NYC Sightseeing Pass
ঢাকা, সোমবার, এপ্রিল ২৮, ২০২৫ | ১৫ বৈশাখ ১৪৩২
Logo
logo
নির্বাসিত লেখক তসলিমা নাসরিন অন্যতম আকর্ষণ ছিলেন

অব্যবস্থাপনার বাঙালিয়ানায় ভরা ছিল ৪৩তম বঙ্গ সম্মেলন


খবর   প্রকাশিত:  ২৮ এপ্রিল, ২০২৫, ০৩:১৯ পিএম

অব্যবস্থাপনার বাঙালিয়ানায় ভরা ছিল ৪৩তম বঙ্গ সম্মেলন

  ঐতিহ্যের সাথে আগামী সম্ভাবনার সমন্বিত উত্তরণ খোঁজার মধ্য দিয়ে তিন দিন ব্য্যাপী উত্তর বঙ্গ সম্মেলন শেষ হয়েছে। নানা অব্যবস্থাপনা ও বিশৃংখলার দায় স্বীকার করেও আয়োজকরা সম্মেলনকে সফল উল্লেখ করে সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। ৩০ জুন শুক্রবার বিকেলে শুরু হওয়া সম্মেলন শেষ হয়েছে ২ জুলাই রোববার মধ্যরাতে। নিউজার্সির সমুদ্রপাড়ের শহর আটলান্টিক সিটির বিখ্যাত জিম হোয়েলান মিলনায়তনে বসেছিল উত্তর আমেরিকায় বাঙ্গালীদের বৃহত্তম এ সম্মেলন। অংশগ্রহণে পশ্চিমবঙ্গের বাঙ্গালীদের প্রাধান্য থাকলেও বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশীরা যোগ দিয়েছেন এ সম্মেলন। বাংলাদেশীদের উপস্থাপনাও ছিল বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। বাংলাদেশীদের মধ্য দিয়েই বাংলা বেঁচে থাকবে, এমন কথাই উচ্চারিত হয়েছে সম্মেলন জুড়ে।  অব্যবস্থাপনা থাকলেও লোকজন সহিংস হয়ে উঠেননি। ধৈর্য ধরেই অধিকাংশ লোকজন তাদের বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। রেজিস্ট্রেশন, আবাসিক ব্যবস্থাপনা, খাবার বিতরণ, প্রোগ্রাম সূচী সহ সর্বত্রই নিজেদের সীমাবদ্ধতার বিষয়টি প্রকাশ করেছেন উদ্যোক্তারা। এজন্য দায়ও নিয়েছেন তাঁরা। শেষপর্যন্ত আনন্দ উৎসবের সফল সমাপ্তির জন্য তাঁরা সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতাও জানিয়েছেন।   নির্বাসিত লেখক তসলিমা নাসরিন ৪৩তম বঙ্গসম্মেলনের অন্যতম আকর্ষণ ছিলেন। শনি ও রোববার বেশ কিছু আলোচনায় তসলিমা নাসরিনই ছিলেন মুখ্য আলোচক। কবিতা পড়েছেন। আলোচনা করেছেন। তাঁকে নিয়ে আলোচনা হয়েছে বিস্তর। ১ জুলাই শনিবার তসলিমা নাসরিন কবিতা পড়ছিলেন। ফাঁকে ফাঁকে দেশের জন্য তাঁরা হাহাকার আর লড়াইয়ের কথা বলছিলেন। এসময় সমস্ত দর্শক দাঁড়িয়ে তসলিমার দেশে যাওয়ার অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার আকুতিকে সংহতি জানালে আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। তসলিমা নাসরিন বলেছেন, লেখার জন্যই আজ তাঁর কোন দেশ নেই। নিজের দেশের জন্য তিনি লড়াই চালিয়ে যাবেন বলে বলেছেন।  বাংলাদেশী প্রতিষ্টানগুলোর মধ্যে প্রথম আলো উত্তর আমেরিকা, ঘুংঘুর, বাংলাদেশ একাডেমী অফ ফাইন আর্টস সহ অন্যান্যদের উজ্জ্বল উপস্থিতিতি ছিল। বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর স্টলেও ছিল উপচে ভরা ভিড়। নিউইয়র্কের মুক্তধারার স্টলকে ঘিরে বাংলাদেশীরা সর্বক্ষণ উপস্থিত ছিলেন। দুই বাংলার লেখকদের বই কিনেছেন লোকজন লাইন ধরে। লিয়া শাড়ি সহ শাড়ি চুড়ির দোকানেও ছিলো সার্বক্ষনিক ভিড়। মেলামেলা ভাব ছিল সম্মেলন ঘিরে।     উত্তর আমেরিকার ৪৩ তম বঙ্গ সম্মেলনে শীর্ষ পৃষ্টপোষক ছিলেন বাংলাদেশী আমেরিকান ধনাট্যজন কালী প্রদীপ চৌধুরীর কে পি সি গ্রুপ। ব্যববহুল অনুষ্ঠানমালায় অর্থ সংগ্রহে টানাটানি চোখে পড়েছে। একদিনের জন্য মুল মিলনায়তন বাতিল হয়েছে। বহু অনুষ্ঠান ছেটে ফেলতে হয়েছে। বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে কথা দিয়েও উদ্যক্তারা মঞ্চে পারর্ফম করতে দিতে পারেননি। ফলে বিক্ষুব্ধ লোকজন সরব প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন মাঝে মধ্যে। পুলিশের হস্তক্ষেপও দেখা গেছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য। বাংলাদেশী শিল্পী চঞ্চল চৌধুরী এবং মেহের আফরোজ শাওনকে নির্ধারিত সময়ে মঞ্চে উপস্থাপন করতে পারেননি আয়োজকরা। রোববার দুপুরে তাঁরা মঞ্চে আসেন। দর্শক অল্প হলেও তাঁরা মাতিয়ে রেখেছিলেন দর্শকদের। শনিবার রাতে সবার আকর্ষণ ছিল বর্তমান সময়ের ভারতীয় জনপ্রিয় শিল্পী জাভেদ আলীর পারর্ফমেন্স। দশ হাজারের বেশি ধারণ ক্ষমতার মিলনায়তনে তিন হাজারের মতো দর্শক উপস্থিত ছিলেন। জাভেদ আলী দর্শকদের ধরে রেখেছেন প্রায় মধ্য রাত পর্যন্ত। শেষ দিনে সনু নিগম দর্শক কাঁপানো অনুষ্ঠান করেছেন। সনু নিগমের পার্ফরমেন্সের মধ্য দিয়ে সমস্ত আমেরিকা থেকে এবং আমেরিকার বাইরে থেকে বঙ্গ সম্মেলনে যোগদান করা লোকজন ফিরে গেছেন পরবর্তী সম্মেলনে যোগদানের আকাংখা নিয়ে।     সাহিত্য সংস্কৃতির আলোচনা ছাড়াও বঙ্গ সম্মেলনে চিকিৎসা বিষয়ক সেমিনার ছিলো গুরুত্বের। সেখানে কথা বলেছেন অধ্যাপক ডাঃ জিয়াউদ্দিন আহমেদ। জিম হোয়েলান মিলনায়তনের একাধিক কক্ষে টানা অনুষ্ঠান চলছিল। যাত্রা পালা থেকে শুরু করে বিখ্যাত সব লোকজনের উপস্থিতই ছিল সম্মেলনের মুল আকর্ষণ। পদ্মভূষণ অজয় চক্রবর্তী, পণ্ডিত তেজেন্দ্র নারায়ণ মজুমদার, পণ্ডিত আনিন্দ চ্যাটার্জি, কবি সুবোধ সরকার , বাংলা ব্যান্ড ক্যাকটাস, জনকণ্ঠে নজরুল, শুভন সুন্দর বসু, দুলাল লাহিড়ী, সুমিত্রা মিত্র প্রমুখ ব্যক্তি ও সংগঠন  মাতিয়ে রেখেছেন শেষের দুইদিন।