NYC Sightseeing Pass
ঢাকা, রবিবার, এপ্রিল ২৭, ২০২৫ | ১৪ বৈশাখ ১৪৩২
ব্রেকিং নিউজ
জব্বারের বলীখেলায় আবারও চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লার ‘বাঘা’ শরীফ Bangladesh reaffirms commitment to fully Implement the CHT Peace Accord Kashmir Violence Conflict can be Solved Diplomatically or Needs a Retaliation Plan Against Pakistan ব্রেন স্ট্রোক পরবর্তী সময়ে সেরে ওঠার যুগান্তকারী ওষুধ আবিষ্কার নিউইয়র্কে প্রবাসীদের সাথে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের মত  বিনিময় নিজেকে রাজা-বাদশাহ ভাবছেন ট্রাম্প! ‘দাগি’ দেখতে কয়েদির বেশে সিনেমা হলে শতাধিক নিশো ভক্ত Attorney General James Wins Case Against Google for Monopolies in Digital Advertising নিউইয়র্কে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ সংবাদ সম্মেলন নানা অভিযোগ উত্থাপন : বাংলাদেশ রেমিট্যান্স মেলা  বয়কটের আহবান নিউইয়র্কের এস্টোরিয়ায় পুলিশের গুলিতে মানসিকভাবে অসুস্থ  এক ব্যক্তির মৃত্যু
Logo
logo

নিউ ইয়র্ক বাংলা বই মেলা- প্রবাসের মাটিতে আরেক বাংলাদেশ-- দেলওয়ার হোসেন


দেলওয়ার হোসেন প্রকাশিত:  ২৭ এপ্রিল, ২০২৫, ০১:৩০ পিএম

নিউ ইয়র্ক বাংলা বই মেলা- প্রবাসের মাটিতে আরেক বাংলাদেশ--  দেলওয়ার হোসেন

নিউ ইয়র্ক বাংলা বই মেলা- প্রবাসের মাটিতে আরেক বাংলাদেশ

দেলওয়ার হোসেন

বই প্রকাশনার জগতে মুক্তধারারার নাম কে না জানে । তারই কর্ণধার বিশ্বজিত সাহা সেই নামেরই সমার্থক আজ । তার সাথে আমার আলাপ-পরিচয় ছিল না । `৭১-এ সৈয়দপুরে গণহত্যা ও আমাদের পরিবারে ঘটে যাওয়া ঘাতক গোষ্ঠীর নৃশংসতার ঘটনা নিয়ে লেখা- ২০২২ এর একুশে বইমেলার শেষদিনে প্রকাশিত আমার বই ”৭১-এ সন্তান হারা এক মায়ের আত্মাহুতি, মোর নয়া মিয়া আর ফিরি আসপে না” নিয়ে ভাবছিলাম দেশের বাইরে পাঠকদের হাতে বইটি পৌঁছানোর বিষয়ে ।

মনে পড়লো বিশ্বজিত সাহার কথা। টেলিফোনে যোগাযোগ করলাম নিউ ইয়র্কে । সাগ্রহে সম্মতি দিয়ে বললেন, পাঠিয়ে দেন কিছু বই । সেইসাথে জানালেন জুলাইয়ের ২৮ তারিখ থেকে অনুষ্ঠেয় চার দিন ব্যাপী ৩১ তম নিউ ইয়র্ক বাংলা বই মেলার কথা । বই পাঠাতে গিয়ে ভিড়মি খেয়ে পড়লাম। ৩৬৮ পৃষ্ঠার ৫৬৪ গ্রাম ওজনের একটি বই ইউরোপ-আমেরিকা পাঠানোর খরচ দাঁড়ায় সর্বনিম্ন ২৪০০ টাকা। ভারতে ১৫০০ টাকা । মাথায় বাজ পড়লো । এমন ধারণা ছিল না আমার । কম মূল্যে পাঠানোর অনেক বিকল্প খোঁজার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলাম । অগত্যা মধু সূদন । বিশ্বদা কে জানালাম ।

তিনি তার কন্টেইনারের মাধ্যমে পাঠানোর কথা বললেন । তাতে কিছুটা সাশ্রয়ের সুযোগ পাওয়া গেল । প্রতি কেজি বই এক শ ডলার অর্থাৎ কম-বেশি এক হাজার টাকা । বিশ্ব দা ঢাকা থেকে বই নিয়ে যাওয়ার পর আবার যোগাযোগ করলাম । তিনি এক পর্যায়ে বই মেলায় যোগ দেয়ার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করলেন । বললেন- রথ দেখা, কলা বেচা দুটোই হবে । মেলায় অন্যান্য লেখক-প্রকাশক ও পাঠকদের সাথে সরাসরি মেশার সুযোগ হবে । বিষয়টি বেশ ইতিবাচক ভেবেই সিদ্ধান্ত নিলাম – বই মেলায় যাবো । জানালাম, আশির দশক থেকে ঢাকায় সাংবাদিকতায় জড়িত সহকর্মী বন্ধু নিউ ইয়র্ক প্রবাসী আকবর হায়দার কিরন ভাইকে । দুজনেই খুশি মনে স্বাগত জানালেন বই মেলায় ।

