শিশির, বেইজিং: প্রকাশিত: ২৭ এপ্রিল, ২০২৫, ০২:৪২ পিএম
চীনের হু নান প্রদেশের চেং চৌ শহরের রু চেং জেলাটি দেশের হু নান, চিয়াংসি ও কুয়াং তুং এ তিন প্রদেশের সীমান্তে অবস্থিত। আগে এটি ছিল দরিদ্র একটি জায়গায়। ২০১৯ সালের মার্চ মাসে জেলাটি দারিদ্র্যমুক্ত হয়েছে। রু চেং এখন একটি ইকো-কৃষি বৈশিষ্ট্যযুক্ত জেলা। ২০২১ সাল পর্যন্ত জেলাটিতে মরিচ, চা এবং আদার ব্যাপক চাষাবাদ হয়। তখন সেখানে এসবের আয়তন ছিল যথাক্রমে ৮,৫৩৩, ৬,৩৩৩, ৪৩৩৩, ও ৪,১৩৩ হেক্টর।
আদা চাষ রু চেং জেলার একটি ঐতিহ্যিক কৃষি শিল্প। রু চেং জেলার মা ছিয়াং উপজেলায় আদা চাষের ইতিহাস ৪০ বছরের বেশি এবং প্রতিবছর ১ লাখ টন আদা এখান থেকে দেশের নানা জায়গায় পাঠানো হয়।
রু চেং জেলার আদা ঝাঁজালো ও নরম এবং স্থানীয়দের গুরুত্বপূর্ণ আয়ের উৎস। বর্তমানে মা ছিয়াও উপজেলায় সমবায় ভিত্তিক কৃষক পদ্ধতিতে আদা চাষ ও বিক্রি হয়। সারা জেলার ১৩টি উপজেলা এতে অন্তর্ভুক্ত।
২০২১ সালে রু চেং জেলায় প্রতিষ্ঠিত হয় আদা কোল্ড চেইন বিতরণ কেন্দ্র। সে বছরের নভেম্বর মাসে এই কেন্দ্র চালু হয়েছে। দশ হাজার কিউব মিটার বড় এ হিমাগারে স্থাপন করা হয়েছে আদা ফ্লাশ লাইন। তাতে সক্রিয়ভাবে আদা পরিষ্কার করা যায়। হিমাগারে সংরক্ষণ করা যেতে পারে ৭,৫০০ টন আদা। সাধারণত ৩০০ জন আদা চাষির নিজের তৈরি ভাণ্ডারের সমান।
মা ছিয়াং উপজেলার সিপিসি কমিটির সম্পাদক চেন কুয়ান চৌ জানিয়েছেন, আগে আদা মাত্র অল্প সময় সংরক্ষণ হতে পারতো এবং কৃষকরা নিজের তৈরি ছোট ভূগর্ভস্থ ভাণ্ডারে আদা রাখতো। আবহাওয়া ঠাণ্ডা হলে আদা সহজে নষ্ট হয়ে যেত। সাধারণত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল ২৫-৩০ শতাংশ। এখন হিমাগারে তার হার মাত্র ৫ শতাংশ। প্রযুক্তির সাহায্যে হিমাগারে তাপমাত্রা সবসময় ১৩-১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রাখা হয়। ফলে এখানে আদা আরও দীর্ঘসময় ধরে সংরক্ষণ করা যায়।
আদার চাষও প্রযুক্তির উপর নির্ভর করে। হু নান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞরা আদার বীজ, চাষের জমি নিয়ে বিশেষ গবেষণা করে উৎপাদন ব্যয় কমানো ও আদার মান ও পরিমাণ উন্নয়নে সাহায্য করেন। আদা এখন গ্রিনহাউজে চাষ করা হয়। তাই আবহাওয়া পরিবর্তন হলেও আদার চাষের ওপর কোন প্রভাব পড়ে না। জল এবং সার দেওয়ার কাজও এখন কম্পিউটারের মাধ্যমে করা হয়। পাশাপাশি, মা ছিয়াও উপজেলায় আসছে গভীর প্রক্রিয়াকরণ কোম্পানি। তারা আদা দিয়ে স্বাস্থ্য-পণ্য ও কেমিক্যাল তৈরি করে। ফলে আদার মূল্য বেড়েছে।
মা ছিয়াও উপজেলা থেকে দক্ষিণ দিকে ২০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে ইয়াও জাতির গ্রাম। তার নাম হান থাং গ্রাম। গ্রামটি পাহাড়ের ভেতরে অবস্থিত।
মোট ১০.৬ বর্গকিলোমিটার বড় এ গ্রামে চাষের জমির আয়তন মাত্র ৪৯ হেক্টর। আগে পাহাড়ি অঞ্চলে পরিবহন ও যাতায়াত ব্যবস্থা দুর্বল ছিল। তাই স্থানীয়রা জ্বালানি কাঠ বিক্রি করতেন।
চাষের জমি কম তবে পাহাড়ি অঞ্চল বড়। এখানে পাহাড়ি এলাকার আয়তন ৯০০ হেক্টর। তাই বনায়ন শিল্পের মাধ্যমে স্থানীয়দের আয় বৃদ্ধি পেতে পারে।
হান থাং গ্রামের জমিতে সেলেনিয়াম উপাদান প্রচুর, চা চাষের জন্য খুব ভাল। এমন জমিতে উৎপাদিত চা মিষ্টি ও সুগন্ধযুক্ত হয়। তাছাড়া, এ গ্রামের চা চাষ ও চা পান করার ইতিহাস ৪০০ বছরের প্রাচীন। আগে চা পাতা উৎপাদনের পরিমাণ কম ছিল। তাই স্থানীয়রা নিজে খাওয়া ছাড়া চা বিক্রি করেনি। ২০১৩ সালে গ্রামটি এ সংক্রান্ত একটি ব্র্যান্ড নিবন্ধন করে এবং সমবায় কেন্দ্র ভিত্তিক কৃষকের পদ্ধতির মাধ্যমে চা চাষ শিল্পের উন্নয়ন শুরু করে। কৃষকদের বিনামূল্যে চা চাষের প্রযুক্তি পরিচালনা শিখিয়ে দেয়া হয় এবং চায়ের চারা দেয়া হয়। চা চাষের আয়তন ১৩ হেক্টর থেকে বেড়ে ৩৪৭ হেক্টরে পৌঁছেছে। তাদের বার্ষিক উৎপাদন মূল্য ২ কোটি ইউয়ানের বেশি। স্থানীয় প্রতিটি পরিবারের বার্ষিক আয় ৬০ হাজার ইউয়ান ছাড়িয়েছে। চা চাষ শিল্প উন্নয়নের পাশাপাশি গ্রামের অবকাঠামো নির্মাণও দ্রুত এগিয়ে চলছে। সারা গ্রামে চালু হয়েছে সুপেয় পানি, বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ নেটওয়ার্ক।
আগে পাহাড় ছিল স্থানীয় অর্থনীতির উন্নয়নে বাধা। আর এখন তা সম্পদে পরিণত হয়েছে। হান থাং গ্রামে চা চাষ ছাড়াও গ্রামীণ পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন হচ্ছে।
আদা ও চা এই ছোট দুটো ফসল স্থানীয় দারিদ্র্যবিমোচনে বড় ভূমিকা পালন করেছে। গ্রাম দুটো দিন দিন সুন্দর হচ্ছে এবং কৃষকদের জীবন সমৃদ্ধ হচ্ছে। এভাবেই চাষের শিল্প গ্রামীণ পুনরুত্থান এগিয়ে নিয়ে যায়। সূত্র :সিএমজি।