খবর প্রকাশিত: ৩০ এপ্রিল, ২০২৫, ০৬:৪৪ এএম
এ লাইন আগেও বহুবার লেখা হয়েছে। দুই পক্ষই অনড়। এবারো সেই একই দৃশ্যপট। চেনা ছকেই হাঁটছে আওয়ামী লীগ। আরেকটি একতরফা নির্বাচনের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে বিএনপি। ঘোষণা করেছে এক দফা। সংঘাত গড়িয়েছে রাজপথে। লক্ষ্মীপুরে নিহত হয়েছেন বিএনপি সমর্থক। মামলা ও ধরপাকড় শুরু হয়েছে নতুন করে। এরইমধ্যে শিরোনামে উঠে এসেছেন হিরো আলম। স্টেট ডিপার্টমেন্ট, জাতিসংঘ পর্যন্ত গড়িয়েছে তার ইস্যু। বিবৃতি এসেছে ১২ দূতাবাস থেকে। এসব তৎপরতার কঠোর সমালোচনা করেছে সরকার। সরব হয়েছেন মন্ত্রীরা। ঘটনা এখানেই শেষ হয়নি। অনেকটা নজিরবিহীনভাবে জাতিসংঘের প্রতিনিধিকে ডেকে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। মেসেজ লাইড অ্যান্ড ক্লিয়ার। কঠোর অবস্থান নিবে সরকার। পশ্চিমা কূটনীতিকদের বার্তাও অবশ্য স্পষ্ট। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় নিযুক্ত বৃটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক ওবায়দুল কাদের এবং মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে দেখা করে অবস্থান জানিয়েছেন। চাওয়া অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। আলোচনায় এসেছে সাম্প্রতিক রাজপথের দৃশ্যপটও।
কোনো কোনো বিশ্লেষক মনে করেন, আগামী ৫-৬ মাস হবে বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে সবচেয়ে ঘটনাবহুল। সেই অধ্যায়ে ইতিমধ্যে রাজনীতি প্রবেশ করেছে। এক দফা ঘোষণার পর বিএনপি’র পদযাত্রা কর্মসূচিকে মামুলি হিসেবেই মনে করা হচ্ছিল। কেউ কেউ এ ধরনের কর্মসূচির কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্নও তুলেছিলেন। কিন্তু পদযাত্রা ঘিরেই রাজনীতিতে উত্তেজনা চরমমাত্রায় পৌঁছেছে। পাল্টা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে রয়েছে আওয়ামী লীগ। মারমুখী দুই পক্ষই। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিএনপি নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র করছে। এজন্য ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি পালন করছে। অন্যদিকে, বিএনপি বলছে, কোথাও তারা আগ বাড়িয়ে আক্রমণ করছে না। আক্রান্ত হলেই কেবল প্রতিরোধ করছে। মার্কিন ভিসা নীতি ঘোষণার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ছিল বেশ সংযত। তবে বিরোধীদের সর্বশেষ কর্মসূচিতে এতে পরিবর্তন দেখা গেছে। প্রশাসন এবং পুলিশে এরইমধ্যে ব্যাপক রদবদল করা হয়েছে। অনেকে বলছেন, নির্বাচনকে সামনে রেখেই এটা করা হয়েছে। এক দফা ঘোষণার পর বিএনপি ইতিমধ্যে প্রথম দফার কর্মসূচি শেষ করেছে।
গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্যরা পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করেছেন। পদযাত্রা কর্মসূচিতে বিশেষত ঢাকায় বিপুলসংখ্যক মানুষের উপস্থিতি বিএনপি’র শীর্ষ নেতৃত্বকে আশান্বিত করেছে। সরকার কেন হঠাৎ হার্ডলাইনে চলে গেল বিএনপি’র শীর্ষ নীতিনির্ধারকরা সেটাও বোঝার চেষ্টা করছেন। আজ ঢাকায় বিএনপি’র সহযোগী সংগঠনগুলোর তারুণ্যের সমাবেশ রয়েছে। এ সমাবেশে রেকর্ড সংখ্যক উপস্থিতির প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। দ্রুতই বিএনপি পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবে। দলটির একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এখন বিএনপি’র প্রধান টার্গেট হচ্ছে যত বেশি সম্ভব মানুষ রাজপথে জড়ো করা এবং বিরতিহীনভাবে রাজপথে থাকা। আগে কর্মসূচির ক্ষেত্রে গ্যাপ থাকলেও এবার তা থাকছে না। ঢাকা কেন্দ্রিক কর্মসূচি আরও জোরদার করবে দলটি। গত কয়েক মাস ধরে আওয়ামী লীগও বিএনপি’র পাল্টা কর্মসূচি পালন করে আসছে। ক্ষমতাসীন দল কিছুতেই রাজপথের নিয়ন্ত্রণ ছাড়তে নারাজ।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতিমধ্যে শরিক দলগুলোকে রাজনৈতিক ও নির্বাচনী বার্তা দিয়েছেন। শরিক দলের নেতারা বলছেন, তারা এখন নির্বাচনী প্রস্তুতি নেয়া শুরু করবেন। আগামী ৩০শে জুলাই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বর্ধিত সভা আহ্বান করা হয়েছে। ওই সভায় দলের জেলা-উপজেলার নেতাদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এ সভাতেই সব পর্যায়ের নেতাদের নির্বাচনী বার্তা দেয়া হবে। সংলাপ-সমঝোতা নিয়ে গেল কয়েক মাসে টুকটাক কথা শোনা গেছে। তবে হঠাৎ এসব আলোচনা একদমই মিইয়ে গেছে। দুই পক্ষের মধ্যে কোনো ধরনের সমঝোতার সম্ভাবনাই যেন আর দেখা যাচ্ছে না।
তবে রাজনীতির এই সমীকরণ এখন আর কেবল আওয়ামী লীগ বা বিএনপি’র বিষয় নয়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও জড়িয়ে গেছে এতে। বলা হচ্ছে, বাংলাদেশের ইতিহাসে অতীতে কোনো নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক বিশ্বের এতটা আগ্রহ ছিল না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা বিশ্ব বাংলাদেশে একটি অবাধ ও স্বচ্ছ নির্বাচনের পক্ষে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। এ নিয়ে কিছু পদক্ষেপও নিয়েছে। অন্যদিকে, চীন এবং রাশিয়া নির্বাচনকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় মনে করে। দেশ দুটি এ ব্যাপারে খোলাখুলিই পশ্চিমা দেশগুলোর সমালোচনা করেছে। ভারত অবশ্য এখন পর্যন্ত প্রকাশ্যে অবস্থান নেয়নি। বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিদেশিদের অবস্থানের গুরুত্ব কতোটা?
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘বিদেশি চাপ নিশ্চয়ই কর্মীদের উৎসাহিত করে। এটা অস্বীকার করার কিছু নেই। কিন্তু সেটার ওপর আমরা নির্ভরশীল নই। আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি জনগণের শক্তিকে একত্রিত করার ওপর।’ হার্ডলাইনে সরকার। একতরফা নির্বাচনের ছক। বিরোধীদের মরিয়া আন্দোলন। ফের সংঘাতময় রাজনীতি। মুখে মুখে সবারই চাওয়া অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। তাহলে গলদটা কোথায়? তত্ত্বাধায়ক সরকার ছাড়া অবাধ নির্বাচন কি সম্ভব? বিদেশি চাপ কি আগামী দিনের রাজনীতির গতিপথ ঠিক করে দিবে? সরকার এ চাপ উপেক্ষা করার নীতি গ্রহণ করেছে। তাহলে ফয়সালা রাজপথেই? দৃশ্যত রাজনীতি ফের অনিশ্চিত পথেই যাত্রা শুরু করেছে।