মেলা শুরুর তিনদিন আগে ২৫ জুলাই স্টকহোল্ম থেকে ফিনল্যান্ডের এয়ারলাইন ফিন এয়ার এর ফ্লাইটে রওয়ানা হলাম নিউ ইয়র্ক । সরাসরি এ ফ্লাইটে সাড়ে সাত ঘন্টায় পৌঁছে গেলাম গন্তব্যে । এ নিয়ে নিউ ইয়র্কে আমার দ্বিতীয়বার আগমন। প্রথম এসেছিলাম ২০১৯ এর ডিসেম্বরে কানাডার মন্ট্রিয়ল থেকে, মনোমুগ্ধকর আলোক সজ্জায় সজ্জিত ক্রিস্টমাস এর দিনে । সুইডেন বা গোটা ইউরোপই এমন মোহনীয় সাজে সজ্জিত হয় ক্রিস্টমাসে । তবে নিউ ইয়র্ক শহরের এই আলো ঝলমলে বাহার মনে হয়েছে অপরূপ । তাই নিউ ইয়র্ক বার বার আসার আকর্ষণ তো ছিলই । বই মেলার ছুতোয় সুযোগ ঘটলো দ্বিতীয়বার । তবে এই সুযোগে আরো একটা কথা বলে রাখি- নিউ ইয়র্ক শহর ছাড়া আরেক দেশের যে শহরটি আমার ভাল লেগেছে তা হলো – তুরস্কের ইস্তানবুল । চিত্ত জুড়ানোর মত প্রশান্তি দিয়েছে এই দেশ ও শহরটি আমাকে । তাই আমি নিয়মিতই আসি এই শহরে । স্বল্প মূল্যে ভ্রমণ, থাকা খাওয়া, পছন্দসই জিনিস পত্র ইচ্ছামত কেনাকাটার এক অপার আনন্দ- স্বস্তি ও স্বজন-বান্ধব এর মত নিশ্চিন্ত-নিরাপদ ও পরম স্বস্তিদায়ক পরিবেশ কার না ভালো লাগে ।

সেদিক থেকে যন্ত্রের মত ব্যস্ত মানুষের শহর নিউ ইয়র্ক এবং তারই মধ্যে আরেক বাংলাদেশ – জ্যাকসন হাইটস ও জ্যামাইকা বাংলাদেশ থেকে দূর প্রবাসে মনের গহীনে স্বজন বিচ্ছিন্ন থাকার মানসিক যন্ত্রণা, হাহাকার, একাকীত্ব বোধের বাসা বাঁধার সুযোগ অনুপস্থি বললেই চলে । বাঙ্গালির দৈনন্দিন জীবনে শোনিতের প্রবাহে এখানে নিরন্তর বইছে বাংলাদেশের মাটি, মানুষ ও জীবন প্রকৃতির উষ্ণ স্পন্দন । বেশি কিছু বর্ণনার সুযোগ নেই । শুধু এটুকু বললেই বোঝা যাবে – বাংলাদেশের মত গা ঘেঁষা দোকান-পাট, অলি-গলি, দোকান ও ফুটপাথে হাজার পণ্যের সাজানো-গোছানো পসার, গাড়ি- ঘোড়া, বেশুমার বাঙালি বা মানুষজনের সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিরামহীন আনা-গোনা, সরব উপস্থিতি, কোলাহল আর রাস্তার ওপর বা দোকানের সামনে মধুমাসে আম-কাঁঠাল ও নানান জাতের ফলমুলের বিপুল সমাহার কেউ এই শহরে না এসে ছবিতে দেখলেই নিউ ইয়র্কে খুঁজে পাবে বাংলাদেশকে ।

সরাসরি জ্যাকসন হাইটস এর কাছেই উড সাইডের পাশে উঠলাম কুইনস হোটেলে । বন্ধু-বান্ধব বা আত্মীয় স্বজনের বাসায় আতিথি হওয়ার আগ্রহ আমার স্বভাবে একেবারেই নেই । শত অনুরোধ সত্ত্বেও কারো অনুরোধের ঢেঁকি গিলি নাই । তবে হোটেলের একটা বিষয়ে বেশ খটকা লাগলো । সকালে নাস্তার ব্যবস্থা নেই । ইস্তানবুলের খুব সস্তা দরের মামুলি হোটেলগুলোতেও চোখ ধাঁধানো নাস্তার বিপুল সমাহার দেখেই প্রাণ জুড়িয়ে যায় । একটি উন্নত দেশের হোটেলে এই ব্যবস্থা না থাকা স্বাভাবিকভাবেই আমাকে বিস্মিত করেছে । দৈনিক ১২০ ডলার ভাড়ার এই হোটেলে নেই রুম সার্ভিস । হোটেল জুড়ে চীনা আদলের স্টাফগুলোর আচরণও গেস্ট বান্ধব নয় এবং অদক্ষ । সেবার মান নিম্ন পর্যায়ের । রুমের শাওয়ার সিস্টেম অদ্ভুত ও জটিল । বিশ্বের নাম্বার ওয়ান দেশের যে সবকিছুই উন্নত মানের, তা ভাবার কোন কারণ নেই । যা হোক – বই মেলায় যোগ দেয়ার আনন্দে এসব বিড়ম্বনা তেমন মনঃপীড়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়নি।

