NYC Sightseeing Pass
ঢাকা, রবিবার, এপ্রিল ২৭, ২০২৫ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩২
ব্রেকিং নিউজ
জব্বারের বলীখেলায় আবারও চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লার ‘বাঘা’ শরীফ Bangladesh reaffirms commitment to fully Implement the CHT Peace Accord Kashmir Violence Conflict can be Solved Diplomatically or Needs a Retaliation Plan Against Pakistan ব্রেন স্ট্রোক পরবর্তী সময়ে সেরে ওঠার যুগান্তকারী ওষুধ আবিষ্কার নিউইয়র্কে প্রবাসীদের সাথে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের মত  বিনিময় নিজেকে রাজা-বাদশাহ ভাবছেন ট্রাম্প! ‘দাগি’ দেখতে কয়েদির বেশে সিনেমা হলে শতাধিক নিশো ভক্ত Attorney General James Wins Case Against Google for Monopolies in Digital Advertising নিউইয়র্কে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ সংবাদ সম্মেলন নানা অভিযোগ উত্থাপন : বাংলাদেশ রেমিট্যান্স মেলা  বয়কটের আহবান নিউইয়র্কের এস্টোরিয়ায় পুলিশের গুলিতে মানসিকভাবে অসুস্থ  এক ব্যক্তির মৃত্যু
Logo
logo

আফলাতুন হায়দার চৌধুরীর সাগরের গল্পঃ একটি সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা-- সামাদ সিকদার


খবর   প্রকাশিত:  ২৬ এপ্রিল, ২০২৫, ১০:১৮ পিএম

আফলাতুন হায়দার চৌধুরীর সাগরের গল্পঃ একটি সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা-- সামাদ সিকদার

 

 

‘সাগরের গল্প’ একটি পুর্নাঙ্গ ভ্রমণ উপন্যাস। বইটিতে রয়েছে তার নাবিক জীবনের কাহিনী। শুরু হয়েছিলো কর্ণফুলী নদী থেকে। হেমন্তের এক সকালে ভরা জোয়ারে শুরু হয় তার সমুদ্রযাত্রা। সাগর জীবনের অর্জিত অভিজ্ঞতা তিনি তুলে ধরেছেন তার শক্তিশালী লেখনীর মাধ্যমে।

'কার্গো শিপে এক দল নাবিকের সাথে ঘুরে বেড়ানো দেশ থেকে দেশে, বন্দর থেকে বন্দরে, সাগর থেকে মহাসাগরে। খোলা, একঘেঁয়ে গহীন সমুদ্র। কখনো কখনো মনে হয়েছে এ জীবন কতোইনা ইন্টারেষ্টিং, অপরূপ আর রোমান্টিক। ভয়াল অভিজ্ঞতার সময় মনে হয়েছে এটাই বুঝি জীবনের শেষ। হয়তো প্রশ্ন আসতে পারে, এখানে জীবন এমন কেন? এভাবে বেঁচে থাকা যায়? অথবা, জীবনটা এত মধুর কেন? কিংবা, পৃথিবীটা এত্তো সুন্দর কেন? একই মানুষ, বিপরীত প্রশ্ন। তবে একটা বিষয় সবসময় হৃদয়টা ব্যাথাতূর করে রাখতো। পরিবার, প্রিয়জন থেকে দুরে কোন দেশের মাটিতে নয়, মহাসাগরের মাঝে যেখান থেকে ইচ্ছে হলেই ছুটে আসা যায় না।'

বলা যেতে পারে বইটি সাধারণ পাঠকের জন্য একটি চমকপ্রদ আয়োজন। সমুদ্রগামী নাবিকের জন্য অবশ্য পাঠ্য। কী নেই এতে? ছোট একটি শহর হনগাঁই, উত্তর ভিয়েতনাম, হোচিমিনের ভিয়েতনাম। ভিয়েতনাম আলোচনায় লেখক হো চাচার অবদানের কথা অত্যন্ত সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলেছেন। এরপর অপরূপা সাইগন, মেঘের গল্প, দেশ আমার দেশ, মহাসাগর, আকাবা পোর্ট কন্ট্রোল টাওয়ার, তোমার নাম আঁকাবার সবাই জানে।

এরপর আল তাফসিরে মোসলমান। বইটির অনেক জায়গার মতো এখানেও রোমান্টিকতা বিদ্যমান। যেমন থাই শহরে, "লিন্ডার সাথে জেটিতে নেমে আরেক ধাক্কা খেলাম। ও এসেছে দুই চাকার স্কুটার নিয়ে, পেছনে বসে প্রাণপনে চেষ্টা করছি যাতে টাচ না লাগে। একরত্তি স্কুটার, টাচ নয় রীতিমত ডলাডলি খাচ্ছি।… একটুখানি এগিয়ে স্কুটার থামিয়ে লিন্ডা আমাকে বললো আমি যেন তাকে পেছন থেকে দু'হাতে ভালোমত হোল্ড করি তাহলে তার চালাতে সুবিধা হয়।"

সাগরের অভিজ্ঞতার ঝুলি যে এতো সমৃদ্ধ তা ভাবতে পারিনি। বইটি পাঠ করছি আর অবাক হয়ে যাচ্ছি। সে একজন ভালো সংরক্ষণকারিও বটে। রয়েছে তার বাবাকে লেখা চিঠিও। মনে হয় যেন তার রাজ্যে কিছুই হারায়না। বইটি হাতে না পেলে এ সোনালী ভাণ্ডারের কথা অজানাই থেকে যেত। লেখক সপরিবারে বিলেতে আছে অনেকদিন। তার কাছ থেকে বিলেতের গল্প আশা করতেই পারি।

