মিনহাজ আহমেদ প্রকাশিত: ২৭ এপ্রিল, ২০২৫, ১১:১২ পিএম
(১)
তাজুল ইমাম একজন চারুশিল্পী। ছবি আঁকেন। বইয়ের অলঙ্করণ ও প্রচ্ছদ করেন। আঁকিয়ে শিল্পী ছাড়াও তিনি একজন গীতিকার, সুরকার ও কণ্ঠশিল্পী। ভীষণ ভীষণ জনপ্রিয় গান আছে তাজুল ইমামের তৈরি। তার আঁকা ছবি উঁচুদামে বিক্রি হয়। এক সময় পুতুল নাচও দেখাতেন, অভিনয়ও করতেন। মাঝে মাঝে ছড়া-কবিতাও লিখেন। বুদ্ধিদীপ্ত ব্যঙ্গ-কৌতুকে যে কোনো আসরকে প্রাণবন্ত করতে এক তাজুল ইমামই যথেষ্ট। একাধিক কারণে তাজুল ইমাম অনেকের যেমন, আমারও খুব প্রিয় মানুষ।
(২)
দি অপটিমিস্টস্ নামে নিউ ইয়র্কে আমাদের একটি সেবামূলক সংগঠন আছে। নিউ ইয়র্ক থেকে আমরা কাজ করি বাংলাদেশের দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য। বছর শেষে আমরা একটা অনুষ্ঠান করি, যেখানে আমরা উপস্থিত আমন্ত্রিতদের কাছ থেকে অনূদান সংগ্রহ করি। আমাদের দেশের প্রয়োজনের তুলনায় আমাদের সংগৃহীত অর্থ পর্যাপ্ত হয়না। তবুও আমরা খরচ বাঁচিয়ে, নিজেরা শ্রম দিয়ে, সময় দিয়ে প্রতি বছর চেষ্টা করি, যেন আরও কিছু বেশি অর্থ সংগ্রহ হয়, যেন আরেকটা দরিদ্র মেধাবী মেয়ে বা ছেলের স্বপ্ন বাস্তব হয়, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়-কর্মজগতের মুখ দেখে, যেন দেশের কাজে লাগে। অর্থের জন্য আগে আমরা বাংলাদেশি মেলাগুলোতে খেলনা বিক্রি করেছি, এখন আমরা নামকরা শিল্পীদের সুন্দর সুন্দর ছবি বিক্রি করি।
(৩)
তাজুল ইমাম-এর কাছে প্রথমবার যখন ছবি চাই, তিনি এক কথায় একটা ছবি দিলেন। সেটা এই শহরের এক নামকরা ব্যবসায়ীর দেয়ালে শোভা পাচ্ছে। পরের বার ছবি চাইলে তাজুল ইমাম বললেন, আমি ছবি দেবো এবং তোমাদের অনুষ্ঠানে যাবো। সেবারও তাজুল ইমাম-এর ছবি চড়া দামে বিক্রি হয়েছিলো। এবার আমার লোভটা একটু বেড়ে গেলো, আমি তার কাছে দুটো ছবি চাইলাম। এক কথায় রাজি হলেন এবং বললেন, এ সময় আমি প্যারিস থাকবো, তাই নিজে উপস্থিত থাকতে পারছি না।প্যারিস রওয়ানা দেওয়ার আগে নতুন দুটি ছবি এঁকে আমার কাছে দিয়ে গেলেন সুন্দর করে বাঁধাই করে।
(৪)
তাজুল ইমাম দেশকে প্রাণ দিয়ে ভালবাসেন, দেশের জন্য যুদ্ধ করেছেন। কিন্তু তিনি চাইতেই যে অপটিমিস্টস্-এর জন্য এভাবে ছবি দিতে রাজী হয়ে যাবেন, সেটা আমি ভাবতে পারিনি। শুধু তা-ই নয়, অপটিমিস্টস্ যে দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করছে, সেটাকে তিনি অনেক সম্মানের চোখে দেখেন। তাজুল ইমাম সেজন্যেই তার শৈল্পীক সৃষ্টিশীলতা দিয়ে অপটিমস্টস্-এর সাথে আছেন। দেশের অসহায় দরিদ্র পরিবারের ছেলেমেয়েদের প্রতি কোমল অনুভূতিসম্পন্ন এই তাজুল ইমাম আসলেই আমার অচেনা ছিল।
তাজুল ইমাম, আপনার প্রতি দেশের দরিদ্র পরিবারের অসংখ্য ছেলেমেয়েদের পক্ষ থেকে অনেক শ্রদ্ধা।
(নিচে পেইন্টিং-এর ছবি দুটো তাজুল ইমাম-এর উদ্ভাবনা 'ব্রাউন পেপার'-এ আঁকা। এই ছবি দুটো আগামীকাল রোববার ৯ অক্টোবর অপটিমিস্টস্-এর বার্ষিক ফান্ড-রেইজিং-এ বিক্রি হবে। অপটিমিস্টস্-এর ফান্ড রেইজিং-এ যোগ দিতে আগ্রহীরা theoptimists.org ওয়েবসাইটে গিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে কিংবা 7182784953 নম্বরে ফোন করতে পারেন।)