আগের মত এবার বই মেলা বাঙ্গালির মিলন মেলার প্রাণকেন্দ্র জ্যাকসন হাইটসে হয়নি । করোনা বিষয়ক জটিলতার কারণে এবার মেলা ২৮ জুলাই বৃহস্পতি, শুক্র ও রবিবার এই তিনদিন অনুষ্ঠিত হয়েছে দূরে জ্যামাইকা পারফর্মিং আর্টস সেন্টারে, দুপুর ৩টা থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত।তবে রবিবার ছিল ১২টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত । শনিবার দুপুর ১২টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত মেলার স্থান ছিল পাশেই জ্যামাইকা সেন্টার ফর আর্টস এন্ড লার্নিং ভবনে। এদিন আমি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারিনি বাঙালি রেস্টুরেন্টের খাবার খেয়ে পেটের পীড়া্য ভোগার কারণে ।

এছাড়া বাকি তিনদি্নের প্রতিটি অনুষ্ঠানেই যোগ দেয়ার সুযোগ হয়েছে । মেলার প্রথম স্থানটি ছিল বই মেলার জন্য একটি অত্যান্ত উপযোগী স্থান । বিশাল খোলামেলা প্রাঙ্গণ । শীততাপ নিয়ন্ত্রিত অত্যাধুনিক অডিটোরিয়াম । বিশাল মঞ্চ,কয়েক শত লোকের বসার আসন যুক্ত ভবনটি নানান অনুষ্ঠান সূচীর পর্বে বিভক্ত আয়োজন দুপুর এবং বিকেল হতে সমবেত স্বতঃস্ফূর্ত লোক সমাগমে ছিল পরিপূর্ণ । মেলা প্রাঙ্গণও ছিল তেমনই । যেন প্রবাসে বাঙ্গালির এক মিলন মেলা – নিউ ইয়র্কে আরেক বাংলাদেশ। আমার কাছে মনে হয়েছে, জনসংখ্যার অনুপাতে বাংলা একাডেমির বই মেলার যে আয়োজন এবং লোক সংখ্যা ও পাঠক-ক্রেতার সমাগম ঘটে, প্রেক্ষিত বিবেচনায় নিলে এই নিউ ইয়র্কের বই মেলা তার সমকক্ষ হবার গৌরব রাখে ।

মেলায় বাংলাদেশ থেকে যোগ দিয়েছিল স্বনামখ্যাত ১৩ জন প্রকাশক বা প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান- অংকুর, অন্বয়,অনন্যা,আকাশ, ইত্যাদি, কথা প্রকাশ, কাকলী, নালন্দা, প্রথমা বাতিঘর, সময়, স্বদেশ শৈলী এডরন এবং আমেরিকা থেকে মেলার আয়োজক মুক্তধারা, ঘুংঘুর, ইসলাম ইন্টারন্যাশনাল পাবলিকেশন্স, ছড়াটে, পঞ্চায়েত, বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব, কালের চিঠি ও তিন বাংলা । মেলায় দেশ-প্রবাসের নতুন ও পুরনো লেখক-লেখিকার বইয়ের সংখ্যা ছিল পাঁচ হাজার ।

উল্লেখযোগ্য খ্যাতিমান অতিথিদের মধ্যে ছিলেন পশ্চিম বঙ্গের কথা সাহিত্যিক অমর মিত্র, বাংলাদেশ থেকে ডঃ আনু মুহাম্মদ, বিরুপাক্ষ পাল, কবি আসাদ মান্নান, ডঃ হুমায়ুন কবির, শিল্পী লায়লা হাসান,শিল্পী রিজওয়ানা চৌধুরী বন্যা প্রমুখ ।

উদ্বোধনী দিনে অত্যাধিক তাপমাত্রায় গলদঘর্ম হয়ে নির্ধারিত সময়ের আগেভাগেই গিয়ে পৌছালাম মেলা প্রাঙ্গণে । শীততাপ নিয়ন্ত্রিত অডিটোরিয়ামের রিসিপশনে প্রবেশ করতেই চেয়ারে বসা চার গুণীজনকে পেয়ে গেলাম। তাদের মধ্যে ছিলেন বঙ্গবন্ধু গবেষক যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী খ্যাতিমান ব্যক্তিত্ব বীর মুক্তিযোদ্ধা ডঃ নুরুন্নবী , মেলার আহ্বায়ক জনাব গোলাম ফারুক ভূঁইয়াকে । সুইডেন থেকে মেলায় যোগ দিতে আসার কথা জেনে দুজনই অত্যান্ত আনন্দ চিত্তে সাদর অভ্যর্থনা জানালেন । পরে পেলাম বিশ্বজিত দা কে । তিনি বুকে জড়িয়ে ধরে তার অপার আনন্দ ও উচ্ছাস প্রকাশ করলেন । আমি একজন নিতান্তই অপরিচিত ও অখ্যাত মানুষ- ভীষণভাবে সম্মানিত বোধ করলাম । এই সম্মানটা আমি মেলার সাথে যুক্ত অনেকের কাছ থেকেই শেষ দিন পর্যন্ত পেয়েছি ।

