খবর প্রকাশিত: ২৮ এপ্রিল, ২০২৫, ০৭:০৯ এএম
শ্রমিক দিবস উপলক্ষে রচিত
মা কাঁদে
-জাকিয়া রহমান
১ টুকুর উদ্বেগ
কাজের বুয়া মিনু থাকে বড় সাহেবের বাড়ি
সঙ্গে ছেলে নিয়ে,
দিনমান কাজ করে ঘুমায় মাঝ রাতে
মেঝেয় কাঁথা বিছিয়ে।
আট বছরের ছেলে টুকু বড় উদ্বেগ নিয়ে-
মাকে চুপি সুধায়,
প্রতিরাতে কাঁদো কেন মা যখন সবাই
নাক ডেকে ঘুমায়?
মা কেঁদেই চলে, অশ্রু বাঁধা মানে না
বুকে ঝরে ঝরে লুঠায়।
বলিস না তো কিছু মা? হয় আমার মন ভারি
বড়ই দুঃখ পায়।
২ টুকুর নেই অবসর
বড়ই করুন টুকুর মুখটি, বিনয়ে বলতে চায়,
মায়ের হাত ধরি-
আমি তো দেই না ফাঁকি সাহেবেরা যা বলে,
সব পারি আর করি।
কাক ডাকা ভোরে উঠি, আধেক রাতেই
সব কাজ সারি।
শোন মা, আমার কাজের ফিরিস্তি
একটি একটি করি-
বড় সাহেবের গায়ে তেল মলি,
বড় কষ্টে করে এইয়া পিঠ ডলি।
ডজন খানেক জুতার পলিশ,
কখনো করি না কোন নালিশ।
পানের বাটা সাজিয়ে ধরে,
যাই নিয়ে মেম সাহেবের ঘরে।
বিকেলবেলা ফুলের গাছে পানি,
ইস্ত্রি করে কাপড় আনি।
কাপড় নিয়ে যাই ধোপা বাড়ি,
পরে শুকা কাপড়ে ভাজ মারি।
পানি দে! চা দে! ফরমাস কত চলে!
করি কাজ, যদিও শরীর ঢলে
ফাঁকি দেই না, নেই কোন অবসর!
কাজ সারাদিন, অর্ধেক রাত ভর।
৩ টুকুর মা বলে আমরা অধীন!
খেটে খাই! খেটে খাই! বড় সাহেবদের বাসায়-
সারাদিন রান্না করি কত, বসে চুলার ধোঁয়ায়।
নেই তো উপায়! করব কি? আমরা যে অধীন!
দাসত্ব হয়েছে বিলোপ, আমরা কেন পরাধীন?
পানি ঢেলেও পারে না খেতে, চলন শুধু নবাবী!
আমরা খেটে খেটেই মরি, তারা করে হম্বিতম্বি।
টুকুর মত একজন শিশু শ্রমিককে মনে করে… যখন তার খেলার বয়স, লেখাপড়ার শেখার বয়স- সব অদৃশ্য … কেন?
কবিতাটি আমার ছড়া/কবিতার বই ‘আকাশ কেন নীল’ থেকে তুলে দিলাম। ‘সেই বই’ নামে অনলাইন ডিজটাল লাইব্রেরি থেকে বইটি ফ্রি লোড করা যাবে মোবাইলে বা ট্যাবলেটে।
ছবিটি আমার আনাড়ি হাতের পেন্সিল স্কেচ।