পৃথিবীর প্রথম ঈদ (ঘরে হইতে বহুদুরে) অধ্যায়ে ফেনীর ভাষায় যে চন্দ্রবিন্দুর বহুল ব্যবহার, মজা করে তিনি মোয়াজ্জিনের বরাতে তার উল্লেখ করেছেন। জাহাজে ঈদের মতো আছে পহেলা বৈশাখ উৎসবের কথা। প্লাগ সকেট টেলিভিশন ইত্যাদির কার্যকারীতা নিয়েও লেখক কারিগরী আলোচনায় প্রবৃত্ত হয়েছেন।

তারপর চীনের গ্রেট ওয়াল, ইয়ানসাই লেক, সিং তাও প্রসঙ্গও ওঠে এসেছে বইটিতে। 'বিল্লার উপ্রে দুই ডান্ডা, কি আনন্দ!' সাগরের পদোন্নতি পাবার পর প্রথম অভিনন্দন জানায় সোনাগাজীর জনৈক সুখানী। তিনি নোয়াখালীর আঞ্চলিক ভাষায় বলেন, "কনগ্র্যাচুলেশনস স্যার! বিল্লার ওঁচে দুই ডান্ডা মোবারক।" বইটিতে সিরিয়াস কথার পাশাপাশি এমনি অনেক হাস্যরসাত্নক বিষয় রয়েছে যা পাঠকের ভালো লাগবে।

ডালিয়ান অধ্যায়ে চীনা বিপ্লব ও গণচীনের মহান নেতা মাওসেতং এ-র কথা বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, 'মাওসেতুং ভাবলেন অনেক হয়েছে, দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। ফাঁসির ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও তিনি সরাসরি বিপ্লবের ডাক দিলেন। যুদ্ধ করতে চান। সাড়া পেলেন অভুতপুর্ব। বানের জলের মতো লাখে লাখে সেচ্ছাসেবী যোগ দিতে লাগলো তার দলে। তিনি বলেছিলেন, "এ-ই যুদ্ধ কৃষক শ্রমিক জনতার হৃদয়ের যুদ্ধ। "

বইটিতে এরপর আছে টাইফুন রবীন, বুসান আর পুসান একই কথা, ইংক্যু তারপর আবার ইনচো'ন। গৃহযুদ্ধ শীতল যুদ্ধের পর আজকের আকর্ষনীয় কোরিয়া। এই গল্পে লেখক কোরিয়ার রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে ফুটিয়ে তুলতে প্রয়াস পেয়েছেন। ফুটিয়ে তুলেছেন উন্নত কোরিয়ার নানান বিষয়।

অনেক মূল্যবান উদ্ধৃতি, উপদেশ, মহামানবের উক্তির উল্লেখ করা হয়েছে বইটিতে। চৈনিক প্রবাদসহ অনেক দেশের অনেক প্রবাদ যথাস্থানে উপস্হাপন করা হয়েছে।

অনেক দেশের কৌতুকও ঠাঁই পেয়েছে বইটিতে। 'তারপর আমার বিদায়' গল্পে আছে, "তুমি যদি সিউলের পাহাড়ের উপর থেকে একটি ছোট পাথর ছুড়ে মারো, ৫০% সম্ভাবনা সেটা গিয়ে পড়বে কোনো একটা কিম, লী অথবা পাক্ এ-র মাথায়।'' বইটির শেষ পংক্তি হচ্ছে,

"চোখ বুঁজি, হারিয়ে যাই স্বপ্নে।"

বইয়ের নাম: সাগরের গল্প।

লেখক: আফলাতুন হায়দার চৌধুরী।

বইটি উৎসর্গ করা হয়েছে পিতা জুলফিকার হায়দর চৌধুরী ও মাতা হুসনা হায়দার চৌধুরীকে।

সাগরের গল্প বইটির প্রচ্ছদ এঁকেছেন আফলাতুন হায়দার চৌধুরী, লেখক নিজে। মজবুত বোর্ড বাধাই। দামী অফসেট কাগজে ঝকঝকে ছাপা ২৯২ পৃষ্ঠার বই।

প্রথম প্রকাশঃ ডিসেম্বর ২০২২। প্রকাশকঃ মনিরুল হক, অনন্যা, ঢাকা। স্বত্বঃ লেখক। মূল্য ১০০০/- টাকা।

বইটির মূল্য পাঠকের নিকট আপাততঃ বেশি মনে হলেও কাগজসহ অন্যান্য ছাপা সামগ্রীর দুর্মূল্যের বাজারে কী আর করা!

সাগর, নাবিক, নাবিক জীবন, দেশবিদেশের নানান বিষয়

নিয়ে লেখা তথ্যসমৃদ্ধ এ বইটির বহুল প্রচার ও পাঠকপ্রিয়তা একান্ত কাম্য।

 

*** সামাদ সিকদার (বীর মুক্তিযোদ্ধা ডক্টর মুহম্মদ আবদুস সামাদ সিকদার), কবি, প্রাবন্ধিক ও গবেষক। সুকান্ত পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক, বাংলা একাডেমির জীবন সদস্য এবং অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা। প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা (মুক্তিযুদ্ধের ওপর ৩টিসহ) মোট

১৪টি ।