মেলায় কানাডা, জার্মানি এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এসেছিলেন অসংখ্য কবি, লেখক, সাহিত্যিক, গবেষক ও বই প্রেমী । এদের অনেকেই এসেছেন তাদের প্রকাশিত বই নিয়ে । বই বিক্রীর আনন্দ যতটুকু ছিল, তার চেয়ে মেলায় যোগ দেয়ার আনন্দটাই যেন ছিল সবচেয়ে বেশি । কারণ বহু পরিচিত-অপরিচিত মানুষ, বন্ধু ও স্বজনের সাথে বহুদিন পর দেখা, কারো সাথে নতুন ভাবে পরিচিত হওয়া – যোগসূত্র তৈরির সুযোগ হওয়ার বিষয়টিই ছিল পরম আনন্দের । এমন সুযোগ তো মেলা ছাড়া আর অন্য কিছুতে ঘটে না । আমার ক্ষেত্রেও হয়েছে তাই । অনেক পরিচিতজন, বন্ধুর সঙ্গে দেখা হলো দীর্ঘ সময় পর – তিন দশকেরও বেশি সময় পর । তাদের মধ্যে রয়েছেন, রথীন্দ্রনাথ রায়, বেলাল বেগ, লায়লা হাসান, আকবর হায়দার কিরন, লুৎফর রহমান রিট্ন , জসিম মল্লিক, সালেম সুলেরী , জনকন্ঠের প্রাক্তন সহকর্মী দম্পতি মনিজা রহমান ও মনির হায়দার সহ আরো অনেকের সঙ্গে ।

নতুন যাদের সাথে পরিচয় ও অন্তরঙ্গতা হলো – সেই প্রাপ্তির মূল্য কি নিরূপণ করা যায় ? এছাড়া আমার এই বইয়ের সুবাদে মেলায় আগত মানুষেরা আমাকে এবং আমার বইকে চেনার-জানার এবং সামনা সামনি দেখার যে সুযোগ পেল তার কোন বিকল্প রাস্তা ছিল না । বিভিন্ন পর্বে নানা বিষয়ে মঞ্চে সম্মানিত আলোচকের প্যানেলে বসে বক্তব্য রাখার, নিজের অনুভুতি ও অভিজ্ঞতা বর্ণনা করার, নিজের স্বরচিত কবিতা পাঠ করার এবং অত্যান্ত স্বল্প পরিসরে নিজের বই সম্পর্কে দুটি কথা বলার যে সুযোগ দিয়ে আমাকে সম্মানিত করা হয়েছে, তা আমাকে এই মেলার কাছে ঋণী করে রেখেছে । লেখার উৎসাহ বাড়িয়েছে । আরো বই প্রকাশ ও মেলায় বার বার যোগ দেয়ার আগ্রহকে তীব্রতর করে তুলেছে ।

আমি লেখক নই । কবি নই । ছড়া, কবিতা, গল্প লিখি খেয়ালের বশে । সেগুলোর মান নিয়ে আমি নিজেই সন্দিহান । তাই নিজে ১৯৮০ সাল থেকে সাংবাদিকতা পেশায় বিভিন্ন মিডিয়ার সাথে যুক্ত এবং নিজের সম্পাদনায় সুইডেন থেকে দীর্ঘ পাঁচটি বছর একটি মান সম্পন্ন পত্রিকা বের করলেও খেয়ালের বশে লেখার স্তুপ থেকে আজ পর্যন্ত কোন লেখা ছাপানোর দুঃসাহস পাইনি- আদৌ ওসব মান সম্পন্ন কোন লেখা হয়েছে কি না , পাঠকের বিবেচনায় তা উত্তীর্ণ হবে কি না এই সংশয়ে ভোগার কারণে । তাই ধৃষ্টতা দেখাতে পারিনি নিজেকে লেখক, কবি, সাহিত্যিক হিসাবে আত্ম প্রকাশের ।

বই মেলার শেষ দিনে সম্মানিত প্যানেল আলোচকদের মধ্যে লেখক হিসেবে আমাকে বলতে বলা হয়েছিল `কেন লিখি` - সে বিষয়ে বেশিক্ষণ বলার সুযোগ না থাকলেও বলেছি এবং বলছি সোজা সাপ্টা ভাষায় – একটি মাত্র বই লিখে লেখক হওয়া যায় না, আর আমি নিজের নামের সাথে সেই পরিচয়ও যুক্ত করতে চাই না । বইটি লিখেছি শুধুমাত্র দায়বদ্ধতার কারণে । সেই দায়বদ্ধতার কথাই বলছি এখানে ।

