এম আব্দুর রাজ্জাক প্রকাশিত: ২৭ এপ্রিল, ২০২৫, ০৫:২৭ এএম
এম আব্দুর রাজ্জাক, বগুড়া থেকে :
রাজশাহী বিভাগের বগুড়া উত্তরবঙ্গের একটি ঐতিহাসিক জেলা। শিল্প ও বাণিজ্যিক নগরী হিসেবে এর রয়েছে যথেষ্ট গুরুত্ব। রাজশাহী বিভাগের একটি অন্যতম গুরত্বপূর্ণ প্রশাসনিক কেন্দ্র হিসবে বগুড়া বিশেষভাবে পরিচিত। মহাস্থানগড় খ্যাত বগুড়াকে উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বারও বলা হয়ে থাকে। বগুড়া ও নাটোর পাশাপাশি দুটি জেলা। কিছুদিন আগেও নাটোরের ৭টি উপজেলায় ৭ জন নারী ইউএনও এক সঙ্গে উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। যা নিয়ে পত্র পত্রিকায় একাধিক নিউজ ও ফিচার ছাপা হয়েছে। এবার নাটোরের ৩ জন নারী ও ১ জন পুরুষ বগুড়ার ৪ টি উপজেলায় নির্বাহী অফিসার হিসেবে এক সাথে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন । নাটোরের জন্য যা খুবই আনন্দের ও গর্বের।
বগুড়া জেলায় মোট উপজেলার সংখ্যা ১২টি। এর মধ্যে আদমদীঘি, নন্দীগ্রাম, শাহজাহানপুর ও সোনাতলাসহ মোট ৪টি উপজেলায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) হিসেবে সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন উত্তরা গণভবন, কাঁচা গোল্লা, বনলতা সেন খ্যাত নাটোরের ৪ জন প্রতিভাবান ধ্রুবতারা। তারা একই সাথে স্থানীয় সরকারের প্রশাসনিক ক্ষেত্রে নাটোর জেলার প্রতিনিধিত্ব করছেন। যেসব গর্বিত নারী-পুরুষ বগুড়ায় ইউএনও হিসেবে কাজ করছেন তারা হচ্ছেন-বড়াইগ্রামের মোছা.রুমানা আফরোজ, বাগাতিপাড়ার মোসা.লায়লা আঞ্জুমান বানু, লালপুরের স্বীকৃতি প্রামানিক এবং সিংড়ার মো. তাইফুর রহমান। ৩৪ তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা মোছা: রুমানা আফরোজ ২০১৩ সালে ৩২ বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে যোগদানের মাধ্যমে সরকারি চাকুরিতে প্রবেশ করেন। প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন আব্দুলপুর সরকারি কলেজ। সহকারি কমিশনার হিসেবে রংপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যোগদানের মাধ্যমে শুরু হয় ৩৪ বিসিএসের যাত্রা। বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলায় দায়িত্ব পালনের আগে তিনি নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলায় সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। খেলা প্রিয় এবং শিক্ষা অনুরাগী নাটোর জেলার বড়াইগ্রাম উপজেলার বাসিন্দা রুমানা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা করেছেন। পারিবারিক জীবনে তিনি বিবাহিত এবং এক কন্যা সন্তানের জননী।
নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার দয়ারামপুরের মেয়ে মোসালায়লা আঞ্জুমান বানু ৩৪ তম বিসিএসের মাধ্যমে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশ প্রাপ্ত হয়ে বিভিন্ন জায়গায় সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন শেষে বর্তমানে বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলায় উপএলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ থেকে পড়ালেখা করা লায়লা এর আগে নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার নির্বাহী অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বই পড়া, ভ্রমণ পিপাসু এই কর্মকর্তা একজন মা হিসেবেও সফল। তিনি এক সন্তানের জননী। ৩৫ তম বিসিএসের আরেক মেধাবী কর্মকর্তা স্বীকৃতি প্রামানিক। তিনি ইংল্যান্ডের বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়ালেখা করে সরকারি চাকরিতে প্রবেশ করেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি নাটোরের লালপুর উপজেলায়। স্বীকৃতি বগুড়ার সোনাতলা উপজেলায় ইউএনও হিসেবে কর্মরত আছেন। এক সন্তানের জননী স্বীকৃতি গান শুনতে পছন্দ করেন। নাটোরের সিংড়া উপজেলার বড় সাঐল গ্রামের মো. তাইফুর রহমান ৩৬ তম বিসিএসের একজন সফল কর্মকর্তা ।
তিনি বর্তমানে বগুড়ার শাহজাহানপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর পূর্বতন স্টেশন ছিল বিয়াম ফাউন্ডেশন, ঢাকা। দুই সন্তানের জনক তাইফুর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়ালেখা করে প্রশাসন ক্যাডারে যোগদান করেন। বই পড়া, ফুটবল, ক্রিকেট ও ভ্রমণ প্রিয় তাইফুর এর আগে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীন দিনাজপুরের বিরামপুরে উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করেছেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য এই ৪ জনের পাশাপাশি নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার ধারাবারিষা গ্রামের ৩৪ বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারেরে আরেক কৃতি সন্তান মোসা. মেরিনা আফরোজ বগুড়ার কাহালু উপজেলায় দীর্ঘদিন সফলভাবে দায়িত্ব পালন শেষে সম্প্রতি কক্সবাজার বিয়াম ফাউন্ডেশনে সহকারি পরিচালক হিসেবে বদলী হয়েছেন। এই হিসেবে বলা যায়, নাটোরের ৪ জন নারী ও ১ জন পুরুষ বগুড়ার ৫ টি উপজেলার প্রশাসনিক দায়িত্ব সামলেছেন। বর্তমানে প্রশাসনের সব জায়গায় পুরুষের সাথে পাল্লা দিয়ে নারীরাও সমান তালে এগিয়ে যাচ্ছেন। দেশ বিদেশের গুরুত্বপূর্ণ সব জায়গায় নারীরা তাদের মেধা ও যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখে চলছেন। নাটোরের এই কৃতি সন্তানেরা আগামী দিনে দেশের রাষ্ট্রীয় ও গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হয়ে সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করে নাটোরের গৌরব ও মর্যাদা আরো বৃদ্ধি করবেন, এই প্রত্যাশা সকলের।