মশিউর আনন্দ প্রকাশিত: ২৭ এপ্রিল, ২০২৫, ০২:০১ পিএম
শিল্পী -সাহিত্যিক-গুণীজন আমাদের পথ চলার পাথেয়। তাঁদের অবদানে দেশের সংস্কৃতি আজ সমৃদ্ধ। তাঁরা আলোর বার্তাবাহক, অনুসরণীয় ও অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব। সংস্কৃতির বিভিন্ন শাখার গুণী শিল্পীদের সৃষ্টি বর্তমান ও আগামী প্রজন্মের জন্য সবসময়ই প্রেরণা। সূদুর আমেরিকা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় নিউইয়র্ক বাংলা অনলাইন পত্রিকার ঢাকা প্রতিনিধি মশিউর আনন্দ তিনি বিশেষ সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এই প্রজন্মের সংগীত শিল্পী ইলোরা আজমীর।
নিউইয়র্ক বাংলা :প্রথমেই জানতে চাই আপনার শৈশব ও শিক্ষা সম্পর্কে যদি বলতেন?
ইলোরা আজমী:আমার জন্ম চট্টগ্রাম জেলায়। বাবা ময়মনসিংহ চাকরি করতেন, যে কারণে ময়মনসিংহ থাকতে হয়েছে দীর্ঘদিন। আমি ময়মনসিংহে স্থানীয় স্কুলে লেখাপড়া শুরু করি। এরপর এমএম কলেজে ভর্তি হয়। উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের জন্য আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়। সমাজবিজ্ঞান থেকে অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করি।
নিউইয়র্ক বাংলা: সংগীত চর্চাটা ঠিক কিভাবে গড়ে ওঠে ?
ইলোরা আজমী:আমাদের পরিবারটা ছিল যেন সংগীতের স্বর্গ। আমি আমার শৈশব ও কৈশোরে বাড়ীতে আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গীত পরিবেশন করতে দেখেছি।বাবা খুব সুন্দর নজরুল সংগীত গাইতেন। চাচা, মামাদের মধ্যে সংগীত প্রীতি ছিল। বিশেষ করে আমি যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী তখন গানের প্রতি আমার একটা ভালবাসা সৃষ্টি হয়। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া চলাকালীন সময়ে ওস্তাদ অবিনাশ গোস্বামীর কাছ থেকে সংগীতের উপরে তালিম নিয়েছে। এরমধ্যে আমি রেডিওতে সংগীত পরিবেশন করার সুযোগ পেয়েছি। মঞ্চে গান গেয়েছি বহুবার।
নিউইয়র্ক বাংলা:সংগীতের বিচিত্র ভুবনে ঠিক কোন ধরনের গান আপনি করে থাকেন ?
ইলোরা আজমী :সব ধরনের গানই আমি করি। তবে ক্লাসিকাল বেইজড গান ভালো লাগে। বাংলা গানের পাশাপাশি উর্দু, হিন্দি,গজল সব গানই করি।
নিউইয়র্ক বাংলা:কোন শিল্পীর গানে আপনি এখনো অনুপ্রেরণা পান, আপনার প্রিয় শিল্পী কে, কিভাবে তার শৈল্পিক সৃষ্টিকে আপনি মূল্যায়ন করেন ?
ইলোরা আজমী : আমি লতা মঙ্গেসকারের গানে অনুপ্রেরণা পাই। আমার প্রিয় শিল্পী লতা, আশা ভশলে,নুরজাহান,মেহেদী হাসান, রাহাত ফতেহ আলি খান ও রুনা লায়লা।
সব শিল্পী তাদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও সাধনার দ্বারা সংগীত সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন সুর ও সঙ্গীতের বহুমাত্রিকতা। নিজেদেরকে নিয়ে গেছেন অনন্য মাত্রায়। এই সমস্ত শিল্পীদের সৃষ্টি আমার, আমাদের বর্তমান ও আগামী প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণার সম্পদ।
নিউইয়র্ক বাংলা:সঙ্গীতাঙ্গনে আপনার দুই-একটি স্মৃতির কথা যদি বলতেন ?
ইলোরা আজমী :আমার অনেক স্মৃতি আছে, এগুলো আমাকে সবসময়ই অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। আমি একবার যশোরের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গান গাইতে গিয়েছিলাম, একটি বিরহের গান গাইছি, ঠিক তখনি একজন গ্রামের মহিলা চিৎকার করে কাঁদছিল।
তাঁর পাশে অনেকেই অশ্রু সজল চোখে তাকিয়ে ছিল। আমার কাছে এই ব্যাপারটি খুব সহজ মনে হয়নি। মানুষের মনের খুব কাছাকাছি যাবার একটি শ্রেষ্ঠ মাধ্যম হচ্ছে সংগীত।
আমার গান শুনে একদিন একটা নেপালি ছেলে ইউটিউব মন্তব্য করেছেন,আমি বাংলা বলতে পারিনা,বুঝিনা,তারপরেও ইলোরা আজমীর গান আমার হৃদয় স্পশ করেছে।
ঢাকায় একটা গানের অনুষ্ঠানে আমি একটানা ২৩টি গান পরিবেশন করেছি। বেশির ভাগ গানই আমার নিজের লেখা,আমার সুরারোপিত।
নিউইয়র্ক বাংলা:বাংলা সংগীত আজ কতটা সমৃদ্ধ?