আমার বাবা ছিলেন একজন স্বাধীনতাকামী দুর্মর চিত্তের অকুতোভয় মানুষ । কোলকাতায় পড়াশুনা করার সময় বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্যে গিয়ে ছাত্র রাজনীতির প্রতি উদ্বুদ্ধ হয়ে মেডিকেল কলেজে সক্রিয়ভাবে যুক্ত থাকেন । `৪৬- সালের দাঙ্গায় সহিংসতার বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে প্রতিরোধ কমিটি গড়ে তোলেন । তার মূল্য তাকে দিতে হয়েছে কড়ায় গন্ডায় । সেই ইতিহাস লেখা হয়েছে আমার বইয়ে ।

দেশ বিভাগের পর `৬৬ সালের ৬ দফা থেকে শুরু করে জাতির প্রতিটি ক্রান্তিকালে ধাপে ধাপে সংঘটিত আন্দোলন ও সংগ্রামে সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় পালন করেছেন সোচ্চার ভূমিকা । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলনের খবর জানার পর নিজে - আমাকে সঙ্গে নিয়ে দর্জির কাছে গিয়ে অনেকগুলো পতাকা তৈরি করে এনে এলাকার বাঙ্গালির ঘরে ঘরে বিতরণ করেন । এলাকায় ৮ মার্চ এই পতাকা উত্তোলন করা হয় আব্বার ডিসপেনসারি `জাহাঙ্গির মেডিকেল হল ও আমাদের সরকারি বাসার ছাদে্র ওপর । বঙ্গবন্ধুর অসহযোগ আন্দোলন এবং ৭ মার্চের ভাষণের নির্দেশনা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন আব্বা । ঘরের সামনে দুর্গ খুঁড়ে তোলা এবং প্রাণের ভয়ে বিহারি অধ্যুষিত এলাকা ছেড়ে - সংখ্যালঘু বাঙ্গালিদের বাড়ি-ঘর ত্যাগ করে নিরাপদ স্থানে চলে যাওয়া মানুষগুলোকে বাধা দিয়ে প্রতিরোধ যুদ্ধের জন্য সংগঠিত করার কাজে লিপ্ত হন ।

বাধা না শোনা মানুষগুলো বার বার বলেছেন, ডাক্তার সাহেব আপনি ভুল করছেন । এখানে থেকে আপনারা কেউ বাঁচতে পারবেন না । আব্বা প্রতিত্তুরে বলেছেন – আমি বিহারি রিফিউজিদের ভয়ে কাপুরুষের মত নিজের জন্ম ভিটা ছেড়ে পালাবো না । প্রয়োজনে স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করে শহীদ হবো । ইতিহাসের পাতায় আমাদের নাম থাকবে । কোন কাপুরুষের নাম থাকবে না । দেশের স্বাধীনতার জন্য লড়াইয়ের সুযোগ পৃথিবীতে দেশ বা মানুষের জীবনে হাজার বছরেও আসে না । কেবল ক্ষণজন্মা মানুষের জীবনেই আসে । আমি তো সেই বিরল ভাগ্য নিয়েই জন্মেছি । সেই জন্মের ঋণ তিনি শোধ করেছেন নিজের রক্ত দিয়ে । সে ইতিহাস কোথাও লেখা হয়নি । জীবিত তিন প্রজন্মের কেউ জানেও না সেই ইতিহাস । সৈয়দপুরে চার হাজারেরও বেশি মানুষের নৃশংস গণহত্যার ইতিহাসও তার সাথে চাপা পড়ে গেছে ।

স্বাধীনতার ৫০ বছর অতিক্রান্ত হাবার পরেও কারো এই ইতিহাস লেখার দায়বদ্ধতা জাগলো না । আমি অন্তত নিজের বাবার আত্নত্যাগের ইতিহাস লেখার ক্ষেত্রেও ছিলাম কুন্ঠিত। নিজের ইতিহাস নিজে কীভাবে লেখা যায় ? তার গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু হবে , এসব বিব্রতকর ও ইতস্তত ভাবনা চিন্তা থেকে লেখার কোন প্রয়াস আসেনি । বার বার ভেবেছি – নিজের কথা বলতে গেলেই দুর্মুখ জনেরা বলে বেড়াবেন – নিজের ঢোল নিজেই পেটাচ্ছে । মানুষ এভাবে নিজের ঢোল নিজে পেটায় কী করে ?

অবশ্য যুগের হাওয়া এখন পাল্টেছে। মানুষ এখন নিজের ঢোল নিজেই পেটায়। নিজের নামের আগে স্ব আরোপিত উপাধি, বিশেষণ নিজেই বসায় – ডক্টর, লেখক, কবি, সাংবাদিক, কলামিস্ট, বুদ্ধিজীবি, বিশ্লেষক ইত্যাদি ইত্যাদি । এসব দেখলেই মানসিক পীড়া অনুভব করি । তাহলে তা না করেও অন্তত লেখক সাজার কাজটা কীভাবে করি ?

