NYC Sightseeing Pass
ঢাকা, সোমবার, এপ্রিল ২৮, ২০২৫ | ১৪ বৈশাখ ১৪৩২
ব্রেকিং নিউজ
জব্বারের বলীখেলায় আবারও চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লার ‘বাঘা’ শরীফ Bangladesh reaffirms commitment to fully Implement the CHT Peace Accord Kashmir Violence Conflict can be Solved Diplomatically or Needs a Retaliation Plan Against Pakistan ব্রেন স্ট্রোক পরবর্তী সময়ে সেরে ওঠার যুগান্তকারী ওষুধ আবিষ্কার নিউইয়র্কে প্রবাসীদের সাথে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের মত  বিনিময় নিজেকে রাজা-বাদশাহ ভাবছেন ট্রাম্প! ‘দাগি’ দেখতে কয়েদির বেশে সিনেমা হলে শতাধিক নিশো ভক্ত Attorney General James Wins Case Against Google for Monopolies in Digital Advertising নিউইয়র্কে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ সংবাদ সম্মেলন নানা অভিযোগ উত্থাপন : বাংলাদেশ রেমিট্যান্স মেলা  বয়কটের আহবান নিউইয়র্কের এস্টোরিয়ায় পুলিশের গুলিতে মানসিকভাবে অসুস্থ  এক ব্যক্তির মৃত্যু
Logo
logo

আজকে মিনি’র কথাই মনে হলো বারবার –আলী রীয়াজ


খবর   প্রকাশিত:  ২৭ এপ্রিল, ২০২৫, ০১:৫৯ পিএম

আজকে মিনি’র কথাই মনে হলো বারবার –আলী রীয়াজ

আজকে মিনি’র কথাই মনে হলো বারবার – ওর মৃত্যুর ১০ বছর পার হয়ে গেলো। পোশাকি নামে যারা মিনি’কে চেনেন তাঁরা চেনেন আবিদ রহমান বলে। সাংবাদিক, লেখক, সংগঠক আবিদ রহমান। ১৯৭৬ সালে থেকে ও হচ্ছে আমাদের মিনি। অস্থির, সব সময় চঞ্চল, সব সময় সৃষ্টিশীল। নতুন কিছু করবার তাড়না থেকে ও অনেক কিছুই করেছে। বিচার-বুদ্ধি দিয়ে বিবেচনা করলে ওর অনেক উদ্যোগ যে শেষ পর্যন্ত সাফল্য পাবেনা সেটা বোঝা যেতো, কিন্ত মিনিকে আর যাই হোক প্রাগমেটিক বলার উপায় ছিলোনা।

