ছাই উইয়ে মুক্তা,বেইজিং প্রকাশিত: ২৯ এপ্রিল, ২০২৫, ০২:০৭ এএম
চলতি বছর হলো যৌথভাবে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ তথা বিআরআই প্রস্তাব উত্থাপনের দশম বার্ষিকী। ১০ অক্টোবর চীনা রাষ্ট্রীয় পরিষদের তথ্যকার্যালয় “যৌথভাবে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগ বাস্তাবয়ন মানবজাতির অভিন্ন কল্যাণের সমাজ গড়ে তোলার গুরুত্বপূর্ণ অনুশীলন’ শীর্ষক এক শ্বেতপত্র প্রকাশ করে। শ্বেতপত্রে বলা হয়, দশ বছরে যৌথভাবে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগ বাস্তবায়নের ফলে গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক সাফল্য অর্জিত হয়েছে। এটি বিশৃঙ্খল বিশ্বে স্থিতিশীলতার প্রতীক।
শ্বেতপত্রে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগের ঐতিহাসিক উতৎস, ধারণাগত দৃষ্টিভঙ্গি, বাস্তবায়নের পথ, ব্যবহারিক সাফল্য এবং বৈশ্বিক তাতৎপর্য বর্ণনা করা হয়েছে। সার্বিকভাবে দশ বছরে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগ বাস্তবায়নের সাফল্যও এতে তুলে ধরা হয়। চীনের ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগের উচ্চমানের বাস্তবায়ন এবং বিভিন্ন দেশের সঙ্গে মানবজাতির অভিন্ন কল্যাণের সমাজ গড়ে তোলার গতিপ্রকৃতির সাথেও শ্বেতপত্রে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়।
চীনের জাতীয় উন্নয়ন ও সংস্কার কমিশনের উপপরিচালক রেন ছং লিয়াং এদিন আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, “বিগত দশ বছরে চীন-লাওস রেলপথ, জাকার্তা-বান্দুং দ্রুতগতির রেলপথ, হাঙ্গেরি-সার্বিয়া রেলপথ এবং পায়রা বন্দরের মতো বেশ কয়েকটি যুগান্তকারী প্রকল্পের বাস্তবায়নকাজ সম্পন্ন হয়েছে।
চীন-ইউরোপ রেলপথ ইউরেশিয়ায় স্থল-পরিবহন খাতে নতুন করিডোর যুক্ত করেছে। ‘রেশমপথ নৌপরিবহন’ ধারণা বিশ্বজুড়ে বাস্তবায়িত হয়েছে। ‘ছয়টি করিডোর ও ছয়টি রেলপথের বহুদেশীয় ও বহু বন্দর’ যোগাযোগের কাঠামো মৌলিকভাবে গড়ে তোলা হয়েছে। চীন অব্যাহতভাবে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগসংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে নীতি ও মানদন্ডগত সহযোগিতা জোরদার করে আসছে। আইসিইপি ১৫টি দেশে সার্বিকভাবে কার্যকর হয়েছে। চীন ২৮টি দেশ ও অঞ্চলের সঙ্গে ২১টি অবাধ বাণিজ্যচুক্তি স্বাক্ষর করেছে, ৬৫টি জাতীয় প্রমিতকরণ সংস্থা ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে ১০৭টি সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, এবং ১১২টি দেশ ও অঞ্চলের সঙ্গে দ্বৈত কর চুক্তি এড়ানোর চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
শিক্ষা, সংস্কৃতি, ক্রীড়া, পর্যটন, প্রত্নতত্ত্বসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের সহযোগিতাও গভীরতর হচ্ছে। ২০১৩ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত চীন ও সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর মধ্যে আমদানি-রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১৯.১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। এক্ষেত্রে বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৬.৪। পারস্পরিক বিনিয়োগের পরিমাণ ৩৮০০০ কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে চীন সরাসরি বিদেশে বিনিয়োগ করেছে ২৪০০০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি।”
শ্বেতপত্রে বলা হয়, বিগত ১০ বছরে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগ বিশ্বের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতে নতুন সুযোগ সৃষ্টি করেছে এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগের জন্য নতুন প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলেছে। এটি সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর উন্নয়নের সামর্থ্য বাড়িয়েছে ও জনগণের স্বার্থ নিশ্চিত করেছে। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক অর্থনীতি বিভাগের পরিচালক লি খ্য স্যিন প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, “‘এক অঞ্চল, এক পথ’ একটি আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা প্রস্তাব। দশ বছরে এটি ফলপ্রসূ হয়েছে।
‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগ ভূ- রাজনৈতিক খেলার পুরানো চিন্তাভাবনাকে অতিক্রম করেছে এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার একটি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এটি সত্যিকার অর্থে সকল দেশের মানুষের কল্যাণের একটি 'উন্নয়ন বেল্ট' এবং 'সুখী সড়ক'।”
উল্লেখ্য, এ পর্যন্ত ১৫০টিরও বেশি দেশ ও ৩০টিরও বেশি আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগে যোগ দিয়েছে।
সূত্র: ছাই ইউয়ে মুক্তা, চায়না মিডিয়া গ্রুপ।