NYC Sightseeing Pass
ঢাকা, সোমবার, জুন ১৬, ২০২৫ | ২ আষাঢ় ১৪৩২
ব্রেকিং নিউজ
বাংলায় কথা বললেই বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিতর্কিত তিন সংসদ নির্বাচনে জড়িতদের ভূমিকা তদন্তে কমিটি গঠনের নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার " ইসরায়েল আন্তর্জাতিক পারমাণবিক স্থাপনা আইন ভঙ্গ করেছে এবং শীর্ষ ইরানি বিজ্ঞানীদের হত্যা করেছে” ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের মধ্যে বৈঠক যুক্তরাষ্ট্রের ২০টি হলে শাকিব খানের ‘তান্ডব’র শুভ মুক্তি Iran Attack, a Foggy Peace and Truce Deal in Gaza - Dr Pamelia Riviere ফুলেল শুভেচ্ছায় অভিনন্দিত লায়ন শাহ নেওয়াজ পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনাসহ ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরাইল ভারতীয় বিধ্বস্ত উড়োজাহাজে কারও জীবিত থাকার সম্ভাবনা নেই বিয়ানীবাজারবাসীদের উদ্যোগে সাংবাদিক ও লেখক মুস্তাফিজ  শফি সংবর্ধিত
Logo
logo

শাহাজাদপুরে কবির মনের মন্দিরে…


এম আব্দুর রাজ্জাক প্রকাশিত:  ১৬ জুন, ২০২৫, ০২:৪০ পিএম

শাহাজাদপুরে কবির মনের মন্দিরে…

এম আব্দুর রাজ্জাক, বগুড়া থেকে :

শাহাজাদপুরে কবির মনের মন্দিরে…

 

‘ভালবেসে সখি নিভৃতে যতনে আমার নামটি লিখো

তোমার মনেরও মন্দিরে।।

আমারও পরাণে যে গান বাজিছে তাহার তালটি শিখো

তোমার চরণ মঞ্জিরে।।’

শাহজাদপুরের বিচ্ছেদ স্মরণ করে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন তাঁর বিখ্যাত ‘যাচনা’ কবিতাটি। বাংলার সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রবাদপ্রতিম পুরুষ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অফুরান অভিজ্ঞতার উৎস, বাংলাদেশ। এসেছিলেন জমিদারি করতে। কিন্তু কান পেতে শুনেছেন বাংলার মাটি-জল-হাওয়ার গল্প। শিলাইদহে পেয়ে বসেছিল, বাউলের সুরে মানুষ খোঁজার অন্বেষা। সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর তাঁকে দিয়েছে জীবনের অন্য স্বাদ। এখানে এসে পেয়েছেন আত্মোপলব্ধি। সেই উপলব্ধিই তাঁকে কাছে এনে দিয়েছে এখানকার প্রকৃতি আর মানুষকে।

কাছারি বাড়ির ইতিহাস : শাহজাদপুরের জমিদারি একসময় নাটোরের রানী ভবানীর নামে ছিল। ১৮৪০ সালে প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর নিলামে মাত্র তের টাকা দশ আনা দিয়ে জমিদারি কিনে নেন। এরপর থেকেই সেখানে শুরু হয় জোড়াসাঁকোর বিখ্যাত ঠাকুর পরিবারের কর্তৃত্ব। ১৮৯০ থেকে ১৮৯৭ সাল পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শাহজাদপুরে যাতায়াত ছিল। জমিদারি দেখাশোনার কাজে মাঝে মাঝে তিনি আসতেন এবং সাময়িকভাবে বসবাস করতেন।

১৮৯৭ সালে কবির বাবা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর জমিদারি ভাগাভাগি করে দিলে কাকা জ্ঞানেন্দ্রনাথ ঠাকুর শাহজাদপুর, বড় ভাই সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর শিলাইদহ এবং কবি নিজে পতিসরের দায়িত্ব পান। এরপর তিনি আর শাহজাদপুরে আসেননি। শাহজাদপুরের অংশ চলে যাওয়ার কয়েক মাস পরে ১৩০৪ সালের ৮ আশ্বিন রবীন্দ্রনাথ পতিসর যাওয়ার পথে তাঁর প্রিয় শাহজাদপুরে আর একবার এসেছিলেন। সেদিন তাঁর শাহজাদপুরের বিচ্ছেদ স্মরণ করে এখানে বসেই বৈষ্ণব কবিদের বিরহ-বিচ্ছেদের গানের অনুসরণে তাঁর বিখ্যাত সেই ‘যাচনা’ কবিতাটি লিখেছিলেন —

 

