খবর প্রকাশিত: ২৭ এপ্রিল, ২০২৫, ০৫:৫৫ এএম
সম্প্রতি চীনে রাষ্ট্রীয় সফর করেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েক। সফরে তিনি চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং এবং প্রধানমন্ত্রী লি ছিয়াংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে দুই পক্ষের মধ্যে দু’দেশের বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ হয়। দু’দেশের সংবাদ মাধ্যমগুলো এ বিষয়ে অনেক খবর ও প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। যাতে শ্রীলঙ্কার উন্নয়নে চীনের অবদান এবং শ্রীলঙ্কার পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতাবোধ ফুটে ওঠে। এর মাধ্যমে পশ্চিমা গণমাধ্যমের ঋণফাঁদ সহ নানা ধরনের সমালোচনার জবাবও পাওয়া যায়।
গত বুধবার বেইজিংয়ে গণ-মহাভবনে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং এবং অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েকের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তার আগে, প্রেসিডেন্টের চীন সফরের সম্মানে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। বৈঠকে সি চিন পিং বলেছেন, চীন ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে ঐতিহ্যবাহী বন্ধুত্ব রয়েছে। কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৬৮ বছরে দুই দেশের সম্পর্ক সর্বদা সুষ্ঠু ও স্থিতিশীল উন্নতি বজায় রেখেছে, বিভিন্ন দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সহাবস্থান এবং পারস্পরিক উপকারী সহযোগিতার উদাহরণ স্থাপন করেছে। উভয় পক্ষের যৌথ প্রচেষ্টায় চীন ও শ্রীলঙ্কার আন্তরিক পারস্পরিক সহায়তা এবং বংশানুক্রমিক বন্ধুত্বের কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্ব গভীরভাবে বিকশিত হচ্ছে।
‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’-এর উচ্চমানের যৌথ নির্মাণ এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনিময় ও সহযোগিতা ফলপ্রসূ হয়েছে, যা উভয় দেশের জনগণের জন্য বাস্তব সুবিধা দিয়েছে। বর্তমানে, চীন-শ্রীলঙ্কা সম্পর্ক অতীতের পদাঙ্ক অনুসরণ করে ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়ার একটি ঐতিহাসিক সুযোগের মুখোমুখি। উভয় পক্ষের উচিত কৌশলগত উচ্চতা থেকে চীন-শ্রীলঙ্কা সম্পর্ককে আঁকড়ে ধরা এবং চীন-শ্রীলঙ্কার অভিন্ন কল্যাণের সমাজ যৌথভাবে গড়ে তোলা। জনাব সি জোর দিয়ে বলেছেন, চীন সর্বদা শ্রীলঙ্কাকে নিজের প্রতিবেশী কূটনীতির শীর্ষে রেখেছে। চীন বরাবরই শ্রীলঙ্কার জাতীয় স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় সমর্থন দেবে এবং স্বাধীনভাবে জাতীয় পরিস্থিতির সঙ্গে উপযোগী উন্নয়নের পথ অন্বেষণে শ্রীলঙ্কাকে সমর্থন করবে। চীন শ্রীলঙ্কার সাথে পারস্পরিক রাজনৈতিক আস্থা গভীর করা এবং রাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থার বিষয়ে মতামত বিনিময় করতে চায়।
অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট দিশানায়েকে বলেছেন, নতুন বছরের শুরুতে চীন সফর করতে পেরে তিনি খুবই খুশি। অর্থনীতি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, অবকাঠামোসহ নানা ক্ষেত্রে চীনের উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন অর্জনের প্রশংসা করে শ্রীলঙ্কা। চীন সবসময় শ্রীলঙ্কার নির্ভরযোগ্য বন্ধু এবং অংশীদার। শ্রীলঙ্কা চীনের সাথে সম্পর্কোন্নয়নে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয় এবং এক-চীন নীতি দৃঢ়ভাবে মেনে চলে। শ্রীলঙ্কার স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, বৈধ অধিকার ও স্বার্থ রক্ষায় মূল্যবান সহায়তার জন্য চীনকে ধন্যবাদ জানান তিনি। শ্রীলঙ্কা যৌথভাবে ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ নির্মাণ এবং আঞ্চলিক সংযোগের স্তর উন্নত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। শ্রীলঙ্কায় বিনিয়োগ এবং ব্যবসা করার জন্য আরও চীনা কোম্পানিকে স্বাগত জানায় এবং অবকাঠামো, জ্বালানি, অর্থায়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, ডিজিটাল রূপান্তর, পর্যটন, সমুদ্র ও কৃষিক্ষেত্রে চীনের সাথে সহযোগিতা জোরদার করতে ইচ্ছুক।
পরদিন বৃহস্পতিবার বিকেলে গণ-মহাভবন বৈঠক করেছেন চীনের প্রধানমন্ত্রী লি ছিয়াং ও শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট। চীন ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার আর্থিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক দীর্ঘদিনের এবং ক্রমবর্ধমান। চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) এর অধীনে দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা আরও ঘনিষ্ঠ হয়েছে। এসব প্রকল্প শ্রীলঙ্কায় ব্যাপক অবকাঠামো উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বন্দর, রাস্তাঘাট, বিমানবন্দর ইত্যাদির উন্নয়নে চীন ব্যাপক বিনিয়োগ করছে। চীন শ্রীলঙ্কাকে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য ঋণ সহায়তা করেছে। এই ঋণগুলি শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিকে গতিশীল করতে সাহায্য করেছে। চীন শ্রীলঙ্কার একটি প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ক্রমবর্ধমান। শ্রীলঙ্কা চীন থেকে বিভিন্ন পণ্য আমদানি করে এবং চীনে রপ্তানিও করে। চীনের বিনিয়োগের ফলে শ্রীলঙ্কার অবকাঠামো উন্নয়নে গতি এসেছে। অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের ফলে শ্রীলঙ্কায় ব্যাপকভাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। চীন একটি প্রভাবশালী অর্থনৈতিক শক্তি, শ্রীলঙ্কার সাথে চীনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক শ্রীলঙ্কাকে বিশ্বব্যাপী আরও প্রভাবশালী করতে সাহায্য করছে।
সি আর আই