NYC Sightseeing Pass
ঢাকা, রবিবার, এপ্রিল ২৭, ২০২৫ | ১৪ বৈশাখ ১৪৩২
ব্রেকিং নিউজ
জব্বারের বলীখেলায় আবারও চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লার ‘বাঘা’ শরীফ Bangladesh reaffirms commitment to fully Implement the CHT Peace Accord Kashmir Violence Conflict can be Solved Diplomatically or Needs a Retaliation Plan Against Pakistan ব্রেন স্ট্রোক পরবর্তী সময়ে সেরে ওঠার যুগান্তকারী ওষুধ আবিষ্কার নিউইয়র্কে প্রবাসীদের সাথে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের মত  বিনিময় নিজেকে রাজা-বাদশাহ ভাবছেন ট্রাম্প! ‘দাগি’ দেখতে কয়েদির বেশে সিনেমা হলে শতাধিক নিশো ভক্ত Attorney General James Wins Case Against Google for Monopolies in Digital Advertising নিউইয়র্কে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ সংবাদ সম্মেলন নানা অভিযোগ উত্থাপন : বাংলাদেশ রেমিট্যান্স মেলা  বয়কটের আহবান নিউইয়র্কের এস্টোরিয়ায় পুলিশের গুলিতে মানসিকভাবে অসুস্থ  এক ব্যক্তির মৃত্যু
Logo
logo

হাসিনার সামনে দুটো অপশন, ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় কিংবা দেশে ফেরা--- মতিউর রহমান চৌধুরী


খবর   প্রকাশিত:  ২৭ এপ্রিল, ২০২৫, ০৬:৩৮ এএম

হাসিনার সামনে দুটো অপশন, ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় কিংবা দেশে ফেরা--- মতিউর রহমান চৌধুরী

 ক্ষমতাচ্যুত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামনে দুটো অপশন খোলা। হয় ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় নতুবা দেশে ফিরে আসা। এই মুহূর্তে আর কোনো বিকল্প নেই। ৭৭ বছর বয়সী এই সাবেক প্রধানমন্ত্রী এখন ভারতে অবস্থান করছেন। শতাধিক মামলা রুজু হয়েছে তার বিরুদ্ধে। এরমধ্যে হত্যা মামলাই বেশি। গণহত্যার মামলা নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতেও যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে। তার পাসপোর্ট বাতিল হওয়ায় ভিন্ন গন্তব্যে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেকটা উবে গেছে। ভারতীয় আইন অনুযায়ী বিনা ভিসায় তিনি ৪৫ দিন থাকতে পারবেন। এর মধ্যে কেটে গেছে ২৭ দিন।   

যা কিছু করার এর মধ্যেই করতে হবে শেখ হাসিনাকে। শেখ রেহানার অবশ্য পরিস্থিতি ভিন্ন। তার কাছে রয়েছে বৃটিশ পাসপোর্ট। তিনি ইচ্ছা করলে বৃটেন কিংবা অন্য যেকোনো দেশে যেতে পারেন। ভারত এখন কী করবে। তারা কি শেখ হাসিনাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেবে? যেমনটা দিয়েছিল ১৯৭৫-এ বঙ্গবন্ধু হত্যার পর। ছয় বছর ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে আশ্রয়ে ছিলেন হাসিনা। যতদূর জানা যায়, ভারত এখন উভয় সংকটে। তারা কি তাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে বৈরী সম্পর্ক তৈরি করবে? যে সম্পর্ক এখন অনেক তিক্ততায় পরিণত হয়েছে! ভারতবিরোধী সেন্টিমেন্ট আগের থেকে অনেক অনেক বেশি এখন। বহির্বিশ্বেও ভারতের সামপ্রতিক তৎপরতা নিয়ে নানা প্রশ্ন দানা বাঁধছে। হাসিনার সঙ্গে তাদের সম্পর্ক সর্বজনবিদিত। ৩৬ দিনে শেখ হাসিনার শাসন খতম হয়ে যাওয়ার পর ভারত বাংলাদেশের উপর নানা চাপ সৃষ্টি করতে থাকে। সংখ্যালঘু কার্ড ব্যর্থ হয়েছে। দলমত নির্বিশেষে বাংলাদেশের মানুষজন হিন্দুদের বাড়িঘর পাহারা দিয়েছে। ঢালাও অভিযোগ ভুল প্রমাণিত হয়েছে। যদিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যা প্রচারণা জারি রয়েছে।

