সালাহউদ্দিন আহমেদ প্রকাশিত: ২৮ এপ্রিল, ২০২৫, ০৯:২৬ পিএম
আলবেনী থেকে ফিরে সালাহউদ্দিন আহমেদ:
বাংলাদেশী আমেরিকান
এডভোকেসী গ্রুপ (বাগ)-এর নবম লেজিসলেটিভ ডে-তে নতুন মুখ
আর নতুন প্রজন্মের অংশগ্রহণে তাদের নতুন অভিজ্ঞতার সৃষ্টি হয়েছে।
মূলধারার রাজনীতি তথা আমেরিকান রাজনীতি কিভাবে পরিচালিত হয়,
স্টেটের অ্যাসেম্বলী ও সিনেট অধিবেশনে কি হয়, জনপ্রতিনিধিদের
কাজ কি, প্রবাসে দেশের রাজনীতির আদৌ প্রয়োজন আছে কি নেই,
কমিউনিটির কল্যাণে কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ কি ভূমিকা রাখতে
পারেন এমন নানা প্রশ্নের উত্তর পেয়ে লেজিসলেটিভ ডে-তে
অংশগ্রহণকারী নতুন মুখ আর নতুন প্রজন্ম উৎসাহিত, পাশাপাশি
বাগ’র উদ্যোগের প্রশংসায় পঞ্চমুখ তারা। অপরদিকে লেজিসলেটিভ
ডে’র মূল কর্মসূচী ষ্টেট অ্যাসেম্বলী ও সিনেট সদস্যদের সাথে বাগ
প্রতিনিধিদের সরাসরি দাবী-দাওয়া নিয়ে আলোচনা এবং দাবীর স্বপক্ষে
যুক্তি শুনে জনপ্রতিনিধিরা তাঁদের সমর্থন ব্যক্ত করেছেন। বলেছেন,
দাবী-দাওয়াগুলো বাস্তবায়নের দাবী রাখে এবং এসব বাস্তবায়নের জন্য সময়
প্রয়োজন। তবে তারা সংশ্লিস্ট বিভাগের চেয়ার আর সহকর্মী
জনপ্রতিনিধিদের সাথে আলাপ-আলোচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ
নেয়ার আশ্বাস ব্যক্ত করেছেন। উল্লেখ্য, নিউইয়র্ক ষ্টেট জুড়ে শিক্ষা
প্রতিষ্ঠানে দুই ঈদে ও দিওয়ালী-তে ছুটি এবং হালাল খাবার সরবরাহ,
ট্যাক্সি প্রটেক্টশন অ্যাক্ট সহ ৯টি দাবীর বিষয়ে জনপ্রতিনিধিদের দৃষ্টি
আকর্ষন করা হয়।
যেভাবে শুরু হলো কর্মসূচী: নিউইয়র্কের রাজধানী আলবেনীর
ক্যাপিটাল ভবনে মঙ্গলবার (২৩ মে) দিনব্যাপী লেজিসলেটিভ ডে’র
কর্মসূচী নিয়ে সরগম ছিলেন বাগ প্রতিনিধিরা। এতে প্রায় ১০০
প্রতিনিধি যোগ দেন। নিউইয়র্ক সিটি থেকে দুটি বাসযোগে
তারা আলবেনীতে যাতায়াত করেন। সকাল ১১টায় প্রেস কনফারেন্সের
মাধ্যমে কর্মসূচী শুরু হয়। এতে সিনেটর রবার্ট জ্যাকসন ও সিনেটর
নাটালিনা ফারনান্দেজ বক্তব্য রাখেন। এছাড়া বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু জাফর
মাহমুদ ছাড়াও বাগ প্রতিনিধিদের মধ্যে সভাপতি জয়নাল আবেদীন,
সাধারণ সম্পাদক শাহানা মাসুম, কেয়ার নিউইয়র্কের সিস্টার আফাফ
এবং নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধি মাহতাব খান বক্তব্য রাখেন। পরবর্তীতে
বাগ প্রতিনিধিরা বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত হয়ে জনপ্রতিনিধিদের সাথে
তাদের অফিসে গিয়ে সরাসরি দাবী-দাওয়া নিয়ে কথা বলেন।
অ্যাসেম্বলী ও সিনেট হাউজে দাবী উত্থাপন: বেলা আড়াইটার দিকে
অ্যাসেম্বলী হাউজে অ্যাসেম্বলীম্যান জোহরান কে মামদানী এবং বিকেল
৪টার দিকে সিনেট হাউজে সিনেটর রবার্ট জ্যাকসন বাগ
প্রতিনিধি ও প্রবাসী বাংলাদেশীদের উপস্থিতিতে দাবী-দাওয়ার পক্ষে
প্রস্তাব উত্থাপন করেন।
