খবর প্রকাশিত: ২৭ এপ্রিল, ২০২৫, ০৬:৩৩ এএম
এম আব্দুর রাজ্জাক, বগুড়া থেকে : আর মাত্র কয়দিন। আগামী ৯ অক্টোবর শুরু হচ্ছে দূর্গাপূজা। সনাতন ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় এ ধর্মীয় উৎসবকে ঘিরে বগুড়ায় মণ্ডপে মণ্ডপে চলছে শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি। বাহারি রঙ আর হাতের সুনিপুণ ছোঁয়ায় প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে প্রতিমা। দম ফেলানোর ফুরসত নেই এসব শিল্পীদের। গত বুধবার ২ অক্টোবর শুভ মহালয়া চণ্ডীপাঠের মাধ্যমে মর্ত্যলোকে আমন্ত্রণ জানানো হয় দেবী দুর্গাকে। জানা গেছে, আগামী বুধবার মহাষষ্ঠীর মধ্যদিয়ে শুরু হবে দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা। রোববার ১৩ অক্টোবর দশমী তিথি প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে শেষ হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পাঁচ দিনব্যাপী এ শারদীয় দুর্গোৎসব। এ বছর দোলায় অর্থাৎ পালকিতে চেপে দেবীদুর্গা মর্ত্যলোকে পদার্পণ করবেন। আবার গজে অর্থাৎ হাতিতে চড়ে কৈলাসে ফিরবেন।
রোববার (৬ অক্টোবর) বগুড়ার বিভিন্ন মণ্ডপ ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় সব মণ্ডপেই চলছে শেষ সময়ের প্রস্তুতি। দিনরাত প্রতিমা তৈরির পর শেষ মুহূর্তে রঙ-তুলিতে মনের মাধুরী মিশিয়ে দেবীদুর্গা, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মীকে সাজাতে ব্যস্ত শিল্পীরা। অধিকাংশ পূজা মণ্ডপের প্রতিমা তৈরির মূল কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। চলছে সাজ-সজ্জা ও রঙয়ের কাজ। সীমিত পরিসরে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হলেও বর্ণিল সাজে সাজানো হচ্ছে পূজামণ্ডপগুলো। এখন শুধু প্রতিমায় পরিপূর্ণ রূপ দিতে রং তুলির শেষ আঁচড় দেওয়া হচ্ছে। দুই এক দিনের মধ্যেই প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ করা হবে।
বগুড়া শহরের উত্তর চেলোপাড়ার নব-বৃন্দাবন হরিবাসর মন্দিরে কাজ করতে আসা মৃৎশিল্পী কাজল প্রামাণিক জানান, তিনি ও তার সঙ্গীরা মিলে এ বছর ২০টি দুর্গা প্রতিমা তৈরি করেছেন। মাটি দিয়ে প্রতিমা তৈরির কাজ আরও আগেই শেষ হয়েছে। বর্তমানে তারা রং-তুলির কাজ করছেন। বিভিন্ন রং দিয়ে তারা প্রতিমার সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলছেন। এতে সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত তারা মহাব্যস্ত সময় পার করছেন। আগামী বুধবার মহাষষ্ঠীর আগেই তারা সব কাজ শেষ করবেন।
কাজল আরও জানান, কয়েক দিন থেকেই আকাশের মুখ ভার। বৃষ্টিও হচ্ছে তাই প্রতিমা শুকাতে অনেক কষ্ট করতে হচ্ছে। দু'এক দিনের মধ্যেই প্রতিমাগুলো প্যান্ডেলে পৌঁছে দিতে হবে। তাই বৃষ্টির মধ্যেই আমাদের প্রতিমা তৈরির কাজ যে কোনো উপায়ে শেষ করতে হচ্ছে। মৃৎশিল্পী কাজল প্রামাণিক জানান, তারা আগে প্রতিমা তৈরি করে ভালো টাকা আয় করতেন। কিন্তু বর্তমানে প্রতিমা তৈরির উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় তেমন কিছুই থাকে না। প্রতিমা তৈরির কাজ ছাড়া অন্য কোনো কাজ জানেন না বলে এটিই করে যাচ্ছেন।
