NYC Sightseeing Pass
ঢাকা, রবিবার, এপ্রিল ২৭, ২০২৫ | ১৪ বৈশাখ ১৪৩২
ব্রেকিং নিউজ
জব্বারের বলীখেলায় আবারও চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লার ‘বাঘা’ শরীফ Bangladesh reaffirms commitment to fully Implement the CHT Peace Accord Kashmir Violence Conflict can be Solved Diplomatically or Needs a Retaliation Plan Against Pakistan ব্রেন স্ট্রোক পরবর্তী সময়ে সেরে ওঠার যুগান্তকারী ওষুধ আবিষ্কার নিউইয়র্কে প্রবাসীদের সাথে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের মত  বিনিময় নিজেকে রাজা-বাদশাহ ভাবছেন ট্রাম্প! ‘দাগি’ দেখতে কয়েদির বেশে সিনেমা হলে শতাধিক নিশো ভক্ত Attorney General James Wins Case Against Google for Monopolies in Digital Advertising নিউইয়র্কে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ সংবাদ সম্মেলন নানা অভিযোগ উত্থাপন : বাংলাদেশ রেমিট্যান্স মেলা  বয়কটের আহবান নিউইয়র্কের এস্টোরিয়ায় পুলিশের গুলিতে মানসিকভাবে অসুস্থ  এক ব্যক্তির মৃত্যু
Logo
logo

জ্যাকসন হাইটসের আইকনিক ব্রুসন ভবন এখন ‘বারী টাওয়ার’


আকবর হায়দার কিরণ   প্রকাশিত:  ২৭ এপ্রিল, ২০২৫, ০৫:৪২ এএম

জ্যাকসন হাইটসের আইকনিক ব্রুসন ভবন এখন ‘বারী টাওয়ার’

 সায়েম শুভ
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটির মধ্যে নতুন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আসেফ বারী টুটুল। জ্যাকসন হাইটসের সবচেয়ে পরিচিত ভবনগুলোর মধ্যে একটি, ‘ব্রুসন ভবন’, এখন থেকে পরিচিত হবে ‘বারী টাওয়ার’ নামে। এটি একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে, কারণ এটি শুধু ভবনের নাম বা মালিকানার পরিবর্তন নয়, বরং প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটির উন্নয়ন এবং স্বপ্ন পূরণের এক উদাহরণ।   বাংলাদেশি ও মূলধারার ব্যবসায়ীদের অফিসে ঠাসা জ্যাকসন হাইটসের প্রাণকেন্দ্র ৩৭তম এভিনিউ, ৭৩ ও ৭৪ স্ট্রিটের সংযোগস্থলে অবস্থিত ৭৪-০৯ ঠিকানার বিখ্যাত ‘ব্রুসন বিল্ডিং’টি ছিলো একটি আধুনিক অফিস ভবন, যা দীর্ঘ ইতিহাস এবং পুনর্জাগরণের প্রতীক হিসেবে আজও দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে আছে। ১৯৪৯ সালে নির্মিত এই ভবনটি ২০১৬ সালে আধুনিক রূপে পুনর্গঠন করা হয়। এই বিশাল ভবনটি সম্প্রতি কিনে নিয়েছেন আসেফ বারী ও তার সহধর্মিণী মুনমুন হাসিনা বারী। ২০২৫ সালের ২৪ জানুয়ারি, শুক্রবার, ভবনটির ক্রয় ও হস্তান্তরের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। এ উপলক্ষ্যে বারী পরিবার আয়োজন করে এক দোয়া মাহফিলের, এতে উপস্থিত ছিলেন বারী গ্রুপের কর্মকর্তাবৃন্দ এবং বাংলাদেশ থেকে আগত মুনমুন হাসিনা বারীর বাবা হুমায়ুন কবির চৌধুরী, এবং মা  সালেহা কবির চৌধুরী  জ্যাকসন হাইটস একটি বৈচিত্র্যময় ও সংস্কৃতিমণ্ডিত এলাকা হিসেবে পরিচিত। ব্রুসন বিল্ডিংয়ের এই এলাকায় অবস্থানই তার অন্যতম বড় সম্পদ। আশেপাশে রয়েছে অসংখ্য রেস্তোরাঁ, ক্যাফে, দোকান, এবং সাংস্কৃতিক আকর্ষণ। যা শুধু অফিস কর্মচারী নয়, ক্লায়েন্টদের জন্যও এক বিশেষ আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। ভবনটি ৭৪ স্ট্রিট-ব্রডওয়ে স্টেশন থেকে কয়েক মিনিটের দূরত্বে অবস্থিত, যা ৭ ট্রেনের মাধ্যমে ম্যানহাটনসহ কুইন্সের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সহজ যোগাযোগ নিশ্চিত করে। এই সুবিধাটি ব্যবসার জন্য চমৎকার এক সংযোগ স্থাপন করেছে। এই বিল্ডিংয়ের নতুন সংস্করণটি আধুনিক স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত, যা আধুনিক অফিস ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় সকল সুবিধা অন্তর্ভুক্ত করেছে। ভবনের ইন্টেরিয়র ডিজাইন অত্যাধুনিক, যা ব্যবসায়িক কার্যক্রমের জন্য একদম উপযোগী। ভবনটি বৈচিত্র্যময় ব্যবহারের জন্য আদর্শ এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয়। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক হাব হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। ভবনটি শুধু একটি ইমারত নয়, এটি জ্যাকসন হাইটসের বাংলাদেশি কমিউনিটির জন্যও একটি পরিচিত নাম। এটি একটি পেশাদারদের ব্যবসায়িক হাব, যেখানে অনেক বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান এবং মূলধারার বিভিন্ন কোম্পানি তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে। ভবনটি দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটির কাছে আস্থা ও গৌরবের প্রতীক ছিল। এই ভবনের মালিকানা পরিবর্তনের খবরে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে এক নতুন আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।  আসেফ বারী টুটুল, যিনি বারী গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা,  নিশ্চিত করেছেন যে, “বারী টাওয়ারের চতুর্থ তলা হবে বারী হোম কেয়ার এবং প্রবাসের জনপ্রিয় সাপ্তাহিক পত্রিকা “বাংলা পোস্ট” এর নতুন অফিস। তিনি বলেন, “দু-এক মাসের মধ্যেই আমরা বারী গ্রুপের সকল কার্যক্রম নতুনভাবে এই ভবন থেকে পরিচালনা শুরু করবো। আমার এবং আমার পরিবারের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। আপনারা সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন, যাতে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে পারি।”      নিউইয়র্কের মতো প্রতিযোগিতাপূর্ণ শহরে দীর্ঘদিন ধরে সুনামের সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনা করা এক বিরল অর্জন। রংপুরের সন্তান আসেফ বারী টুটুল সেই বিরল উদাহরণগুলোর মধ্যে অন্যতম। কেবল ব্যবসায়ী হিসেবেই নয়, তিনি তাঁর কর্মনিষ্ঠা, মানবিক মূল্যবোধ, এবং নেতৃত্বগুণ দিয়ে নিউইয়র্কের প্রবাসী বাংলাদেশি সমাজে নিজেকে এক আদর্শ ব্যক্তিত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তিনি তার সাফল্যকে সবসময় কমিউনিটির উন্নয়নের জন্য কাজে লাগিয়েছেন। তিনি বলেন, “এটি শুধু আমার বা আমার পরিবারের জন্য নয়, বরং পুরো কমিউনিটির জন্য একটি অর্জন। আমাদের সবার জন্য এটি গর্বের বিষয়।” বারী গ্রুপ ভবিষ্যতে তাদের কার্যক্রম প্রসারের জন্য বারী টাওয়ারকে একটি ব্যবসায়িক এবং সামাজিক হাব হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছে।  আসেফ বারী টুটুল জানান, “ভবিষ্যতে এখানে একটি গ্র্যান্ড ওপেনিং অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে, যেখানে কমিউনিটির সবাইকে আমন্ত্রণ জানানো হবে।” তিনি আরও বলেন, “আমাদের লক্ষ্য হল সততা এবং নিষ্ঠার সঙ্গে কমিউনিটির জন্য কাজ করা। সবার দোয়া আমাদের শক্তি যোগায়। আশা করছি, এই নতুন যাত্রা আমাদের এবং কমিউনিটির জন্য আরও নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেবে।” আসেফ বারী জানান, ভবনের ব্যবস্থাপনায় এমন কিছু পরিবর্তন আনা হবে, যা বাংলাদেশি কমিউনিটির মার্কিন মূলধারার সঙ্গে আরও গভীর সংযোগ স্থাপন করবে।”   আসেফ বারীর সাফল্যের গল্প শুধু তার একার নয়। এটি একটি পরিবারের সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রতিচ্ছবি। তার জীবনসঙ্গী মুনমুন হাসিনা বারী এবং তাদের তিন সন্তান আদিব বারী, সাবাহ বারী, এবং মাহি বারী নিজেদের মেধা ও শ্রম দিয়ে বারী গ্রুপকে একটি সুপরিচিত নাম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সহযোগিতা করেছেন। বারী গ্রুপের নেতৃত্বে প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটির উন্নয়ন এবং দেশের সামাজিক অগ্রগতির জন্য তারা নানা গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। উল্লেখ্য শীঘ্রই তিনি নিউইয়র্ক বাংলাদেশি আমেরিকান লায়ন্স ক্লাবের ডিস্ট্রিক্ট গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করতে যাচ্ছেন। তার নেতৃত্বে সামাজিক কর্মকাণ্ড থেকে শুরু করে বিভিন্ন দাতব্য কার্যক্রমে লায়ন্স ক্লাব ইতিমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।  

  বারী পরিবারের এই আয়োজনে পরিবারের পক্ষ থেকে সন্তানরা তাদের বাবাকে এক অসাধারণ সম্মাননা স্মারক প্রদান করে। পুরো বিষয়টি ছিল সম্পূর্ণ একটি চমক, যা বাবার জন্য গোপন রাখা হয়েছিল। এই সম্মাননা পেয়ে আসেফ বারী টুটুল আবেগে অভিভূত হয়ে পড়েন। সন্তানদের এই ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধার প্রতীক তার জীবনের অন্যতম সেরা প্রাপ্তি হিসেবে বিবেচিত হবে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিরা এই মুহূর্তটি প্রত্যক্ষ করে আবেগে আপ্লুত হন। এটি ছিল এক অনন্য উদাহরণ যেখানে একজন নেতা, একজন বাবা, এবং একজন স্বপ্নদ্রষ্টার প্রতি তার পরিবারের গভীর ভালোবাসা এবং সম্মানের প্রকাশ।

  আসেফ বারী টুটুল এবং তার পরিবার প্রমাণ করেছেন যে প্রকৃত সাফল্য শুধুমাত্র ব্যবসায়িক অর্জনে সীমাবদ্ধ নয়; এটি পরিবারের বন্ধন, সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ এবং মানবিকতার প্রতি অবিচল বিশ্বাসের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাদের এই গল্প প্রবাসী বাংলাদেশি সমাজের কাছে প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। আসেফ বারীর এই অর্জন শুধু তার ব্যক্তিগত সফলতা নয়, বরং এটি প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটির এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা। এই ভবনটির নতুন নামকরণ ও ব্যবস্থাপনা নতুন প্রজন্মের উদ্যোক্তাদের জন্য একটি অনুপ্রেরণা হতে পারে। বারী টাওয়ারের মালিকানা অর্জনের মাধ্যমে প্রমাণিত হলো যে প্রবাসী বাংলাদেশিরা যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়িক ও সামাজিক ক্ষেত্রে কতটা শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে সক্ষম।