মশিউর আনন্দ প্রকাশিত: ২৬ এপ্রিল, ২০২৫, ০৯:৩০ পিএম
হাজার বছরের প্রাচীন বাংলাদেশের শিল্প-সংস্কৃতি বৈচিত্র্যময় এবং সমৃদ্ধ। আমাদের ঐতিহ্যবাহী সংগীত ও লোক-সংস্কৃতি দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আজ বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। শিল্পী-সাহিত্যিক-গুণীজন আমাদের পথ চলার পাথেয়। তাঁদের অবদানে দেশের সংস্কৃতি আজ সমৃদ্ধ। তাঁরা আলোর বার্তাবাহক, অনুসরণীয় ও অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব। সংস্কৃতির বিভিন্ন শাখার গুণী শিল্পীদের সৃষ্টি বর্তমান ও আগামী প্রজন্মের জন্য সবসময়ই প্রেরণা। সূদুর আমেরিকা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় নিউইয়র্ক বাংলা অনলাইন পত্রিকার ঢাকা প্রতিনিধি মশিউর আনন্দ তিনি বিশেষ সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এই প্রজন্মের সংগীত শিল্পী সিলভি তাহমিনার।
নিউইয়র্ক বাংলা : প্রথমেই জানতে চাই আপনার শৈশব, স্কুল ও কলেজ সম্পর্কে, শৈশব-কৈশোরের আপনার কোনো গানের স্মৃতির কথা যদি বলতেন।
সিলভি তাহমিনা : ভিকারুননিসা নুন স্কুল এ্যান্ড কলেজ থেকে আমি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করি। খুব ছোট্টবেলা থেকে আমি গান গাইতে ভালোবাসি। অনেক ধরণের দেশি-বিদেশী গান আমার আব্বা সবসময় শুনতেন, এখনো শোনেন আর আমাকে উৎসাহ দেন সবসময়ই। ক্লাসিক্যাল গান শিখতে এখনো উৎসাহ দেন আমার বাবা , মা, স্বামীসহ আর আমার পরিবারের সকলেই। তাঁদের উৎসাহে আমি সংগীত চর্চা করতে থাকি।এক সময় আমাদের বাসায় ঘরোয়া পরিবেশে সবাই গান করতো।
নিউইয়র্ক বাংলা: সংগীত মতো শৈল্পিক একটা চর্চা ঠিক কিভাবে আপনার ভিতরে গড়ে ওঠে ?
সিলভি তাহমিনা : আমার প্রথম গান করা শুরু যখন আমি ভালো মতো কথ বলতে পারতাম না কিন্তু (আকাশের হাতে আছে একরাশ নীল )গাইতাম। এটি আজও আমার প্রিয় গানগুলোর মধ্যে একটি। আমি যখন চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ি তখন গানের শিক্ষকের কাছে তালিম নেওয়া শুরু করি। খুব ভালো লাগতো কঠিন গান গাইতে। তখন থেক নজরুল গাইতে শুরু করি।
নিউইয়র্ক বাংলা : সংগীতের বিচিত্র ভুবনে ঠিক কোন ধরনের গান আপনি করে থাকেন?
সিলভি তাহমিনা: অনেক ধরণের গান আমি গাইতে পছন্দ করি।তাই আলাদা করে বলা কঠিন। গান ভালো লাগলেই গাই সেটা যে কোনো ধরণের বা ভাষার হতে পারে।
নিউইয়র্ক বাংলা: কোন শিল্পীর গানে আপনি এখনো অনুপ্রেরণা পান, আপনার প্রিয় শিল্পী কে, কিভাবে তার শৈল্পিক সৃষ্টিকে আপনি মূল্যায়ন করেন ?
সিলভি তাহমিনা : গোলাম আলীর গাজাল আমার খুব প্রিয়। অনুপ্রেরণা পাই যে কোনো ভালো গানে।প্রিয় শিল্পীর নামের লিস্ট অনেক বড় ! প্রিয় শিল্পী গোলাম আলী, লতা মঙ্গেশকর , শাহনাজ রাহমাতুল্লাহ , ক্যারেন কার্পেন্টার , ফিল কলিন্স , মাইকেল বোল্টন , এরকম দেশে-বিদেশে আরও অনেক অনেককে যা বলে শেষ করতে পারবো না। যে কোনো ভালো গান তৈরী আর গাইতে অনেক শিখতে হয়। তাই যে কোনো বিষয়ের মতো গানেও অধ্যাবসায় জরুরি। একটা ভালো গান জনপ্রিয় হয়ে ওঠার পিছনে থাকে যেমন সাধনা, চেষ্টা , শিক্ষা , জ্ঞান , বুদ্ধি , পরিশ্রম ও একাগ্রতা। বড় শিল্পীদের অসাধারণ গায়কী আমাকে মুগ্ধ করে। শ্রদ্ধা জাগে তাঁদের গানের পরিসীমা আর অর্জন দেখে। মুগ্ধ করে তাদের গায়কী ! তাদের অর্জন। গান অনেকে গায় তবে গানের মতো গান সকলে গাইতে পারে না।ভালো গান বুঝতে হলেও ভালো গান শুনতে হয়। তাই শ্রোতাদেরও বিভিন্ন ধরণের গান শোনার শখ থাকতে হয়।তাহলেই ভালো শ্রোতাও তৈরী হবে। শ্রোতার কথাটি এজন্য বললাম, ভালো গান শোনার জন্য শ্রোতাও লাগবে। তাই যে কোনো দেশের ভালো গান শ্রোতাদের শোনা উচিৎ। তাহলে তুলনা করতে পারবে সংগীত ও শিল্পী সম্পর্কে। আমাদের যে কোনো বাংলা গানের জন্য ভালো শ্রোতা দরকার যারা আসল গান বোঝে।
নিউইয়র্ক বাংলা: বাংলা সংগীত আজ কতটা সমৃদ্ধ?
সিলভি তাহমিনা: বাংলা সংগীত আর বাংলাদেশী সংগীত দুই আলাদা বিষয়। সমৃদ্ধ বলতে বোঝায় সংগীত শিক্ষা, সুরের নানা জ্ঞানচর্চা ও নতুনত্ব যার আছে। আর সংগীতের এই অর্জন অধ্যাবসায় ছাড়া সম্ভব না। আমাদের বাংলাদেশে লালন,ভাটিয়ালি তথা পল্লী গানগুলোর মধ্যে একটা গভীরতা আছে কারণ এটি একেবারেই নিজস্ব দেশীয় গান। তেমনি নিজস্বতা আছে ক্লাসিকাল ও ইংরেজিসহ অন্যান্য ভাষার প্রতিটি গানে। ক্লাসিকাল ছাড়াও সেমি-ক্লাসিক গান (ফিল্মি গান/মডার্ন গান) আন্দাজে গেলে ভুল গাওয়া হয়। কপি করে গান অনেকে গেয়েছেন। তাঁরা জনপ্রিয় হয়েছেন তবে সেটা নিজস্বতা ও সমৃদ্ধ হওয়া নয়। কিছু শিল্পী আছেন ভালো গান করেন কিন্তু তার সংখ্যা অতি নগন্য। তাই গান অনেক আছে কিন্তু হৃদয় ছুঁয়ে যাবার মতো গান নেই বললেই চলে।
নিউইয়র্ক বাংলা : সঙ্গীত নিয়ে ভবিষ্যতে আপনার নতুন কোনো পরিকল্পনা আছে কিনা যদি বলতেন ?