প্রতিমা তৈরির ফাঁকে অনিল নামে এক কারিগর বলেন, পূজার আর বেশি দেরি নেই। তাই জোর কদমে কাজ চলছে। মাটির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। বাকি দিনগুলোর মধ্যেই রঙের কাজও শেষ হয়ে যাবে। তারপরেই মা তার বাড়িতে যাবে। এদিকে পূজামণ্ডপে আইন-শৃঙ্খলা পরিপন্থী কোনো ধরনের কার্যক্রম হলে সংশ্লিষ্ট কাউকে বিন্দু পরিমাণ ছাড় দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা। বগুড়া জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা নিশ্চিতে কিছু দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে পূজা উদযাপন কমিটির নেতাদের।
বগুড়া জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী জেলার ১২টি উপজেলায় ৬২৮টি মন্ডপে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে। এরমধ্যে সদরে ১১৭টি, শিবগঞ্জে ৫৩টি, আদমদিঘীতে ৬৩টি, দুপচাঁচিয়ায় ৪০টি, কাহালুতে ২৭টি, নন্দীগ্রামে ৪৫টি, শাজাহানপুরে ৪৮টি, গাবতলীতে ৬৩টি, সোনাতলায় ৩৫টি, শেরপুরে ৮৬টি, ধুনটে ২৮টি ও সারিয়াকান্দিতে ২৩টি মন্ডপে দুর্গার্পজা অনুষ্ঠিত হবে। বগুড়া পৌর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি পরিমল প্রসাদ রাজ বলেন, এ বছর পৌর এলাকায় ৭৩টি মণ্ডপে পূজার আয়োজন হচ্ছে। প্রতিমা তৈরিও প্রায় শেষ পর্যায়ে। কিছু জায়গায় মঞ্চ নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। প্রতিটি মন্দিরে নিরাপত্তা জোরদার করতে সিসি ক্যামেরা লাগানোর প্রস্তুতি চলছে। দ্রুত সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ হবে। আশা করছি এবার সবাই ভালোভাবে পূজা উদযাপন করতে পারবো। তিনি আরও বলেন, পূজা সুষ্ঠু ও নিরাপত্তার জন্য সরকারি ভাবে যে নির্দেশনা থাকবে তার বাইরে স্বেচ্ছাসেবক দল ও আমাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় আনসার রাখা হবে। পাশাপাশি পৌর কমিটির পক্ষ থেকেও মনিটরিং টিম সার্বক্ষণিক কাজ করবে।
বগুড়ার পুলিশ সুপার জেদান আল মুসা জানান, দুর্গাপূজা সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ এবং নির্বিঘ্নে উদযাপনের লক্ষ্যে চারধরণের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতিমা তৈরী থেকে বিসর্জন পর্যন্ত সার্বিক নিরাপত্তায় কাজ করবে জেলা পুলিশ। ঝুঁকিপূর্ণ মন্দিরের তালিকা করে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া দুর্গাপূজা চলাকালিন মাদক, ইভটিজিং, ছিনতাই, পকেটমার প্রতিরোধে পুলিশের বিশেষ টিম তৎপর থাকবে। যেহেতু দর্শনার্থীদের সমাগম বাড়বে এজন্য সড়কে যানজট নিরসনে ট্রাফিক ব্যবস্থাও জোরদার থাকবে। ইতিমধ্যে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের পূজা উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দ ও আয়োজকদের সাথে সভা করা হয়েছে। নিরাপত্তা নিশ্চিতে কিছু দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তাদের। পুলিশ সুপার আরও জানান, সবার সহযোগিতায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মধ্যদিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপিত হবে এবারের দুর্গাপূজা এমনটাই আশা করছেন তিনি। হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী, দেবীদুর্গা দশদিন ধরে অসুরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন। হিন্দু পঞ্জিকার সপ্তম মাসে এই যুদ্ধ শেষে দেবী দুর্গা মহিষাসুর নামে নির্দয় অসুর রাজকে বধ করেছিলেন। যার মাধ্যমে অত্যাচার থেকে মুক্তি মিলেছিল ও অশুভের ওপর শুভ শক্তি স্থাপিত হয়েছিল।