খবর প্রকাশিত: ২৮ এপ্রিল, ২০২৫, ০৭:১৪ এএম
প্রবাসে অনেক অনুস্ঠান হয় , কোন কোন দিন হয় একাধিক। একসময় তারিক মাহবুব ভাই মাঝে মাঝে অনুস্ঠান আয়োজন করতেন । বিশেষ করে মান্না দে, বন্যা আপা, মিতা হক, অপর্না সেন , ভুপেন হাজারিকাকে নিয়ে তারিক ভাইয়ের অনুস্ঠান আমাদের প্রবাস জীবনের অন্যতম স্মৃতিময় হয়ে আছে। বহুদিন তারিক মাহবুব ভাই , ডিসকো রেকর্ডিং এর শাহীন রহমান ভাই আর বেঁচে নেই । কিন্তু তাঁদের কথা বাকী জীবন ভুলবোনা।প্রায় আড়াই যুগ ধরে শোটাইমের ব্যানারে অসংখ্য এবং নিয়মিত অনুস্ঠান আয়োজন করে আসছেন প্রবাসের অত্যন্ত প্রিয় মুখ আলমগীর খান আলম। ঢালিউড এওয়ার্ডস, এনআরবি এওয়ার্ডস এর বিশাল আয়োজন করে চলেছেন অত্যন্ত নিপুন ভাবে। রুনা লায়লা ও সাবিনা ইয়াসমিনকে একই মন্চে দেখিয়ে ইতিহাস সৃস্টি করলেন তিনি। আইয়ুব বাচ্চু ও জেমস এর ঐতিহাসিক কনসার্ট করেছেন আলম ভাই। তাঁর ঢালিউড এওয়ার্ডস অনুস্ঠান এর সময় অনেক সময় ঢাকার সব তারকা ফাঁকা করে নিউ ইয়র্ক চলে আসে ।
আলমগীর খান আলম এবার একেবারে অন্যরকম অনুস্ঠানের আয়োজন করলেন। প্রবাসে জন্ম নেয়া , আমাদের চোখের সামনে বড় হওয়া জারিন মাইশাকে নিয়ে বিশেষ অনুস্ঠান । মাইশার বয়স চার তখন বাবা মা তাকে নিয়ে আসে বিপায়। সেই বাচ্চাটি নাচ, গান, আবৃত্তি- সবকিছু শিখতে শিখতে একটু একটু করে বড় হয়ে গেলো। বেশ ক’বছর আগে বিপা আয়োজন করেছিলো একক অনুস্ঠান। বছর চারেক আগে আমি ওর বিশেষ সাক্ষাতকার নিয়েছিলাম ভয়েস অব আমেরিকার জন্য। সরকার কবীর উদ্দিন ভাই বলেছিলেন ‘ মাইশার একটু আবৃত্তি কেন নিলেনা’ !
আলম ভাই এবার মাইশার একক অনুস্ঠান নিয়ে অন্যরকম হৃদয়ভরা স্নেহ ও মমতা নিয়ে আয়োজন করছিলেন। তিনি যেভাবে সবাইকে আন্তরিক ভাবে আমন্ত্রন জানিয়েছিলেন। ‘সুরের খেয়াল স্বর্ণালী সন্ধ্যা’ এই শীর্ষক অনুস্ঠানের অসাধারন ব্যাকড্রপ ডিজাইন করলেন বিখ্যাত শিল্পী রাগিব আহসান। সাইন্ড গিয়ারের সায়েমের চমৎকার সাউন্ড সিস্টেম যেন যথারিতী অসাধারন। আবীর আলমগীর মাইশাকে উপস্থাপন করতে গিয়ে প্রতিটি শব্দ যেন হৃদয় থেকে উচ্চারন করলেন। নিহার সিদ্দিকী অত্যন্ত ব্যস্ততার মাঝেও ছুটে এলেন এবং অত্যন্ত স্মরনীয় ছবি তুললেন জারিন মাইশার বিশেষ একক সংগীত সন্ধ্যায়।