এই পটভূমিতে ভারত কি শেখ হাসিনাকে প্রোটেকশন দেবে? পাসপোর্ট বাতিল হয়ে যাওয়ায় শেখ হাসিনা এখন উদ্বাস্তু। অন্য কোনো দেশে যাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও তা খুবই কঠিন। চীন এবং ভারত হাসিনাকে নিয়ে বাজি ধরেছিল। দুটো দেশই হেরেছে। মাঝখানে জিতে গেছে অন্য একটি দেশ। চীন সতর্ক হয়ে গেছে। ভারত  হাসিনাকে ঘিরে স্বপ্ন দেখছে এখনো। কিন্তু ইতিহাস অন্য কথা বলে। ১৯৭৫ সনের ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হওয়ার পর ধারণা করা হয়েছিল ভারত ভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখাবে। কেউ কেউ নানা অ্যাকশনের কথাও বলেছিলেন। বাস্তবে দেখা গেল উল্টোটা। লালকেল্লা ময়দানে জাতীয় কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে যাওয়ার আগে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর কাছে বার্তা পৌঁছেছিল ঢাকায় অভ্যুত্থান হয়েছে। মুজিব ডেড। ধীর-স্থির প্রধানমন্ত্রী কুচকাওয়াজে অংশ নিলেন। তেমন একটা প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেল না। অবশ্য একটা দৃশ্যমান পরিবর্তন দেখা গেল। তখন বাংলাদেশে নিযুক্ত হাইকমিশনার সমর সেন দিল্লিতে। তাকে ডেকে পাঠানো হলো। বলা হলো- এক্ষুণি ঢাকায় যেতে হবে। ঢাকা-দিল্লি বিমান যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। ঢাকায় কারফিউ। সমর সেন দিল্লি থেকে কলকাতা এলেন বিমানে। বেনাপোল সীমান্ত ক্রস করে বাই রোডে সোজা এলেন ঢাকায়। গন্তব্য বঙ্গভবন।

সেখানেই থাকতেন আগস্ট অভ্যুত্থানের খলনায়ক, ষড়যন্ত্রকারী খন্দকার মোশ্‌তাক আহমেদ। দুপুর গড়িয়ে তখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে। তাহেরউদ্দিন ঠাকুর  মোশ্‌তাককে খবর দিলেন- সমর সেন বঙ্গভবনে পৌঁছে গেছেন। এর পরের দৃশ্য পত্রিকার প্রথম পাতায় পরদিন দেখা গেল। সমর সেন বঙ্গভবনে পৌঁছেই খন্দকার মোশ্‌তাকের সঙ্গে কোলাকুলি করলেন। অন্য কী বার্তা দিয়েছিলেন তা অবশ্য জানা যায়নি। এখনকার পরিস্থিতি কী। শেখ হাসিনা সরকার উৎখাতের পর ভারত কি আসলেই কোনো প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে? যা থেকে ধরে নেয়া যায় তারা বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করবে? বাস্তব অবস্থা দেখে যে কেউ এই ধারণা করতেই পারেন। ভারত যেটুকু পেয়েছে শেখ হাসিনার কাছ থেকে সেটুকু ধরে রাখতে চায়। তাই বলে হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতাবোধ দেখাতেও তারা কসুর করছে না