বাড়িতে বড় বোন, বড় ভাই, মেঝ বোন লিখতেন নিয়মিত। সাইত্য ও সংস্কৃতি চর্চার সাথে জড়িত ছিলেন ওতোপ্রতোভাবে । দুই বোন - জাহানারা আপা ও ছবি আপা লিখতেন `বেগম` পত্রিকায় । তাদের লেখা গল্প, কবিতা , ছড়া ছাপা হতো । তা দেখে আমিও উদ্বুদ্ধ হয়ে ছড়া কবিতা লিখতাম । কিন্তু ছাপানোর দুঃসাহস হয়নি কখনও । বড় ভাই ছিলেন আরো এক ধাপ এগিয়ে । ছিলেন ছাত্র রাজনীতির সাথেও সক্রিয়ভাবে জড়িত । ছাত্র সংসদের নির্বাচিত নেতা .`৬৯ এর গণ অভ্যুত্থানে সিরাজুল আলম খান, তোফায়েল আহমদ, আব্দুর রাজ্জাক প্রমুখ এর ঘনিষ্ঠ সহচর । ছিলেন। ভালো ফুটবলার ও ক্রিকেটারও ছিলেন । অত্যান্ত সুদর্শন এই মানুষটি প্রচুর মঞ্চ নাটকে নায়কের চরিত্রে অভিনয় ছাড়াও চলচ্চিত্রেও সেই সুযোগ পেয়েছিলেন । হাতে লিখে দেয়াল ম্যাগাজিন বের করতেন । কিন্তু বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী হয়েও লিখেননি একটি বইও । তাই আমার মত চুনোপুটির দুঃসাহস আসবে কোত্থেকে ?

করোনায় যখন আক্রান্ত হলাম, তখন চৈতন্যদয় ঘটলো – পরিবারের ইতিহাসটা লেখা না থাকলে আমার সন্তান ও উত্তর প্রজন্ম জানবে কি করে এই ইতিহাস ? তাই প্রচণ্ড মানসিক পীড়ন, যন্ত্রণা ও নৈতিক দায়বদ্ধতার চাপ অনুভব করে সৃষ্টিকর্তার কাছে কিছুদিনের জন্য আয়ু ভিক্ষা চাইলাম , একটি বই যেন লিখে যেতে পারি অন্তত পরিবারের জন্য । পরিবারের কথা ভাবতে গিয়ে সামনে চলে এলো ৩০ লক্ষ শহীদ ও সম্ভ্রমহারা দুই লক্ষ মা-বোনের কথা । তাদের কথা কেন চাপা পড়ে থাকবে ? সৈয়দপুরে চার হাজার মানুষের গণহত্যার ইতিহাসই বা কেন আড়ালে থেকে যাবে ? গোটা দেশ ও জাতির ত্যাগের ইতিহাস কি বাদ দিয়ে খন্ডিত ইতিহাস লেখা যায় ?

ইতিহাসের এই পটভূমিতে শহীদ সন্তানের জন্য আমার দাদীর আত্মত্যাগের কথা কেন জানবে না আমার উত্তর প্রজন্মের বংশধর ও জাতি ! মানব দরদী বাবা সারা জীবন কেবল মানুষের কথাই ভেবেছেন। সমাজ দেশ ও জাতিকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতেন নেশাগ্রস্থের মত । নিজের ও পরিবারের কথা কখনই ভাবার সুযোগ তার হয়নি । আব্বার এই বিরল গুণের কারণে `৭১-এ আমরা গোটা পরিবার শত্রুপক্ষের হত্যাযজ্ঞের হাত থেকে উপকারভোগী বিহারির সাহায্যে বেঁচে গিয়ে, শত্রুর অত্যাচারে অর্ধমৃত প্রায় মাকে নিয়ে যখন গ্রামে পৌছালাম, তখন দাদীর প্রশ্ন - তার আদরের পরম প্রিয় প্রথম পুত্র সন্তান, যার নাম তিনি পরম আহ্লাদ করে রেখেছিলেন নয়া মিয়া, সেই বুকের ধন নয়া মিয়া (এম এ আজিজ সরকার) আসেনি কেন ? তার প্রাণপ্রিয় বুকের ্মানিক যে আর ফিরে আসবে না , ঘাতক তার ক্ষত-বিক্ষত লাশ এ ধরিত্রীর কোন মৃত্তিকায় দাফন করে অস্তিত্ব বিনাশ করেছে, তা কোনদিন বিশ্বাস করেননি দাদী ।