সাংবাদিকতার জগতে ঢুকেই ও নতুন কিছুর করবার তাগিদ অনুভব করেছে। ১৯৭৮-১৯৮০ পর্বে আমরা বন্ধুরা যখন সাহিত্যান্দোলনে ঝাপিয়ে পড়েছিলাম মিনি ছিলো আমাদের প্রতিদিনের সঙ্গী, সব কাজের অগ্রভাগে এবং আমাদের সবচেয়ে হতাশার সময়ে আশা জাগানিয়া মানুষ। এই সময়ে আমরা বন্ধুরা – রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ, কামাল চৌধূরী, জাফর ওয়াজেদ, মঈনুল আহসান সাবের, শাহজাদী আঞ্জুমান আরা মুক্তি, সাজ্জাদ হোসেন, বদরুল হুদা এবং আরো অনেকে মিলে সাহিত্য জগতের আপাদমস্তক বদলে দেবার দুঃসাহস দেখাচ্ছিলাম, যখন তারুণ্যের স্পর্ধায় সবকিছু নতুন কিছু গড়বার নেশায় ছিলাম, যখন স্বপ্ন দেখছিলাম এবং আমাদের স্বপ্নগুলো ভাগ করে নিয়েছিলেম সেই সময়ে মিনি ছিলো আমাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ‘পাগলামি’ করা মানুষ। এতো জীবনীশক্তি ও কোথা থেকে পেতো জানিনা। একবার মিনি ব্যক্তিগত কিছু ঘটনায় বেশ হতাশার মধ্যে ডুবে গেলেও আমরা বলতাম যে, মিনি সব পেরিয়ে আসবে; এসেওছিল। ১৯৭৮ সালের গ্রীষ্মকালে আমরা বন্ধুরা মিলে গ্রন্থাকারে একটি প্রবন্ধ সংকলন বের করার সিদ্ধান্ত নেই। ‘স্বরূপ অন্বেষা’ নামের এই সংকলনের সম্পাদক ছিলাম আমরা তিনজন – রুদ্র, সাবের আর আমি। সাহিত্যের তিন শাখায় আমরা তখন লেখালেখি করি। এই সংকলনের জন্যে ঠিক করা হয়েছিল চারটি বিষয় – সাম্প্রদায়িকতা, জাতীয়তাবাদ, বাংলাদেশে কমিউনিস্ট আন্দোলন এবং শিক্ষার সংকট। প্রতিষ্ঠিত কোনও প্রকাশকের দারস্থ না হওয়ার সিদ্ধান্ত ছিলো একাধিক কারণে। সেই গ্রন্থটি সংকলন আকারে প্রথম প্রকাশিত হয় বিজ্ঞাপনসহ, পরে গ্রন্থ হিসেবে প্রকাশ করতে এগিয়ে আসে আমাদের বন্ধু খন্দকার নীয়াজ আহমেদ। তার ছোট্ট প্রেসের নামে গড়ে তোলা হয়েছিলো তিতাস প্রকাশনী, সেখান থেকেই বেরিয়েছিলো ১৯৭৮ সালে মে মাসে। এতে সবচেয়ে দীর্ঘ লেখাটি ছিলো মিনি’র – সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে। অন্য লেখকরা ছিলেন, মোরশেদ শফিউল হাসান, সলিমুল্লাহ খান এবং আমি। সংকলনটির প্রকাশনার প্রতিটি পদক্ষেপে মিনি ছিলো ওতপ্রোতভাবে যুক্ত। সমাজ বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী মিনি বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতার ইতিহাসের অনুসন্ধান করেছিলো উপনিবেশ-পূর্ব সময় থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত।

আমাদের ‘স্বরূপ অন্বেষা’র ধারাবাহিকতায় ১৯৭৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এসে রুদ্র এবং আমার বই বের করার পরিকল্পনা করা হয়। এতে পরে যুক্ত হয় মোহন রায়হান। দুটি কবিতা এবং একটি প্রবন্ধ গ্রন্থ প্রকাশের পরিকল্পনার সঙ্গে মিনি যুক্ত ছিলো বললে সামান্যই বলা হবে। বলা উচিত মিনি ছিলো অন্যতম ‘উস্কানীদাতা’। বইগুলো প্রেসে যাবার পরে মিনি এর সঙ্গে একটি গল্প সংকলন যুক্ত করার কথা বলে। ওর সম্পাদনায় বের হয় মুক্তযুদ্ধভিত্তিক চারটি গল্পের সংকলন – ‘প্রেক্ষাপট: একাত্তর’। তার পরের বছরগুলোতে আমরা যে সব সংগঠন গড়ে তুলেছিলাম তার অন্যতম ছিলো ‘রাখাল’। এর বিভিন্ন প্রকাশনা মুদ্রণের দায়িত্ব কার্যত সাজ্জাদ হোসেন আর মিনি’ই পালন করেছে। আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জীবনের উত্তাল সময়ে আমরা পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে থাকি। মিনি সেই সময়ে কোন দলের যঙ্গে যুক্ত ছিলোনা, কিন্ত আমরা যারা বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে সক্রিয় ছিলাম, নির্বাচনে অংশ নিয়েছি তাদের প্রত্যেকের সঙ্গে মিনির সখ্য ছিলো সমান। সেই সময়ে আমাদের বন্ধুদের মধ্যে রাজনৈতিক ভিন্নমত আমাদের বিভক্ত করেনি, আমাদের প্রতিদিনের আড্ডাকে প্রভাবিত করেনি।

