NYC Sightseeing Pass
ঢাকা, রবিবার, এপ্রিল ২৭, ২০২৫ | ১৪ বৈশাখ ১৪৩২
ব্রেকিং নিউজ
জব্বারের বলীখেলায় আবারও চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লার ‘বাঘা’ শরীফ Bangladesh reaffirms commitment to fully Implement the CHT Peace Accord Kashmir Violence Conflict can be Solved Diplomatically or Needs a Retaliation Plan Against Pakistan ব্রেন স্ট্রোক পরবর্তী সময়ে সেরে ওঠার যুগান্তকারী ওষুধ আবিষ্কার নিউইয়র্কে প্রবাসীদের সাথে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের মত  বিনিময় নিজেকে রাজা-বাদশাহ ভাবছেন ট্রাম্প! ‘দাগি’ দেখতে কয়েদির বেশে সিনেমা হলে শতাধিক নিশো ভক্ত Attorney General James Wins Case Against Google for Monopolies in Digital Advertising নিউইয়র্কে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ সংবাদ সম্মেলন নানা অভিযোগ উত্থাপন : বাংলাদেশ রেমিট্যান্স মেলা  বয়কটের আহবান নিউইয়র্কের এস্টোরিয়ায় পুলিশের গুলিতে মানসিকভাবে অসুস্থ  এক ব্যক্তির মৃত্যু
Logo
logo

চল্লিশে পা রেখেছে মাত্রা - আফজাল হোসেন


খবর   প্রকাশিত:  ২৭ এপ্রিল, ২০২৫, ০৫:২৫ এএম

চল্লিশে পা রেখেছে মাত্রা - আফজাল হোসেন

চল্লিশে পা রেখেছে মাত্রা। ২৩ অক্টোবর- দিনটা বিশেষ। ১৯৮৪ তে মাত্রার যাত্রা শুরু হয়েছিলো এই তারিখে। কিভাবে, কেমন করে জীবনের এই অধ্যায়ের শুরু হয়েছিলো!

১৯৭৫ এ আর্ট কলেজ থেকে বেরিয়ে ঢাকা থিয়েটারে যোগ দেই। ক্রমে থিয়েটারের সাথে সম্পর্ক খুবই ঘন হলো- আমরা অনেকেই তখন ভাবতে শুরু করেছি- জীবন কাটিয়ে দেবো থিয়েটারের সাথে। তা কিভাবে হতে পারে? হতে পারে যদি রোজগেরে হওয়া যায়।

চাকরি বাকরি করার মতো মন মানসিকতা ছিলানা। তা বাদ দিলে হাতে থাকে ব্যাবসা। ব্যবসা বিষয়টা সহজ না কঠিন- সে ধারণা নেই কিন্তু মনে হতে থাকে, ব্যবসা বোধহয় অনেকটা স্বাধীন। বোধহয় নিজস্বতা অনেকখানি বজায় রাখা যায়।

কোন ধরণের ব্যবসা, পেশা আমার জন্য উপযুক্ত! ভাবতে থাকি। ছবি আঁকতে পারি, লিখতে পারি, উপস্থাপনা করি, তখন মনের আনন্দে বইয়ের প্রচ্ছদ, ইলাস্ট্রেশনও আঁকি। দুটো প্রধান দৈনিক পত্রিকায় কার্টুনও আঁকতাম। এসব মূলত ভালোলাগা থেকে করতাম কিন্তু সেসব করে পকেটে কিছু টাকা পয়সাও আসতো। বন্ধুবান্ধব নিয়ে ভালোই সময় কেটে যেতো।

একটা পেশা বেছে নেবার কথা ভাবছিলাম- যাতে করে নিশ্চিন্তে মঞ্চের সাথে যুক্ত থাকা সম্ভব হয়, অভিনয় যেনো প্রথম পছন্দ হিসাবে থেকে যায়। আয় উপার্জনের একটা পথ পাওয়া গেলে জীবন অনেকটা স্বস্তির হয়।

কম বয়সের অনেক ভাবনাই বাস্তবতা বিবর্জিত। চাকরি বাকরিতে আগ্রহ নেই আবার ব্যবসাও হতে হবে নিজের মনমতো- যেনো মামুর বাড়ির আবদার। যেসব কাজ তখন জানি, যা যা করে চলেছি- লক্ষ্য করি, সবকিছুতে নতুনত্ব আনার প্রবল বাসনা থাকে। সে বাসনা ঠেলে গুঁতিয়ে সব করায়। নিজেকে একটু চিনেছি, বুঝি। বুঝতে পারি, পেশা যেটাই হোক- সৃজনশীলতার সুযোগ থাকতে হবে।

যা সৃজনশীল, তা আনন্দদায়ক ও উত্তেজনাপূর্ণ। মনে তেমন কিছুর সাথেই যুক্ত হওয়ার বাসনা তীব্র বলে বিজ্ঞাপন বিষয়টা ঘুরে ফিরে মাথায় আসতে থাকে। তরুনকালটা খুবই আনন্দদায়ক। মাথায় গিজগিজ করে নানা নতুনত্ব, অজস্র আইডিয়া। মনে বেড়ে উঠতে আগ্রহ- বিজ্ঞাপন বানিজ্যের সঙ্গে জড়িয়ে পড়া কিভাবে সম্ভব হবে?

ফরিদুর রেজা সাগর তখন টেলিভিশনে বাচ্চাদের অনুষ্ঠানের জন্য পান্ডুলিপি রচনা, অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও পরিচালনা করে। সাগর একটা রেস্তরাঁ খুললো বঙ্গবন্ধু এ্যাভেনিউতে, ঢাকা স্টেডিয়ামের উল্টোদিকে। রেস্তোরাঁর নাম খাবার দাবার। আর এক বন্ধু শাইখ সিরাজ সেটা সামলায়। সাগরের প্রশ্রয়ে ঢাকা থিয়েটারের বাইরের সে বন্ধুগোত্রের আড্ডাকেন্দ্র হয়ে ওঠে এই খাবার দাবার।

সানা, সানাউল আরেফীন খাবার দাবার গোত্রের একজন। এই বন্ধুগোত্রের সবাই বিচিত্র বিষয়ের সাথে যুক্ত। লেখালেখি, চিত্রকলা, স্থিরচিত্র, মঞ্চনাটক, টেলিভিশন, চলচ্চিত্র- এতোকিছুতে আমাদের সময় কেটে যেতো বৈচিত্রে ভরপুর আড্ডায়।

ঢাকা থিয়েটারের মহড়া না থাকা সন্ধ্যাগুলোতে সে অসাধারণ আড্ডার টানে জড়ো হতাম খাবার দাবারে। আমাদের মধ্যে অষুধ বিষয়ে পড়াশোনা করা বন্ধু ছিল, বিজ্ঞাপন প্রতিষ্ঠানে কাজ করা বন্ধুও ছিল। সানা সে আড্ডায় চুপচাপ থাকা মানুষ। কাজ করতো দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দৈনিক ইত্তেফাকে। কাজ বিজ্ঞাপন বিভাগে।

খাবার দাবারে ধারণা পাই, বিজ্ঞাপন বিষয়ের রোমান্টিক দিকটা আমাকে অনেক উৎসাহিত করে কিন্তু তার আর একটা দিকও আছে। কঠিন দিক। সে কঠিন দিক সামলানোর মতো মানুষ আমি নই। খাবার দাবারের আড্ডা থেকে আরও বুঝতে পারি, জানা হয়- বিজ্ঞাপন ব্যবসা নিয়ে স্বপ্ন সাধ সানা বা আরেফিনেরও আছে।

দুজনের দুই রকমের সামর্থ। স্বপ্নে মিল ছিলো। আমরা এক হয়ে গেলাম। মাত্রার জন্ম হলো। অনেকে বলেছিলো নাম নিয়ে আর একটু ভাবতে। মাত্রাকে যাত্রা বলে ভুল করবে, ফাতরা বলে ঠাট্টাও করতেও শুনতে হতে পারে। কথা আরও অনেকরকমের হয়েছিলো- কিছুই কানে তোলা হয়নি।

মাত্রা চল্লিশতম বছরে পা দিয়েছে। শুরুতে দুই তরুণ একটা প্রিয় বিষয়কে পেশা হিসাবে বেছে নেয়, তারপর স্বপ্ন দেখে বিজ্ঞাপনের ধরণ পাল্টে দেবে। মাত্রা তা পেরেছিলো। আর সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব- চল্লিশ বছর ধরে দুজন মানুষ বন্ধুত্ব- এই মহামূল্যবান সম্পর্কটা টিকিয়ে রাখতে পেরেছে।

একত্রে একই স্বপ্ন নিয়ে চল্লিশ বছর ধরে ছুটে চলা। এখনও হাঁফ ধরেনি কারও। স্বপ্ন নির্মাণ আর চল্লিশ বছর একসাথে কাটানো- এর চেয়ে বড় সাফল্য, আনন্দ আর গৌরব কারও জীবনে আর কি থাকতে পারে? কোনও আনুষ্ঠানিকতা নেই কিন্তু মনে হচ্ছে প্রতিটি মূহুর্তই আনন্দময়, উৎসবমুখর