NYC Sightseeing Pass
ঢাকা, মঙ্গলবার, এপ্রিল ২৯, ২০২৫ | ১৬ বৈশাখ ১৪৩২
Logo
logo

রাজশাহীর একমাত্র নারী পত্রিকা বিক্রেতা খুকির জীবনাবসান


খবর   প্রকাশিত:  ২৯ এপ্রিল, ২০২৫, ০৫:৩৬ পিএম

রাজশাহীর একমাত্র নারী পত্রিকা বিক্রেতা খুকির জীবনাবসান

 উত্তরবঙ্গ প্রতিনিধি থেকে : দীর্ঘ দিন অসুস্থতার পর  অবশেষে মৃত্যুর কাছে নিজেকে শপে দিলেন। রাজশাহীবাসির অতি পরিচিত মুখ পত্রিকা বিক্রেতা দিল আফরোজ খুকি আর নেই (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজশাহীর মাদার তেরেসা ফাউন্ডেশনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল প্রায় ৬২ বছর। প্রায় ৪৩ বছর ধরে পত্রিকা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। গত দুই তিন বছর ধরে বিভিন্ন কারনে  সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়। যা নজর কাড়ে সবার। সংবাদপত্র বিক্রেতা খুকি কোনো সময় লোকের কাছে হাত পাতেননি। তিনি নিজেই কর্ম করে নিজের জীবন যাপন করেন। জানা গেছে, কিশোরী বয়সে ৭০ বছরের এক বৃদ্ধের সঙ্গে খুকির বিয়ে হয়েছিল। মাস যেতে না যেতেই স্বামী মারা যান। ১৯৮০ সালে স্বামীর মৃত্যুর পর পরিবার, আত্মীয়-স্বজন তাঁকে সাহায্য করেনি। এর পর থেকেই কিছুটা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন তিনি।

ষাটোর্ধ্ব খুকি ৪৩ বছর ধরে শহর ঘুরে পত্রিকা বিক্রি করছেন। এর উপার্জন দিয়েই নির্মাণ করেছেন একটি বাড়ি। সেই বাড়িতে তিনি একাই থাকেন। প্রতিবেশীদের কাছ থেকে নেন না কোনো ধরনের সাহায্য। রাজশাহীর রেলস্টেশন, শিরোইল বাস টার্মিনাল, আলুপট্টি, সাহেব বাজার জিরো পয়েন্ট, আরডিএ মার্কেট ও নিউ মার্কেটের দোকানদার ও পথচারী এক নামে চিনেন খুকিকে। এসব স্থানে তার পত্রিকার কিছু নিয়মিত ক্রেতা আছেন।

রাজশাহীতে একমাত্র নারী পত্রিকা বিক্রেতার ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় আলোচনার শীর্ষে উঠে আসেন রাজশাহীর খুকি। তার জীবিকা নির্বাহ ও ইচ্ছের কথাগুলো ছুঁয়েছে মানুষের হৃদয়। খুকির ভবিষ্যৎ দিনগুলো যেন সুন্দর হয় তাই তার দায়িত্ব নেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী।এ বিষয়ে তৎকালীন রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল বলেছিলেন, খুকিতো আমাদের দেশের সংগ্রামী নারীদের মধ্যে একজন জ্বলন্ত উদাহরণ। আসলে অনেকে আমরা তাকে মানসিক প্রতিবন্ধী মনে করি কিন্তু সে মানসিক প্রতিবন্ধী নয়। কারন সে কারোর কাছে হাত পাতে না, কার ও কাছ থেকে ভিক্ষাও নেয় না। সে নিজেই আয় করে চলে এবং তার পৈতৃক সম্পত্তির উপর লোভ নাই কাজেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে আমাকে বলা হয়েছে যে, খুকির দায় দায়িত্ব মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে আমরা যেন গ্রহন করি। সে সময় জেলা প্রশাসক নিজে খুকির বাড়ি পরিদর্শন করেন এবং তার বাড়ি ঘর ঠিক করার নির্দেশ দেন।

 খুকির বাসা পরিদর্শনকালে সে সময় জেলা প্রশাসক সাংবাদিকদের বলেন,‘ খুকীর সম্পর্কে জানার পর আমি তাঁর বাসা পরিদর্শন করতে এসেছি। তার বাসা অবস্থা ভালো না টিন দিয়ে পানি পড়ে। ডিসি অফিসের পক্ষ থেকে তার বাসার সার্বিক উন্নয়নে ও খাবার সরবরাহের সকল দায়িত্ব এহসানের উপর দেওয়া হল। পবার এসিল্যান্ড শেখ এহসান সকল দায়িত্ব পালন করবে। দিল আফরোজ খুকির বাবা ছিলেন, রাজশাহী জেলা আনসার এডজুটেন্ট এবং মা ছিলেন সরকারি হাই স্কুলের শিক্ষিকা। অল্প বয়সে বাবা-মা মারা যায়। এজন্যই তার জীবন সংগ্রামী হয়ে উঠে। দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে রাজশাহী নগরীর বিভিন্ন এলাকায় সংবাদপত্র বিক্রি করেছেন দীল আফরোজ খুকি। কোন সময় মানুষের কাছে হাত পাতেননি! নিজের কর্ম দিয়েই জীবন যাপন করেছেন। অন্যকেও সাহায্য করছে। ২০২০ সালে তিনি পেয়েছিলেন  রাজশাহী জেলার শ্রেষ্ঠ জয়িতার পুরস্কার। সেসময় খুকিসহ ১০ জনকে শ্রেষ্ঠ জয়িতা হিসেবে পুরস্কৃত করা হয় এবং দেয়া হয় সংবর্ধনা।