মিনি’র সঙ্গে আমার যোগাযোগ কেন এবং কীভাবে শিথিল হয়ে গিয়েছিলো মনে পড়েনা। আমার আগেই সম্ভবত মিনি দেশান্তরী হয়েছিলো। তারপরে কোনো এক সময়ে ঢাকায় আমাদের আবার যোগাযোগ পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হলো। সেটা ২০০০ সালের পরে। তারপরে যে যেখানেই ছিলাম যোগাযোগ ছিলো। অস্থির মিনি আস্তে আস্তে থিতু হয়েছে, অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী, সংসার-সন্তান সব কিছুর দায়িত্ব-কর্তব্য পালনে নিষ্ঠ মিনি’র অস্থিরতা শেষ হয়না। অস্ট্রেলিয়ায় মিনি যুক্ত আছে বাংলা মিডিয়ার সঙ্গে, সংগঠনের সঙ্গে। আমাদের এই নিয়ে টেলিফোনে কথা হয়। ২০১০ সালে এইসব কথার সূত্রেই মিনি আমার আর রেজা সেলিমের মাথায় ঢুকাতে সক্ষম হলো ঢাকায় আমাদের বন্ধুদের মিলনমেলা করার, যুক্ত করলো কামালকে। যেই কথা সেই কাজ – মিনি লেগে পড়লো সকলের সঙ্গে যোগাযোগের। কার্যত মিনির উৎসাহেই শেষ পর্যন্ত ২৪ ডিসেম্বর ব্র্যাক সেন্টারে আমাদের সবার দেখা হলো, আড্ডা হলো। মিনির সঙ্গে কথা হয়, আমাকে দিয়ে তার সংকলনের জন্যে লিখিয়ে নেয়। মিনি’র সঙ্গে কথাবার্তার কোন সূত্র লাগেনা, টেলিফোনে বিষয় থেকে বিষয়ান্তর ঘতে। ঢাকায় সম্ভবত আরো দুবার দেখাও হল।

২০১২ সালের দিকে মিনি জানালো সে ঢাকায় স্থায়ীভাবে ফেরার কথা ভাবছে, ‘কি করবি?’ আমার প্রশ্নের উত্তরে জানালো আবার সে সাংবাদিকতায় ফিরতে আগ্রহী। ইতিমধ্যেই আমি জানি বিভিন্ন রকম রোগ শরীরে বাসা বাধতে শুরু করেছে। আমি ওর পরিকল্পনায় সম্মতি দিলাম না, এই নিয়ে রেজা সেলিমের সঙ্গেও কথা হল। কিন্ত মিনি কিছু করতে চাইলে তাকে ঠেকাবে কে? মিনি ঢাকায় গিয়ে সাংবাদিকতায় যুক্ত হলো, কিন্ত তাতে সে তৃপ্ত হতে পারছেনা। এরই মধ্যে অস্ট্রেলিয়া ফিরেছে, এসেই আমাকে নিমন্ত্রণ – ‘আমার এখানে আয়’। যাবো বলেই কথা দিয়েছিলাম, আগের দফা অষ্ট্রেলিয়া গিয়ে ওর বাসায় না যাওয়া নিয়ে ওর অভিমান ভাঙ্গানোর আর কোনও পথ ছিলোনা, আমারও আগ্রহও ছিলো।

এরই মধ্যে ১১ ফেব্রুয়ারি সকালে ঢাকা থেকে রেজা সেলিম জানালো অবিশ্বাস্য সংবাদ, একটু পরে আকবর হায়দার কীরন নিউইয়র্ক থেকে। তারপরে এক দশক চলে গেছে। এক দশকে কত কিছু ঘটেছে, কিন্ত ১১ ফেব্রুয়ারি এলেই মনে হয় – কথা ছিলো মিনি তোর সঙ্গে মেলবোর্নে দেখা হবে।