NYC Sightseeing Pass
ঢাকা, সোমবার, এপ্রিল ২৮, ২০২৫ | ১৪ বৈশাখ ১৪৩২
ব্রেকিং নিউজ
জব্বারের বলীখেলায় আবারও চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লার ‘বাঘা’ শরীফ Bangladesh reaffirms commitment to fully Implement the CHT Peace Accord Kashmir Violence Conflict can be Solved Diplomatically or Needs a Retaliation Plan Against Pakistan ব্রেন স্ট্রোক পরবর্তী সময়ে সেরে ওঠার যুগান্তকারী ওষুধ আবিষ্কার নিউইয়র্কে প্রবাসীদের সাথে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের মত  বিনিময় নিজেকে রাজা-বাদশাহ ভাবছেন ট্রাম্প! ‘দাগি’ দেখতে কয়েদির বেশে সিনেমা হলে শতাধিক নিশো ভক্ত Attorney General James Wins Case Against Google for Monopolies in Digital Advertising নিউইয়র্কে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ সংবাদ সম্মেলন নানা অভিযোগ উত্থাপন : বাংলাদেশ রেমিট্যান্স মেলা  বয়কটের আহবান নিউইয়র্কের এস্টোরিয়ায় পুলিশের গুলিতে মানসিকভাবে অসুস্থ  এক ব্যক্তির মৃত্যু
Logo
logo

গ্রাম বাংলার চিরচেনা ঐতিহ্যের ‘কাঁচামাটির ঘর’ বিলুপ্তির পথে


Abdur Razzak প্রকাশিত:  ২৭ এপ্রিল, ২০২৫, ০২:২০ পিএম

গ্রাম বাংলার চিরচেনা ঐতিহ্যের ‘কাঁচামাটির ঘর’ বিলুপ্তির পথে
এম আব্দুর রাজ্জাক উত্তরবঙ্গ থেকে : হাজার বছরের ঐতিহ্য গ্রামবাংলার চিরচেনা অন্যতম মাটির দেওয়ালে গাঁথা বাংলাঘর খ্যাত ‘কাঁচা মাটির ঘর’ এখন আধুনিকতার ছোঁয়া আর কালের আবর্তে হারিয়ে যেতে বসেছে। একসময় শতভাগ কাঁচা মাটির ঘর ছিল বাংলার গ্রামাঞ্চলে। অনেকের দ্বিতল কাঁচা মাটির ঘর ছিল রাজকীয় প্রাসাদ। ঝড়-বৃষ্টি থেকে বাঁচার পাশাপাশি তীব্র গরম ও কনকনে শীতে আদর্শ বসবাস-উপযোগী মাটির তৈরি এসব ঘর আগের মতো এখন আর তেমন একটা নজরে পড়ে না। দেখা মেলে না গোলপাতায় কিংবা খড়ে ছাওয়া মাটিরঘর। বাড়ির সামনে সেই বৈঠকখানাও এখন বিলুপ্তপ্রায়। চিরচেনা গ্রামও এখন অচেনা লাগে। পাহাড়ি ছনে মাটির দেওয়ালে উঁচা চালাঘর দেখে অনেকটা ভাল লাগতো। তখন পাহাড়ি ছনের বাজার ছিল মৌসুমভিত্তিক সরগরম। এখন পাহাড় আছে, ছনও আছে তবে মাটিরঘর ও ছনের সেই ব্যবহার নেই। শান্তির নীড় হিসেবে বহুল পরিচিত মাটির ঘরের স্থান দখল করেছে ইট-পাথরের উঁচু দালান। গরিবের এসি বলে সুপরিচিত মাটির দেয়ালে গাঁথা বাংলাঘর (কাঁচামাটির ঘর) এখন বিলুপ্তির পথে। সাতচালা কিংবা আটচালা মাটির বাংলাঘর এখন আর নজরে পড়ে না। গ্রামে এখনও হাজারে দু’একটি কাঁচামাটির ঘর দেখলে আমাদের প্রজন্মের কাছে অদ্ভুত আবিস্কার মনে হয়। এখন বাংলার চিরচেনা ঐতিহ্যের কাঁচামাটির ঘর তেমন চোখে পড়ে না। কালের আবর্তে বগুড়ার জেলার আদমদিঘী উপজেলার ১ নং ছাতিয়ানগ্রাম ইউনিয়নে ও হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের অন্যতম নিদর্শন মাটির তৈরি ঘর। এখন তেমন একটা আর চোখে পড়েনা গ্রাম বাংলার চির ঐতিহ্যের নিদর্শন সবুজ শ্যামল ছায়া ঘেরা শান্তির নীড় মাটির তৈরি বাড়ি (ঘর)। যা এক সময় ছিল গ্রামের মানুষের কাছে মাটির বাড়ি বা ঘর গরিবের এসি বাড়ি নামে পরিচিত। মাটির দেওয়াল ভেঙে টিন কিংবা বাঁশের বেড়া দেওয়ালের পরিপূরক হিসেবে দখল করেছে। ছনের চালাও হারিয়েছে টিনের রাজত্বে। গ্রামের অধিকাংশ বসতঘর হয়তো বাঁশের বেড়া আর টিনের চালায় কিংবা ইট-পাথরের গাঁথুনিতে উঁচু দালান কোটা। সবমিলিয়ে কালের আবর্তে হারিয়েছে ‘কাঁচামাটির ঘর’ খ্যাত বাংলাঘর। বেশি দিনের কথা নয়, বাংলার প্রতিটি গ্রামে নজরে পরতো এই মাটির বাড়ি ঘর। ঝড়-বৃষ্টি থেকে বাঁচার পাশা-পাশি প্রচুর গরম ও শীতে বসবাস উপযোগী মাটির তৈরি বাড়ি ঘর। আধুনিকতার ছোঁয়ায় আর সময়ের পরিবর্তে গ্রাম বাংলা থেকে ঐতিহ্যবাহী মাটির তৈরি বাড়ি-ঘর বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এই বাড়ি ঘর শীত ও গরম মৌসুমে আরামদায়ক বলে গ্রামের অনেক বিত্তবানও এই মাটির দ্বিতল বাড়ি ঘর তৈরি করেন। জানা যায়, অতি প্রাচীনকাল থেকেই মাটির বাড়ি বা ঘরের প্রচলন ছিল। গ্রামের মানুষের কাছে এই বাড়ি বা ঘর ঐতিহ্যের প্রতীক ছিল। গ্রামের বিত্তবানরা এক সময় অনেক অর্থ ব্যয় করে মজবুত মাটির দ্বিতল বাড়ি ঘর তৈরি করতেন। যা এখনও কিছু কিছু গ্রামে চোখে পড়ে। এঁটেল বা আঠালো মাটির কাঁদায় পরিণত করে ২-৩ ফুট চওড়া করে দেয়াল বা ব্যাট তৈরি করা হয় ১০-১৫ ফুট উঁচু। দেয়ালে কাট বা বাঁশের সিলিং তৈরি করে তার ওপর খর বা টিনের ছাউনি দেয়া হয়। মাটির বাড়ি-ঘর অনেক সময় দোতলা পর্যন্ত করা হতো। সব ঘর বড় মাপের হয়না। গৃহিনীরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মাটির দেয়ালে বিভিন্ন রকমের আল্পনা এঁকে ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতেন। প্রাকৃতিক দূর্যোগ ও বর্ষা মৌসুমে মাটির বাড়ি ঘরের ক্ষতি হয় বলে বর্তমান সময়ে দীর্ঘ স্থায়ীত্বের কারণে গ্রামের মানুষরা ইটের বাড়ি নির্মাণের আগ্রহী হচ্ছেন। ভূমিকম্প বা বন্যা না হলে একটি একটি মাটির বাড়ি শত বছরেও বেশি স্থায়ী হয়। কিন্তু বর্তমান সময়ে কালের বিবর্তনে ইটের দালানকোটা আর বড় বড় অট্টালিকার কাছে হার মানছে মাটির বাড়ি ঘর। আদমদিঘী উপজেলার নিমাইদিঘী গ্রামের আবু তালেব সরদার ,মোছাঃ রওশন আরা ,কারিগর পাড়ার মবিন প্রাং,ছাতিয়ানগ্রামের আব্দুল মান্নান সরকার,বাগবাড়ী গ্রামের মারুফ আহমদ,অন্তাহার গ্রামের আব্দুল হাই লুলু,দূর্গাপুর গ্রামের মহসিন আলী,কাল্লাগাড়ি গ্রামের আলহাজ্ব ওমর ফকির,ঈসবপুর গ্রামের শ্রী কার্তিক পাহান,অদ‍্যই পাহান, ধুলাতর গ্রামের মামুন মাস্টার, দিঘির পাড়ের বীর মুক্তিযোদ্ধা মোনসের শেখ সাগর পুর গধামের মিলু খন্দকার মিয়া ছোট্ট আখিড়া গ্রামের শামসুল মন্ডল,বড় আখিড়া গ্রামের শ্রী বিমান চন্দ্র,কোমারপুর গ্রামের মোঃ আঃ হামিদ কাজী, লক্ষিকুল গ্রামের আঃ আলিম সহ আরো অনেকে জানান, মাটির তৈরি এই বাড়ি-ঘর তারা পেয়েছেন পৈত্রিক ভাবে। তাদের পূর্ব পুরুষরাও এই মাটির তৈরি বাড়িতেই জীবন কাটিয়ে গেছেন। সে সময়ে এ ঘরে বেশ আরামে থাকা যেত শীত-গরমে। মাটির বাড়ি বসবাসের জন্য আরামদায়ক হলেও যুগের পরিবর্তনে আধুনিকতার সময় অধিকাংশ মাটির বাড়ি ঘর ভেঙ্গে অধিক নিরাপত্তা ও স্বল্প জায়গায় দীর্ঘ স্থায়ীভাবে অনেক লোকের বসবাসের জন্য গ্রামের মানুষরা ইটের বাড়ি ঘর তৈরি করছেন বলে তাদের অনেকের ধারনা। এখনও গ্রামীণ ঐতিহ্যের বাংলাঘর খ্যাত কাঁচামাটির ঘর শোভা পাচ্ছে আদমদিঘী উপজেলার নসরৎপুর,শান্তাহার,কুন্দুগ্রাম,চাঁপাপুর, এবং আদমদিঘী সদর ইউনিয়নে। বিশেষ করে এসব বাড়ির দেওয়াল দেখলে মনে হবে সিমেন্টের আস্তর দেওয়া হয়েছে। অনেকটা ধবধবে সাদা আবার অনেকটা হলদে পাহাড়ি মাটির রঙে রঙিন। এভাবে একদিন চিরচেনা বাংলার কাঁচামাটির ঘরে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। আধুনিকতার ছোঁয়া হারিয়ে যাবে গ্রামিণ সভ্যতার এ ঐতিহ্য। ছবিঃ কাঁচামাটির ঘরের ছবি, বগুড়া জেলার আদমদিঘী উপজেলার ১ নং ছাতিয়ানগ্রাম ইউনিয়নের ২ নং ওর্য়াডের নিমাইদিঘী (সরদার পাড়া) গ্রামের (মরহুম আবুল কাসেম সরদারের বাড়ি ) থেকে তোলা।