NYC Sightseeing Pass
Logo
logo

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে : সড়ক যোগাযোগের নতুন দিগন্ত


খবর   প্রকাশিত:  ৩০ এপ্রিল, ২০২৫, ১২:২৫ পিএম

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে : সড়ক যোগাযোগের নতুন দিগন্ত

মহাসড়কে চলাচলে নানা বিড়ম্বনা থেকে মুক্ত হয়ে বিরামহীনভাবে যান চলাচলের সুযোগ করে দিতেই নির্মিত হয়েছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। আগামী ২ সেপ্টেম্বর ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বিমানবন্দর থেকে তেজগাঁও হয়ে ফার্মগেট পর্যন্ত অংশ আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এটি চালুর পর বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত যেতে সময় লাগবে মাত্র ১০ মিনিট। যোগাযোগ খাতের বিশ্লেষকরা বলছেন, জনবহুল এই রাজধানীর জন্য উড়াল সড়ক সময়োপযোগী।  সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে করার উদ্দেশ্য যাদের নিরবচ্ছিন্ন যাতায়াত প্রয়োজন তাদের জন্য। বিশেষ করে পোশাক রপ্তানিকারকদের কনটেইনারবাহী ট্রাকগুলো গাজীপুর থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত যেন নির্বিঘ্নে চলে যেতে পারে- এই উদ্দেশ্যে এটি করা। পাশাপাশি নগরীর ভেতরে যারা দ্রুত যেতে চান, তারা ব্যবহার করবেন। তাদের জন্য বিমানবন্দর, ফার্মগেটসহ কয়েকটি ওঠানামার জায়গা রাখা হয়েছে।  এটি চালু হলে গাজীপুর, আশুলিয়া, টঙ্গিসহ রাজধানীর আশপাশের শিল্পাঞ্চলের রপ্তানি পণ্যবাহী যানবাহন এই উড়াল সড়ক ব্যবহার করে ঢাকার যানজট এড়িয়ে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরসহ গন্তব্যে যেতে পারবে সহজে। এতে সময় এবং খরচ দুই-ই বাঁচবে। পাশাপাশি রাজধানীবাসীও যানজট এড়াতে পারবেন এই সড়ক ব্যবহার করে। বিশ কিলোমিটার এই সড়কের ১১ কিলোমিটার অংশ এখন চালুর অপেক্ষায়।  রাজধানীর উত্তর অংশে গাজীপুর শিল্পাঞ্চল। বেশিরভাগ তৈরি পোশাক শিল্প এ এলাকায়। এসব রপ্তানি পণ্য রাজধানীর যানজট পেরিয়ে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরসহ নির্ধারিত গন্তব্যে যাওয়া ছিল বেশ ঝক্কির। তবে সেই কষ্টের দিন এবার ফুরাবে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। এই উড়াল সড়ক ধরে রাজধানীর চিরায়ত যানজট এড়িয়ে কম সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে রপ্তানি পণ্যবাহী যানবাহন।