‘ভালবেসে সখি নিভৃতে যতনে আমার নামটি লিখো

তোমার মনেরও মন্দিরে।।

আমারও পরাণে যে গান বাজিছে তাহার তালটি শিখো

তোমার চরণ মঞ্জিরে।।’

কাছারি বাড়ির সৌন্দর্য : শাহজাদপুরের কাছারি বাড়িটি ইন্দো-ইউরোপীয় স্থাপত্যশৈলিতে নির্মিত ৩১ দরজা বিশিষ্ট একটি দোতলা ভবন। প্রায় দশ বিঘা জমির উপরে নির্মিত ভবনটির দৈর্ঘ্য ২৬.৮৫ মিটার এবং প্রস্থ ১০.২০মিটার এবং উচ্চতা ৮.৭৪ মিটার। ভবনটির প্রতিতলায় সিঁড়িঘর বাদে বিভিন্ন আকারের সাতটি ঘর রয়েছে। ভবনটির উত্তর-দক্ষিণে একই মাপের বারান্দা। বারান্দায় গোলাকৃতি থামের উপরাংশের অলংকরণ, বড়মাপের দরজা, জানালা ও ছাদের উপরের দেয়ালে পোড়ামাটির কাজ বিশেষভাবে লক্ষণীয়।ভবনটিতে রবীন্দ্রনাথের জীবনভিত্তিক আলোকচিত্র এবং ব্যবহৃত আসবাবপত্র নিয়ে রবীন্দ্র-স্মৃতি জাদুঘর করা হয়েছে। জাদুঘরটিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্যবহার্য সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে সোফা, পালকি, ঘুমানোর খাট, চায়ের কেটলি, লনটেনিস খেলার র্যা কেট, খড়ম, চিনামাটির জগ, চিনামাটির পানির ফিল্টার, পিয়ানো, শ্বেত পাথরের গোল টেবিল, চিঠি লেখার ডেস্কসহ বিভিন্ন ধরনের সামগ্রী।

জাদুঘরে ১৩০৭ বঙ্গাব্দের ২৮ ভাদ্রে লেখা শত বছরের পুরনো একটি চিঠি রয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা এই চিঠি জাদুঘরটিকে সমৃদ্ধ করেছে। চিঠিটি নওগাঁ থেকে সংগৃহীত।ভবনটির পশ্চিমে বকুল গাছের গোড়ায় বৃত্তাকার বাঁধানো একটি মঞ্চ আছে। এটি ‘রবীন্দ্র মঞ্চ’ বলে পরিচিত।

কবির সৃজনকর্ম : বড়াল বিধৌত শাহজাদপুরে তিনি যেন জীবনের নতুন, পূর্ণ এক ছবি। ১৮৯০ থেকে ১৮৯৭ সাল পর্যন্ত আট বছর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জমিদারি দেখাশোনার কাজে সাময়িকভাবে শাহজাদপুরে আসতেন, বসবাস করতেন। একটানা তিনি দুই মাস এখানে অবস্থান করেছেন। এখানে তিনি রচনা করেছেন অনেক উঁচুমানের সাহিত্য। এর মধ্যে রয়েছে সোনার তরী, চিত্রা, চৈতালী, কল্পনা।

ছোটগল্পের মধ্যে রয়েছে পোস্টমাস্টার, ব্যবধান, রামকানাইয়ের নির্বুদ্ধিতা, ছুটি, অতিথি। ছিন্ন পত্রাবলির মধ্যে ৩৮টি পত্রও এখানেই লিখেছিলেন কবি। নাটকের মধ্যে রয়েছে বিসর্জন, প্রবন্ধের মধ্যে পঞ্চভূত। কবি শিলাইদহ থেকে বজরায় বড়াল নদের রাউতারায় এসে সেখান থেকে পালকিতে চড়ে কাছারিবাড়িতে আসতেন। জলের মতোই শতত বহমান এ অঞ্চলের মানুষের জীবনে মিশে ছিল দারিদ্র্য। তিনি এই এলাকায় দুধ ও মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য গো-চারণভূমি, জলমহালগুলো বিনা পয়সায় এলাকার নিকারি সম্প্রদায় ও দরিদ্রদের মধ্যে প্রদান করেছিলেন। তাঁর পালকি বাহক আট বাগদি পরিবারকে দিয়েছেন থাকার জায়গা।

 

যেভাবে যাবেন :

 

ঢাকা থেকে বাস বা ট্রেনে সিরাজগঞ্জ যাওয়া যায়। সিরাজগঞ্জ থেকে শাহজাদপুরের দূরত্ব প্রায় ৪৫ কি.মি.। পাবনাগামী বাসে গেলে সরাসরি শাহজাদপুর নামা যাবে।