এম আব্দুর রাজ্জাক প্রকাশিত: ২৮ এপ্রিল, ২০২৫, ১০:৪৯ পিএম
এম আব্দুর রাজ্জাক, বগুড়া থেকে : ব্যাপক উৎসবমুখর পরিবেশে পূর্ব বগুড়া তথা গাবতলীর ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলা সম্পন্ন হয়েছে। মাছ ও মিষ্টির জন্য বিখ্যাত এই মেলায় লাখো মানুষের পদচারনায় মুখরিত ছিল। এই মেলাকে ঘিরে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে গাবতলী উপজেলা জুড়ে।
একাধিক সূত্র জানায়, প্রায় দেড়’শ বছর পূর্ব থেকে স্থানীয় সন্ন্যাসী পূজা উপলক্ষে গাবতলী উপজেলার মহিষাবান ইউনিয়নের গোলাবাড়ী বন্দরের পূর্বধারে গাড়ীদহ নদীর পশ্চিমধারে সম্পূর্ণ ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিতে একদিনের জন্য ঐতিহ্যবাহী এই পোড়াদহ মেলাটি বসে। তবে মেলাটি একদিনের হলেও চলে দু’থেকে তিনদিন পর্যন্ত। প্রতিবছর বাংলা সনের মাঘ মাসের শেষ অথবা ফাল্গুন মাসের প্রথম বুধবার মেলাটি হয়। এবার ফাল্গুন মাসের প্রথম বুধবার মেলাটি অনুষ্ঠিত হলো। এ মেলায় বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে লাখ লাখ মানুষের সমাগম ঘটেছে। এবারে মেলায় সবচেয়ে বড় মাছ ৪০কেজি ওজনের ব্রিগেট। যার দাম প্রতি কেজি ৮’শ টাকা। মাছটি নাটোর থেকে মেলায় এনেছে রানীরপাড়া গ্রামের আব্দুর রশিদ। আর সবচেয়ে বড় মিষ্টি ছিল সাড়ে ১২ কেজি ওজনের। দাম ছিল ৮’শ টাকা কেটি। মিষ্টিটি তৈরী করেছেন জয়পুরহাট থেকে আগত রাহাত দই ও মিষ্টান্ন ভান্ডারের প্রোঃ নূর ইসলাম। একজন মাছ ক্রেতা সাব্বির হাসান বলেন, এবার মেলায় মাছের দাম একটু বেশী মনে হচ্ছে। মেলায় আসা (জামাই) আঃ রহমান একটি বড় ব্রিগেড মাছ ক্রয় করেছেন। তিনি জানান, পছন্দের মাছ হওয়ায় দামটা একটু বেশীই নিয়েছে।
এছাড়াও মেলায় ১৭কেজি ওজনের বোয়াল মাছের দাম হাকানো হয়েছে প্রতি কেজি ১৫শ টাকা, ১৫ থেকে ১৮কেজি ওজনের কাতলা মাছ ১৪’শ টাকা কেজি, ৮ থেকে ১০কেজি ওজনের কাতলা মাছ ৮’শ টাকা, ১০ কেজির উপরে আইড় মাছ ১২ ’শ থেকে ১৫’শ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। রুই বিক্রি হচ্ছে ৬’শ টাকা কেজি, বড় চিতল ১২’শ টাকা কেজি, পাঙ্গাস ৩’শ টাকা কেজি, ব্রিগেড ৩’শ থেকে ৫’শ টাকা কেজি, ব্লাডকাপ ৮’শ টাকা কেজি, ১০কেজি ওজনের উপরে সিলভার কাপ ৪’শ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য জাতের মাছও মেলায় উঠেছে। এছাড়াও মেলায় ১৫ কেজি ওজনের মাছ আকৃতির মিষ্টি তৈরী করেছেন বিশিষ্ট মিষ্টি ব্যবসায়ী আব্দুল লতিফ। মহিষাবান এলাকার ব্যবসায়ী লতিফের দোকানে এ মিষ্টির দাম হাকানো হয়েছে ৩২’শ টাকা। এছাড়া ১কেজি, ২ কেজি, ৩কেজি, ৪কেজি ওজনের মিষ্টিও মেলায় পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন দামে। লতিফের