বিগত সাড়ে ১৫ বছরে ভারত অনেক কিছুই নিয়েছে। দিয়েছে স্বল্প। অবশ্য ক্ষমতায় থাকার একচেটিয়া লাইসেন্স দিয়েছে। নির্বাচনগুলোতে প্রভাব বিস্তার করেছে। এক পর্যায়ে তারাই বাংলাদেশের রাজনীতির নিয়ামক শক্তি হিসেবে কলকাঠি নেড়েছে। কখনো গোপনে, কখনো প্রকাশ্যে। চোখ বুজে টিকিয়ে রেখেছে হাসিনার অগণতান্ত্রিক শাসনকে। পরিণতিতে হারিয়েছে বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষকে। দিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর হাসিনার ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনো স্পষ্ট ধারণা দেন নি। এই অবস্থায় হাসিনা যদি ভারতের রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে বসেন তখন তাদের নীতি কী হবে তা নিয়ে উভয় সংকটে প্রশাসন। রাজনৈতিক পণ্ডিতরা দ্বিধাবিভক্ত। হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে চাপ বাড়বে ভারতের উপর।

ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন এরকমই একটা ইঙ্গিত দিয়েছেন।  ভারতের উদ্বেগ সেভেন সিস্টার নিয়ে। হাসিনার জমানায় স্বস্তি এসেছে। প্রতি বিপ্লবের পথে গিয়ে যেটুকু অর্জন তা হারিয়ে যেতে পারে। এই আশঙ্কাও তাদের মধ্যে রয়েছে। তাদের ভয়, হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতাবোধ দেখাতে গিয়ে চীনের আগমন ঘটে কিনা! সে নিয়েও তাদের মধ্যে সংশয় রয়েছে। তাছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অনেকটা নীরবেই তাদের অবস্থান সুসংহত করেছে। ঢাকার রাষ্ট্রক্ষমতায় এখন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। যার সঙ্গে রয়েছে পৃথিবীর অধিকাংশ রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকার প্রধানের সরাসরি যোগাযোগ। তিনি চাইলে অন্তত একশ’টি দেশের সরকারপ্রধানের সঙ্গে যখন তখন কথা বলতে পারেন। এ কারণে ভারত সতর্ক পা ফেলছে। জুলাই বিপ্লবের পর ইউনূসের সরকারকে স্বীকৃতি দিতে ভারত সময় নষ্ট করেনি। হাসিনার পতনে ভারত বিরক্ত। তাই বলে তারা দরজা বন্ধ করে রাখছে না। যে যাই বলুন, বিপ্লবের পরে প্রতি বিপ্লবের ছায়া। তারা যে রসদ  যোগাচ্ছে না তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। কূটনৈতিক পণ্ডিতরা নরেন্দ্র মোদির সরকারকে আবেগতাড়িত না হয়ে বাস্তব সিদ্ধান্তের পক্ষে মত দিয়েছেন।

পরিবর্তিত এই অবস্থায় হাসিনার দেশে ফেরা ছাড়া আর কী বিকল্প রয়েছে? গণহত্যার অভিযোগে তিনি অভিযুক্ত হতে চলেছেন। পৃথিবীর কোনো গণতান্ত্রিক দেশ তাকে গ্রহণ করতে চাইবে না। সময় যত গড়াচ্ছে বাংলাদেশ নিয়ে ভারতীয়দের মনোভাবেও পরিবর্তন আসছে। দক্ষিণ এশিয়ার কোনো দেশের সঙ্গেই ভারতের সুসম্পর্ক নেই। যেটুকু ছিল বাংলাদেশের সঙ্গেই। ভুল নীতি কৌশল গ্রহণ করে সেটুকু হারাতে চায় না ভারত। কোটা বিরোধী আন্দোলন হাসিনার ভবিষ্যৎ যেমন ফিকে করে দিয়েছে তেমনি বাংলাদেশে ভারতের অবস্থান অনেকটাই প্রশ্নবিদ্ধ করে দেয়। সামপ্রতিক বন্যা নিয়ে বাংলাদেশিদের প্রতিক্রিয়া দেখে ভারতের নেতৃত্ব বেশ চিন্তিত বলেই মনে হচ্ছে। উত্তরে চীন, পশ্চিমে পাকিস্তান। পূর্বে আরেকটি নিরাপত্তা ফ্রন্ট ভারত খুলবে কি-না তা নিয়ে হিসাবনিকাশ চলছে। কূটনৈতিক পণ্ডিতরা বলছেন, এটা যদি করা হয় তা হবে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের গভীর নজর রয়েছে সর্বশেষ ঘটনাবলির উপর।