NYC Sightseeing Pass
ঢাকা, শনিবার, এপ্রিল ২৬, ২০২৫ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩২
ব্রেকিং নিউজ
জব্বারের বলীখেলায় আবারও চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লার ‘বাঘা’ শরীফ Bangladesh reaffirms commitment to fully Implement the CHT Peace Accord Kashmir Violence Conflict can be Solved Diplomatically or Needs a Retaliation Plan Against Pakistan ব্রেন স্ট্রোক পরবর্তী সময়ে সেরে ওঠার যুগান্তকারী ওষুধ আবিষ্কার নিউইয়র্কে প্রবাসীদের সাথে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের মত  বিনিময় নিজেকে রাজা-বাদশাহ ভাবছেন ট্রাম্প! ‘দাগি’ দেখতে কয়েদির বেশে সিনেমা হলে শতাধিক নিশো ভক্ত Attorney General James Wins Case Against Google for Monopolies in Digital Advertising নিউইয়র্কে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ সংবাদ সম্মেলন নানা অভিযোগ উত্থাপন : বাংলাদেশ রেমিট্যান্স মেলা  বয়কটের আহবান নিউইয়র্কের এস্টোরিয়ায় পুলিশের গুলিতে মানসিকভাবে অসুস্থ  এক ব্যক্তির মৃত্যু
Logo
logo

