খবর প্রকাশিত: ২৮ এপ্রিল, ২০২৫, ০৯:৪৫ এএম
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা, গ্রেপ্তার ও হয়রানি বন্ধের আহবান জানিয়েছেন দেশের বিশিষ্টজনরা। প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা ও পত্রিকার প্রতিবেদক শামসুজ্জামানকে গ্রেপ্তারে নিন্দা ও উদ্বেগ জানিয়েছেন তারা। এক যৌথ বিবৃতিতে তারা বলেন, আমরা উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করেছি যে, সম্প্রতি প্রথম আলো অনলাইনে প্রকাশিত একটি সংবাদের প্রেক্ষিতে প্রথম আলোর প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামসকে মাঝরাতে তার বাসভবন থেকে উঠিয়ে নেয়া হয় এবং পরবর্তীতে তাকে বিতর্কিত ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের এক মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এই গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে সাংবাদিক সমাজ ও সমাজের বিভিন্ন মহলের প্রতিবাদকে আমলে না নিয়ে বরং ২৯শে মার্চ, ২০২৩ মধ্যরাতে একই সংবাদকে কেন্দ্র করে পত্রিকাটির সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনটিতে আরেকটি মামলা দায়ের করা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা প্রথিতযশা সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের ও প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামসকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করছি। আমরা মনে করি এসব ঘটনা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং মুক্ত ও স্বাধীন সাংবাদিকতা দমনে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের অপব্যবহারের আরো একটি উদ্বেগজনক নজির সৃষ্টি করেছে। কোনো সংবাদ এবং সাংবাদিকের বিরুদ্ধে অভিযোগের ক্ষেত্রে প্রেস কাউন্সিলের মাধ্যমে বিরোধ নিস্পত্তির সুযোগ গ্রহণ না করে যেভাবে এই আইনের অধীনে মামলা ও গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটছে, তা দেশের সাংবাদিকতার স্বাধীন ধারাকে রুদ্ধ করার অসৎ উদ্দেশ্য থেকেই করা হয়েছে বলে প্রতীয়মান। নিপীড়নমূলক ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনটি বাতিল না করে দেশে সংবাদ মাধ্যমে মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় বারবার হস্তক্ষেপ করার ন্যাক্কারজনক ঘটনাগুলোকে ভীতি সৃষ্টির অপপ্রয়াস বলে আমরা এর বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
বিবৃতিতে বলা হয়, ২২শে মার্চ, ২০২৩ নওগাঁ সদর উপজেলার চণ্ডীপুর ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ের অফিস সহকারী সুলতানা জেসমিনকে একই ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে অভিযোগের প্রেক্ষিতে র্যাব আটক করে এবং পরবর্তীতে র্যাব হেফাজতে তার মৃত্যু হলে দেশব্যাপী তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়। এমন মর্মান্তিক ঘটনার পরেও ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের অপপ্রয়োগ থামছে না যা সংবাদ প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামসকে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে আবারও প্রমাণিত হল।
অবিলম্বে মতিউর রহমান এবং শামসুজ্জামান শামসের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার, সাংবাদিক শামসুজ্জামান শামসের মুক্তি এবং ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন বাতিলের দাবি জানান বিবৃতিদাতারা।
বিবৃতি প্রদানকারীগণ হলেন,
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ট্রাস্টি, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র, ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, অর্থনীতিবিদ, ড. হামিদা হোসেন, মানবাধিকার কর্মী, খুশী কবির, সমন্বয়কারী, নিজেরা করি, শাহীন আনাম, নির্বাহী পরিচালক, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, ড. ইফতেখারুজ্জামান, নির্বাহী পরিচালক, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সম্পাদক, সুজন, শামসুল হুদা, নির্বাহী পরিচালক, এএলআরডি, শিরিন হক, সদস্য, নারীপক্ষ, অধ্যাপক পারভীন হাসান, উপাচার্য, সেন্ট্রাল উইমেন্স বিশ্ববিদ্যালয়, ড. শাহদীন মালিক, আইনজ্ঞ ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ, জেড আই খান পান্না, আইনজীবী, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্ট, ব্যারিস্টার সারা হোসেন, আইনজীবী, ড. সুমাইয়া খায়ের, অধ্যাপক, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ড. শাহনাজ হুদা, অধ্যাপক, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ড. আসিফ নজরুল, অধ্যাপক, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রোবায়েত ফেরদৌস, অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মো. নূর খান লিটন, মানবাধিকার কর্মী, ড. শহিদুল আলম, আলোকচিত্রী, রেহনুমা আহমেদ, লেখক, অরূপ রাহী, সঙ্গীতশিল্পী, লেখক, এবং ড. সাদিয়া গুলরুখ, সাংবাদিক।