মিষ্টির দোকানে দেড়’শ মনের বেশী মিষ্টি রয়েছে- যা তিনি মেলার দিনেই বিক্রির জন্য তৈরী করেছেন। প্রতিটি দোকানে শত শত মন মিষ্টি বেচা-কেনা হয়েছে। মেলায় মাছ, মিষ্টি, গরুর মাংস, মহিষের মাংস, বড়ই (কুল), কাঠ ও ষ্টীলের ফার্নিচার, কস্মেটিক, চুরি-ফিতা, নাকের ফুল, কানের দুল, কৃষিসামগ্রীসহ বিভিন্ন দ্রব্য হাট-বাজারের মতোই ক্রয়-বিক্রয় হয়েছে চোখে পড়ার মতো। মেলায় বসেছিল ফুচকা-চটপটিসহ বিভিন্ন খাবারের দোকান। মেলায় শিশুদের জন্য বিনোদনমূলক বিচিত্রা গান, নাগোরদোলা, চরকি এবং মটরসাইকেল খেলা ছিল। তবে মেলায় পরিচালনা কমিটির কিছু অসাধু ব্যক্তি বিচিত্রার নামে অশ্লীল নাচ-গান শুরু করলে স্থানীয় প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মোঃ আফতাবুজ্জামান-আল-ইমরান সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ করে দিয়েছে। এছাড়াও গাবতলীর দূর্গাহাটা হাইস্কুল মাঠ, সুবোধ বাজার, বাইগুনি হাট, দাঁড়াইল বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে বাজারে মাছ-মিষ্টির মেলা বসেছিল।
উপজেলার মহিষাবান ইউনিয়নের গোলাবাড়ী বন্দর সংলগ্ন পোড়াদহ নামক স্থানে প্রায় ৪’শ বছর পূর্বে থেকে স্থানীয় সন্ন্যাাসী পূজা উপলক্ষে প্রতিবছরের ন্যায় গোলাবাড়ী বন্দরের পূর্বধারে সম্পূর্ণ ব্যক্তি মালিকানা জমিতে একদিনের জন্য মেলা বসে। মেলাটি একদিনের হলেও তিনদিন পর্যন্ত চলে। মেলা উপলক্ষে পার্শ¦বর্তী উপজেলাসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষের মিলন মেলায় পরিণত হয়েছিল মেলা প্রাঙ্গন। এ ব্যাপারে মেলার পরিচালক স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ বলেন, ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলাকে ঘিরে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে চারিদিকে। মেলায় মেয়ে-জামাই, আত্মীয় স্বজনসহ লাখো মানুষের পদচারণা মুখরিত হয়ে উঠেছে গোটা এলাকা। মেলায় শিশুদের জন্য বিনোদনমূলক বিচিত্রা গান, নাগোরদোলা, চরকি এবং মটরসাইকেল খেলা ছিল। গাবতলী মডেল থানার ওসি সনাতন চন্দ্র সরকার বলেন, পোড়াদহ মেলাটি সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দ্বারা কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছিল। মেলা শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এ বিষয়ে ইউএনও মোঃ আফতাবুজ্জামান-আল-ইমরান বলেন, পোড়াদহ মেলাটি সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। মেলায় বাঘাইর মাছ বিক্রি নিষিদ্ধ থাকায় ছোট বড় ৪টি মাছ জব্দ করা হয়েছে। তবে কিছু অসাধু ব্যক্তি বিচিত্রার নামে অশ্লীল নাচ-গানের ব্যবস্থা করেছিল তা ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে।