NYC Sightseeing Pass
ঢাকা, রবিবার, এপ্রিল ২৭, ২০২৫ | ১৪ বৈশাখ ১৪৩২
ব্রেকিং নিউজ
জব্বারের বলীখেলায় আবারও চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লার ‘বাঘা’ শরীফ Bangladesh reaffirms commitment to fully Implement the CHT Peace Accord Kashmir Violence Conflict can be Solved Diplomatically or Needs a Retaliation Plan Against Pakistan ব্রেন স্ট্রোক পরবর্তী সময়ে সেরে ওঠার যুগান্তকারী ওষুধ আবিষ্কার নিউইয়র্কে প্রবাসীদের সাথে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের মত  বিনিময় নিজেকে রাজা-বাদশাহ ভাবছেন ট্রাম্প! ‘দাগি’ দেখতে কয়েদির বেশে সিনেমা হলে শতাধিক নিশো ভক্ত Attorney General James Wins Case Against Google for Monopolies in Digital Advertising নিউইয়র্কে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ সংবাদ সম্মেলন নানা অভিযোগ উত্থাপন : বাংলাদেশ রেমিট্যান্স মেলা  বয়কটের আহবান নিউইয়র্কের এস্টোরিয়ায় পুলিশের গুলিতে মানসিকভাবে অসুস্থ  এক ব্যক্তির মৃত্যু
Logo
logo

কেন ড. ইউনূসের জন্য লাল গালিচা নিয়ে অপেক্ষায় চীন?


আকবর হায়দার কিরণ   প্রকাশিত:  ২৭ এপ্রিল, ২০২৫, ০৫:২৭ এএম

কেন ড. ইউনূসের জন্য লাল গালিচা নিয়ে অপেক্ষায় চীন?

 আগামী সপ্তাহে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস চীন সফরে যাবেন। তার এ সফরে চীন লাল গালিচা বিছিয়ে  উষ্ণ অভ্যর্থনার আয়োজন করবে বলে আশা করা হচ্ছে। কারণ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিবেশী ভারতের সাথে উত্তেজনার মধ্যে চীনের সাথে কূটনৈতিক স্বীকৃতি এবং অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততা খুঁজছে।  ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর নোবেল শান্তি বিজয়ী ইউনূস গত বছরের আগস্ট থেকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। 

ঢাকা জানিয়েছে, ইউনূস ২৭ মার্চ চীনের দক্ষিণাঞ্চলীয় দ্বীপ প্রদেশ হাইনানে বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়ার উদ্বোধনী অধিবেশনে ভাষণ দেবেন। তিনি পরের দিন বেইজিংয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট  শি জিনপিংয়ের সাথে সাক্ষাত করবেন বলে আশা করা হচ্ছে এবং পরে খ্যাতনামা পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা করবেন, সেখানে  তাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট প্রদান করা হবে। ড. ইউনূসের প্রথম চীন সফর এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটছে। কারণ সরকার পতনের পর নয়াদিল্লি হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের অন্য নেতাদের আশ্রয় দিয়েছে। জানুয়ারিতে ভারত বাংলাদেশের সাথে ভাগ করা তাদের প্রায় ৪১০০ কিলোমিটার  সীমান্তে বেড়া দেওয়ার কাজ পুনরায় শুরু করে।  সীমান্তে তিন দিকেই কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার কাজ শুরু হয়। এ ঘটনায় ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত ১২ জানুয়ারি ভারতের হাইকমিশনারকে তলব করে তাদের গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে।  মন্ত্রণালয় জানায়, এর ফলে সীমান্তে উত্তেজনা ও অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।

  অন্যদিকে ভারত পরের দিনই দাবি করে যে, বেড়া নির্মাণে সব প্রোটোকল এবং চুক্তি অনুসরণ করা হয়েছে। উত্তেজনার সর্বশেষ উৎস মার্কিন জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসি গ্যাবার্ডের একটি মন্তব্য। যিনি  বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের বিষয়ে ভারতের সুরে  সুর মিলিয়েছেন। সোমবার নয়াদিল্লিতে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে গ্যাবার্ড বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দুর্ভাগ্যজনকভাবে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন, হত্যা  মার্কিন সরকারের জন্য উদ্বেগের একটি প্রধান ক্ষেত্র। ইউনূসের কার্যালয় তার মন্তব্য প্রত্যাখ্যান করে বলেছে যে গ্যাবার্ড  কোন প্রমাণ বা নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে এই মন্তব্য করেননি।   পর্যবেক্ষকদের মতে, বেইজিংয়ের সমর্থন ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কূটনৈতিক অবস্থানকে দৃঢ় করতে ফলপ্রসূ হবে।  কারণ তিনি ডিসেম্বরে সাধারণ নির্বাচনের আগে বড় শক্তির কাছ থেকে বৈধতা পেতে চান।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেয়ারব্যাঙ্ক সেন্টার ফর চাইনিজ স্টাডিজের অনাবাসিক সহযোগী আনু আনোয়ার বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হিসেবে তাদের অবশ্যই বেইজিংকে বোঝানোর উপায় খুঁজে বের করতে হবে যে, তারা একটি নির্ভরযোগ্য কূটনৈতিক অংশীদার। আনোয়ার যোগ করেছেন যে, প্রাথমিকভাবে কূটনৈতিক সৌজন্য বজায় রেখে ভবিষ্যতের নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক স্থাপনের পরিকল্পনা রাখতে পারে চীন । এক্ষেত্রে বেইজিং সতর্ক পদক্ষেপ  নিতে পারে। র শীর্ষ কর্মকর্তাদের সাথে দেখা করার সময় চীনা বিনিয়োগ নিশ্চিত করাও ইউনূসের এজেন্ডায় অন্তর্ভুক্ত থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।

   ২০০৬ সালে চীন বাংলাদেশের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার হিসাবে ভারতকে ছাড়িয়ে যায়। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য গত বছর ২৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে, যার মধ্যে ২২.৮৮বিলিয়ন মার্কিন ডলার চীনা রপ্তানি থেকে এসেছে। ২০১৬ সালে, বাংলাদেশ বেইজিংয়ের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ-এ যোগদানকারী প্রথম দক্ষিণ এশীয় দেশ হয়ে উঠেছে।  গ্লোবাল কানেক্টিভিটি প্রোগ্রামের অধীনে চীনা বিনিয়োগের একটি প্রধান প্রাপক বাংলাদেশ, যা গ্লোবাল সাউথের সাথে সম্পর্ক জোরদার করার জন্য বেইজিংয়ের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। চীনের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রকল্পে জড়িত রয়েছে, বিশেষ করে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ এবং কর্ণফুলী টানেল।   ঢাকা এখন দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর মংলা বন্দরের সম্প্রসারণের জন্য চীনের কাছ থেকে ঋণ চাইছে।গত বছরের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে চীন বাংলাদেশে তার বিশাল অর্থনৈতিক বিনিয়োগ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, যার মধ্যে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি বকেয়া ঋণ রয়েছে। আনোয়ার বলেন, ইউনূস বেইজিংকে আশ্বস্ত করতে চাইবেন যে অভ্যন্তরীণ অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও বাংলাদেশে তার অর্থনৈতিক স্বার্থ এবং কৌশলগত সম্পৃক্ততা সুরক্ষিত রয়েছে।

চীনের ফুদান ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর সাউথ এশিয়ান স্টাডিজের ডেপুটি ডিরেক্টর লিন মিনওয়াং বলেছেন, ইউনূস  বেইজিং সফরের সময় হাসিনার স্বাক্ষরিত কিছু চুক্তিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন। হাসিনা গত বছরের জুলাইয়ে চীন সফরের সময় উভয় পক্ষ ২০টিরও বেশি সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, যেখানে বেইজিং ১ বিলিয়ন ইউয়ান (প্রায় ১৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) অর্থনৈতিক সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। লিন বলেছেন -'পরিকল্পিত সহযোগিতার অনেকগুলো তখন থেকে আটকে গেছে, এবং আমি মনে করি চুক্তির বাস্তবায়ন আবার শুরু করার সময় এসেছে। 'হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে বেইজিং ঢাকার সাথে তার সম্পৃক্ততা ক্রমাগত বৃদ্ধি করেছে ।   বাংলাদেশে চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন অক্টোবরে ছাত্র বিক্ষোভকারীদের পাশাপাশি আন্দোলনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন।   এরপর থেকে ইউনূস সহ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান সদস্যদের পাশাপাশি সামরিক ও প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতাদের সাথেও তিনি দেখা করেছেন। গত সপ্তাহে, বাংলাদেশের একটি মেডিকেল প্রতিনিধি দল দক্ষিণ-পশ্চিম চীনা শহর কুনমিং পরিদর্শন করেছে। কারণ ভারত বাংলাদেশি রোগীদের জন্য তার দরজা বন্ধ করার পর দেশটি  চিকিৎসা সেবার ক্ষেত্রে  বিকল্প অনুসন্ধান করছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক লাইলুফার ইয়াসমিন বলেন, ইউনূসের সফরে তিস্তা নদীর ব্যবস্থাপনা নিয়েও আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ।

  বাংলাদেশ এবং ভারত ৫৪টি নদী ভাগ করে নেয়, যার বেশিরভাগেরই উৎসস্থল  ভারত।  তাই   প্রতিবেশীদের মধ্যে বিস্তৃত আলোচনায় নয়াদিল্লি কিছুটা সুবিধাজনক  অবস্থানে রয়েছে। ২০১৬ সালে বাংলাদেশ চতুর্থ দীর্ঘতম তিস্তা নদীর ব্যবস্থাপনা ও পুনরুদ্ধার প্রকল্পের ঋণের জন্য চীনের দিকে ঝুঁকে পড়ে, যা পরবর্তীতে নয়াদিল্লির সতর্ক দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তারপর থেকে তিস্তা প্রকল্পে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। যদিও বেইজিং বারবার এই প্রকল্পে ভারতের সঙ্গে সহযোগিতা করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। পরে ভারত এই প্রকল্পটি গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছে। প্রকল্পটি দক্ষিণ এশিয়ায় চীন ও ভারতের মধ্যে বৃহত্তর ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার উদাহরণ, উভয় দেশই বাংলাদেশের ওপর প্রভাব বিস্তারের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। ইয়াসমিন বলেন, 'তিস্তা নদী ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলোচনা শুধু কারিগরি ও আর্থিক বিষয় নয়, রাজনৈতিকভাবে  তাৎপর্যপূর্ণ। বাংলাদেশ-ভারত-চীনের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে এটি ছিল একটি প্রধান বিরোধের  বিষয়। সুতরাং, এই বিষয়ে ইতিবাচক অগ্রগতি হলে, এ অঞ্চলে তার কৌশলগত স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠায় এটি বাংলাদেশের জন্য একটি বড় অর্জন হবে।'  সূত্র: সাউথ  চায়না মর্নিং পোস্ট