তার অন্ধ বিশ্বাস মানুষের নয়ন মণি, নয়া মিয়াকে কেউ মারতে পারে না । সে একদিন ফিরে আসবেই । এই আশায় সন্তানের শোকে কাতর মা সেইদিন থেকে আহার নিদ্রা ত্যাগ করে ঘরে মাটির মেঝেতে খড় ও কাঁথা বিছিয়ে তার ওপর বসে বারো মাস উপোস করে রোজা রেখে ইবাদত-বন্দেগি করে কাটালেন। তার মাঝেই তিনি একদিন দেখলেন আশার আলো, সেনাবাহিনীতে কর্মরত সুলতাম মামা ৭৪ সালের এক মাঝরাতে পাকিস্তানে বন্দি জীবন থেকে মুক্তি পেয়ে গ্রামে ফিরলেন । দাদী বুঝলেন, তার নয়া মিয়াও ফিরে আসবে একদিন এভাবেই । কিন্তু অবাস্তব আশা মরিচিকার মত শেষ পর্যন্ত তার সব আশাই গুড়ে বালি হয়ে গেল, যেদিন তিনি প্রথম তার নয়া মিয়াকে স্বপ্নে দেখলেন । নয়া মিয়া বলছেন – মা তুমি এখন আমার চিন্তা বাদ দিয়ে স্বাভাবিক জীবন যাপন করো । আমি তো আর ফিরে আসবো না মা । আমি আসার ক দিন পরেই জাহানারার মা (আমার মা) এত অত্যাচার, আঘাত সহ্য করতে না পেরে, আমার কাছে চলে এসেছে । আমি ছাড়া ওকে দেখবে কে ? তুমি ভালো থাকো মা । আমার এতিম সন্তানগুলোকে তুমি দেখো মা । সেজো চাচি সাজুর মার কাছে পরদিন এই স্বপ্নের কথা বর্ণনা করে বলেন –” মোর নয়া মিয়া আর ফিরি আসপে না, তো মুই আর বাঁচি থাকি কি করিম ”? পরদিন ভোরে বাড়ির কুয়োয় পাওয়া যায় দাদীর লাশ । প্রিয় সন্তানের জন্য দশ বছর অপেক্ষা করার পর প্রায় ৯০ বছর বয়সে তিনি দেন এই আত্মাহুতি ।

এই হলো সংক্ষেপে আমার বইয়ের পটভূমি । `কেন লিখি` এর জবাব দিতে গিয়ে এতটা বিস্তৃত ভাবে প্যানেল আলোচনায় বলার সময় ও সুযোগ ছিল না । তবে যতটুকুই অতি সংক্ষেপে বলা গেছে, তা শুনে বহুজন সহমর্মী , আবেগাপ্লুত ও অশ্রুসিক্ত হয়েছেন । পাশে উপবিষ্ট আলোচক লুৎফর রহমান রিটন বেশ পীড়িত চিত্তে জানালেন – দেল ওয়ার ভাই আপনি আমাকে কাঁদালেন । এই প্রতিক্রিয়া সরাসরি আমার কাছে ব্যক্ত করেছেন অনেকেই এবং বইটি কেনার ইচ্ছা প্রকাশ করেন তারা প্রত্যেকেই । এখান থেকেই আমি এই প্রথম লেখক হবার উৎসাহ পেলাম । সেই উৎসাহে একটি ময়ুর পালক যুক্ত হলো – যখন মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান গুণীজন ফেরদৌস সাজেদীন স্বগতভাবে জানালেন, আপনি তো ভাল বলেন। ভাল বক্তা না হলেও ভাল করার চেষ্টায় এটা আমার জন্য এক বড় প্রণোদনা । বাবার মত ডাক্তার হওয়া ও জনসেবার সাথে সম্পৃতক্ততাকে জীবনের ব্রত হিসেবে নেয়ার স্বপ্ন ব্যর্থ হওয়ায় লেখক, সাংবাদিক বা অন্য কোন পেশার প্রতি মনে প্রাণে আকৃষ্ট বা আত্মনিবেদিত হতে পারিনি তেমনভাবে ।

তবে বই মেলার এত প্রাপ্তির মাঝে কিছু অনুযোগ কষ্টের একটি জায়গা তৈরি করে দিয়েছে । বিশ্বজিত দা` র ওপর ভর করেই আমার মেলায় যোগ দেয়া । তাকে অনুরোধ করেছিলাম, অখ্যাত আমার এই বইটির প্রচারের দিকে একটু নজর দিতে । বিশেষ করে তিনি যখন অন্যান্য মুখ চেনাদের বই এর বিজ্ঞাপন ও প্রচার করছেন ফেস বুকে, তার সাথে আমার বইটিকেও স্থান দিতে । তার হাতে করা এই প্রচারের গুরুত্ব যে কতটা অপরিসীম তা আর ব্যাখ্যার অপেক্ষা রাখে না । সেটা হয়নি । তিনি আমার দেয়া পোস্ট গুলোই শেয়ার করেছেন মাত্র । তিনি অকল্পনীয় রকম ব্যস্ত, তা আমি নিজ চোখেই দেখেছি । তারপরেও তো কথা থেকে যায় । অল্প অল্প করে জমে ওঠা কষ্টগুলো হয় দুর্বহ । মনকে করে পীড়িত । কষ্টগুলো সহজে মুছে ফেলা যায় না । তবে অজানা, অচেনা অখ্যাত ব্যক্তি হিসেবে উপেক্ষার চিরাচরিত নিয়মটি মেনে নিলে বেদনাটা তীব্র হয় না । সেই বেদনাটা আবার ভুলিয়েও দিয়েছেন অবিশ্বাস্য রকমের ব্যস্ত, অসাধারণ কর্মবীর সবার প্রিয়জন বিশ্ব দা মেলা শেষের পরদিনে একটি অনুষ্ঠানে এসে। জ্যাকসন হাইটস এর নবান্ন রেস্তরার একটি হল রুমে আয়োজিত `ঘুংঘুর` এর গুণীজন মেলায় বিশ্ব দা ও গোলাম ফারুক ভুইয়া মেলায় যোগদানের জন্য আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বললেন, প্রতিবছর মেলায় আসতে হবে । ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এই বাংলা বই মেলাকে ছড়িয়ে দিতে হবে । সুইডেনেই বা কেন নয় – এই আশাবাদ প্রকাশ করে জানালেন- আমরাও আসবো সুইডেনে । তবে এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়- প্রিথিবীর যে দেশেই একজন বিশ্বজিত সাহা ও তার বিশাল করিৎকর্মা নিবেদিত প্রাণ কর্মী বাহিনী থাকলে অসম্ভব কিছুই নয় ।

