়ের কাছ থেকে। ভোর বেলায় শোনার পর আমি যেন অন্য জগতে ফিরে গেলাম। আমার জীবনের চারদিকে যেন বাচ্চু ভাইয়ের ছায়া। তাঁকে নিয়ে খুবই ইমোশনাল কথোপকথন হলো খুলনার মুনীর ভাইয়ের সাথে। বাচ্চু ভাইকে নিয়ে কথা হবে অনেকের সাথে, বিশেষ ভাবে রোকেয়া হায়দার আপা ও সরকার কবীর উদ্দিন ভাইজানের সাথে। প্রকৃতির নিয়মে একদিন সেই ইমোশন ধীরে ধীরে স্তিমিত হয়ে পড়বে হয়তো। তবু ও বলবো, বাচ্চু ভাই আপনার কখা আমার বাকী জীবন মনে থাকবে। আপনার আত্মার শান্তি কামনা করি।

নিউ ইয়র্ক

নভেম্বর ১০, ২০২২