সহস্রকণ্ঠে বিশ্ববাঙালির বর্ষবরণ  নিউইয়র্ক পরিণত হলো একখণ্ড বাংলাদেশে


খবর   প্রকাশিত:  ২৬ এপ্রিল, ২০২৫, ০৮:২০ পিএম

সহস্রকণ্ঠে বিশ্ববাঙালির বর্ষবরণ  নিউইয়র্ক পরিণত হলো একখণ্ড বাংলাদেশে

১৪৩২ বঙ্গাব্দ স্মরণকালের বিস্ময় নিয়ে আবিভূর্ত হলো নিউইয়র্ক শহরে। দু’দিনের বর্ষবরণ উৎসব বাঙালি জাতির পরম আরাধ্য ও চরম প্রাপ্তির বৈকুণ্ঠময় অনুভবের স্মারক হয়ে থাকল। যেন একখণ্ড বাংলাদেশ বিশ্ববাসীকে জানান দিল আমাদের জীবনও আনন্দময়। ইতিহাস ও ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ আমাদের বাঙালি সংস্কৃতি। জ্যাকসন হাইটসে পঞ্চাশ হাজার মানুষের জমায়েত মঙ্গলশোভাযাত্রাকে করে তুলেছিল নীল আকাশে সাদা মেঘের পেখম তুলে ধাবমান বলাকার প্রাণিত আলোকশিখা। তবে আগের দিন বৃষ্টিস্নাত দিনে টাইমস স্কয়ারও হয়ে উঠছিল বৈশাখের রঙিন দিবসের গীতাঞ্জলি।  প্রথমদিনে সহস্র বাঙালি একত্রিত হয়ে সুরে-সঙ্গীতে-নৃত্যে পালন করেছে তাদের প্রাণের উৎসব বাংলা নববর্ষ। ওইদিন উৎসবে উপস্থিত ছিলেন থাইল্যান্ড, নেপাল, ভুটানের কনসাল জেনারেলবৃন্দ। একইসঙ্গে বহু দেশ ও  জাতির মানুষ উপস্থিত থেকে বাংলা বর্ষবরণ উৎসব পালন করেন, যা রূপ নেয় আন্তর্জাতিকতায়। উল্লেখ্য, পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের বাইরে বিশ্বব্যাপী বাঙালিদের বৃহত্তম সমাবেশ হয় নিউইয়র্ক শহরেই। গত দুই বছরের মতো এবারও দু’দিনের অনুষ্ঠানের প্রথম দিনটি অর্থাৎ ১২ এপ্রিল টাইমস স্কয়ারে এবং ১৩ এপ্রিল জ্যাকসন হাইটসের ডাইভার্সিটি প্লাজায় পালিত হয় বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উৎসব। এবারের উৎসব উৎসর্গ করা হয়েছে ‘ছায়ানটে’র সভাপতি ও সংস্কৃতি-সাধক সদ্য প্রয়াত প্রফেসর ড. সনজীদা খাতুনকে ।  বিশ্ববাঙালির আয়োজনে দুই দিনব্যাপি এ অনুষ্ঠানে ছিল গান-নৃত্য, মঙ্গল শোভাযাত্রা ও বৈশাখী মেলা। যেখানে শতকণ্ঠে শিশুরা গান গেয়ে এবং সহস্রকণ্ঠে বড়দের সুর এবং গানে বরণ করে নেওয়া হয় বাংলা বছরের প্রথম দিনটিকে। আয়োজক সংগঠনের প্রচেষ্টায় দীর্ঘদিনের মহড়া ও নিবিড় অনুশীলনের মধ্য দিয়ে প্রস্তুত করা হয়  সকলকে। অনুষ্ঠানের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ ছিল মহীতোষ তালুকদার তাপসের নেতৃত্বে ‘সহস্র কণ্ঠে বর্ষবরণ’। ১০০০-এরও বেশি শিল্পী একসঙ্গে মিলিত হয়ে সম্প্রীতি, আনন্দ এবং মাতৃভূমির প্রতি ভালবাসার গান গেয়েছেন নিউইয়র্কের মাটিতে। এছাড়াও, এই বছর একটি বিশেষ অনুষ্ঠান ছিল – ‘হাজার বছরের বাংলা গানের গল্প’। কল্লোল বসুর পরিকল্পনায় এই অনুষ্ঠানে বিভিন্ন অঞ্চলের ১০০ জন শিল্পী হাজার বছর ধরে বিস্তৃত এবং বহুবিধ সাংস্কৃতিক প্রভাবে প্রভাবিত বাংলা গানের ৩২টি ধারাকে তুলে ধরেন। পরিবেশনায় ছিল- ডায়াস্পোরা ইনক, কল্লোল, মৈত্রী, সিংগিং বার্ডস, সৃষ্টি একাডেমি, অনুপ দাস ডান্স একাডেমি প্রভৃতি। নৃত্যে ছিলেন- চন্দ্রা ব্যানার্জি ও সম্প্রদায়। এছাড়া, তাজলি, কৃষ্ণা তিথি, রেশমি প্রতীক, শাহ মাহবুব এবং মণিপুরি নৃত্যে জগন্নাথ ও সম্প্রদায় সংযুক্ত পরিবেশনায় মুখরিত ছিল টাইমস স্কয়ার। বলাবাহুল্য, কণ্ঠশিল্পী মহীতোষ তালুকদার তাপসের নেতৃত্বে শত কণ্ঠ থেকে সহস্রকণ্ঠের এই বর্ষবরণ বাঙালি সংস্কৃতির পালকে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এর সঙ্গে খ্যাতিমান রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা’র সুরেরধারা যুক্ত হয় উৎসবের সঙ্গে। বর্ষবরণ উৎসবে একইরকম শাড়ি ও পাঞ্জাবি পরে নারী-পুরুষের বর্ণিল পরিবেশনায় বাংলার জয় ঘোষণা করা হয়েছে।  ১৪৩২ বঙ্গাব্দের বর্ষবরণের বিশেষত্ব হলো বহুমাত্রিকতা। সহস্রকণ্ঠের পরিবেশনায় ছিল নতুনত্ব; সঙ্গে নিউইয়র্ক রাজ্যসরকারের ক্যালেন্ডারে ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখের স্বীকৃতি এবং এশিয়ার কৃষিপ্রধান নয়টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশসহ ভারত, নেপাল, থাইল্যান্ড, শ্রীলংকার কনসাল জেনারেল ও তাদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা নিঃসন্দেহে বৈচিত্র্য এনেছে প্রবাসী বাঙালিদের সর্ববৃহৎ এই আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানে।  নিউইয়র্ক টাইমস স্কয়ারে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বিকেল পাঁচটার পর ঘটে উৎসাহব্যঞ্জক ও স্মরণীয় ঘটনা। এনআরবি ওয়ার্ল্ডওয়াইড-এর পক্ষ থেকে দু’জন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে আজীবন সম্মাননা পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। এরা হলেন-বিশিষ্ট পণ্ডিত, বিজ্ঞানী, উদ্ভাবক, উদ্যোক্তা এবং সমাজসেবী ড. পরিতোষ এম. চক্রবর্তী এবং অপরজন ডা. মুহাম্মদ এস. চৌধুরী, এমডি যিনি মানব সেবা ও চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতি এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের ক্ষমতায়নে নিবেদিতপ্রাণ। ব্যতিক্রমী এই পুরস্কার নববর্ষ উৎসবকে ভিন্ন মাত্রা প্রদান করেছে।  নিউইয়র্ক টাইমস স্কয়ারে বর্ষবরণ শুরু হয়েছিল ২০২৩ সালে। দৃশ্যত বাস্তবতা হলো, ২০২৫ সালে এসেই উৎসবটি আন্তর্জাতিক মহিমা অর্জন করেছে। বলাবাহুল্য, বাংলা বর্ষবরণের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি এ বছরের উদযাপনকে অনেক বেশি তাৎপর্যমণ্ডিত করেছে; পরিণত হয়েছে বৈশ্বিক উৎসবে। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যে ১৪ এপ্রিলকে বাংলা নববর্ষের স্বীকৃতি দিয়ে অঙ্গরাজ্যের রাজধানী আলবেনিতে গভর্নর অফিস বাঙালি জাতির সবচেয়ে বড় এই উৎসবকে ২৮ এপ্রিল উদযাপন করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নিউইয়র্কে মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের অনুরোধে সিনেটর লুইস সেপুলভেদার ১৫ জানুয়ারি প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে অঙ্গরাজ্যের আইনসভার অধিবেশনে ২০২৫-এর ২২ জানুয়ারি আইনপ্রণেতারা সর্বসম্মতিক্রমে বাংলা নববর্ষ উদযাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। রেজুলেশনে উল্লেখ করা হয়, ১৪ এপ্রিল, অর্থাৎ বাংলা বছরের  প্রথম মাসের প্রথম দিন পয়লা বৈশাখকে নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যে বাংলা নববর্ষ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হলো। এই অঙ্গরাজ্যের  সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের স্বীকৃতি হিসেবে এবং এই রাজ্যে বসবাসরত  বিভিন্ন কমিউনিটির মধ্যে সম্প্রীতি দৃঢ় করার লক্ষ্যেই এ সিদ্ধান্ত  গৃহীত হয়েছে।