প্রথম দিন মুক্তধারার স্টলে আমার বই ছিল না । স্টলে যে ব্যক্তিকে বসানো হয়েছিল, বই, লেখক, প্রকাশক বা এ সংক্রান্ত কোন ধারণাই ছিল না তার । অসংখ্য প্রশ্ন করেও তার কাছ থেকে কোন ইতিবাচক জবাব পাওয়া যায়নি । কতজন প্রকাশকের কতটা বই তার স্টলে আছে, কোন একটি বইয়ের দাম কত, নতুন কোন কোন লেখকের বই আছে …ইত্যাদি রকমের প্রশ্নের কোন জবাব ছিল না তার কাছে । দ্বিতীয় দিন স্টলে বই উঠলেও স্টলে গিয়ে অনেকেই তাকে জিজ্ঞেস করে বই পায়নি । তিনি বই ও লেখকের নাম জানেন না । মেলা প্রাঙ্গণে আমার আসার অপেক্ষায় বহু কৌতুহলী ক্রেতা ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করেছেন প্রাঙ্গণে বা স্টলের সামনে ।

তৃতীয় দিন স্টলে গিয়েও দেখি তথৈবচ অবস্থা । নিজের বই নিজেই খুঁজে পাই না । জিজ্ঞেস করেও সদুত্তর পাইনি । বলেছেন- বই আছে তো, দেখুন । পরে বই ঘাটতে গিয়ে দেখি তিনটি বইয়ের নিচে চাপা পড়ে আছে আমার বই । মেলার শেষদিনে বইয়ের ব্যাপক চাহিদা থাকা সত্বেও মেলায় বইয়ের সংখ্যা ছিল মাত্র হাতে গোণা কয়েকটি। নিমিষেই তা শেষ ।

এইদিনেই মেলার অধিবেশন মঞ্চে এসে হাজির হন বাংলাদেশ থেকে আগত মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব আব্দুল মোমেন । মঞ্চেই তিনি সানন্দে গ্রহণ করলেন আমার বই । পুরনো পরিচয়ের সূত্র ধরে বই ও জনকন্ঠে সাংবাদিকতা এবং তার লেখালেখি নিয়ে কিছু কথা বার্তা হলো । স্বাভাবিকভাবেই কৌতুহলী মানুষের দৃষ্টি পড়ে বইয়ের দিকে । বই কেনার চাহিদা আর বাদ পড়ে কীভাবে ?

আমার দেয়া নিয়মিত বিজ্ঞাপন ও নানান মাধ্যমে প্রচারের কারণে নিউ ইয়র্কে মুক্তধারায় বই পৌঁছার মাস দুয়েক আগে থেকেই আমেরিকার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বইটি সংগ্রহের ব্যাপারে অনেকে যোগাযগ করেন বিশ্বজিত দাদার সাথে । এ কথা তিনি নিজে এবং ফেসবুকে ব্যক্তিগতভাবে অনেকে আমাকে জানিয়েছেন তাদের আগ্রহের কথা । বিশ্ব দা বলেছেন, আপনার এই বই চলবে । প্রচুর পাঠকের আগ্রহ আছে বইটির প্রতি ।

তবে `কেন লিখি` এই প্রতিপাদ্য রেখে কিংবা বাদ দিয়ে যে বিষয়টির প্রতি বেশি গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন ছিল নতুন বা পুরনো লেখকদের কি কি বই এলো এবং তার বিষয়বস্তু কী তার ওপর বিশেষভাবে আলোকপাত ও আলোচনা করা । পাঠক এটা না জানলে এবং বুঝলে বই কিনবেন কীসের ওপর আগ্রহী হয়ে ? বিজ্ঞ মেলা কর্তৃপক্ষ পরবর্তী মেলার ক্ষেত্রে বিষয়টি বিবেচনায় নেবেন কি না, তার ভার থাকলো তাদেরই ওপর ।

স্টকহোল্ম,১১ আগস্ট, ২০২২

[email protected]