সিলভি তাহমিনা: আমি ভালো কিছু গান গাইতে চাই যেটা আমার নিজের চেষ্টায় ও উদ্যোগে করে যাচ্ছি। আমি চেষ্টা করেছি শিখতে,ভালো গাইতে, ভালো কিছু গান করাটাই আমার চিন্তা। ভালো কিছু গান করতে পারলে মানুষ শুনবে। শুনে তাঁদের ভালো লাগবে। এটাই আমার উদ্দেশ্য।এখানে পরিকল্প করে কিছু হয় না,ভালো কাজ যেটা (অর্থাৎ ভালো গান গাওয়া) সেটাই করার চেষ্টা করছি।
নিউইয়র্ক বাংলা: সংগীতের পাশাপাশি আর কোন শিল্প- সাহিত্যের বা সামাজিক সংগঠনের সাথে অন্তর্ভুক্ত আছেন কিনা ? সিলভি তাহমিনা: আমি আমার কাজ নিজ উদ্যোগে করি। আমি আমন্ত্রণ পেয়ে ক্যালিফোর্নিয়াতে অনেক অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করেছি। অর্থাৎ সম্পূর্ণ গানের অনুষ্ঠান আমি নিজের দল নিয়ে করে থাকি। আমার কাজ নিজের গান করা যেটা আমি আমার আনন্দের জন্য করি। সামাজিক সংগঠনের কোনো অনুষ্ঠানে আমি গান করে থাকি।কোনো প্রতিষ্ঠানে গান সাজানোর দিকনির্দেশনা বা ডেকোরেশনের আইডিয়া যদি চায় তাহলে তাঁদেরকে সাহায্য করি। তাঁদের অনুষ্ঠান সফল ও সুন্দর করার জন্য। আমি মনে করি নিজের কাজ ভালো করে করতে হবে, তাহলে সংগীত শিল্পী হিসেবে আমি নিজেকে মেলে ধরতে পারব।
নিউইয়র্ক বাংলা: আপনার ব্যাক্তিগত পারিবারিক জীবনে স্বামী- সন্তান সম্পর্কে যদি কিছু বলতেন ? সিলভি তাহমিনা: আমার স্বামী একজন সফল মানুষ। তিনি আমেরিকার বিখ্যাত ইউনিভার্সিটি ইউএসসি থেকে মাস্টার্স করেছেন। সে একটি সুপ্রতিষ্ঠিত কোম্পানির মেকানিক্যাল ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ার। তাঁর উৎসাহে আমি গান গাই একইসাথে আমার বাবা, মা ও পরিবার আমাকে উৎসাহ দেন। আমার দুই'টি ছেলে। বড় ছেলে জেনেটিক্সে ব্যাচেলর করে এখন যুক্তরাষ্ট্রের নামকরা একটা রিসার্চ সেন্টারে (ইউনিভার্সিটি অফ স্ট্যানফোর্ড) রিসার্চার হিসাবে কাজ করছে। আর ছোট ছেলে একটা ইউনিভার্সিটিতে বিজনেসে ব্যাচেলার্স করছে।
নিউইয়র্ক বাংলা: নিউইয়র্ক বাংলাকে সময় দেয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। সিলভি তাহমিনা: আমার সাক্ষাৎকার আগ্রহ নিয়ে করছেন এজন্য আমি আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। আসলে শেখার কোনো শেষ নেই। আমি গাই কারণ আমার গাইতে ভালো লাগে। আমি আনন্দিত হই, যখন মানুষ আমার গান শুনে ভালো কমেন্টস করেন। আমার শ্রোতা দিন দিন বাড়ছে এতে আমি আরো গাইবার অনুপ্রেরণা পাই। আপনাদের সাক্ষিকারটিও একটি অনুপ্রেরণা আমার জন্য। ভালো কাজে উৎসাহ পেলে আরও গাইব ইনশাআল্লাহ। যারা আমার ইন্টারভিউটি পড়ছ তাঁরা আমার গান দেখুন। ভালো শ্রোতা ভাইবোনের জন্য আমার গান। আমার গান আপনাদের অবসরের মনের আনন্দের খোরাক হোক এটাই আমার চাওয়া। আবারো সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ।