NYC Sightseeing Pass
ঢাকা, সোমবার, এপ্রিল ২৮, ২০২৫ | ১৪ বৈশাখ ১৪৩২
ব্রেকিং নিউজ
জব্বারের বলীখেলায় আবারও চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লার ‘বাঘা’ শরীফ Bangladesh reaffirms commitment to fully Implement the CHT Peace Accord Kashmir Violence Conflict can be Solved Diplomatically or Needs a Retaliation Plan Against Pakistan ব্রেন স্ট্রোক পরবর্তী সময়ে সেরে ওঠার যুগান্তকারী ওষুধ আবিষ্কার নিউইয়র্কে প্রবাসীদের সাথে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের মত  বিনিময় নিজেকে রাজা-বাদশাহ ভাবছেন ট্রাম্প! ‘দাগি’ দেখতে কয়েদির বেশে সিনেমা হলে শতাধিক নিশো ভক্ত Attorney General James Wins Case Against Google for Monopolies in Digital Advertising নিউইয়র্কে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ সংবাদ সম্মেলন নানা অভিযোগ উত্থাপন : বাংলাদেশ রেমিট্যান্স মেলা  বয়কটের আহবান নিউইয়র্কের এস্টোরিয়ায় পুলিশের গুলিতে মানসিকভাবে অসুস্থ  এক ব্যক্তির মৃত্যু
Logo
logo

বগুড়ায় কুমড়ো বড়ি তৈরির ধুম, কয়েক কোটি টাকায় বিক্রির সম্ভাবনা


খবর   প্রকাশিত:  ২৭ এপ্রিল, ২০২৫, ০৪:০০ পিএম

বগুড়ায় কুমড়ো বড়ি তৈরির ধুম, কয়েক কোটি টাকায় বিক্রির সম্ভাবনা

এম আব্দুর রাজ্জাক, বগুড়া থেকে:  শীতকাল এলেই ভোজনরসিকদের খাদ্য তালিকায় যোগ হয় কুমড়ো বড়ি। রান্নায় প্রায় সব সবজির সঙ্গে জনপ্রিয় ও উপাদেয় খাবার কুমড়ো বড়ি যোগ করে আলাদা এক স্বাদ।  বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার তালোড়া পৌর এলাকার সাবলা গ্রামের প্রায় সব বাড়িতেই সম্পূর্ণ হাতের ছোঁয়ায় তৈরি হয় কুমড়ো বড়ি। এখানকার তৈরি কুমড়ো বড়ির সুনাম রয়েছে দেশজুড়ে।  এ মৌসুমে পাঁচ-ছয় কোটি টাকার বড়ি বিক্রি হবে বলে আশা করছেন কারিগররা। মাষকলাইয়ের ডাল, চালকুমড়ো, জিরা, কালো এলাচ, কালো জিরা ও বিভিন্ন রকম মসলা দিয়ে তৈরি হয় শীতকালের রান্নার অন্যতম উপকরণ সুস্বাদু কুমড়ো বড়ি। সাবলা গ্রাম ঘুরে জানা গেছে, এ গ্রামের প্রায় দেড় শতাধিক পরিবার শত বছর ধরে তৈরি করে আসছেন কুমড়ো বড়ি।  

দেখা যায়, এবারও শীতের আগমনী বার্তায় এ জনপ্রিয় খাবারটি তৈরির ধুম পড়েছে সাবলা এলাকাজুড়ে।  ওই গ্রামের মানুষদের দেখাদেখি আশপাশের কয়েকটি গ্রামেও চলছে কুমড়ো বড়ি তৈরির প্রচেষ্টা। মাষকলাইয়ের ডাল থেকে শুধুমাত্র শীতের মৌসুমেই তৈরি হয় কুমড়ো বড়ি। আর তা বছর জুড়ে সংরক্ষণ করে রাখেন গৃহিনীরা। দেশব্যাপী কুমড়ো বড়ির চাহিদা ব্যাপক হওয়ায় প্রতিদিন বাড়ি বাড়ি গিয়ে পাইকাররা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। কুয়াশা ভেজা শীতের সকালে মাষকলাইয়ের ডালের সঙ্গে পরিপক্ক কুমড়োর পেস্ট মিশিয়ে এ বড়ি তৈরি করা হয় বলেই এর নাম হয়েছে কুমড়ো বড়ি। প্রথমে মাষকলাই যাঁতায় বা মেশিনে ভাঙিয়ে নিতে হয়। পরে রাতভর ভিজিয়ে রাখা মাষকলাই ভালো করে পরিষ্কার করে পাটায় বেটে বা ব্লেন্ডারে পেস্ট করে নিতে হয়। সঙ্গে দিতে হয় জিরা, কালো এলাচ, কালোজিরা। এরপর মিহি কুচি করে কাটা বা বাটা চালকুমড়ো ডালের মিশ্রণের সঙ্গে ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে।

এরপর এ মিশ্রণ হাত দিয়ে পরিষ্কার পাতলা কাপড়ের ওপর যতটা সম্ভব গোল গোল করে বিছিয়ে দিতে হবে। বাঁশের মাচার ওপর বড়িসহ কাপড় বিছিয়ে সেগুলো নদীর ধারে, পুকুরপাড়ে বা কোনো ফাঁকা জায়গায় রেখে শুকাতে হবে। পর্যায়ক্রমে প্রায় তিন থেকে চারদিন শুকানোর পর বড়ি খাওয়ার উপযোগী হয়। পরে পাইকারি ও স্থানীয় হাট-বাজারে খুচরা বিক্রি করেন কারিগররা।   দুপচাঁচিয়ার সাবলা গ্রামের প্রায় দেড় শতাধিক হিন্দু পরিবার শত বছরের ঐতিহ্য ধরে রেখে কুমড়ো বড়ি তৈরি করে আসছে।    সাবলা ছাড়াও দুপচাঁচিয়া সদরের লক্ষ্মীতলা, কালীতলা, জিয়ানগর ইউনিয়নের বাঁকপাল হিন্দুপাড়া, তালোড়া ইউনিয়নের কইল ও পোড়াঘাটাসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কমবেশি এ কুমড়ো বড়ি তৈরি হয়ে থাকে। তবে সাবলা এলাকায় অনেক আগে থেকেই কুমড়ো বড়ি তৈরি হয়ে আসছে।  সাবলা গ্রামের বিনয় কুমার, সুমনা রানী জানান, বাংলা কার্তিক মাস থেকে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত কুমড়ো বড়ির চাহিদা বেশি থাকে। এ বছর উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় হাটবাজারে কুমড়ো বড়ি বিক্রি করতে গিয়ে ক্রেতাদের সঙ্গে দর কষাকষি করতে হচ্ছে। গত বছর নভেম্বরে মাস কলাইয়ের ডাল প্রতি কেজি ১৪০ টাকা দরে কিনেছিলাম। এ বছর তা ১৬০ টাকা থেকে ১৮৫ টাকা কেজি কিনতে হচ্ছে।

 তারা বলেন, এছাড়া কুমড়ো বড়ি তৈরির অন্যান্য উপকরণের দামও বেড়ে গেছে। গত বছর সাধারণ মানের কুমড়ো বড়ি ১২০ টাকা এবং ভালো মানেরটা ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। এবার সাধারণ মানের কুমড়ো বড়ি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা এবং ভালোমানের বড়ি ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।  জয়ন্ত দেব, হরিদাস মণ্ডল, যূথী রানীসহ অনেকে জানান, তাদের এলাকা কুমড়ো বড়ি তৈরির জন্য বিখ্যাত। এখানকার একটি পরিবার গড়ে প্রতিদিন পাঁচ থেকে ১০ কেজি কুমড়ো বড়ি তৈরি করে থাকেন। এতে একটি পরিবার মাসে ৩০ থেকে ৬০ হাজার টাকার কুমড়ো বড়ি বিক্রি করে থাকেন। এ হিসেবে মহল্লার শতাধিক পরিবার যে কুমড়ো বড়ি তৈরি করেন তার আনুমানিক মূল্য প্রায় এক কোটি টাকা। কার্তিক থেকে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত এ মহল্লার লোকজন প্রায় পাঁচ থেকে ছয় কোটি টাকার কুমড়ো বড়ি বিক্রি করে থাকেন।  তারা বলেন, এ মৌসুমে কুমড়ো বড়ি বিক্রি বেশি হয়। এজন্য পারিবারিক ঐতিহ্য ধরে রাখতে তারা সংসারের অন্যান্য কাজের পাশাপাশি কুমড়ো বড়ি তৈরি করেন। নারীরা মধ্যরাত থেকে কুমড়ো বড়ি তৈরি শুরু করেন। পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা মিলে চাটাই/মাচায় কাপড় বিছিয়ে তাতে কুমড়ো বড়ি রেখে রোদে শুকাতে দেন। এক্ষেত্রে বলা চলে নারীদের এ কাজে বেশি কষ্ট করতে হয়।  বগুড়া শহর থেকে সাবলা গ্রামে কুমড়ো বড়ি কিনতে গেছেন পাইকার শাহাদত হোসনে রাবু। তিনি  জানান, হেমন্ত-শীতের মৌসুমে সাবলা ছাড়াও দুপচাঁচিয়া উপজেলা সদরের লক্ষ্মীতলা, কালীতলা, জিয়ানগর ইউনিয়নের বাঁকপাল হিন্দুপাড়ার মানুষ কুমড়ো বড়ি বেশি তৈরি করেন। তারা চাহিদা অনুযায়ী এবং সঠিক ওজন ও দামে বড়ি বিক্রি করেন। বগুড়া শহরে ছাড়াও তিনি উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় কুমড়ো বড়ি সরবরাহ করেন। এখানকার তৈরি কুমড়ো বড়ি স্বাদে ও মানে অত্যন্ত ভালো। এদিকে এ পেশায় সাথে জড়িত অধিকাংশ পরিবারের সদস্যরা জানান, সরকারি কিংবা বেসরকারি পর্যায় থেকে স্বল্প সুদে ঋণসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা পেলে তাদের তৈরি কুমড়ো বড়ি দেশ ছাড়িয়ে বিদেশে পাঠানো সম্ভব। কুমড়ো বড়ি বিক্রি করে তারা ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া শেখাতে পারছেন। পরিবার নিয়ে ভালোভাবে খেয়ে পড়ে জীবনযাপন করছেন। তাদের মধ্যে দু-একজন ছাড়া সবাই অস্বচ্ছল। সরকারি কিংবা বেসরকারি পর্যায় থেকে তারা যদি অর্থনৈতিক সহযোগিতা পান, তাহলে তাদের অনেকটাই সুবিধা হবে।  বগুড়ার তৈরি ঐতিহ্যবাহী এ কুমড়ো বড়ির খ্যাতির কারণে রংপুর, দিনাজপুর, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা ও নওগাঁ, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা এসে কুমড়ো বড়ি কিনে নিয়ে যান। বড়ি তৈরি করে সাবলা গ্রামসহ আশপাশের কয়েক গ্রামের অনেকেই অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হয়েছেন।