 রাজধানীবাসীও নানামুখী সুবিধা পাবে এই উড়াল সড়কের। উত্তরা কিংবা এয়ারপোর্ট এলাকা থেকে কম সময়ে বনানী, তেজগাঁও, ফার্মগেট, কমলাপুরসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় যেতে উড়াল সড়ক ব্যবহার করতে পারবেন। ঢাকা বিমানবন্দর এলাকার কাওলা থেকে রেল লাইন ধরে কমলাপুর এবং কমলাপুর থেকে চিটাগাং রোডের কুতুবখালী পর্যন্ত এই উড়াল সড়ক প্রায় ২০ কিলোমিটার। এর মধ্যে কাওলা থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত সাড়ে ১১ কিলামিটার অংশ এখন যানবাহন চলাচলের জন্য প্রস্তুত।   এক্সপ্রেসওয়ের এই অংশে গাড়ি ওঠানামার জন্য ১৫টি র‌্যাম্পের মধ্যে উদ্বোধনের দিন থেকে ১৩টি জায়গা দিয়ে ওঠা বা নামা যাবে। যানবাহনের টোলের হারও চূড়ান্ত। প্রাইভেট কার, ট্যাক্সি, জিপ ও ১৬ সিটের মাইক্রোবাসের জন্য টোল ৮০ টাকা, ১৬ আসনের বেশি বাসের জন্য ১৬০ টাকা, মাঝারি ট্রাক ৩২০ টাকা এবং বড় ট্রাককে উড়াল পথ পার হতে ৪০০ টাকা টোল দিতে হবে। এই টোলহার এর চেয়ে কম দৈর্ঘ্যরে রাজধানীর হানিফ ফ্লাইওভারের চেয়ে তুলনামূলক কম। এক্সপ্রেসওয়েতে কম গতির কোনো যানবাহন চলবে না। টোলের হার ও মোটরসাইকেল চলতে না দেওয়াসহ নানা অপপ্রচার প্রসঙ্গে একজন পরিবহন বিশ্লেষক বলেন, সারা বিশ্বে এক্সপ্রেসওয়ের কিছু বৈশিষ্ট্য আছে, বাংলাদেশও তার বাইরে নয়।ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রথম অংশ চালুর পর আগামী বছর কুতুবখালী পর্যন্ত দ্বিতীয় অংশ চালু হবে বলে জানান প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।  টোলের হার : ঢাকার বিমানবন্দর সংলগ্ন কাওলা থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত অংশে চলাচলের যানবাহনগুলোকে চারটি শ্রেণিতে ভাগ করে টোল নির্ধারণ করেছে সরকার। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ১৯ আগস্ট সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এই টোলের হার ঘোষণা করেন। শ্রেণি-১ : প্রাইভেটকার, ট্যাক্সি, জিপ, ‘স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিক্যাল’, ১৬ সিটের কম মাইক্রোবাস এবং তিন টনের কম হালকা ট্রাকের ক্ষেত্রে টোল ৮০ টাকা। শ্রেণি-২ : ছয় চাকা পর্যন্ত মাঝারি ট্রাকের টোল ৩২০ টাকা। শ্রেণি-৩ : ছয় চাকার বেশি ট্রাকের জন্য টোল ৪০০ টাকা। শ্রেণি-৪ : ১৬ বা তার বেশি আসনের সব ধরনের বাসের টোল নির্ধারণ করা হয়েছে ১৬০ টাকা।   যে কারণে চলবে না মোটরসাইকেল : দুর্ঘটনার ঝুঁকি শূন্যে নিয়ে আসতে উচ্চগতির যানবাহনের জন্য নির্ধারিত এই পথে স্বল্পগতির বাহন যেকোনো থ্রি হুইলারের চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মোটরসাইকেলের মতো বাহনের চলাচল আপাতত নিষিদ্ধ করেছে সরকার।

পদ্মা সেতুতেও কিছু সময়ের জন্য মোটরসাইকেল নিষিদ্ধ ছিল। ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে মোটরসাইকেল অনুমোদিত। যদিও পৃথিবীর অনেক দেশেই এক্সপ্রেসওয়েতে মোটরসাইকেল নিষিদ্ধ। এমনকি প্রতিবেশী ভারতেও সব এক্সপ্রেসওয়েতে স্কুটার এবং মোটরসাইকেল নিষিদ্ধ।  সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এক্সপ্রেসওয়েতে মোটরসাইকেল চলবে না- এই নীতিটিই যেখানে সাধারণ হওয়ার কথা, সেখানে মোটরসাইকেল কেন চলবে না, এই প্রশ্নটি এনে সবকিছুকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিতর্কিত করা হচ্ছে। এক্সপ্রেসওয়েতে পথচারী চলাচলও অবাস্তব প্রশ্ন। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে ঢাকার প্রাণকেন্দ্র থেকে উত্তরাগামী যানবাহনগুলো সরাসরি চলে যেতে পারবে। ফলে এয়ারপোর্ট রোডে যানজট থাকবে না। দীর্ঘ সারিতে অপেক্ষায় থেকে সময় নষ্ট আর যানবাহন থেকে বায়ুদূষণের অবসান হবে।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ফার্মগেট পর্যন্ত হওয়ায় তা ফার্মগেটে যানজট বাড়াবে, এমন মিথ্যা আতঙ্ক জেনেবুঝে ছড়ানো হচ্ছে। সত্য হলো, ফার্মগেট সংলগ্ন বিজ্ঞান কলেজ থেকে এগিয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের জায়গায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ল্যান্ডিং, যা কোনোভাবেই ফার্মগেট মোড়ে জ্যাম সৃষ্টি করবে না। এই স্থাপনা তৈরিই হয়েছে ঢাকার যানজট কমানোর জন্য।  আর্থিক লাভ : ধারণা করা হয়, ঢাকায় প্রতি বছর যানজটে ১ লাখ কোটি টাকার ক্ষতি হয়। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এই ক্ষতির অন্তত ১০ শতাংশ কমাবে বলে অনেকে মনে করছেন। পণ্যবাহী ট্রাকগুলোকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে যেভাবে অপেক্ষা করতে হয় এবং অনেক সময় পচনশীল দ্রব্য ঝুঁকিতে পড়ে, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালু হওয়ায় সেই পরিস্থিতি থাকবে না। পণ্যবাহী ট্রাকগুলো নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে। সময় বাঁচবে এবং ভোগান্তি কমবে, যার অর্থনৈতিক মূল্য আছে। সময়, ভোগান্তি ও অনিশ্চয়তা কমে যাবে।