NYC Sightseeing Pass
ঢাকা, সোমবার, এপ্রিল ২৮, ২০২৫ | ১৪ বৈশাখ ১৪৩২
ব্রেকিং নিউজ
জব্বারের বলীখেলায় আবারও চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লার ‘বাঘা’ শরীফ Bangladesh reaffirms commitment to fully Implement the CHT Peace Accord Kashmir Violence Conflict can be Solved Diplomatically or Needs a Retaliation Plan Against Pakistan ব্রেন স্ট্রোক পরবর্তী সময়ে সেরে ওঠার যুগান্তকারী ওষুধ আবিষ্কার নিউইয়র্কে প্রবাসীদের সাথে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের মত  বিনিময় নিজেকে রাজা-বাদশাহ ভাবছেন ট্রাম্প! ‘দাগি’ দেখতে কয়েদির বেশে সিনেমা হলে শতাধিক নিশো ভক্ত Attorney General James Wins Case Against Google for Monopolies in Digital Advertising নিউইয়র্কে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ সংবাদ সম্মেলন নানা অভিযোগ উত্থাপন : বাংলাদেশ রেমিট্যান্স মেলা  বয়কটের আহবান নিউইয়র্কের এস্টোরিয়ায় পুলিশের গুলিতে মানসিকভাবে অসুস্থ  এক ব্যক্তির মৃত্যু
Logo
logo

প্রবাসী সমস্যা--- বব দেবাশিস দাস


খবর   প্রকাশিত:  ২৭ এপ্রিল, ২০২৫, ১১:৩৩ পিএম

প্রবাসী সমস্যা--- বব দেবাশিস দাস

 

আমেরিকায় আমাদের অভিবাসী বাঙ্গালী সমাজের অসহায় এক বাবা মার গল্প নিয়ে আমার এই লেখনীর কস্টকর প্রচেস্টা, সেই নব্বুইয়ের দশকের গোড়া থেকে বাংলাদেশ থেকে অভিবাসন

প্রত্যাসী বাঙ্গালীরা যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক হারে এসেছেন উন্নত জীবনের আশায়, বউ,বাচ্চা,মা, বাবাকে

নিয়ে লাখো বাঙ্গালী এখানে আমাদের দেশ থেকে ভিন্ন ধারার পরিবেশে এসে থিতু হবার নিরন্তর চেস্টা করে যাচ্ছেন,মুল ধারায় নিজেদের সম্পৃক্ত করছেন, দিন গড়াচ্ছে, পরিবেশ পরিস্থিতি বদলাচ্ছে, বাবা মায়েদের অক্লান্ত পরিশ্রম তাদের ছেলে মেয়েদের পরবর্তী জীবন কে মসৃন করবে

এটাই তো তারা আশা করে, তাদের পরের প্রজন্ম যেন সুন্দর এবং সুস্থির একটা সামাজিক অবকাঠামো গড়ে তোলে সেটাই তো ওরা স্বপ্ন দেখে কিন্তু সেটা কি সবার ক্ষেত্রে জোটে ?

আমি সম্প্রতি এমন একটি ঘটনা শুনেছি যা আমাকে বার বার ভাবিয়ে বেড়াচ্ছে, একজন হতভাগা

বাবা মায়ের মনোদুখঃ আর হতাশার কাহিনী, ভাবছি গত কদিন থেকে । আমি আগেই বলেছি বাংলাদেশ থেকে আশা আমাদের বাঙ্গালী সমাজ দিন দিন বিস্তৃত হচ্ছে, যে যৌবন কালে নব্বুইয়ের

দশকে যারা এখানে এসেছিলেন তারা আজ বয়েসের শেষ প্রান্তে, দিন গড়িয়েছে, যাদের এদেশে বাচ্চা কাচ্চা হয়েছে তারা ও বড় হয়েছে, পড়া শোনার শেষ গন্ডি পেরিয়ে ওরাও এখন এদেশের

সমাজে অনেকেই বেশ ভালো ভাবে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে, আর যে সব বাবা মা যে সব ছেলে মেয়েদের 

