NYC Sightseeing Pass
ঢাকা, সোমবার, এপ্রিল ২৮, ২০২৫ | ১৫ বৈশাখ ১৪৩২
Logo
logo

আমি শিল্পী সমরজিৎ স্যারের ছাত্র ছিলাম না - কিন্তু.....মনিরুল ইসলাম


খবর   প্রকাশিত:  ২৮ এপ্রিল, ২০২৫, ০৭:১৪ এএম

আমি শিল্পী সমরজিৎ স্যারের ছাত্র ছিলাম না - কিন্তু.....মনিরুল ইসলাম

 

চারুকলার ছাত্র জীবনে ছাত্র-শিক্ষকের স্বাভাবিক সম্পর্কের চেয়ে বেশী সম্পর্ক কোন শিক্ষকের সাথেই আমার ছিলনা। শিল্পী সমরজিৎ রায় চৌধুরী আমার বিভাগীয় শিক্ষক ছিলেননা বলে সম্পর্কটা একটু দূরত্ব রেখায়ই ছিল।জীবনের বাঁকে বাঁকে নানা সময়ের সন্ধিক্ষণে কখনযে সেই দূরত্ব রেখা মিলিয়ে গিয়েছিল কখনই বুঝতে পারিনি। তাঁর আশীর্বাদ পেয়েছিলাম অদৃশ্য অভিভাবকত্বের পরম স্নেহ মমতায়। তাঁর সেই অভিভাবকত্বের পরম স্নেহ মমতা আমার জীবনের বাঁক ঘুরিয়ে দিয়েছিল আজথেকে পয়ত্রিশ বছর আগে।চারুকলায় আমাদের দ্বিতীয় বর্ষ তখনো শেষ হয়নি। আমদের কয়েকজনের উদ্দোগে সিলেটে শিক্ষা সফরের পরিকল্পনা হয়। সে সফরে আমাদের প্রায় সকল সতীর্থ এবং জনাদুয়েক উপড়ের ক্লাসের ছিলেন। স্যারদের মধ্যে রাজ্জাক স্যার সহ আরও জনাদুয়েক শিক্ষক আমদের সিলেট শিক্ষা সফরের আয়োজন করেন। সমরজিৎ স্যার ছিলেন অন্যতম উপদেষ্টা। সম্ভবত সেখান থেকেই স্যারের সাথে কিছুটা নৈকট্ট তৈরী হয়।

চারুকলার শেষ বর্ষের দিকে আমাদের মাসাধিক কালের ভারত শিক্ষা সফর। শিক্ষক আব্দুল মতিন সরকার আরও কয়েকজন শিক্ষক এবং সমরজিৎ স্যারের তত্বাবধায়নে আমাদের ভারত শিক্ষা সফর। এই সময়টাই সমরজিৎ স্যারের সাথে আমার এমনই একটা মনসতাত্বীক নৈকট্টটা অ্যারো বেশী তৈরী হল যা পরবর্তী সময়ে মূল্যবান উপদেশক হয়ে যায়।ভারত সফর কালে একটা ছোট ঘটনা ঘটে গেল। আমরা কাশ্মীরের উদ্দেশে দিল্লী থেকে রওনা হয়ে জম্মু আসি। সেখান থেকে শ্রীনগর যাবার কথা। জম্মু থেকে শ্রীনগর যাওয়া হচ্ছেনা কারণ মতিন স্যার স্বপ্নে দেখেছেন শ্রীনগর কাশ্মীরের আবহাওয়া সংকটময় এবং অর্থনৈতিক সংকট। আমাদের মন খারাপ নিয়ে সমরজিৎ স্যারের সাথে কথা বলতেই সমস্যা সমাধান হয়ে গেল। সমরজিৎ স্যারের কঠিন ভূমিকার জন্যই সেদিন আমদের কাশ্মীর ভ্রমণ, একারণেই আমাদের ভারতশিক্ষা সফর স্মরণীয় হয়ে আছে সবার কাছে।

পড়াশুনা শেষে বিভিন্ন জাগায় খণ্ডকালীন কাজকরি। সারাদিন কাজ শেষে প্রায়ই বিকালে চারুকলায় আড্ডা। হঠাৎ গেইটের সামনে স্যারের সাথে দেখা। দেখা হতেই একটা ঠিকানা ধরিয়ে

দিয়ে বললেন এই ঠিকানায় কাল ইন্টার্ভিউ দিতে যাবে। ঠিকানা পড়ে স্যারকে বললাম,

এটাতো মধ্যপ্রাচ্চে। স্যার বললেন, তুমি যাবে আর্টিস্টের কাজ নিয়ে ছবি আকার সুযোগ পাবে ভাল না লাগলে চলে আসবে। স্যার অ্যারো অনেক কিছুই বললেন। স্যারের কথামত

চলে গেলাম কুয়েতে। কাজ করি, অফুরন্ত সময়, ছবিআঁকি, কুয়েত ন্যাশনাল মিউজিয়ামে প্রদর্শনী হল। তারপর মধ্যপ্রাচ্য ছেড়ে আমেরিকা। জীবনের বাঁক ঘুরিয়ে দিলেন সমরজিৎ স্যার।

দেশে ঘন ঘন আসা হয়নি আমার। যখনই দেশে এসেছি দেখা করেছি। আমার দ্বিতীয় প্রদর্শনীতে স্যার প্রধান অতিথি হয়ে এসে অনেক উজ্জ্বল করেছিলেন আমার প্রদর্শনীটি।

স্যার অসুস্থ হওয়ার কিছুদিন আগে ফোনে কথা হয়েছিল। ফোন করতেই স্যার অভিমানের স্বরে বললেন, “ তুমি ঢাকা এলে একটুদেখা করলেনা” - স্যারকে বিনয়ের সাথে বললাম, “স্যার আমিতো ঢাকা আসিনি, নিউইয়র্ক থেকে কথা বলছি”। স্যার বললেন “ মনে হয় আমি ভুল শুনেছি” - এটাই ছিল স্যারের সাথে আমার শেষ কথা।

মনে মনে ভাবি আমার জীবনের বাঁক ঘোরানোর মানুষ শিল্পী সমরজিৎ রায় চৌধুরীর সরাসরি ছাত্র না হয়েও কত কাছের ছিলাম, আমাদের অনেকেই তা জানতেননা। আমার আদিগন্ত কৃতজ্ঞতা, অপরিশোধ্য ঋণ। স্যার যেখানেই থাকুন ভালো থাকুন।