টাইমস স্কয়ারে রেজুলেশনটি (১২ এপ্রিল )পাঠ করে শ্রোতৃমণ্ডলীকে শোনানো হয়।  বলাবাহুল্য, অভিবাসী জীবনের লড়াইটা কেবল অন্ন সংস্থানের জন্য নয় বরং বাঙালি জাতির যা কিছু অহংকারের সামগ্রী তা সামনে নিয়ে এগিয়ে চলার লড়াইও। এই লড়াই নিজেদের সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার নিরন্তর সংগ্রামে উদ্দীপিত। আর এই আনন্দ উজ্জীবনের স্বাক্ষর রয়ে গেল ১৪৩২ বঙ্গাব্দের নববর্ষ উদযাপনের মধ্য দিয়ে। আয়োজক এনআরবি ওয়ার্ল্ডওয়াইড টিকে থাকুক বাঙালির রক্ষাকবচ হিসেবে।  উদ্যোক্তাদের দাবি, ১৩ এপ্রিল কেবল জ্যাকসন হাইটসের ডাইভার্সিটি প্লাজায় প্রায় ৫০ হাজার বাঙালি  অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। আয়োজকদের কথায়, এই উদযাপনের মূল উদ্দেশ্য বৃহত্তর প্রবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে বাংলা সংস্কৃতির প্রকৃত বার্তা পৌঁছে দেওয়া। মুক্তধারা এবং এনআরবি ওয়ার্ল্ডওয়াইড সভাপতি বিশ্বজিত সাহার কথায়, "এই উৎসব বিশ্ব বাঙালির ঐক্য ও ভাষার প্রতি ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ।"