একেবারে শিশু অবস্থায় নিয়ে এসে এখানে জীবন শুরু করেছিলেন ওরা ও এখন তাদের জীবনের

দ্বিতীয় অধ্যায়ে, তার মানে গত ত্রিশ/চল্লিশ বছরের মাথায় আমাদের পরিচিত সমাজ অনেক ক্ষেত্রে

তৃতীয় প্রজন্মকে প্রত্যক্ষ করছে, দারুন ভাবে এসবই আমাদের আশাবাদী করে, আমরা উদ্দীপ্ত হই যখন দেখি  পাশের বাড়ির ছেলেটা অথবা মেয়েটা নামজাদা কোণো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উঁচু ডিগ্রী

নিয়ে বড় আয়ের কাজ করছে, মুল ধারায় সুপ্রতিস্টিত হচ্ছে, মার্কিন সমাজের গৌরব বাড়াচ্ছে, এমনিতেই বাঙ্গালী পরিবারের ছেলে মেয়েরা এখানকার স্কুল,কলেজ,বিশ্ববিদ্যালয়ে বরাবরই মোটামুটি প্রথম সারিতে থাকে, এটা আমাদের অহংকারী করে, আশাবাদী করে ।

কিন্তু এসব আশাবাদের পরেও কিছু কিছু ঘটনা বাবা মায়েদের প্রত্যাশায় বিভ্রাট ঘটায় যার একটা

প্রান্তে দৃস্টি দেবার প্রত্যয়ে আমার এ লেখার চেস্টা, আমি সম্প্রতি যে বাবা মায়ের দুঃখ ও হতাশার কাহিনী শুনেছি সে প্রসঙ্গে ফিরে আসি, এই দম্পতি যুগল কে আমি গত প্রায় পঁচিশ বছর ধরে চিনি,অত্যান্ত স্বজ্জন এবং প্রতিষ্ঠিত এখানে, তাদের একটি মাত্র মেয়ে যার জন্ম হয়েছিলো বাংলাদেশে, মাত্র এক বছর বয়েসে বাবা মার হাত ধরে সে এদেশে এসেছিলো, ভালো ভালো স্কুল

কলেজে পড়াশোনা করে চিকিৎসা শাস্ত্রের উঁচু ডিগ্রী নিতে মা বাবা তাকে পড়তে পাঠান ম্যারিল্যান্ডে, দিন কাল ভালোই যাচ্ছিলো, প্রথম বছর দুই মেয়ে ছুটি ছাটায় নিউইয়র্ক আসতো

বাবা মায়ের কাছে এর পর ধীরে ধীরে কোথায় যেন কি হয়, নিজে থেকে যোগাযোগ ও আর করতে

চায় না, বাবা মা ফোন করলে দায় সারা উত্তর দেয়, প্রায় বছর খানেক ওনারাও তেমন বুঝতে পারেন নি হটাত মেয়ের এই পরিবর্তনের কারন, নানান অজুহাতে ম্যারিল্যান্ড থেকে নিউইয়র্ক আসাতেও তার অনীহা এক মাত্র কন্যার বাবা মায়ের মনে আশান্তি আর হতাশার জন্ম দেয়, তিল তিল করে বড় করে তোলা অতি আদরের মেয়েটার দুশ্চিন্তায় ওনারা ব্যথিত, কি করবেন বুঝতে পারেন না, বিভিন্ন

আশংকায় তাদের দিন কাটে, দশটা পাঁচটা চাকরি করেন দুজনেই চাইলেই যে হুট করে মেয়ে কে দেখতে চলে যাবেন সেটা ও তেমন হয়ে ওঠেনা, এর পরও একদিন দুজন অফিস ছুটি নিয়ে ম্যারিল্যান্ড যান মেয়ে কে দেখতে সাথে করে নিয়ে যান মেয়ের পছন্দের নানান জিনিষ, একটি মাত্র

