খবর প্রকাশিত: ২৮ এপ্রিল, ২০২৫, ০৭:৫০ এএম
শ্বেতশুভ্র ভবনটির বয়স শত বছরের বেশি। এর নির্মাণশৈলিতে রয়েছে মোঘল ও ইউরোপীয় ধ্রুপদী স্থাপত্যরীতির ছাপ। বঙ্গভঙ্গ রদ হওয়ার পর ভবনটি বিভিন্ন সময়ে নানা উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়েছে। তবে প্রধান বিচারপতির বাসভবন হিসাবে ভবনটির ব্যবহার হচ্ছে ১৯৫০ সাল থেকে। ১১৬ বছরের পুরাতন এই ভবনটি এবার পুরাকীর্তি হিসাবে সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছেন দেশের ২৫ তম প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ। তার অনন্য উদ্যোগে প্রধান বিচারপতির ১৯ নং হেয়ার রোডের বাসভবনকে সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসাবে ঘোষণার কার্যক্রম শুরু করেছে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব নেন হাইকোর্টের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ। প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব নিয়ে বিচার বিভাগে নানা সংস্কারের উদ্যোগ নেন তিনি। সেই সব সংস্কার কার্যক্রম চলমানের পাশাপাশি প্রধান বিচারপতির বাসভবনকে পুরাকীর্তি হিসাবে সংরক্ষণের লক্ষ্যে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সেপ্টেম্বর মাসে বৈঠক করেন তিনি। ওই বৈঠকে প্রধান বিচারপতির বাসভবনকে সংরক্ষিত পুরাকীর্তি ঘোষণা করার কার্যক্রম গ্রহন করা হয়। যাতে পুরাকীর্তি আইনের বিধান প্রয়োগ করে বাসভবনটির মালিকানা ও ব্যবহার সত্ত্ব সুপ্রিম কোর্টের অনুকূলে অক্ষুন্ন রাখা যায়। বৈঠকে প্রধান বিচারপতি বিদ্যমান আইনি কাঠামোর মধ্য থেকে ঐতিহাসিক এই স্থাপনাটির সুরক্ষা নিশ্চিতের নির্দেশনা দেন। যাতে দেশের ভবিষ্যত প্রজন্ম এই স্থাপনার সমৃদ্ধ ইতিহাস সম্পর্কে সচেতন হবেন। পুরাকীর্তি কার্যক্রম ঘোষণার অংশ হিসাবে বুধবার বাসভবনটি সরেজমিন পরিদর্শনপূর্বক সচিত্র প্রতিবেদন প্রস্তুত করে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের প্রেরণ করতে অধিদপ্তরের ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালককে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত: প্রধান বিচারপতির বাসভবনে প্রবেশদ্বারের দেয়ালে মার্বেল পাথরের একটি নামফলক রয়েছে। সেই ফলে ভবনটির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ১৯০৫ সালে বিভক্ত হয় বাংলা। এ বিভক্তির ফলে পূর্ব বাংলা ও আসাম নিয়ে গঠিত নতুন প্রদেশের রাজধানী হিসেবে অভূতপূর্ব কর্মচাঞ্চল্যে জেগে ওঠে ঐতিহ্যবাহী ঢাকা। সে ধারাবাহিকতায় যে সকল সুদৃশ্য সরকারি কার্যালয় এবং বাসভবনের নির্মাণে নৈসর্গিক রমনা সুশোভিত হয়ে ওঠে, তারই একটি ১৯নং হেয়ার রোড, বর্তমানে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির বাসভবন।
১৯০৮ সালে নির্মিত ভবনটি বর্তমানে আঙিনাসমেত ৪ দশমিক ৪৯ একর ভূমির ওপর স্থাপিত। ব্রিটিশ সরকারের গভর্নর ও উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের আবাসিক ভবন হিসেবে যাত্রা শুরু হয়েছিল এ স্থাপনার। দেশভাগের পর এখানে থেকেছেন ঢাকা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিরা। স্বাধীন বাংলাদেশের সকল প্রধান বিচারপতিগণের অবস্থান ও পদচারণায় এ ভবন কালের শব্দহীন অথচ সমৃদ্ধ স্বাক্ষর হয়ে পথ চেনাচ্ছে উত্তর প্রজন্মকে। আভিজাত্যের অলংকারে, শিল্পশৈলীর অহংকারে অপূর্ব স্থাপত্যরীতির সৌকর্যে এবং ঐতিহ্যের প্রাণস্পর্শে দ্যুতিময় কাঠামোবদ্ধ হয়ে আছে ১৯নং হেয়ার রোডে অবস্থিত প্রধান বিচারপতির বাসভবন।