দাবী-দাওয়া: এবারের দাবী-দাওয়াগুলোর মধ্যে যে বিষয়গুলো সিনেট ও
অ্যাসেম্বলীতে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে-
মুসলিমসহ দক্ষিণ এশিয়ার সকল ধর্মীয় জনগোষ্ঠির প্রধান প্রধান
ধর্মীয় উৎসবে স্কুল ছুটি ঘোষণা, পাবলিক স্কুলগুলোতে হালাল খাবারের
ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, ট্যাক্সি চালকদের নিরাপত্তা বিধান করা, ক্ষুদ্র শিল্প
প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের মজুরি বাড়ানো, মুসলিম আমেরিকান
অ্যাডভাইজারি কাউন্সিল গঠন, বিভিন্ন পেশার কর্মীদের ন্যুনতম
মজুরি বাড়ানো, নির্বাচনের ভোটগ্রহণের দিন গোটা ষ্টেটে ছুটি
ঘোষণা।
সমাপনি অনুষ্ঠান: বিকেলে ক্যাপিটাল ভবনের ১০৪এ হলে অনুষ্ঠিত
সমাপনী পর্বে কমিউনিটির বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখার জন্য
বিভিন্ন জন ও প্রতিষ্ঠানকে অ্যাওয়ার্ড ও প্রশংসাপত্র বিতরণ করা হয়।
এর আগে সিনেটর জেসিকা রামোস, জেসিকা স্কারসালা স্প্যানটন,
অ্যাসেম্বলীম্যান ও ডেমোক্র্যাট দলীয় অ্যাসিস্টেন্ট মেজরিটি লূডার
চার্লেস ডি ফল, অ্যাসেম্বলীম্যান ডেভিড আই ওয়েপ্রিন, নাদের জে
সায়েজ এবং অ্যাসেম্বলীওম্যান ক্যাটালিনা ক্রজ, জেসিকা গঞ্জালেস
রোজাস সহ একাধিক সিনেটর ও অ্যাসেম্বলী সদস্যের প্রতিনিধি
এবং গভর্ণরের প্রতিনিধিরা এই হলে এসে তাদের সমর্থন ব্যক্ত করেন।
এসময় অন্যান্যের মধ্যে আমন্ত্রিত অতিথি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু জাফর
মাহমুদ ও ইকনা’র সভাপতি মোহাম্মদ তারিকুর রহমান সহ বাগ-এর
প্রতিষ্ঠাতা সদস্য মোহাম্মদ সাবুল উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক শাহানা
মাসুম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। সমাপনী পর্ব পরিচালনা করেন বাগ-এর
সভাপতি জয়নাল আবেদীন।
এসময় নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটের পক্ষ থেকে সিনেটর রবার্ট জ্যাকসন
বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু জাফর মাহমুদকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করেন।
এছাড়াও সম্মাননা পান আমেরিকা বাংলাদেশ এডভোকেসী গ্রæপের
সভাপতি জয়নাল আবেদীনসহ কেয়ার নিউইয়র্ক, এনওয়াই ম্যান, টাইম
টেলিভিমন এবং দিলরুবা চৌধুরী ও মাহতাব খান।
সমাপনি অনুষ্ঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু জাফর মাহমুদ তার বক্তব্যে
দিনব্যাপী সফল কার্যক্রম শেষে আবেগে উচ্ছসিত অনুভূতি প্রকাশ
করেন বলেন, গভীর ভালোবাসার ঢেউ যখন সকল সীমানা ছাড়িয়ে যায়
তখনই তা চিরন্তন এক অর্থময়তা তৈরি করে, সেখানেই জন্ম নেয়
অসাধারণ শক্তি। আজ অসাধারণ এক সাফল্য অর্জনের দিনে আমি
ভারাক্রান্ত হয়ে উঠেছি। মনে হয়েছে আমাদের বাংলাদেশী সমাজে এক
শিক্ষিত মানুষ, অনেক তরুণ গড়ে উঠেছে কিন্তু দেশের জন্য এতবড়
কাজটি কেউ করেনি। এই একটিমাত্র টিম আমি দেখলাম, সত্যিকার