মেয়ে সে ওর বাবা মায়ের, দেখতেও সে অনেক সুন্দর এবং মার্জিত, সেই ছোট্ট বয়েস থেকেই তাদের কোলে পিঠে বড় হয়েছে, কিন্তু মেয়ের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গিয়ে ও তাদের প্রায় ঘন্টা তিনেক অপেক্ষা করতে হয় ওর দেখা পেতে, যদিও তাকে জানিয়েই তাঁরা ওর সাথে দেখা করতে গিয়েছিলেন কিন্তু দেখা যখন হোলো তখন সে যেন অন্য কেউ, বাবা মা চমকে উঠলেন, নিজেরাই নিজেদের জিজ্ঞেস করছিলেন এই মেয়ে কি সেই যাকে তারা জন্মের পর থেকে ভালোবেসে গড়ে তুলেছেন, মেয়ের নির্লিপ্ত কথা বার্তা, ব্যবহার তাদের হৃদয় ভেঙ্গে দিচ্ছিলো, কি এমন ঘটলো তার,

কেন সে এ রকম বিহেভ করছে,  ঠিক ভাবে বাবা মার মুখের দিকেও তাকাচ্ছেনা, সমস্যা কোথায়,

ওনারা দুজন দুজনের মুখের পানে চেয়ে এর উত্তর খুজছিলেন, মেয়ে বড় হয়েছে সে এখন আর তাদের সেই ছোট্ট সোনামনি নেই, তবু মা বাবার মন কি মানে , আদরে সোহাগে মা মেয়েকে জড়িয়ে ধরে জানতে চান "কি হয়েছে রে মা " আমাদের তুই খুলে বল, কি হয়েছে, তুই আমাদের এক মাত্র

সন্তান, আমরা তোর অদ্ভুত আচরন বুঝতে পারছি না, তোর কি কিছু লাগবে ? এদিকে প্রশ্নবাণে জর্জরিত মেয়ে কি অদ্ভুত দৃস্টিতে ওদের দিকে তাকিয়ে থাকে, কিছুই বলেনা, উদাস তার দৃষ্টি, এদিকে প্রায় দু ঘন্টা কেটে গেছে, অজানা আশঙ্কায় মা বাবার চোখে জল,বুঝতে পারছেন না কি করবেন, হটাত সে তার মুখ তুলে মা বাবার চোখে চোখ রেখে বলে " আমি একটা ছেলে কে ভালোবাসি, তোমরা কি ওকে মেনে নেবে "? বাবা মা স্তম্বিত, হতভম্ব কিন্তু ত্বরিতেই তাঁরা স্বমস্বরে

বলে উঠলেন " অবশ্যই মা, তুই আমাদের একমাত্র মেয়ে, বড় হয়েছিস অনেক বিদ্যা বুধ্বি অর্জন করেছিস,ভালো মন্দ বিচার করার বয়েস তোর হয়েছে, আমরা তোর ভালো চাই, তুই আমাদের বল

ছেলেটা কে ?" মা বাবা আশস্ত হতে চায় , অজানা আনন্দে বলে ওঠে " ছেলেটা নিশ্চয় বাঙ্গালী, তোর সঙ্গে পড়ে ?" মেয়ে তাদের আশ্চর্য চুপচাপ, মুখ ফুটে কোন কথা বলে না, নিশ্চল পাথরের মত সময় কেটে যায়, হটাত সে বলে ওঠে " আমি যাকে ভালোবাসি তোমরা আমাকে তার সাথে বিয়ে দেবে ?"" মেনে নেবে তাকে"? " সে তোমাদের বাঙ্গালী সমাজের কেউ নয়, আমি একটা আফ্রিকান

আমেরিকান ছেলে কে ভালোবাসি এবং আমি তাকে বিয়ে করতে চাই" মেয়ের এই উত্তরে মা বাবার মুখে কোন কথা ফোটেনা, অদ্ভুত চোখে ওরা মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকেন, ভাবছেন কি জবাব দেবেন, মেয়ের এই আবদার ওরা কি ভাবে পুরন করবেন, ভিশন শূন্যতা ভর করে দুজনের মাঝে, কত আশা,আকাংখা নিয়ে মেয়েকে এতো টুকু বড় করেছেন, স্বপ্ন দেখেছেন ভালো একটা বাঙ্গালী পাত্রের হাতে মেয়ে কে সম্প্রদান করবেন, অথচ সে বলে কিনা একটা কালো ছেলে কে বিয়ে করতে চায়, এ কেমন কথা, সমাজ চুত্যির আশঙ্কায় ওনাদের শরীর মন কেঁপে ওঠে, পরিচিত সমাজে কিভাবে ওনারা মুখ দেখাবেন সে ভেবে অশ্রুসিক্ত হতে থাকেন, হৃদয় ভেঙ্গে গুড়ীয়ে যেতে চায় কিন্তু মুখে আসে না কোন অভিব্যাক্তি, বেনো জলে ভেসে যাওয়া খড় কূটো আঁকড়ে ধরার মত দু জনে মেয়ের হাত চেপে অনুনয় করেন " মারে এটা তুই কেমন করে সিধ্বান্ত নিলি, আমাদের দিকটা একবার ভাবলি না ?" তোর মত অপরুপ একটা সুন্দরী মেয়ে কিভাবে একটা কালো কুৎসিত ছেলের সাথে সংসার করবে "? মায়ের চোখে ক্ষোভ,মুখে আগুন, এদিকে মেয়ে নির্বিকার, যেন কোথাও কিছু হয়নি, কি অদ্ভুত তার চাহনি, ধীরে ধীরে অতি কঠিন স্বরে সে বলে ওঠে " এটা সম্ভব নয়" আমি

তাকে ভালোবাসি" । " তোমরা যদি আমার ভালো চাও ওর সাথে আমার বিয়ের ব্যবস্থা করো আর না হলে আমাকে ভুলে যাও ", মা বাবা মেয়ের এই উত্তরের জন্য কোন ভাবেই প্রস্তুত ছিলেন না কাঁদছেন দুজন দু প্রান্তে বসে, ওদের অতি আদরের ধন আজ যে অচেনা ব্যবহার করছে ওদের সাথে,

কোনোদিন কি ভেবেছিলেন এই অজানা দুর্যোগ ওদের সব স্বপ্ন ছারখার করে দেবে, মা ভাবেন আর কাদেন, চীৎকার করে বলতে থাকেন " মাগো তোর পায়ে পড়ি তুই এমন একটা কাজ করিস না যাতে আমাদের কে সবার কাছে অপমানিত হতে হয় " 

হয় নি , কোন অনুরোধ, অনুনয়,বিনয় মেয়ের মন গলাতে পারেনি, মেয়ে তার সংকল্প থেকে পিছু হটেনি, বিফল মনোরথ মা বাবা অবশেষে মেয়ের মন রক্ষা করতে তাদের পরিচিত বাঙ্গালী সমাজ কে এড়িয়ে সেই ছেলেটার হাতেই মেয়েকে তুলে দিয়েছেন, আরো জানালেন মেয়ের মন রক্ষা করতে ওরা খরচ করেছেন প্রায় পয়তাল্লিশ হাজার ডলার ওদের বিয়েতে, মেয়ের মায়ের সাথে সম্প্রতি আমার কথা যখন হয় তিনি বললেন তার কস্টের কথা, দিচ্ছিলেন তার ব্যাখ্যা কেনো তিনি আজো মেনে নেন নি ওদের দৃস্টিতে থাকা অসম এই সম্পর্ক,

আমি সবিনয়ে ওনাকে জিজ্ঞেস করলাম কেন আপনারা আজো ওদের মেনে নিতে পারছেন না ? সমস্যাটা কোথায় ? ছেলেটা কালো তাতে কি হয়েছে ?ওরা যদি দুজন দুজনে সুখী হয় তাহলে তো আপনাদের ও সুখী হওয়া উচিত,ছলছল চোখে উনি উত্তর দিয়েছেন " মেয়ের বাবা হোন উত্তরটা আশা করি একদিন পেয়ে যাবেন "

উনি বলে চলেন " আপনি জানেন আমার মেয়েটা মাঝে মাঝে এই শহরে আসে,এইতো গত সপ্তাহেও ও এসেছিলো ওর এক বান্ধবীর বিয়েতে, জানেন ও কিন্তু আমাদের একবার দেখতেও আসেনি

আমি এর কোন উত্তর দিতে পারিনি ।

  একত্রিশে অক্টোবর ২০২২ ।

( একটি সত্যি ঘটনার ছায়া )