ইলোরা আজমী:বাংলা সংগীত অনেক সমৃদ্ধ। উপমহাদেশের কথা যদি বলি তবে, এখানে সংগীত এগিয়ে চলেছে আপন গতিতে। পুরনো গান এখনো বেশ জনপ্রিয়। মানুষ সুন্দর কথা আর সুরের গানই শুনতে চায়। ক্লাসিকালকে ধরে রাখতে না পারলে সংগীতের ধারা এগিয়ে যেতে পারে না।
নিউইয়র্ক বাংলা:সঙ্গীত নিয়ে ভবিষ্যতে আপনার নতুন কোনো পরিকল্পনা আছে কি ?
ইলোরা আজমী:আমি নিজে গান লিখি,গান সুর করি ও সংগীত পরিবেশন করি । অনেক গান আমার প্রচারের অপেক্ষায় আছে। আমি উর্দু আর হিন্দি গজল লিখছি ও সুর করছি। উর্দু ও হিন্দি গজল সুন্দরভাবে পরিবেশন করে শ্রোতাদের নিকট ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা আমার রয়েছে। ভবিষ্যতে গানের স্কুল করার ইচ্ছে রয়েছে।
নিউইয়র্ক বাংলা:এই যে আপনি উর্দু এবং হিন্দিতে গজল লিখছেন একজন বাঙ্গালী হিসেবে। সাধারণত বাঙ্গালীদের মধ্যে বিশেষ করে উর্দু ও হিন্দিতে গজল লেখার ইতিহাস খুব একটা দেখা যায় না ,আপনি সেই কাজটি করছেন। এই গজল লেখা ও সুর করার শৈল্পিক সৃষ্টি আপনার ভিতরে ঠিক কিভাবে আসলো ??
ইলোরা আজমী: আমি প্রচুর হিন্দি আর উর্দু গান শুনি।গজলের প্রতি আমার বিশেষ দূর্বলতা আছে। হিন্দি আর উর্দু ভাষার উপর কিছুটা দখল আছে আমার।যেহেতু নিজেই সুর করি,অনেকটা ভাললাগা থেকেই আমি গান ও গজল লিখেছি। এই সমস্ত গান আমার ইউটিউব চ্যানেলে আছে, সুযোগ হলে গানগুলো শোনার অনুরোধ করছি।
নিউইয়র্ক বাংলা :এরমধ্যে কতটি গান আপনি লিখেছেন সুর ও কণ্ঠ দিয়েছেন? আপনার লেখা গান ও গজল শ্রোতাদের মনে কতটা অনুভূতির সৃষ্টি করেছে?
ইলোরা আজমী :প্রায় দুই'শতর কিছু বেশি গান লিখেছি। সুর করেছি চল্লিশের মত। এরমধ্যে ৩০ টি গানে কন্ঠ দিয়েছি। আমার লেখা গানে শ্রোতাদের কাছ থেকে বেশ সাড়া পেয়েছি। মঞ্চে,বেতারে আর ইউটিউবে আমি বেশি শ্রোতা পেয়েছি। শ্রোতারা আমার সংগীতের প্রেরণা।
নিউইয়র্ক বাংলা:আপনি বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনের সংগীত শিল্পী। বেতার ও টেলিভিশন কর্তৃপক্ষের প্রতি আপনার কোনো বিশেষ দিক নির্দেশনা আছে কিনা? নতুনরা বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনে সংগীত পরিবেশনে কিভাবে সুযোগ পেতে পারে?
ইলোরা আজমী:বেতার ও টেলিভিশনে শিল্পীদের সম্মানি বৃদ্ধির পাশাপাশি নতুন শিল্পীদের অডিশনে বেশি বেশি সুযোগ করে দিতে হবে। যাতে তাঁরা উৎসাহী হয়ে ভালো কিছু সৃষ্টি করতে পারে।
নিউইয়র্ক বাংলা: বর্তমান ফেসবুক-ইউটিউব সোশ্যাল মিডিয়াতে গান দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।আপনি শ্রোতাদের কাছ থেকে কতটা সাড়া পাচ্ছেন?
ইলোরা আজমি:সোস্যাল মিডিয়ায় ইউটিউব একটা জনপ্রিয় মাধ্যম। সংগীত নিয়ে শ্রোতাদের খুব কাছাকাছি যাওয়ার একটা চমৎকার মাধ্যম বলা যেতে পারে। আমি ইউটিউবে দারুণ সাড়া পাচ্ছি। প্রেরণার পাশাপাশি কিছু ভালো উপদেশ পেয়েছি। ইউটিউবে গান শুনে অনেক আমাকে সংগীত পরিবেশনের জন্য আমন্ত্রণ পাঠিয়েছেন।
নিউইয়র্ক বাংলা:নিউইয়র্ক বাংলাকে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
ইলোরা আজমী:নিউইয়র্ক বাংলাকে অনেক ধন্যবাদ। আমাকে কথা বলার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য।