অর্থে আমার জাতির জন্য কাজ করছে।
আবু জাফর মাহমুদ বলেন, আল্লাহ আমাকে ছোটোবেলা থেকে
নেতৃত্বের এক শক্তি দান করেছেন। পূর্ব পাকিস্তান সময়ে স্কুল জীবন
থেকে নেতৃত্ব আমার ভালোবাসা। আজ যে নেতৃত্বের সঙ্গে যুক্ত
হয়েছি সেটি আমাদের গোটো জাতির নেতৃত্ব করছে। জাতি, ধর্ম
ও সংস্কৃতির জন্য এই কল্যানমুখি কাজগুলোর সঙ্গে সবসময়ই আমার
একাত্মতা রয়েছে।
আবু জাফর মাহমুদ বলেন, গত এক বছরে প্রায় অর্ধশত অনুষ্ঠানে যোগ
দিয়ে আমার নিজস্ব পর্যবেক্ষণ থেকে একটিই আহবান জানিয়েছি।
একই জয়গান গেয়েছি। সেটি হচ্ছে ভালেবাসা। আমাদের ভেতরে এই
ভালোবাসাটিই কমে যাচ্ছে। এদেশে যারা ভালোবাসাহীন জীবন যাপন
করে, আমরা তাদের দিকে চলে যাচ্ছি। আমরা পরিবার রক্ষা করতে পারছি না।
বিষয়টি আমাকে খুব স্পর্শ করে। তাই আমি আমার হোম কেয়ার
থেকেই ভালোবাসার এক অভিযান শুরু করেছি। আমরা আমাদের
পারিবারিক জীবনে ভালোবাসা সহশিখেছি। ভালোবাসা আর
যতœ নিয়েই বড় হয়েছি এই সত্যটিই সবার কাছে পৌঁছে দিচ্ছি
মাত্র। তিনি বলেন, আজ এখানে সিনেট ও অ্যাসেম্বলী আমাকে নতুন
করে শিখিয়েছে, সভ্যতা কাকে বলে। আজ আমরা সবাই নিউইয়র্ক স্টেট
পরিচালনার এই কেন্দ্রীয় ভবনে এসে নিশ্চিত হয়েছি, এখানে ইসলাম
নিয়ে কোনো বৈষম্য নেই। বাছবিচার নেই। এখানে ইসলামের সুমহান
আদর্শের প্রতি যথাযথ মর্যাদা আছে। সবাই আমাদেরকে
ভালোবেসেছেন। আমরা সিনেট অ্যাসেমব্লিতে গিয়ে অভিভুত
হয়েছি, সেখানে দায়িত্বশীলরা আমাদেরকে জিজ্ঞাসা করেছেন নামাজের
কথা। তারা জায়গা করে দিয়েছেন, নামাজের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।
এটি অনেক বড় দৃষ্টান্ত।
উল্লেখ্য, দিনব্যাপী কর্মসূচির বাস্তবায়নে শীর্ষ কর্মকর্তা ছাড়াও
বিশেষ ভূমিকা পালনকারীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন- বাগ’র উপদেষ্টা
জুয়েল ভুইয়া, বোর্ড অব ডিরেক্টর মাহাতাব খান, পার্লামেন্টারিয়ান
দিলরুবা চৌধুরী, সহকারী সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সাত্তার, কোষাধ্যক্ষ
এমডি রহিম, সেলিনা খাতুন, মিসবাহ মাহমুদ, সামিয়া নাজনীন,
কো স্পন্সর কেয়ার নিউইয়র্কের সিস্টার আফাফ ও এনওইম্যানের মীর মাসুম
আলী, আতিয়া কাজী, মোহাম্মদ নূর দেওয়ান, কুইন্স বাংলাদেশ
সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক, মফিজুল ইসলাম ভূইয়া রুমি,
চট্টগ্রাম ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের সাধারণ
সম্পাদক আশিক মাহমুদ, কমিউনিটি অ্যাক্টিভিষ্ট রহমত উল্লাহ প্রমুখ।
এছাড়াও নিউইয়র্কের বাংলাদেশী কমিউনিটিতে হোম কেয়ার সেবার
পথিকৃৎ প্রতিষ্ঠান বাংলা সিডিপ্যাপ ও অ্যালেগ্রা হোম কেয়ার
পরিবার থেকে ছিলেন সৈয়দ আলম, সৈয়দ আজিজুর রহমান তারিফ,
আদিত্য শাহীন, মাঈনউদ্দিন ও নোমান আহমেদ। এবারের লেজিসলেটিভ
ডে’র স্পন্সর ছিলো কেয়ার নিউইয়র্ক ও এনওয়াই মুসলিম অ্যাকশন
নেটওয়ার্ক।