মাইশার এই অনুস্ঠান নিয়ে আমার বিশেষ আশা, ভরসা, প্রত্যাশা ইত্যাদি নিয়ে। বৃস্টির দিন সময়মতো উবার আমায় নিয়ে আসলো কুইন্স প্যালেসে এবং সাথে ছিলেন কানাডা থেকে আসা আমার বিশেষ অতিথি, বিশিস্ট লেখক- সাংবাদিক জসিম মল্লিক। অনুস্ঠানে গিয়ে মনে হলো আমাদের নিউ ইয়র্ক শহরের সকল বিশিস্টজন এসেছেন এবং আসছেন। মনে হচ্ছিলে অন্যরকম অনুভুতি, চারদিকে ছুটে বেড়াচ্ছিলাম এবং স্বাগত জানাচ্ছিলাম। সবচেয়ে বড় মুরুব্বি সৈয়দ মোহাম্মদ উল্লাহ ভাইজান, নাসিম আপা আমার অনেক আগেই পৌছে গেছেন। কিছুক্ষন পর আর কোন ফাঁকা চেয়ার ছিলোনা দেখে মোস্তাকিম ভাই ( কুইন্স প্যালেস মালিক) আরও অনেক চেয়ারের আয়োজন করলেন ।
‘ও আমার বাংলা মাগো’ এই বিশেষ দেশাত্ববোধক গান দিয়ে শুরু করলো মাইশা। কানায় কানায় পরিপূর্ন মিলনায়তনে কি চমতকার সুনসান নীরবতা।
আমি কোন চেয়ারে না বসে সাউন্ড সিস্টেমের কাছের দেয়ালে দাঁড়িয়ে একটু একটু ভিডিও করছিলাম এবং হৃদয় দিয়ে ওর প্রতিটি উপস্থাপন। মনে হচ্ছিলো আমার সকল প্রিয় গান গাইছে মাইশা ‘ শূন্য এ বুকে আয় ফিরে আয় ফিরে আয়’। আমি বসার জন্য অনুরোধ এলেও দাঁড়িয়েই গান শুনছিলাম। কিন্তু কিছুক্ষন পর আলম ভাই যেন ভালোবেসে ধরে নিয়ে বসালেন একেবারে সামনের সারিতে- বিশিস্ট লোকজনদের পাশে। আমার বায়ে প্রিয় জাকারিয়া চৌধুরী, বেদারুল ইসলাম বাবলা, নাসির খান পল, মাহফুজুর রহমান মেহফুজ এবং ডান পাশে কৌশিক আহমেদ, সৈয়দ মোহাম্মদ উল্লাহ, সেলিমা আশরাফ, নিলোফার জাহান, এ্যানী ফেরদৌস এবং আরও বিশিস্টজন। আমি যেন একেবারে নড়চড় না করে প্রতিটি গান শুনছিলাম।আলমগীর খান আলম মাইশাকে ছোট্ট একটি ব্রেক দিয়ে কিছু অতিথিকে মন্চে ডাকলেন । আমাকে ডাকলেন শুনে কিছুটা অন্যরকম লাগলো। মাইকের হাতে নিয়ে শুধু বললাম ‘মাইশা মামনির জন্য আমার অনেক স্নেহ ও ভালোবাসা’!
মাইশার সাথে দু’টি গানে যোগ দিলো বিপার আরেকটি বিস্ময়কর প্রতিভা মাত্র সাড়ে ষোল বছরের আলভান চৌধুরী। এতো অল্প বয়সে কেউ এমন ম্যাচিউরড হতে পারে চিন্তাই করা যায়না। মাইশা প্রতিটি গানের শুরুতে ছোট্ট করে যা বলেছে তাও যেন অত্যন্ত পরিমিত এবং নিখুঁত উচ্চারনে। ওর বাবা মা কতো ঐকান্তিক প্রচেস্টায় এভাবে বাচ্চাটিকে বড় করেছেন । তাঁদের প্রতি অন্তহীন কৃতজ্ঞতা। মাইশার একক অনস্ঠান আয়োজন করলেন আমাদের প্রিয় আলম ভাই। তাঁর প্রতিও জানাই বিশেষ বিশেষ ধন্যবাদ। আশা ছিলো মাইশার অনুস্ঠানে একটি সুন্দর ফুলের তোড়া নিয়ে যাবো । কিন্তু বৃস্টি বাদল দিনে আমার আশা পুর্ন হলোনা ।
১ নভেম্বর , ২০২৩