খবর প্রকাশিত: ৩০ এপ্রিল, ২০২৫, ১২:১৩ এএম
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়েছে। নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ভূমিধস জয় নিয়ে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে। যদিও বিএনপিসহ রাজপথের বিরোধীরা এই নির্বাচন বর্জন করে জনগণকে ভোটাধিকার প্রয়োগ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছিল। ভোটগ্রহণ শেষে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে ৪১ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ ভোট দিয়েছেন। নির্বাচনী ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে ঢাকার বাইরের আসনগুলোতে নির্বাচিত প্রার্থীরা লাখের ওপরে ভোট পেলেও রাজধানীতে বিজয়ীদের কারোরই ভোটের অংক লাখ ছুঁতে পারেনি। এমনকি মাত্র ২৪ হাজার ভোট পেয়েও এখানে এমপি হয়েছেন একজন। ৫০ হাজারের কম ভোট পেয়েছেন চারজন। রাজধানীর ১৫টি সংসদীয় আসনের ১০টিতে বিজয়ীদের প্রাপ্ত ভোট ৭০ হাজারের কম। নির্বাচিতদের মধ্যে সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তার প্রাপ্ত ভোট ৯৪ হাজার ৬৭৯।
এমনকি রাজধানীর ১৫টি সংসদীয় আসনে নির্বাচিত সবার প্রাপ্ত ভোটের যোগফল ১০ লাখের নিচে। যেখানে একটি সংসদীয় আসন ঢাকা-১৮তেই মোট ভোটার রয়েছেন ৫ লাখ ৮৮ হাজার ৫৪৯ জন। রাজধানীতে নির্বাচিতদের গড় ভোটও ৬৪ হাজারের নিচে। ঢাকা-৪ আসনটি রাজধানীর সূত্রাপুর (ডিএসসিসি ওয়ার্ড ৪৭), ডেমরা (ডিএসসিসি ওয়ার্ড ৫১, ৫২, ৫৩, ৫৪, ৫৮, ৫৯) থানা নিয়ে গঠিত। এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৫৪ হাজার ৫৭৭ জন। কিন্তু আসনটিতে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আওলাদ হোসেন ট্রাক প্রতীকে ভোট পেয়েছেন মাত্র ২৪ হাজার ৭৭৫টি। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকার সানজিদা খানম ভোট পেয়েছেন ২২ হাজার ৫৭৭টি। ডেমরা (ডিএসসিসি ওয়ার্ড ৪৮, ৫০, ৬০, ৬১-৭০), মতিঝিল (ডিএসসিসি ওয়ার্ড ৪৯) থানা নিয়ে গঠিত ঢাকা-৫ আসন। এ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৯০ হাজার ৭৬৪ জন। কিন্তু স্বতন্ত্র প্রার্থী মশিউর রহমান মোল্লা সজল ট্রাক প্রতীকে ৫০ হাজার ৬৩১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী হারুনুর রশীদ মুন্না পেয়েছেন ৫০ হাজার ৩৩৪ ভোট। ঢাকা-৬ আসনটি গঠিত রাজধানীর কোতোয়ালি, সূত্রাপুর থানা নিয়ে। এ আসনে মোট ভোটার ২ লাখ ৮১ হাজার ৪৩২ জন। এখানে নির্বাচিত হওয়া আওয়ামী লীগের সাঈদ খোকন নৌকা প্রতীকে ভোট পেয়েছেন ৬১ হাজার ৭০৩টি। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ইসলামী ঐক্যজোটের মো. রবিউল আলম মজুমদার পেয়েছেন ১ হাজার ১০৯ ভোট। লালবাগ (ডিএসসিসি ওয়ার্ড ২৩-৩১), কোতোয়ালি (ডিএসসিসি ওয়ার্ড ৩২, ৩৩, ৩৫, ৩৬) থানা নিয়ে গঠিত ঢাকা-৭ আসন। এখানে ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৪৩ হাজার ৮৯টি। আসনটিতে নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত হওয়া সাবেক সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের ছেলে মোহাম্মদ সোলায়মান সেলিম ভোট পেয়েছেন মাত্র ৬৩ হাজার ৮১৭টি। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন আহম্মেদ মিলন পেয়েছেন ৭ হাজার ৩০৮টি। ঢাকা-৮ রাজধানীর মতিঝিল (ডিএসসিসি ওয়ার্ড ৮-১৩), রমনা (ডিএসসিসি ওয়ার্ড ১৯-২১) থানা নিয়ে গঠিত। এ আসনে মোট ভোটার ২ লাখ ৭০ হাজার ৬৫০ জন হলেও নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হওয়া আওয়ামী লীগের আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ভোট পেয়েছেন মাত্র ৪৬ হাজার ৬১০টি। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মো. জুবের আলম খান লাঙ্গল প্রতীকে ভোট পেয়েছেন ৮৮০টি। ঢাকা-৯ আসন গঠিত সবুজবাগ, মুগদা, খিলগাঁও (ডিএসসিসি ওয়ার্ড ১-৬ ও ৭১-৭৪), মতিঝিল (ডিএসসিসি ওয়ার্ড ৭), ডেমরা (ডিএসসিসি ওয়ার্ড ৭৫) থানা নিয়ে। এখানে মোট ভোটার ৪ লাখ ৪৯ হাজার ৯৫২ জন। কিন্তু নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হওয়া আওয়ামী লীগের সাবের হোসেন চৌধুরী ভোট পেয়েছেন ৯০ হাজার ৩৯৬টি। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী লাঙ্গলের কাজী আবুল খায়ের পেয়েছেন ২ হাজার ৭৯৪টি। ঢাকা-১০ আসন ধানমণ্ডি (ডিএসসিসি ওয়ার্ড ১৪-১৮), লালবাগ (ডিএসসিসি ওয়ার্ড ২২) উপজেলা নিয়ে গঠিত। এখানে মোট ভোটার ৩ লাখ ২৪ হাজার ৯৩৩ জন। তারমধ্যে নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত নায়ক ফেরদৌস আহমেদ ভোট পেয়েছেন মাত্র ৬৫ হাজার ৮৯৮টি। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী এনপিপি’র কেএম শামসুল আলম পেয়েছেন ২ হাজার ২৫৭টি। ঢাকা-১১ আসন গঠিত গুলশান (ডিএনসিসি ওয়ার্ড ২১, ২২, ৩৭-৪২), সবুজবাগ (ডিএনসিসি ওয়ার্ড ২৩) থানা নিয়ে গঠিত।
এখানে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ২৬ হাজার ৫৩৭টি। আসনটিতে নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ ওয়াকিল উদ্দিন পেয়েছেন ৮৩ হাজার ৮৮৫ ভোট। আর জাতীয় পার্টির শামীম আহমেদ পেয়েছেন ২ হাজার ৭৪৭ ভোট। রমনা (ডিএসসিসি ওয়ার্ড ২৪-২৭), রমনা (ডিএসসিসি ওয়ার্ড ৩৫, ৩৬) থানা নিয়ে গঠিত ঢাকা-১২ আসন। এখানে মোট ভোটার ৩ লাখ ৩৩ হাজার ১১১ জন। এ আসনে নির্বাচিত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল নৌকা প্রতীকে ভোট পেয়েছেন ৯৪ হাজার ৬৭৯টি। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী লাঙ্গলের খোরশেদ আলম খুশু পেয়েছেন ২ হাজার ২১৯ ভোট। ঢাকা-১৩ আসন গঠিত মোহাম্মদপুর (ডিএনসিসি ওয়ার্ড ২৮-৩৪) থানা নিয়ে। এখানে মোট ভোটার ৩ লাখ ৯৫ হাজার ৪৩৬ জন। যেখানে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া আওয়ামী লীগের জাহাঙ্গীর কবির নানক ভোট পেয়েছেন ৯০ হাজার ৩৭৫টি। যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিল নির্বাচিত হয়েছেন ঢাকা-১৪ আসন থেকে। আসনটি মিরপুর (ডিএনসিসি ওয়ার্ড ৭-১১), সাভার (১টি ইউনিয়ন) উপজেলা নিয়ে গঠিত। এখানে মোট ভোটার ৪ লাখ ১৮ হাজার ২১২ জন। নিখিল নৌকা নিয়ে পেয়েছেন মাত্র ৫৩ হাজার ৫৪০টি। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মো. লুৎফর রহমান কেটলি প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ১৭ হাজার ৯১৪ ভোট। ঢাকা-১৫ আসন মিরপুর (ডিএনসিসি ওয়ার্ড ৪, ১৩, ১৪), ক্যান্টনমেন্ট (ডিএনসিসি ওয়ার্ড ১৬) থানা নিয়ে গঠিত। এখানে মোট ভোটার ৩ লাখ ৪৪ হাজার ৫০৭ জন।
নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত কামাল আহমেদ মজুমদার ভোট পেয়েছেন মাত্র ৩৯ হাজার ৬৩২টি। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মো. সামসুল হক পেয়েছেন ২ হাজার ৪৪টি। পল্লবী (ডিএনসিসি ওয়ার্ড ২, ৩, ৫, ৬) থানা নিয়ে গঠিত ঢাকা-১৬ আসন। এখানে মোট ভোটার ৩ লাখ ৮৮ হাজার ২৪১ ভোট। এ আসনে নৌকা নিয়ে নির্বাচিত মো. ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ ভোট পেয়েছেন ৬৫ হাজার ৬৩১টি। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ঈগল মার্কার স্বতন্ত্র প্রার্থী সালাহউদ্দিন রবিন পেয়েছেন ৬ হাজার ৩১৪ ভোট। গুলশান (ডিএনসিসি ওয়ার্ড ১৮-২০), ক্যান্টনমেন্ট (ডিএনসিসি ওয়ার্ড ১৫) থানা নিয়ে গঠিত ঢাকা-১৭ আসনের মোট ভোটার ৩ লাখ ২৩ হাজার ৯৩২ জন। আসনটিতে নৌকা নিয়ে জিতে আসা মোহাম্মদ আলী আরাফাত ভোট পেয়েছেন মাত্র ৪৮ হাজার ৫৯টি। ঢাকা-১৮ আসন উত্তরা (ডিএনসিসি ওয়ার্ড ১, ৪৪-৫৪), ক্যান্টনমেন্ট (ডিএনসিসি ওয়ার্ড ১৭), গুলশান (ডিএনসিসি ওয়ার্ড ৪৩) থানা নিয়ে গঠিত। এখানে মোট ভোটার ৫ লাখ ৮৮ হাজার ৫৪৯ জন। কিন্তু সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. খসরু চৌধুরী কেটলি প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন মাত্র ৭৯ হাজার ৮৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী এসএম তোফাজ্জল হোসেন ট্রাক প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৪৪ হাজার ৯০৯ ভোট।