NYC Sightseeing Pass
ঢাকা, সোমবার, এপ্রিল ২৮, ২০২৫ | ১৪ বৈশাখ ১৪৩২
ব্রেকিং নিউজ
জব্বারের বলীখেলায় আবারও চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লার ‘বাঘা’ শরীফ Bangladesh reaffirms commitment to fully Implement the CHT Peace Accord Kashmir Violence Conflict can be Solved Diplomatically or Needs a Retaliation Plan Against Pakistan ব্রেন স্ট্রোক পরবর্তী সময়ে সেরে ওঠার যুগান্তকারী ওষুধ আবিষ্কার নিউইয়র্কে প্রবাসীদের সাথে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের মত  বিনিময় নিজেকে রাজা-বাদশাহ ভাবছেন ট্রাম্প! ‘দাগি’ দেখতে কয়েদির বেশে সিনেমা হলে শতাধিক নিশো ভক্ত Attorney General James Wins Case Against Google for Monopolies in Digital Advertising নিউইয়র্কে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ সংবাদ সম্মেলন নানা অভিযোগ উত্থাপন : বাংলাদেশ রেমিট্যান্স মেলা  বয়কটের আহবান নিউইয়র্কের এস্টোরিয়ায় পুলিশের গুলিতে মানসিকভাবে অসুস্থ  এক ব্যক্তির মৃত্যু
Logo
logo

অভিনেতা হুমায়ূন ফরিদী, চিত্রশিল্পী কাজী রকিব বনাম ব্যবসায়ী--শামীম শাহেদ


খবর   প্রকাশিত:  ২৭ এপ্রিল, ২০২৫, ০২:১৯ পিএম

অভিনেতা হুমায়ূন ফরিদী, চিত্রশিল্পী কাজী রকিব বনাম ব্যবসায়ী--শামীম শাহেদ

 

ঘটনাটা ছিল অবাক করার মতোই।

মূল পরিকল্পনা ছিল ফরিদী ভাইয়ের সাথে সারাদিন কাটানো। ফরিদী ভাই মানে হুমায়ূন ফরিদী। অভিনয়ের রাজা হুমায়ূন ফরিদী। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হুমায়ূন ফরিদীর সাথে সাথে ঘুরব, দেখব তিনি কী কী করেন, তারপর সেটা লিখব প্রথম আলোর ‘আনন্দ’ পাতায়। ১৯৯৯ সালের শুরুর দিকের ঘটনা।

পরিকল্পনা অনুযায়ি সারাদিন তাঁর সাথে ঘুরলাম। এফডিসি, ডাবিং স্টুডিও, এডিটিং টেবিল, বন্ধুদের আড্ডা সব শেষ করে রাত নয়টায় সাতমসজিদ রোডের বাসায় এসে বসলাম। দুই-তিন জন নির্দেশক আগে থেকেই বাসায় বসা ছিলেন। ফরিদী ভাই বসার রুমে বসলেন। ফরিদী ভাই চেয়ারে, আমি, আমার ফটোগ্রাফার ফ্লোরে। ফরিদী ভাইয়ের হাতে একটা গ্লাস। ফরিদী ভাই একজনকে ডেকে নিলেন।

তরুণ নির্দেশক রুমে ঢুকে ফরিদী ভাইকে তার নাটকের গল্প শোনালেন। শেষ করে ফরিদী ভাই নির্দেশককে সবচেয়ে কঠিন প্রশ্নটা করলেন, তুমি যে আমাকে তোমার নাটকে নিতে চাও তুমি জান আমার পারিশ্রমিক কত?

তরুণ নির্দেশক ভয়ে ভয়ে উত্তর দিলেন, কিছুটা জানি ভাই।

ফরিদী ভাই কথা না বাড়িয়ে নিজে থেকে বললেন, আমার পারিশ্রমিক কিন্তু নাটকের ডিউরেশন যত তত হাজার টাকা, ঠিক আছে? তোমার নাটক পঞ্চাশ মিনিটের তাই আমার অনারারিয়াম হবে পঞ্চাশ হাজার টাকা। পারবা দিতে?

পুরো ঘরজুড়ে মিনিট খানেকের নিরবতা নেমে এল। যে সময়ের কথা বলছি তখনকার পঞ্চাশ হাজার টাকা এখনকার পাচঁ লাখ। তখন নাটকের বাজেটই ছিল সর্বমোট এক লাখ, কি দেড় লাখ। তরুণ নির্দেশক হাত কচলাতে কচলাতে বললেন, আমার এত টাকা নাই ভাই। কিন্তু আমি নাটকটা আপনাকে নিয়েই বানাতে চাই। আপনাকে এত টাকা দিলে আমি নাটকটা বানাতে পারব না ভাই।

ফরিদী ভাই পাল্টা প্রশ্ন করলেন, আমার জন্য তোমার বাজেট কত? কত দিতে পারবা?

তরুণ নির্দেশক বললেন, সর্বোচ্চ ত্রিশ হাজার টাকা দিতে পারব ভাই।

ফরিদী ভাই সবাইকে অবাক করে দিয়ে বললেন, শোনো তোমার নাটকটা আমি করব। আমাকে কোনো টাকা তোমার দিতে হবে না। আমি কোনো সম্মানি ছাড়াই তোমার নাটকটা করব। এই ত্রিশ হাজার টাকা তোমার জন্য গিফট।

সেই তরুণ নির্দেশকের আনন্দ দেখে কে। লাফাতে লাফাতে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলেন। নিজেদের বিস্ময় কাটিয়ে ফরিদী ভাইকে প্রশ্ন করলাম, পুরো টাকাটাই ছেড়ে দিলেন? ত্রিশ হাজার টাকাও তো অনেক টাকা?

ফরিদী ভাই বললেন, আমি চাই সে কাজটা ভাল মতো করুক। তার একটা স্বপ্ন আছে, তাকে সহযোগিতা করা দরকার। বড় কথা কি জানো, তুমি যতক্ষণ অন্যকে দিতে পারবে ততক্ষণই তুমি শিল্পী। যখন তুমি অন্যের স্বপ্নকে মূল্য না দিয়ে নিজের জন্য নিতে শুরু করবে তখন তুমি ব্যবসায়ী।

কি অসাধারণ উক্তি! এই ঘটনাটা আজকে মনে পড়ার আরেকটা কারন আছে।

কাজী রকিব এবং মাসুদা কাজী বিখ্যাত চিত্রশিল্পী। নিউইয়র্কেই থাকেন। এখন থেকে প্রায় তিন বছর আগে হঠাৎ একদিন ফেইস বুকে দেখলাম রকিব ভাই ছবি আঁকছেন। একটা পাখির ছবি। চমৎকার সেই পেইন্টিং। আমি মুগ্ধ হয়ে ছবির নিচে একটা কমেন্ট করলাম। আমাকে অবাক করে দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে রকিব ভাই লিখলেন, একদিন এসে ছবিটা নিয়ে যেও।

আমাকে আর পায় কে! পরদিনই হাজির হয়ে গেলাম। রকিব ভাই সত্যি সত্যি ছবিটা আমাকে দিয়ে দিলেন। দুই বছর হয়ে গেল পেইন্টিংটা আমার অফিস রুমে সোভাপাচ্ছে, কিন্তু আমার বিস্ময় এখনো কাটে নাই।

আমি এখন গর্ব করে বলতে পারি, আমার কাছে কাইয়ূম চৌধুরীর পেইন্টিং আছে। আমার কাছে শিশির ভট্টাচার্যের পেইন্টিং আছে। আমার কাছে বিপাশা হায়াতের পেইন্টিং আছে। আরও অনেক অনেক .. .. ..। আমি এক একটা পেইন্টিং দেখি আর বিস্ময়ের সাথে ভাবতে থাকি, কি অসাধারণ শক্তিধর আমাদের এই শিল্পীরা।

তাঁদের উপলক্ষ করে আমাদের সব শিল্পীদের প্রতি রইল স্বশ্রদ্ধ অভিবাদন।

জানুয়ারি ২৯, ২০২৩, নিউইয়র্ক।