খবর প্রকাশিত: ২৭ এপ্রিল, ২০২৫, ০১:৩৩ পিএম
লৌহকপাট-জরাসন্ধ(ছদ্মনাম), আসল নাম- চারুচন্দ্র চক্রবর্তী। কবি তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায়। লালসালু- সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ।হাজার বছর ধরে - জহির রায়হান। কড়ি দিয়ে কিনলাম -বিমল মিত্র। পার্থিব ও দূরবীন- শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। একা এবং কয়েকজনা,সেই সময় এবং পূর্ব-পশ্চিম সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। হাজার চুরাশির মা- মহাশ্বেতা দেবী। গর্ভধারিনী - সমরেশ মজুমদার কৃষ্ণকান্তের উইল - কপাল্কুন্ডলা , বিষবৃক্ষ -বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।পূর্ব-পশ্চিম সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়।ন হন্যতে - মৈত্রী দেবী । মেজদিদি-শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের লোটাকম্বল ,নীহার রঞ্জন গুপ্তের লালু ভুলু , ম্যাক্সিম গোর্কির মা ,জাহানারা ইমামের একাওরের দিনগুলি এই বইগুলোই আমার সবচাইতে প্রিয় যা পড়ার পরে মনে গভীরভাবে দাগ কেটে রয়েছে বছরের পর বছর ধরে থাকবেও আমৃত্যু ….! আমার সব চাইতে প্রিয় লেখক রবীন্দ্রনাথের পর জুলভার্ন,ভিক্টর হুগো বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এবং সত্যজিৎ রায় ! দেশে আমাদের বাসায় সেই সময় যারা যেতেন তাদের চোখ আটকে যেত আমাদের বুক সেল্ফের দিকে! সাত আটটা বইয়ের সেলফে দেশবিদেশের নানান কিসিমের কতশত বইয়ে যে ঠাঁসা ছিল ! ছোটবেলায় বাড়ীতে বোনেদের কড়া নিয়ম ও নজরদারি থাকায় কিছু বইয়ে আমি হাত দিতে পারতাম না সেগুলো বড়দের বই ছিল বলে! যেমন মাসুদ রানা, সেবা রোমান্টিক!!
বাড়ীর বুয়ারা বইয়ের সেলফগুলো ঝাড়ামুছা করতেন স্কুল বন্ধ থাকলে নানান কায়দায় ছলছুতো খুঁজে আমি বইগুলো ঝাড়ামোছার জন্য উনাদের কাছ থেকে কাজটা নিতাম , মান্নানের মা বলে বুয়া ছিলেন উনি দিতে চাইতেন না বলতেন ছোট আফা আম্মা বকা দিবেন আপনি পড়তে যান। বুয়া কে ভালো ভালো কথা বলে পড়া ফাঁকি দিয়ে বুক সেলফ ঝাঁড়া মোছবার বাহানায় বইগুলো ছুঁয়ে দেখতাম মাঝে মাঝে একদুই পৃস্ঠা করে পড়াও শুরু করতাম সেই থেকেই শুরু পোঁকার মতো বই পড়ার ।বই পড়তাম আর গান শুনতাম ! অবশ্য খেলাধুলা ,নাটক ,সিনেমা , সাজসজ্জা কোনটায় যে উৎসাহ ছিল না তা নিয়ে নিজেই হিসাব মিলাতে পারিনা ! সবকিছু ছাপিয়ে মনে পরে স্কুল কলেজের বইয়ের মালাটে গল্পের বই নিয়ে টেবিলে বসে পড়তাম মাঝে মাঝে ধরা খেতাম আম্মা হাল্কা হুমকি ধামকি দিয়ে নিজেই নানান বইয়ের গল্প বলে নিজের অজান্তেই আরও উসকে দিতেন। ছেলেবেলা থেকেই বহু গুনী মানুষকে একদম কাছ থেকে দেখে বড় হয়েছি ।লেখক ও সাংবাদিক নিয়ামত হোসেন খোকন ভাই ছিলেন আমার গল্প বলার ও শোনার সাথী , উনি কি সুন্দর করে কত রকমের গল্প বলতেন, আমি আবোল তাবোল বকতাম উনি মন দিয়ে শুনতেন সব কিছুতে উৎসাহ দিতেন।আব্বা আম্মার সাথে মলি আপা আর আমি বিখ্যাত লেখক হায়াৎ মাহমুদ চাচার বাসায় যেতাম গেন্ডারিয়ায় চাচার বাসাতেও দেখতাম কত রকমের বই ! হায়াৎ মাহমুদ চাচার লেখা আমার ছোট থেকেই পছন্দ , আব্বার বন্ধু ছিলেন বলে না চাচা অসাধারণ লেখেন।আব্বার আরেক বন্ধু ননীভৌমিক চাচার বইগুলোও আব্বা দেশে আসলে প্রায়ই দুপুরে খাবার পরে আমাকে পড়ে শোনাতেন অনেক রাশিয়ান বইও আব্বা যেহেতু রাশিয়া ভাষা বলতে ও পড়তে পারতেন তা পরে আমাকে বাংলায় বুঝিয়ে দিতেন। ছোটবেলা থেকেই আমার একটা রোগ আছে যে জিনিসটা খুব বেশী মনে ধরে বা পছন্দ হয় সেটা হাজার বার পড়া বা শোনা ! তাই ছোট বেলায় যে বাসায় বেড়াতে আসত সেই বিপদে পড়ত আম্মা গল্প বলতেন আমি নাকি একই গল্পের বই নিয়ে আসতাম আর সেই বইটাই আমাকে পড়ে শোনাতে হত ! শাহীনভাই যে কত হাজার বার আমাকে শিশু বাষিকী আর পাগলা দাশু বইদুটো পড়ে শুনিয়েছিলেন তা গননার বাইরে ! রিদাকে এখনো বলেন তোর মা একই বই নিয়ে রোজ একই গল্প শুনতে আসত! আচানক কারবার রিদাটাও একই বই বার বার পড়ে । ও বই হাতে নিয়ে বসলে আমার পরম আনন্দে মন ভরে উঠে কারন সারাদিন ল্যাপটপেই বেশী দেখা যায় যদিও ল্যাপটপেও বই পড়ে ! তাও আমার মন মানে নাহ বইয়ের পাতা উল্টে পাল্টে পড়ার আনন্দই অন্য রকম ।আহা কি মধুর নির্মল আনন্দে আমাদের শৈশব কেটেছিল ! যা আমার বাচ্চারা জানতেও পারল না ! এই টেকনোলজির যুগে সবই মরিচিকার মতো মনে হয় আমার কাছে । আম্মা আর আমার লালুভুলু বইটা খুব প্রিয় ছিল প্রায়ই মনে হয় ঢাকায় যেয়ে বইটা বাসার সেলফ থেকে নিয়ে আসব। আজকে হঠাৎ লিজা আপু একটা লেখা দেখে মনে পরল বইগুলোর কথা সেই পুরোনোদিনের কথা! ভাবছি কিছুদিন সবকিছু থেকে দুরে সরে মাঝে মধ্যে বইগুলো আবারও পড়া শুরু করব ।